![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।
১।
মাদ্রিদ, স্পেন।
“Bien. Se le concede una licencia de seis
meses. Después de seis meses para
cumplir”(আপনার ছয় মাসের ছুটি মঞ্জুর
হল। ছয় মাস পর দেখা করবেন।)
পেচা মুখো স্প্যানিশ বুড়োর মুখ
থেকে কথাটা শোনার পর
থেকে তিনটে দিন যেনো আর
ফুরোতেই চায় না।
অবশেষে প্লেনে ওঠার সময়
এসে উপস্থিত হলো। আমি আবির। আজ
তিন বছর পর দেশে ফিরছি। হ্যা, তিন
বছর…
*
তিন বছর আগের কথা।।
“আশা, আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর।
আমি চাকরিটা মাস্ট পাবো।”
“তোমার চাকরির আশায়
আশা থাকবে না । শাহীন দুবাই
থাকে, অনেক ধনী, আমি ওকেই
বিয়ে করব। ”
তোমার সাথে আমার শেষ দেখা।
তুমি চলে গেলে। লাল থ্রিপিছে খুব
সুন্দর লাগছিল সেদিন। তিন মার্চ
বিয়ে ছিলো তোমার। আর
আমি সেদিন প্রথম পা রাখলাম
স্পেনে। স্পেনের মাদ্রিদে।
হান্ড্রেড পার্সেন্ট বৈধ
উপায়ে এসেছিলাম স্পেনে। সেই
ভালবাসা দিবসেই প্লান
করেছিলাম বিদেশে যাব শান্তির
খোজে। অবাক শান্তি।
২।
মাদ্রিদ, স্পেন।
¿de dónde eres, señor?
(কোথা থেকে এসেছেন?) আমি তখন
এর উত্তরটাও জানি না। সিনিয়র এক
বড় ভাই বলেছিলেন উত্তর
দিবি বাংলাদেশ। হুট
করে চলে আসা। স্প্যানিশ ঠিক মত
বুঝি না। একদিন আরেক লোক বললেন,
cómo estás? (কেমন আছ?) বাংলাদেশ
উত্তর নিতেই
হো হো করে হেসে উঠল সবাই। তখন
মনে হচ্চিলো কোথাও কেউ নেই।
চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা হচ্ছিল
তখন।
আজ, তিন বছর পর দেশে যাচ্ছি।
প্লেনের ইকোনোমি ক্লাসের
একটা সিট। জার্মান
বিমানবালাগুলো সুন্দর মানলাম।
কিন্তু তাকানোর ভাব দেখলেই
মনে হয় থাপড়া দিয়া দাত
ফেলে দেই। এমন ভাবে তাকায়
যেনো আমি ওর বাড়ির চাকর।
পরপক্ষনেই হাসি আসল । এ আর নতুন কি।
স্পেনে থাকতে, ব্যাবহার করত এমন
ভাবে, যে ভাবে আমার
ধানী জমিটায় কুড়িগ্রামের
কামলাদের খাটাতাম। সেই
জমিটা । যেটা বেচেই স্পেন আসা।
একদিন এক কামলার হাত
কেটে গেলো। মা বলল
দূর্বা লাগাতে। ঘরে তিন বোতল
স্যাভলন ছিল তাও। এরা অবশ্য ভালই
বলতে গেলে,
হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।
তিন দিন ছিলাম। দাম? দাম
হিসেবে পরের মাসে অর্ধেক বেতন।
বাড়িতে একমাস টাকা দেই নি।
তাতেই কত কথা।
আমার ঢাকার বাসায় একটা কাজের
লোক ছিল। তার
বাবা মারা যাওয়ার পর সাতদিনের
ছুটিতে দেশের বাড়ি গেল।
ফিরে এসে দেখলো, তার যায়গায়
অন্য কেও। অনেক কান্না করেছিলো।
কোনো ভ্রুক্ষেপ করিনি আমি।
এরা অবশ্য ভালো। ছয় মাস পর
দেখা করতে বলেছে।
স্কুলে পড়ার সময় ভাবতাম
কি ডেইলি আমার সোনার
বাংলা আমার সোনার
বাংলা করে। কিন্তু এখন, এই গানটাই
সবচেয়ে প্রিয়। তিন মাসে কত
চেঞ্জ।
দেশটাকে ভালবাসতে শিখলাম।
আরো কত কি!!
অনেক কিছু কিনেছি এবার।
একটা লাগেজ সাবান স্যাম্পু
কিনে ভরে ফেলেছি। কিনতে হতই ।
অনেকদিন পর যাচ্ছিতো। সবার জন্য
নিচ্ছি। আবার বরকত ভাই তার
পরিবারের জন্য কিছু পাঠাচ্ছে।
ভাগনে একটা মোবাইল চাইছে।
কিনেছি। আটাশ ইউরো। যদিও এর জন্য
প্রায় কিলোখানেক
হাটতে হয়েছে। সব
শেষে এসে বিমানে চড়লাম।
পাইলটের কথায় সম্বিৎ
ফিরে পেলাম। দুবাই এসে গেছি।
ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ
করে নিলাম। দেশে একটু
আমিরী চালেই যেতে হবে।
নাইলে লোকে কিপটা বলবে।
প্লেন চেঞ্জ করলাম। এবার একটু
ঘুমাবো। শান্তির ঘুম।।
©somewhere in net ltd.