নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভূগোল পড়ি তাই সবব্যপারেই আগ্রহ একটু বেশী

সায়ানাইড সাকিব

বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।

সায়ানাইড সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বদলে যাওয়ার গল্প

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯

১।
রাজশাহী টু চিটাগং। ট্রেনে যাচ্ছি। সরকারি চাকরীর এই এক ঝামেলা। আজ এখানে তো কাল ওখানে । আমি বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বন কর্মকর্তা। সাত বছর ধরে চাকরি করছি। প্রথম পোস্টিং ছিলো খুলনায়। সেখান থেকে বদলী হয়ে আসি সিলেটে। সিলেট থেকে রাজশাহী। আসলে অনৈতিক কাজকর্ম একটু বেশী করি কি না! তাই এই অবস্থা। এই কয় বছরে ব্যাংকে দুই কোটি টাকা জমা করেছি। ঘুষ খাওয়া বা নিজের দপ্তরের জিনিসপত্র ব্যাবহার করা কি খারাপ বলে মনে করি না। দু একটা গাছ বিক্রি করা এইটা কোন ব্যাপার না।
ট্রেনে যাচ্ছি। হরতালের সময়। তাই ট্রেন চলছে আস্তে আস্তে। সামনে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বাড়িঘর গুনছেন । ভাবলাম তার সাথে ভাব জমাই।
আমিঃ চাচা কোথায় যাচ্ছেন?
চাচাঃ যাচ্ছি চট্টগ্রাম।
আমিঃ আমিও চিটাগং যাচ্ছি। তা ওখানে কি?
চাচাঃ যাচ্ছি অতীতের খোঁজে ।
আমিঃ কেমন?
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লেন বৃদ্ধ।
চাচাঃ সালটা ১৯৭১। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যুদ্ধের ডাক এলো। যুদ্ধে গেলাম। আমার ভাগ্য বেশী ভাল না। ধরা পরলাম পাকিস্তানীদের হাতে। বাচার জন্য বুদ্ধি আঁটলাম একটা । রাজাকার দলে যোগ দিলাম। তারপর থেকে আমার কাজ ছিল পাকিদের খবর নিয়ে মুক্তিবাহিনীকে দেয়া। পাকিদের সাথে কত অপারেশনে গিয়েছি। আবার মুক্তিবাহিনীর সাথেও গিয়েছি,
আমিঃ ওহ! সেই যুদ্ধের জায়গাগুলো দেখতে যাচ্ছেন?
চাচাঃ নাহ। যাচ্ছি আমার প্রেমের কবরে ফুল দিতে।
আমিঃ কেমন?
চাচাঃ আমার একটা প্রেমিকা ছিলো। এক রাতে হানাদার বাহিনীর সাথে অপারেশনে যাই। জানো আমার সামনে আমার নিজের চেয়েও প্রিয় মানুষটাকে ওরা পশুর মত খেলো। আমি কিছুই করতে পারলাম না।
আমিঃ আপনি চাইলে ওকে বাচাতে পারতেন।
চাচাঃ হ্যাঁ। তা পারতাম। কিন্তু তাতে আমাকে ওরা আগের মত বিশ্বাস করত না।
আমিঃ দেশের জন্য এতবড় বলি দান?
চাচাঃ ধুর বোকা। দেশের জন্য সব করা যায়।
আমিঃ কিন্তু কি লাভ তাতে?
চাচাঃ লাভ ক্ষতি দিয়ে ভালবাসা মাপা যায় না। এই দেশের প্রতি ভালোবাসা সবকিছুর উপরে। যেদিন দেশকে ভালবাসতে শিখবে সেদিনই তোমার মায়ের তোমাকে জন্ম দেয়া সার্থক হবে।
চাচার শেষের কথা গুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছি। সারা রাস্তা আর উনার সাথে কথা হয় নি। আমি ভাবতে লাগলাম আসলেই তো দেশকে না ভালবাসলে আমার কোনো অস্তিত্বই থাকেনা।
২।
আজ তিন মাস আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি হয়ে এসেছি। এখানে এসে দুর্নীতি ছেড়ে দিয়েছি। দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি।
“স্যার, এক লোক আসছেন আপনার সাথে কথা বলব।” বাইরের গার্ড এসে বলল। আমি বললাম পাঠিয়ে দাও।
-সেলাম হজুর।
-বলেন
-আমার কাছে একটা অফার আছে।
-কিসের অফার?
-বার্মা থেকে আমরা গুটি চালান আনি। এই এরিয়া দিয়ে আনতে চাই। আপনি ভাগ পাবেন সমস্যা নাই।
-আপনার সাহস হল কি করে যে আমাকে এই অফার দেন?
-কুল স্যার কুল। একটু ভেবে দেখবেন। আমি কাল আসব।
-এর পর আসলে পুলিশে ধরায় দিব সালা, তরে জানি এই এলাকায় না দেখি। আমি পলাশ বেচে থাকতে একটা গুটি এই দেশে ঢুকবে না।
৩।
রাত ১২টা।
আমাকে ওরা বেঁধে রেখেছে। আমি রাজি হইনি। হবও না। আমি আমার রক্ত দিয়ে হলেও দেশকে রক্ষা করব।
“উস্তাদ পুলিশ আইতেছে।”
“কি কস! পুলিশে খবর দিল কেরা?”
আমি হাসিতে ফেটে পরলাম। ওদের আর বুঝতে বাকি রইল না কে করেছে এই কাজ। “সালা। আমাদের ধরিয়ে দিবি? কিন্তু তুই তো বাচবি না রে!”
আমার বুকে দুইটা পরপর গুলি ঢুকল । আমি মারা যাচ্ছি। আমার কোনো দুঃখ নেই তাতে। দেশের জন্য জীবন দিলাম। আমি আজ সবচেয়ে খুশি। সত্যি দেশকে ভালবাসা সবকিছুর উর্ধ্বে । আমি গাইলাম,“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।”

পরদিন পত্রিকায় হাইলাইটেড নিউজ। “অনেকদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইয়াবা ব্যাবসায়ী চক্র গ্রেফতার।”
#CNOS

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.