নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভূগোল পড়ি তাই সবব্যপারেই আগ্রহ একটু বেশী

সায়ানাইড সাকিব

বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।

সায়ানাইড সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালবোশেখী

১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:০১

১।
মিঠাপুর গ্রাম । একটা বাড়ি । মোটামুটি ভাল অবস্থাসম্পন্ন । তাতে বাস করেন এক গৃহস্ত কৃষক । রমজান মিয়া । বিয়ে করেছেন । তার ঘরে নতুন অতিথি আসতে চলেছে ।
ঝড়ের রাত । রমজান আলি উত্তেজনায় থরথরিয়ে কাপছেন । কারণ তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা । চারিদিকে ঝড় হচ্ছে । সাথে বৃষ্টি । আশ্বিনী ঝড় । এমন সময় তার ঘর আলো করে এলো দুটো ফুটফুটে বাচ্চা । তিনি দুটো পুত্র সন্তানের বাবা হলেন । পরেরদিন তিনি একটি আম গাছ লাগালেন । তাদের বংশের নিয়ম এটা । গাছটা বড় হচ্ছে । সাথে বড় হচ্ছে তার দুই ছেলে । তাদের দুটো নাম আছে । আপনাদের বলা হয়নি । রমিজ আর সমেজ । রমিজ আর সমেজকে আলাদা করার একমাত্র উপায় সমেজের চোখ একটু ট্যারা । তাদের মধ্য আরো একটা অমিল আছে । সেটা হল মতের । তাদের মতে কিছুতেই মিল হয় না । এরপর আস্তে আস্তে গাছটা বড় হতে লাগল । বাড়তে লাগল সবার বয়স । রমজান মিয়ার দাড়িতে পাক ধরল । চুল পাকল তার বিবির ।
সখিনা বিবি । রমজানমিয়ার স্ত্রী । একদিন শীতের বিকেলে, দুই প্রৌড়া বসে ছিলেন । সখিনা বিবি পান বানাচ্ছিলেন আর রমজান তামাক খাচ্ছিলেন ।
-বিবি
-বলেন
-গাছটা দেখছ? কতবড় হইছে?
-হ । আপনেতো খালি গাছটাই দেখলেন । ছাওয়াল দুইটা যে বুইড়া হইতেছে তা আর দ্যাখবেন না ।
-হ । ঠিক কইছ । ওগো বিয়া দিওন লাগব ।
২।
মাঘমাসে রমিজ আর সমিজের বিয়ে হল । সেবার গাছে অনেক মুকুল এসেছিল । সবাই অবাক । এত মুকুল!
আস্তে আস্তে আবার বৈশাখ এলো । সে কি ঝঢ় । সেই ঝঢ়ের রাতে দেহত্যাগ করলেন রমজান আলী ।
রমজান আলীর মৃত্যুতে কেদেছিল আকাশ । টানা তিনদিন অঝোঢ় ধারায় ঝরে ছিল বৃষ্টি । তারপরই এল বর্ষা । বছর ঘুরে আবার শীত । দিন যত যাচ্ছে রমিজ আর সমিজের সম্পর্ক খারাপ হতেই থাকে । পাড়ার লোকের কু মন্ত্রনায় এবার সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি ভাগ হবে । গ্রামের মাদবর এসে ভাগ করে দিয়ে যায় বাড়ি । সবই ঠিক ছিল । কিন্তু সমস্যা হয় ওই আমগাছ নিয়ে । আমগাছটা যে কার ভাগে পরবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিশাল জটিলতা । দিন চলতে থাকে । আমগাছটা নিয়ে কিছুতেই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।
আবার আমগাছটাতে মুকুল এসেছে । প্রচুর মুকুল । মৌমাছিদের উল্লাসে সারা বাড়ি ভরপুর ।
রমিজ গাছের মরা ডাল দিয়ে চলা বানাচ্ছিলো আর সমেজের স্ত্রী পাতা কুড়াচ্ছিলো আস্তে আস্তে ঝগড়াটা চরম পর্যায়ে চলে যায় । মাঝে এসে দাড়ায় সখিনা বিবি । তাতেও ঝগড়া থামে না । হঠাত্ রমিজ আর সমেজ আমগাছের ডাল দিয়ে দুজন দুজনকে আঘাত করে । কিন্তু না । আঘাতটা লাগে তাদের মায়ের মাথায় । সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় সবকিছু । কোথাও একটা কাক ডাকছিলো সেও থেমে যায় ।
আজ সাতদিন সখিনা বিবি বিছানায় । অবস্থা খারাপের দিকে । পাড়ার কবিরাজ ঔষুধ দিয়ে গেছে । কাজ হল না । পাড়ার রহিমের মা দুই পুত্র বধুকে বললেন কোরআন শরীফ পড়তে ।
পরের দুপুর বেলা সবাইকে কাদিয়ে চলে গেলেন সখিনা বিবি । কবর দেয়া হল তার স্বামীর পাশে ।
আট দিন ধরে অসম্ভব গরম পড়েছিলো মিঠাপুরে । বিকালের দিকে আকাশে হালকা মেঘ দেখা গিয়েছে । সন্ধ্যায় তা লাল হয়ে আসে ।
বাড়িটা নিস্তব্ধ । চুপচাপ । দূরে কোথায় যেন কুকুর কাদছিলো । তাতে পরিবেশটা আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে । হঠাত্ এক পশলা গরম বাতাস বয়ে গেল । রমিজ বাড়ির দরজায় বসা । মোল্লা মসজিদে আজান দিচ্ছে । সমেজের স্ত্রী উঠান ঝাট দিচ্ছিলো । মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব রমিজের । মা এভাবে উঠান ঝাড়ু দিত । গরম বাতাস বইছে দেখে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে রমিজের স্ত্রী বলে উঠল, ভাবী ঘরের ভিতরে যাও । কাইলা করছে ঝঢ়ি উডব ।
সমিজের স্ত্রী ঘরে ঢুকল আর শুরু হল ঝঢ় । সেকি ঝঢ় না কি । এমন ঝঢ় কেউ দেখেনি কোনো দিন । ঝঢ়ের দাপটে মোল্লা সাহেবের গলাও কেপে কেপে উঠছিল । সমিজ রা ভয় পেয়ে রমিজের ঘরে আসল । আপাতত তাদের মধ্যে ভাল মিল ।
৩।
হঠাত্ কড়াত্ শব্দ । কি হল কেউ জানে না । রমিজের স্ত্রী বলে উঠল, হাত্তির শুড়া উঠছেলো বু হাত্তির শুড়া ।
দূর থেকে ভেসে আসছে থালা পিটানোর আওয়াজ । মাঝে মাঝে শাখের শব্দ আরো ভয়ানক করে তুলছে চারিদিক ।
ঝঢ় থামল পরদিন সকালে । ঘর থেকে বের হয়ে দেখল কাল কি হয়েছে আসলে । সেই আমগাছ । যাকে নিয়ে এত যুদ্ধ এত ঝগড়া । তার কোনো চিহ্নই নেই । লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে সব । রমিজ আর সমিজ দাড়ানো উঠানে । মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে । বৃষ্টির ফোটাও তাদের চোখের পানিকে ঢাকতে পারে নি ।।।।
‪#‎ CNOS

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ ভাল লাগল্

১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:০২

সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: ধণ্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.