নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভূগোল পড়ি তাই সবব্যপারেই আগ্রহ একটু বেশী

সায়ানাইড সাকিব

বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।

সায়ানাইড সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলরক্ত

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫৮


.
১।
বাসটা চলছে । মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে । যাত্রী নামতে নামতে বাসটা পুরো ফাঁকা । বাসে যাত্রী একজন । আমি । সন্ধ্যা নেমে আসল প্রায় । হেল্পার আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে । বাসে ধর্ষণের ঘটনা এখন কতটা ঘটে আমি জানি না । জানার কথাও না । জেলে বসে বাইরের দুনিয়ার খবর খুব কমই পাওয়া যায় । পাশে শব্দ শুনে একটু হতাশ হলাম । কারণ জেল থেকে বের হয়ে আমার একটাই প্ল্যান । সৌরভ কে মারা । এছাড়া আর কোনো প্ল্যান নেই । এখন যদি বাসেই খুন খারাবি করতে হয় তাহলেতো অনেক সময় ধরে করা প্ল্যানের পুরোটাই জলে যাবে ।
-বসতে পারি?
-পুরো বাসটাই ফাকা । এখানেই বসতে হবে?
-না মানে এ সময় বাসের যাত্রি আমি একাই থাকি । তাছাড়া বান্দরবানের এইদিকে বাঙালী পাওয়াই দুষ্কর । তাই একটু ইন্টারেস্ট ফিল করলাম ।
-ওকে বসুন ।
-কোথায় যাচ্ছেন?
-নাকিং পাহাড় ।
-অনেক দূর । তবে ওখানে একটা সুন্দর বাড়ি আছে আমি প্রায় দেখি । হা করে গিলি বলতে গেলে ।
-হ্যা ওটা আমার বাড়ি ।
-ও আচ্ছা । তা জেল খাটা শেষ হয়েছে তাহলে?
-মানে? আপনি কে?
-আমি নাকিং পাহাড়ের পোস্ট মাস্টার । ডিজিটাল পোস্ট মাস্টার বলতে পারেন । আমার কাজ ইমেইল করে দেয়া তারপর অনলাইনে যত হাবিজাবি কাজ আছে তাই করা ।। আর ওই বাড়িটার অপজিটে আমার অফিস প্লাস সরকারি কোয়ার্টার । ওখানেই থাকি আমি । আর আমার জানা মতে ওই বাড়ির মালিক বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞাণী ডঃ সেলিম রায়হান । তার প্রাণের প্রিয় স্ত্রী বায়োলজিস্ট ডঃ শ্রাবণী নীলা রায়হান তাকে খুনের দায়ে জেল খাটছেন আছ ১৪ বছর । খুন না ঠিক এটেম্প টু মার্ডার আরকি ।
-আমি খুন করি নি ।
-আমি কোথায় বললাম আপনি খুন করেছেন? চলুন বাকি রাস্তা হেটে যেতে হবে ।
নামার সময় হেলপার আমার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো । উফফ এত সুন্দর প্ল্যানে একটা উটকো ঝামেলা এসে জুটল এই পোস্টমাস্টার ।
-ও আপু আমার নাম রাশেদ । রাশেদ মোস্তাফা । আমি কিন্তু চা খেতে আসব ।
.
আস্তে আস্তে রাশেদ আর আমি খুব ক্লোজ হতে লাগলাম । এই নাকিং পাহাড়ে, যেখানে আমি আমার জীবণের সকল সুখ বিসর্জন দিয়েছিলাম । সেখানে দাড়িয়েই রাশেদ যেন আমাকে আবার নতুন জীবণের আহবান জানাচ্ছে । কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই যে সেই প্রতিশোধের আগুন আমার দেহে জ্বলে উঠে । সেই চৌদ্দ বছর আগের ঘটনাগুলো একে একে আমার চোখে ফুটে উঠে । সিনেমার মত ।
২।
-নীলা, তোমার কাজ কতদূর? প্রায় শেষ । কেমিকেলগুলো শুধু টেস্টিং এর অপেক্ষা । হ্যা ঠিক বলেছ । সৌরভ আসলেই কাজটা শুরু করে দিবো ।
আমি সেলিম আর সৌরভ একটা এন্টিবডি তৈরি করছি যা অতি অল্প খরচে লিউকোমিয়া রোগীদের শরীরে শ্বেত রক্ত কনিকা তৈরি করবে । এন্টিবডির নাম রাখা হয়েছে নীল রক্ত । আমার নামের সাথে মিলিয়ে । আমরা প্রজেক্ট টা ফাইনাল করে ফেলেছি । আগামী সপ্তাহে এই পাহাড় থেকে বের হয়ে যাব সোজা লন্ডন । সেখানে এই জার্নালটা প্রকাশিত হবে ।
-নীলা?
- বল
-আজ তুমি নিজে রান্না করে খাওয়াবে । রাহিলা কে ছুটি দিয়ে দাও । বেচারি অনেক খাটল এই কয়দিন ।
-হ্যা ঠিক । ওর ও ছুটির দরকার ।
সেদিন দুপুরে ইলিশ মাছ রেধেছিলাম আমি । সেলিম খেয়েছিলো মন ভরে । তারপর ও ঘুমাতে গেল আর আমি কম্পিউটার নিয়ে বসলাম । ডাটা সর্টিং এর কিছু কাজ বাকি ছিল ।
বিকেলে সৌরভ আসল । দুজনে মিলে সেলিমের ঘরে গিয়ে দেখলাম সেলিমের মৃতদেহ । গলাটা সার্জিকাল নাইফ দিয়ে চিড়ে ফাক করে দেয়া হয়েছে ।
*
অতিরিক্ত ঘুমের ঔষুধকেই মৃত্যুর মূল কারণ ধরা হয়েছে । পরবর্তিতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে সার্জিকাল নাইফের ব্যাবহার । অতপর আমার চৌদ্দবছরের জেল ।
৩।
-নীলা চল বেড়িয়ে আসি । ডঃ সৌরভ চক্রবর্তীর বাড়িতে । আমার দাওয়াত । তোমার কথা হয়ত জানে না তাই বলে নি । দেখলে খুশিই হবে ।
রাশেদকে মাথায় নিয়ে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে । রাজি হয়ে গেলাম । একবার মনে হল সৌরভ কে ক্ষমা করে দেই । ওকে মেরে কি লাভ । পরক্ষনেই সেলিমের মুখটা ভেসে উঠলো । মাথায় আগুন উঠে গেল ।
*
পার্টিতে বারবার সুযোগ খুজছিলাম সৌরভ কে আলাদা পাব বলে । কিন্তু সম্ভব হল না । রাশেদ ওর সাথে লেপ্টে আছে । থানার সেই শয়তান ওসিটাও এসে পড়েছে । রাশেদ আর ওসিকে বসিয়ে রেখে সৌরভ ভেতরে গেল । কোথায় গেল জানি । মদ আনতে বেড রুমে ।
-সৌরভ ?
-কে? এই ঘরে কি?
-এক কাপ চা খাওয়াবি দোস্ত? খুব মাথা ধরছে ।
-নীলা?
-হ্যা । আমি । আজ তোকে যে শেষ করে দিব দোস্ত । রেডি হ । সেলিম তোকে ডাকছে ।
-কিভাবে মারব বলে দিচ্ছি । প্রথমে তোকে সার্জিকাল নাইফ দিয়ে একটু ঘষব । তারপর একটু মেলোড্রাইড । প্রথমে পুড়ে ছাই হবি । তারপর উদ্বায়ী হয়ে উড়ে যাবি । কোনো চিহ্ন থাকবে না ।
-না নীলা না । প্লিজ ।
-সেলিম কে তুই এইটুকু কথা বলতেও দিসনি শয়তান ।
-হ্যা আমি স্বীকার করছি ওকে আমি মেরেছি । লুকিয়ে তোর রান্না করা তরকারীতে ঔষুধ মিশিয়েছি । তারপর । তোর ড্রিংসে এমন ঔষুধ মিশিয়েছি যাতে তোর শরীরে ঘুমের ঔষুধ কাজ না করে । কিন্তু ......
...ধুপপ.....
৪।
টানা তিনঘন্টা পর চোখ খুলল নীলা । হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশেদের দিকে ।
-ট্রাংকুলাইজার গান ।
-হ্যা । বাধ্য হয়েছি ।
-মিঃ রাশেদ মোস্তাফা দয়া করে বলবেন কি আমি কার সাথে কথা বলছি ।
-অবশ্যই । এখন আর লুকিয়ে কি লাভ । কাজটা যখন হয়েই গেছে । আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন এ এস পি । বলা বাহুল্য স্পেশাল ব্রাঞ্চ । আজ থেকে তিনবছর আগে বেশ কিছু অস্ত্র আসে মায়ানমার থেকে । এই কাজের মূল হচ্ছে এই সৌরভ চক্রবর্তী । উনার মত হাই প্রোফাইল বিজ্ঞানীর বিপক্ষে তো সরাসরি অভিযোগ আনা যায় না । তাই আমার ওপর দায়িত্ব পরে প্রমান যোগারের । আমি তথ্য যোগার করতে যেয়ে দেখি এই লোক একটা বিশাল ড্রাগ র্যাকেট ও চালায় । কোনো ভাবেই যখন তথ্য যোগার করতে পারছিলাম না তখন তোমার কথা জানতে পারি । সেই থেকে অপেক্ষা । এই দিনের জন্য ।।
*
আজ সেলিমের কথা ভেবে শান্তি পাচ্ছি কারণ গতকালই অস্ত্র মামলা এবং ডঃ সেলিম রায়হান কে হত্যার অভিযোগে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজের জন্য সৌরভের ফাসি হয়ে গেছে । আজ সেলিম খুব শান্তি পাবে । কারণ ওর নীলা আজ সুখে আছে । খুনিটাও শাস্তি পেয়েছে । রাশেদের চিত্‍কারে বাস্তবে ফিরে এলাম আমি । ও ডাকছে । নীলা চলে এসো পাহাড়ে দাড়িয়ে হেমন্তের শেষ সুর্য কে বিদায় জানাই । মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ল কয়েক ফোটা । নীলা কি কাঁদছে? হ্যা । এ যে সুখের কান্না ।
(ইষত্‍ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)
.
.
.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.