নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভূগোল পড়ি তাই সবব্যপারেই আগ্রহ একটু বেশী

সায়ানাইড সাকিব

বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।

সায়ানাইড সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুখনো পাতা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯

১।
বাশার সাহেবের বাসায় আজ বিয়ের ধুম । তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে । বাশার সাহেব খুশি । তারচেয়েও খুশি তার মেয়ে । একজন খুশি হয়েও খুশি নন । মনটা খুত খুত করছে । তিনি বাশার সাহেবের সহধর্মীনি । মিসেস জাহানারা । তিনি কেন যেন খুশি হতে পারছেন না । কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে । তার দাদা পীর ছিলেন । তাই তিনি মনে করেন তার মধ্যে বিপদ টের পাওয়ার ক্ষমতা আছে ।
গাড়ির শব্দে সবাই হৈ চৈ করে উঠল । বর এসেছে । যথারীতি গেট ধরা হল । ছেলে এমবিবিএস ডাক্তার । বর গাড়ি থেকে নামতেই সবাই থমকে গেল । এতো পূর্ব নির্ধারিত সেই ছেলে নয় । এতো পাশের এলাকার অনিকেত । ছেলে হিসেবে ওর সাথে অবশ্য ওই ডাক্তারের তুলনা হয় না । অনিকেত সোজা গিয়ে বাশার সাহেব কে সালাম করল ।
-দেখুন আপনার মেয়ের জন্য আমার চেয়ে ভাল বর আর কোথাও পাবেন না । সো চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন ।
স্মার্ট ছেলে সাথে করে কাজী ও নিয়ে এসেছে । দশ মিনিটের মাথায় বিয়ে হয়ে গেল ।
তারপর অর্ষা কে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওয়ানা হল ।
আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না । এই ঘটনাটা হয়ত ঘটত । অথবা দুই বাড়ির সম্মতিতেই বিয়েটা হত । আজ আটাইশ ফেব্রুয়ারি। বিশ দিন ধরে অনিকেত এই বিছানায় শোয়া। মৃত্যু আর মাত্র কয়েক হাত দূরে । আর আজ অর্ষার বিয়ে । গত জানুয়ারীতে ওদের প্রেমের ছয় বছর হয়েছে । সেই পাচই জানুয়ারির কথা এখনো মনে পড়ে অনিকেতের । বিকেল বেলা অর্ষার সাথে কলেজ গেটে দেখা হবে । ওর জন্য দুটো লাল দুটো সাদা ও দুটো গোলাপী গোলাপ কিনেছে ও । কিন্তু তার আগে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে । রিপোর্টগুলো দেখে ওর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো বড় কাকা । সে দৃষ্টি ভোলার নয় । কাকা হাসপাতালের মেডিকেল এসিসট্যান্ট ছিলেন ।
রিকশা থেকে নামল অনিকেত । অর্ষা দাড়িয়ে আছে । সাধারনত ও অর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় । আজ তেমন কিছু ঘটল না । বলল চল বসি ।
পার্কে বসে বলতে লাগল অনিকেত । দেখ অর্ষা । আমি যে কথাটা বলব এতে তোমার খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই । আমার মা বাবা আমার জন্য সুন্দরী ডাক্তার ছাড়া অন্য কাওকে ভাবতে পারে না । আর তোমার বাবা বিজনেসম্যান । এটাও একটা ফ্যাক্ট । তাই আমি আমার মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই.....
অর্ষা স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠল । তোমার বলা শেষ?
অনিকেত বলল হ্যা ।
অর্ষা উঠে চলে গেলো । একবারও ফিরে তাকায়নি ।
*
কাল একটা অপারেশন হয়েছে । তাতে কোনো লাভ হয়নি । ক্যান্সার ছড়িয়ে গেছে সারা গায়ে । যেকোনো সময় মারা যাবে অনিকেত । সেটা সবাই জানে । আমেরিকার এই হাসপাতালে আজ সাতদিন ধরে পড়ে আছে ও । আজ ওর এম আই টি তে এডমিশন ডেট ছিলো। হয়ত সব ঠিক থাকলে সপ্তাহ খানেক আগে অর্ষার সাথে বিয়ে টাও হয়ে যেত । মনে মনে হাসল ও । ফেসবুকে ঢুকে অর্ষার হলুদ অনুষ্ঠানের ছবি দেখতে লাগল ।
পাশে বসা নার্সকে লক্ষ্য করে একটা হাসি দিলো ও । তারপর বালিশের নিচ থেকে একটা আনকোরা ডায়েরী আর ছয়টা শুখনো গোলাপ বের করে সেগুলোর ছবি তুলল ও ।
"মেঘের দেশ থেকে তোমাকে খুব মিস করব ।"
একলাইনের একটা পোস্ট সাথে ছবিটা । ডায়েরীটা চিনতে অর্ষার অসুবিধা হবে না । ওটা ষষ্ঠ এনিভার্সারীর গিফট। অনিকেতকে দিবে বলেই এনেছিলো । দিতে পারে নি । ফেলে দিয়ে গেছে । আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করল অনিকেত । খুব দুর্বল লাগছে । খুব ।
পাশে মনিটরে কমতে লাগল হার্টবিট । আস্তে আস্তে বক্ররেখাটা সরল রেখায় পরিণত হল ।
**
অর্ষা খুব সেজেছে । ও জানে অনিকেত আসবে । সবাই অবাক হবে এটাতো বিয়ের বর নয় । অর্ষা মোটামুটি শিউর । হঠাৎ গাছ থেকে একটা শুখনো পাতা ঝড়ে পড়ল । অনিকেতের খুব প্রিয় । অর্ষা ভাবল আজ রাতে ওকে দেয়া যাবে ওটা । আনার জন্য উঠতে গেল আর ধাক্কা লেগে অনিকেতের প্রিয় সেন্টের বোতলটা ভেঙে গেল । একটু মন খারাপ হল ওর । তবে বাইরে হইচই শুনে মনটা খুশি হয়ে গেল । অনিকেত এসে গেছে । শুখনো পাতাটা হাতে মুঠ করে চোখ বন্ধ করল ও । একবারে চোখটা খুলবে বাসর ঘরে । অনিকেতের রূমে ।
লাশবাহী গাড়িতে অনিকেতের বডি উঠানো হচ্ছে । একটা উইলো গাছের মরা পাতা কফিনের উপরে পরল । আমেরিকা ওকে শেষ শ্রদ্ধা জানালো ওরই প্রিয় শুখনো পাতা দিয়ে ।।
.
.
"সায়ানাইড সাকিব"
১৯-০৯-১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.