নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভূগোল পড়ি তাই সবব্যপারেই আগ্রহ একটু বেশী

সায়ানাইড সাকিব

বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।

সায়ানাইড সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরবাণীর অভিশাপ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০

.
১।
-আপনার কথামত আপনি বিগত দশ বছর যাবৎ যা ই খাচ্ছেন সবই তেতো?
-জ্বে ডকটর সাহেব । মনে হয় কেউ খাবারের মধ্যে কেউ মেহগুনি গাছের ফল দিয়া দিছে ।
-আগে ডকটর দেখান নি?
-হ্যা
- রিপোর্ট গুলো দেখি?
ড. ইকবালের কাছে রিপোর্ট টা এগিয়ে দিল লোকটা। ড. ইকবাল এম বি বি এস পাশ করে মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন । এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছেন ।
রিপোর্ট গুলো দেখে অবাক হলেন তিনি । এই লোকের সব কিছুই ঠিক আছে । এমন কি স্বাদগ্রন্থীতে অপারেশন করা হয়েছে ।
ইকবাল একটু ইন্টারেস্ট ফিল করল । লোকটাকে নিয়ে পাশের রুমে গেল ।
আচ্ছা আপনার বাড়িতে জীন ভূতের আছর আছে কি?
-না স্যার ।
-বড় বড় আলেম ওলামা দেখিয়েছি ।
-আচ্ছা এমন কোনো ঘটনা?
-না না তাও ঘটেনি ।
-ভাল করে চিন্তা করে দেখুন ।
-একটা ঘটনা অবশ্য ঘটেছিল আজ থেকে অনেক বছর আগে...
২।
পালসার ১৫০ ব্লু এডিশন ।
স্পিড প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি । অর্নবের চালানো নিয়ে আমার কোনোদিনই কোনো আপত্তি ছিলো না। কিন্তু আজ খুব ভয় করছে । তাই বারবার অর্নবকে একরকম ঝাড়িই দিচ্ছিলাম ।
এবার ঈদে আমাদের বাড়িতে এক বিশাল গরু জবেহ করা হয়েছে । সেই মাংসের একাংশ নিয়ে আমি আর অর্নব ছুটছি ৩০ কিলো দুরের এক মাদ্রাসায় । ওদের জন্য মাংস পাঠিয়েছেন বাবা । পুরো রাস্তা না থেমে পার করেছি । বুকটা ধকধক করছিলো । বিশেষ করে যখন ব্যাগটা বদলে গেল ।
৩।
রাজিতের সাথে আমার খুব একটা পরিচয় ছিলো না । আমি না পুরো এলাকাই ওকে খুব ভাল ছেলে জানত । সবক্ষেত্রেই আমার প্রতিদ্বন্দী ও । আমাদের মধ্যে সমস্যাটা সৃষ্টি হয় নিহা কে নিয়ে । নিহা কে? নিহাকে আমি প্রচুর ভালবাসতাম । ও আমার প্রতি একটু দুর্বল ছিল । আমি আর রাজিত একসাথে ওকে প্রোপজ করি । নিহা বলেছিলো আসিফ তোমার হয়ত বিকল্প হয় না । কিন্তু রাজিতের কাছে তুমি ৫১-৪৯ পয়েন্টে হেরে গেলে ।
তারপর থেকেই আমার অধঃপতন শুরু হল। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো অর্নব । ও ই আমাকে বুদ্ধি দেয় এই কাজটা করার । কোরবানী ঈদের আগের রাতে আমরা রাজিতকে অপহরন করি । তারপর তাকে হত্যা করি । ওর চামড়াটাকে ফরমালডিহাইড করে পাশের এলাকার ঈট খোলার চিমনিতে লুকিয়ে রাখি । আর মাংসগুলোকে কেটে একদম কোরবানীর মাংস বানিয়ে ফেলি । এ কাজে অবশ্য আমি আর অর্নব সেরা । মাংস প্যাকেট করে জায়গামত রেখে দেই । পরদিন কোরবানীর মাংস যখন মাদ্রাসায় পাঠানোর জন্য আমাকে দেয়া হয় তখন প্যাকেটটা বদলে দেই আমি ।
এরপর মাংসগুলোকে পাশের জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দেই।
মাথাটা নদীর ধারে পাওয়া গেলেও এই কেসের কোনো কুল কিনারা করতে পারে নি পুলিশ ।
এরপরের কাহীনিটা সাজানো গোছানো। এলাকায় রাজিত স্মৃতি পাঠাগার হল । আর এক বছর পর নিহার সাথে আমার বিয়ে হল ।
৪।
ইকবাল সাহেব জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছেন। তার পিছনে আসিফ সাহেব পেপারওয়েট নাড়াচাড়া করছেন ।
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আসিফ সাহেব আবার শুরু করলেন কথা বলা ।
এই ঘটনার পাচ বছর পর । তখন অর্নবের বিয়ে । আমরা সবাই খুশি। রাজিত তখন ইতিহাস আর বাচ্চাদের খাওয়ার সময়ে শোনানো গল্প ।
বিয়ের আগের রাতে দুইবাসের মাঝখানে চাপা পড়ে মারা যায় অর্ণব ।
তারও ঠিক পাচ বছর পর কোরবানী ঈদের সময় নিহার মুখে এক অজানা অসুখ দেখা দেয় পরীর মত মেয়েটা যখন মারা গেল তখন ওর মুখ দেখার সাহস হয় নি কারো । এর পর আরেক কোরবানী ঈদে আমার এই সমস্যা দেখা দিলো । অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছি । কাজ হয় নি । যাই খাই সব তেতো লাগে এমন কি চিনি ও ।
এ পর্যন্ত বলে থামলেন আসিফ সাহেব । তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টিতে ইকবাল সাহেবের দিকে ।
-দেখুন আসিফ সাহেব আমাকে একটু সময় দিন । এটা নিয়ে একটু ভাবতে হবে আমার ।
আসিফ সাহেব কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন,"আমি ভাল হব তো?"
ইকবাল সাহেব অভয় দিয়ে বললেন আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ।
এরপর টানা তিনদিন ঘটনাটা নিয়ে ভেবেছেন । এই কোরবানী ঈদটা এই নিয়ে ভেবেই পার করলেন তিনি । নিহার কি দোষ ছিলো? ও কেন মরল ।
আজ ঈদের পঞ্চম দিন । দাড়ি কাটছিলেন আর ভাবছিলেন আসিফ সাহেব কে ডেকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন ।
ফোনটা হাতে নিয়েছেন তখনি চিৎকার
-মামা মামা দেখ ।
-কি মামা?
-এই লোকটা তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো না?
ভাগ্নের হাত থেকে ইপেপার টা হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন ইকবাল সাহেব ।
পত্রিকায় লেখা ঈদের দিন বিশিষ্ট শিল্পপতি আসিফ খান বজ্রাহত হয়ে মারা গেছেন ।
ইকবাল সাহেব আসিফ সাহেবের বাসায় ফোন দিলেন । যা শুনলেন তার মধ্যে যে খবরটা সবচেয়ে রোমহর্ষক ছিলো তা হল তার লাশটি ও নাকি পুড়ে বিভৎস হয়ে গিয়েছিল । এর মাধ্যমেই শেষ হল কোরবানীর অভিশাপটা । আবার ভাবনায় ছেদ ঘটালো ভাগ্নী । মামা চল বিরিয়ানি খাবে । কোরবানীর মাংসের বিরিয়ানি । ইকবাল সাহেবের পেটে মোচর দিয়ে উঠল ।।
.
সায়ানাইড সাকিব

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার ছোট গল্প!

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪১

সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.