![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।
.
১
ঘুম ভাঙতেই শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করে উঠল। শীতকাল আসি আসি করছে। সারা শরীর ভিজে গেছে। আমি কখনই নিজের শরীরের দিকে তাকাই না। ওটা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। যাই হোক কাল রাতের কথাও মনে করব না । নইলে কান্না আসবে । এই জঙ্গলের মাঝে বসে কান্না করা খুবই বেমানান । এটা একটা মার্কেট আর আমি বিক্রেতা আবার আমিই প্রোডাক্ট । ইচ্ছা ছিল অর্থনিতী তে পড়ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । সেই ইচ্ছা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় নি ঠিক । তবে তাকে নষ্ট করা হয়েছে ।
ফজরের আজান দিচ্ছে । দ্রুতই এখান থেকে উঠে পাশে বয়ে চলা তুরাগ নদীতে গোছল করলাম । এখনো লোক চলাচল শুরু হয় নি । আবার জঙ্গলে ফিরে এসে কাপড় বদলে নিলাম । নদীর পাড়ে এসে বসলাম । একটা সিগারেট ধরালাম ।
২।
-আচ্ছা । তুমি কি স্বপ্ন দেখ?
-একটা বাড়ি । দুইটা বাবু আর তুমি ।
-ধুর প্রতিদিন এক স্বপ্ন দেখ কেন?
-আমি এ স্বপ্ন আজীবন দেখতে রাজি আছি।
হ্যা। এই স্বপ্নটা আমি আজীবনই দেখতাম। যদি না সেদিন বিকেলে অর্কর আসল চেহারা আমার সামনে ফুটে না উঠত । আমি ওর চতুর্থ রানিং রিলেশন। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আস্তে আস্তে আঘাতটা সয়ে নিতে লাগলাম । এক্ষেত্রে ইশান আমাকে হেল্প করত । মনে প্রানে । ছেলেটা আমাকে খুব ভালবাসত। ওর বুকে মাথা রেখে আমি সব ভুলে যেতাম । এক বছর ছিল আমাদের রিলেশন । একদিন ইশান আর আমার দেখা হল রমনায় । দু তিনদিন ঘুমায় নি ছেলেটা । ও আমাকে একটা চিঠি দিয়ে চলে গেল।
নদী,
আমরা এমন একটি যুগে বাস করি যে যুগে প্রেম হচ্ছে একটা বিজনেস । আমরা একেকটা প্রোডাক্ট। আমার কাছে তুমি একটা প্রোডাক্ট আবার তোমার কাছে আমি । আজ বিকেলে আমাদের নির্দিষ্ট যায়গাটায় থেকো।
ইশান ।
বিকেলে সেই যায়গাটিতে গেলাম । ফুল হাতে বসে আছে একটা ছেলে । এগিয়ে এসে বলল হাই আমি রাসেল । আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
এটা ছিল তিনবছর আগে শুরু হওয়া আমার নতুন জীবনের সূচনা । এরপর কতগুলো প্রেম করেছি সেটা আমি নিজেও বলতে পারব না । আস্তে আস্তে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়লাম । প্রচুর টাকার দরকার পড়ত তখন । তখনই আমার সাথে পরিচয় হয় বিকে এর । এই বি কে এর মানে আমি আজো জানি না । তবে তার বদৌলতে আমার শরীর আজ সবার সামনে পরিচিত । ঢালিউডে কয়েকদিন নায়িকার প্রক্সি দিয়েছি । যেসব অন্তরঙ্গ সিন নায়িকারা করতে চাইতো না সেগুলোর জন্য আমাদের ডাকা হত । কখনো কখনো ভিলেনের মনোরঞ্জনেও আমাদের ব্যাবহার করা হত ।
৩।
শীতের শুরু মাত্র । কুয়াশা অত ঘন হয় নি । আমি নদীর পারে এখনো বসা । বসে বসে ভাবছি । জীবনটা শুরু হয়েছিল বাবার আদরে । মাধ্যমিকে গোল্ডেন আমায় টেনে নিয়ে আসে আমার প্রথম মৃত্যুর দিকে । ঢাকা নামক শহরটাকে আমি যেমন ভালবাসি তেমনি ঘৃণাও করি । আমি রাতের ঢাকার বাসিন্দা । দিনের কর্মচঞ্চল এই শহরটা যখন বিশ্রাম নেয়া শুরু করে আমরা তখন জেগে উঠি ক্লাবে, বারে, কিংবা কারো বিছানায় অথবা জঙ্গলে । আমাদের জগতে আমরা সবাই প্রোডাক্ট । মা বাবা কে মনে পড়ে । স্বপ্নে বাবা মাথায় হাত রেখে বলে উঠে কেমন আছিস নদী মা? আমার তখন মনে হয় বলে উঠি অনেক অনেক অনেক ভাল বাবা । বেশ আছি আমি । মনের অজান্তে দুফোটা পানি চলে এল চোখে । সাথে সাথে মুছে নিলাম । আমাদের জগতে চোখের পানির কোনো দাম নেই ।
এখন আমি হাটছি । আমার পায়ে শিশিরের ছোয়া । হালকা কুয়াশায় আস্তে আস্তে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তুরাগ । এভাবেই আমার জীবনের অতীতগুলোও অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে । হারিয়ে যাচ্ছে আমার মনুষত্ব্য । আস্তে আস্তে প্রোডাক্টে পরিনত হয়েছি ।
সূর্য উঠে গেছে । ঢাকা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে । আমি পরিশ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছি । আবার পূর্ব আকাশ লাল হলে ঢাকা যখন নিজেকে নিয়ন আলোয় মেখে ঝিমিয়ে যাবে ঠিক তখন আমরা জেগে উঠবো । রাতের আকাশে ছড়িয়ে যাবে আমাদের সুখ দুঃখ ভালবাসাকে জমিয়ে তৈরি করা কিছু নিষিদ্ধবচন ।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮
সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: ভাল লাগলো!
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯
সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৯
বর্ণিল হিমু বলেছেন: আমাদের সমাজে আমরা এক একজন প্রোডাক্ট..... ভালো লাগলো....!
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ বলেছেন: ভাল লাগল পড়তে । ধন্যবাদ ।