![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছরের ছয় মাস রাইটিং ব্লকে ভোগা গড়পড়তা বাঙালী ।
((হরর থ্রিলার))
আমি তখন রাশিয়াতে থাকি । পড়াশোনা আর পাশাপাশি আউটসোর্সিং ছিল আমার কাজ । খুব হাড়ভাঙা খাটুনি করতাম । শুক্র শনি দুইদিন ওগুলো বন্ধ রাখতাম । ওইসময় চলত লেখা লিখি । দেশের পত্রিকায় লেখা লিখি করি তখন থেকেই । দেখতে দেখতে পড়াশোনা শেষ হয়ে এল । একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর চাকরী জুটল । ইঞ্জিনিয়ার । কোম্পানীটি বিভিন্ন দেশে আইটি এক্সপার্ট সরবরাহ করে । এছাড়া নিজেদেরও বিশাল আইটি ফার্ম । আমি রাশিয়াতেই আটকে গেলাম । আলেক্সান্ড্রভ শহরে একটা ফার্মে পোস্টিং । সেখানে থাকতাম ।
কপাল ভাল বলতে হয় । যে বাড়িটাতে থাকতাম সেটা আমার পূর্ব পরিচিত এক লোকের । থাকতে চাইলাম, প্রথমে না করলেও পরে দিল । তবে ভাড়া নিবে না । মহাখুশি মনে বাড়িটাতে উঠলাম । বাড়িটার তিনদিকে লেক । দুই তলা বাড়ি । নতুনই বলতে গেলে । ভাড়া দেয়ার জন্যই তৈরি । তবুও আমাকে দিতে রাজি হননি মালিক । টুলেট সাইনবোর্ডটাও অবাক করল আমায় । বাড়িতে একাই থাকি বলতে গেলে । নির্ঝঞ্ঝাট লোক আমি । বাবা দেশে থাকেন । অবসরপ্রাপ্ত সরকারী আমলা । টাকা পাঠানো জরুরী না হলেও পাঠাই । দেশে ব্যাংকে জমা হয় । আয়ের তুলনায় ব্যায় অনেক কম । আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই । ছিলো একজন । খুবই ভালবাসতাম । জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিলো ওর বাবা । আমার বাড়ির লোক না ও করে নি আবার মেয়ের পরিবারের সাথে ঝামেলাও করে নি । আমিও নীল রক্তের অসম্মানের ভয়ে কিছু করতে পারি নি । ওর বিয়ের পর আমি রাশিয়া চলে আসি । মা আসতে দিতে চাননি । যদি রাশিয়ান বিয়ে করি । তবে নারীর নেশা থেকে দূরে থাকতে পারলেও মদ থেকে থাকতে পারি নি । মাসে বার চারেক ভদকা খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকি । লেখা লিখির জন্য বাড়িটার জুড়ি নেই । পূর্ব পাশে বিশাল মাঠ । পশ্চিমে মেইনরোড । বাকি দুপাশে লেক । মেইন রোডের সাথে একটা সেতু বাড়িটার সাথে লোকালয়ের যোগাযোগ রেখেছে । দুই তলায় দুটো করে ফ্লাট । তিনটে রূম । একটা ডাইনিং । একটায় আমি থাকি । একটা গেস্ট রূম আরেকটা লাইব্ররী ।
দিনকাল ভালই যাচ্ছিলো । কারাশনিকভ মাঝে মাঝে এসে দোতলার উত্তরের ঘরে থাকে । আমি নিচের দক্ষিনেরটায় থাকি । জোড় করেও দোতলার দক্ষিনের ঘরটা নিতে পাড়ি নি । মনে দুঃখ থাকলেও কিছু করার ছিলো না ।
বেশ ভালই কাটছিলো দিনকাল । তবে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে । প্রায়শ রাতেই শব্দ পাই কে যেন দোতালায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে । ধুপ ধুপ শব্দ ।রাত বাড়ে শব্দও বাড়ে । কারাশনিকভের সাথে এ নিয়ে কথা বলব বলব করেও বলি নি । বেচারা আমাকে এমনিতেও থাকতে দিতে চায় নি । বাড়িটা খুবই পছন্দ আমার । কেমন যেন একটা গুমোট।পরিবেশ । দুপুর বেলা মনে হয় দখিনা বাতাসে বাড়ির চাপাকান্না কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের গন্ধ পাওয়া যায় । এগুলোকে নিজের মস্তিষ্কের সৃষ্টি ভাবতেই পছন্দ করি আমি । চাকরী লেখালেখি নিয়ে একটা চক্রের মধ্যে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি । ভদকাতেও বিরক্তি এসে গেছে । বন্ধুরা একঘেয়েমি কাটাতে বিয়ে করতে বলে । আমি করি না । বেশ আছি । যখন একা থাকি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আর অরুর কথা মাথায় এনে স্মৃতির জাবর কাটি ।
শব্দটার বিরক্তি বাড়ছে । অফিসিয়াল কাজে সিংগাপুর হয়ে দেশে যাবো । একমাসের ব্যাপার । কারাশনিকভ কে মেইল করে বেড়িয়ে পড়লাম । ফিরলাম ২৮ ফেব্রুয়ারী । বইমেলার বইয়ের গন্ধে মনটা ভরে আছে ।
তেশরা মার্চ । অরুর ৮ম বিবাহবার্ষিকী । স্পষ্ট মনে আছে ৮ বছর আগে ছ্যাক খেয়ে দেশাত্মবোধক গান গেয়েছিলাম টানা ৩ ঘন্টা । সে সব পাগলামিই ছাদে বসে ভাবছি । হঠাৎ পরিচিত শব্দে চমকে উঠলাম । রবীন্দ্র সংগীত! রাশিয়াতে!
বিষ্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম যে গান গাচ্ছিলো সেই মেয়েটা আমার ছাদে ।
-কে আপনি ?
-নতুন ভাড়াটিয়া । দোতলায় সাউথ ফ্ল্যাটে এসেছি ।
মনে মনে কারসনিকভকে ইচ্ছা মত গাল দিলাম । হারমজাদা আমায় দিল না ঘরটা ।
ধীরে ধীরে মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো । নাম নীরা রহমান । বাঙালি । একটা বহুজাতিক কোম্পানীর রিজিয়নাল ম্যানেজার । দেখতে দেখতে বেশ কিছু দিন কেটে গেল । আমি মেয়েটার প্রতি ভীষণ টান অনুভব করলাম । নীরা একটা কাজে বাইরে গেল ২ দিনের জন্য । এমন সময় করসনিকভ এসে উপস্থিত । আমায় অবাক করে দিয়ে ও রাতে কোনো শব্দ শুনি কিনা জিজ্ঞেস করল । আমি বললাম যে দেশ থেকে ফিরে এসে আর শুনি নি । আর কিছু বলার আগেই ও চলে গেল । নীরা ফিরলে ওর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললাম । ও হেসেই উড়িয়ে দিল । আরো একমাস পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম নিরাকে প্রপোজ করব । ওকে ভালবেসে ফেলেছি আমি । সেই আমি যে গত ৮ বছর কোনো মেয়েকে ছুই নি ।
সেই শনিবার আমি বাড়ি ফিরি নি । ফিরলাম পরদিন । হাতে চারটা গাঁদা ফুল আর একটা কার্ডে ভালোবাসার কথা লেখা । দুরুদুরু বুকে দোতলায় উঠলাম । কিন্তু একি ! নীরা বাড়িতে নেই । উল্টো কারাসনিকভ এসেছে । অগত্যা ওর ঘরেই নক করলাম আমি । ওকে নীরার কথা জিজ্ঞেস করতেই ও আমাকে ভিতরে নিয়ে বসাল ।
-নীরাকে কিভাবে চিনো ?
আমি সব খুলে বলতেই কারাসনিকভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ভাগ্যিস তুমি ভাল লোক । তারপর বলতে শুরু করল ,
আজ থেকে আট বছর আগের কথা । আমি তখন এই বাড়িতেই থাকতাম । তখন পাশের ফ্লাটে ভাড়া থাকতো নীরা । একদিন রাতে তোমার পাশের ফ্লাটের বাসিন্দা বরিস পেশকভ নীরাকে ধর্ষণ করে । ইন্ডিয়ান লেডি, তাচ্ছিল্য করে বলল ও । সুইসাইড করল । তারপরের দিনই পাশের ফ্লাটে খুন হয় বরিস আর ওর মদ্যপ স্ত্রী । ওদের ছোট্ট মেয়েটাকে পাওয়া যায় নীরার ঘরে অর্ধেক পচা অবস্থায় । সেটা ছিল শুরু । এরপর থেকে কেউ আর এই বাড়িতে থাকতে পারে না । আমি ছাড়া । আমার সাথে মেয়েটার খুব ভালই বন্ধুত্ব ছিল । ওর মৃত্যুতে আমিও ভেঙে পরি । এরপর থেকে কেউ এ বাড়িতে থাকতে পারে না । তুমি জোর করে থাকছ । নীরার ব্যপারে তোমায় বলি নি কারণ ও তোমার ফ্ল্যাটে থাকা ভয় দেখায় না ।
নিজের ঘরে ফিরতেই খুব কান্না পেল । কেন বারবার এমন হয় আমার সাথে । পরদিনই শুনলাম আমাকে লন্ডন বদলি করা হয়েছে । পরশুই জয়েন ডেট । বাসায় গিয়ে লোক জন নিয়ে সবকিছু ট্রাকে তুলেই এয়ারপোর্ট উদ্দ্যেশ্যে রওনা হলাম । কালাসনিকভ দূরে দাড়িয়ে হাত নাড়ছে । কি মনে করে যেন নীরার ঘরের দিকে তাকালাম । হার্ট একটা বিট মিস করল । নীরা দাড়িয়ে আছে চোখটা ভেজা । যতক্ষণ দেখা যায় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি । তারপর টের পেলাম আমিও কাঁদছি । মনে মনে বললাম,”নীরা……. আমি আবার ফিরব । আবার ।
পুনশ্চঃ এর প্রায় একবছর পর আবার আলেকজান্দ্রভে ফিরে আসি । ততদিনে বাড়িটা ভেঙে একটা বিশাল এপার্টমেন্ট তৈরি করেছে কারাশনিকভ । যার নাম দিয়েছে ,”নীড়া কমপ্লেক্স” ।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮
সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: সফটকোর হরর ।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৮
রানা আমান বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগে গেল আমার ।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
সায়ানাইড সাকিব বলেছেন: উয়াও । থেংকচ
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪০
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: ভালো লাগলো। তবে হরর হিসেবে যেই চমকটা পাবো ভেবেছিলাম সেটা পাইনি।