![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের সুদিন দেখার অপেক্ষায়....
মাহবুব আলম স্যার.....। যার কথা না বললেই নয়। পেশায় একজন রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক। শুনেছি মা-বাবার পরেই শিক্ষকের স্থান, কিন্তু ইনার স্থান আমি কোথায় দিব ভেবেই কুল পাই না। যদিও আমি একটি সরকারী কলেজে পড়তাম কিন্তু রসায়ন প্রাইবেট নামক যে বস্তু আমরা গলাধঃকরন করতাম সেটা হতো একটা বেসরকারী কলেজের শিক্ষকের কাছে। ইনিই সেই মাহবুব স্যার।
তিনি যে কলেজের শিক্ষক ছিলেন সে কলেজটা পল্লি অঞ্চলে ভিতরে ছিল। কিন্তু আমাদের কলেজ শহর অঞ্চলে। আমাদের কলেজের সাথে নামকরা আরও একটি বেসরকারি কলেজ ছিল। শহর অঞ্চলের এই দুটি কলেজ থেকে বেশ বড় সংখ্যার ছাত্র-ছাত্রী তার কাছে প্রাইবেট পড়তো।
প্রায়শই তিনি আমাদের সাথে মজা করতেন। আমাদের হাসাতেন, কৌতুক টাইপের গল্প নিয়ে হাস্যরস করতেন। মাঝে মাঝে আমাদের ফোন বেজে উঠত, স্যার আমাদের কলম জরিমানা করতেন। আমরা অনেক সময় দিতাম। বেশিরভাগ সময়ই দিতাম না। এভাবেই চলছিল।
হঠাৎ কোনো একটা কারনে আমি মাহবুব স্যারের পল্লি-গ্রামের কলেজটাতে ট্রান্সফার হয়ে আসি। তখন থেকেই আমার অবাক হবার পালা শুরু। এক অন্যরকম মাহবুব স্যারের সাথে পরিচয় হয় আমার। তার পা হতে মাথা পর্যন্ত এক অন্যরকম বিস্ময়। তিনি এখন আর আগের মতো হাসেন না, আগের মতো হাস্যরসাত্মক কৌতুক করেন না। আমাকে আর জিজ্ঞস করেন না, কিরে কি অবস্থা তোর? আজকের পড়াটা বুঝছিস তো?
এখন আর তিনি কলম জরিমানা করেন না, ফোন বেজে ওঠলে ক্লাস থেকে বের করে দেন। একদিন আমাকেও ক্লাস থেকে বের করলেন। আমার কোনো কথা শুনলেন না। আমি সবার সামনে অপমানিত হলাম। বের হয়ে গেলাম। আরও একদিন অকারনে অপমানিত হতে হলো। উনার প্রতি একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হলো। একদিন ক্লাস শেষ, সবাই ক্ষুধার্ত। তারপরও আমাদের প্রাইবেট পড়তে হবে। মাহবুব স্যার বললেন- 'তোমরা থাকো, আমি আসছি'। সেই আসা দেড় ঘন্টা পর।
এসেই বললেন তিনি আজকে পড়াবেন না। খুব খারাপ লাগলো, কষ্ট হলো। এরকম প্রায়শই হতো। উনাকে গাল দিতে শুরু করতাম, সহজে উনার ছায়া মাড়াতাম না। শহরের শিক্ষার্থীদের পিছনে সময় দিতেন বেশী, আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে উনার ভাববার সময় নেই। এক সময় প্রাইবেট ছেড়ে দিলাম। ক্লাসে আমাদের কয়জনকে সুযোগ পেলেই ঝাড়ি দিতেন, সাথে অকারনে বকাবকি ফ্রি। শেষে এটার রহস্য উৎঘাটন করলাম। আমরা প্রাইবেটে হাতে গোনা গুটিকয়েক কয়জন শিক্ষার্থী ছিলাম বলেই তিনি প্রাইবেট পড়াতে চাইতেন না। কারন, এখানে বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা একবারেই ক্ষীন। শহরে তার প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী। ওখানে প্রতিটি ঘন্টা একটা ভালো মানের অর্থ ফলায়। উনি চাইতেন আমরা যেনো শহরে গিয়ে উনার কাছ প্রাইবেট পড়ি। কিন্তু এটা সম্ভব ছিল না। আমরা অর্থের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারতাম না। একারনে সব গল্পের সূত্রপাত ঘটেছে। আর কলেজটার শিক্ষক হওয়াতে আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতেন তিনি। যেনো সবাই উনাকে একটু অন্যভাবে চিনে। আমি এবং আমাদের সহপাঠীরা কিছুই করতে পারতাম না। কারন উনার কাছে ব্যবহারিকের ৫০ নম্বর আছে। তাই কিছুই করার ছিলো না। কিছু করতে গেলে হাত ফসকে সব নম্বর চলে যাবে।
কলেজের বেশীরভাগ বিজ্ঞানের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের অকারনে অপদস্থ করতে মজা পেতেন, অন্যরকম সুখ পেতেন। আর শিক্ষার্থীরা তাদের অনুকরনে পুতুল নাচ দিতেন। এটা অধিকাংশ কলেজেই ঘটে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা যেনো শিক্ষকের হাতের পুতুল। যেভাবে নাচায় সেভাবেই নাচে।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা আজও প্রাইবেট, কোচিং এবং ব্যবহারিক নম্বরের মধ্যে আবদ্ধ। দেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞানের ছাত্ররা এই ঘটনার শিকার। এক্ষেত্রে মাহবুব স্যার একটা উদাহরন মাত্র।
©somewhere in net ltd.