নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক

Short Memory

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নার্গিসকে লেখা নজরুলের অমর প্রেমপত্র

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫৪

বাসর রাতেই ফেলে যাওয়া স্ত্রী নার্গিসকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর নজরুল এর লেখা চিঠিটা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বিশ্বের সেরা প্রেমপত্রগুলোর একটি।
এই ১৫ বছরে নার্গিস বহুবার নজরুলকে চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু কবি তার জবাবে কোন চিঠি দেননি। প্রত্যুত্তর দিয়েছেন তার অসংখ্য গীতিকবিতায়। ১৫ বছর পর লেখা প্রথম ও শেষ চিঠিতে নার্গিসের প্রতি তার আবেগ-অনুরাগ থেকেই বুঝা যায় নার্গিস-নজরুল এর প্রেম ও ছিল এক কালজয়ী প্রেম উপাখ্যান।

সেই চিঠিটিঃ

কল্যানীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নব বর্ষার নবঘন সিক্ত প্রভাতে। মেঘ মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনের বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি এক বারি ধারায় প্লাবন নেমেছিল তা তুমিও হয়তো স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নবমেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার। এই মেঘদূত বিরোহী যক্ষের বানী বহন করে নিয়ে গিয়েছিল কালিদাসের যুগে, রেবা নদীর তীরে, মালবিকার দেশে, তার প্রিয়ার কাছে। এই মেঘপুঞ্জের আশীর্বাণী আমার জীবনে এনে দেয় চরম বেদনার সঞ্চার। এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গ লোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক, তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দেই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখে শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো,তাহলে আমায় ভুল বুঝবে- আর তা মিথ্যা।

তোমার উপর আমি কোনো ‘জিঘাংসা’ পোষণ করিনা এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি আসীম বেদনা! কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি তা দিয়ে তোমায় কোনোদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না আমি ধুমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যান রূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথম দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্বপ্রথম ভালবাসার আঞ্জলি দিয়েছিলাম, সে রূপ আজো স্বর্গের পারিজাত মন্দারের মতো চির অম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের সে আগুন বাইরের সে ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি।

তুমি ভুলে যেওনা আমি কবি আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয়। আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাতের মতো নিষ্ঠুর নয়। আমার অন্তর্যামী জানেন (তুমি কি জান বা শুনেছ জানিনা) তোমার বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই, দাবীও নেই।

তোমার আজিকার রূপ কি জানিনা। আমি জানি তোমার সেই কিশোরি মুর্তিকে, যাকে দেবী মূর্তির মতো আমার হৃদয় বেদীতে অনন্ত প্রেম, অনন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। সেদিনের তুমি সে বেদী গ্রহণ করলেনা। পাষান দেবীর মতই তুমি বেছে নিলে বেদনার বেদিপাঠ …জীবন ভরে সেখানেই চলেছে আমার পূজা আরতি। আজকার তুমি আমার কাছে মিথ্যা, ব্যর্থ। তাই তাকে পেতে চাইনে। জানিনে হয়ত সে রূপ দেখে বঞ্চিত হব, অধিকতর বেদনা পাব,–তাই তাকে অস্বীকার করেই চলেছি।

দেখা? না-ই হল এ ধূলির ধরায়। প্রেমের ফুল এ ধূলিতলে হয়ে যায় ম্লান, দগদ্ধ,হতশ্রী। তুমি যদি সত্যিই আমায় ভালবাস আমাকে চাও ওখান থেকেই আমাকে পাবে। লাইলি মজনুকে পায়নি, শিরি ফরহাদকে পায়নি, তবু তাদের মত করে কেউ কারো প্রিয়তমাকে পায়নি। আত্মহত্যা মহাপাপ, এ অতি পুরাতন কথা হলেও প্রেম সত্য। আত্মা অবিনশ্বর, আত্মাকে কেউ হত্যা করতে পারেনা। প্রেমের সোনার কাঠির স্পর্শ যদি পেয়ে থাকো, তাহলে তোমার মতো ভাগ্যবতী আর কে আছে? তারি মায়া স্পর্শে তোমার সকল কিছু আলোয় আলোময় হয়ে উঠবে। দুঃখ নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেলেই সেই দুঃখের অবসান হয়না। মানুষ ইচ্ছা করলে সাধনা দিয়ে, তপস্যা দিয়ে ভুলকে ফুল রূপে ফুটিয়ে তুলতে পারে। যদি কোনো ভুল করে থাক জীবনে, এই জীবনেই তাকে সংশোধন করে যেতে হবে; তবেই পাবে আনন্দ মুক্তি; তবেই হবে সর্ব দুঃখের অবসান। নিজেকে উন্নত করতে চেষ্টা করো, স্বয়ংবিধাতা তোমার সহায় হবেন। আমি সংসার করছি, তবু চলে গেছি এই সংসারের বাধাকে অতক্রম করে উর্ধ্ব লোকে—সেখানে গেলে পৃ্থিবীর সকল অপূর্ণতা, সকল অপরাধ ক্ষমা সুন্দর চোখে পরম মনোহর মূর্তিতে দেখা যায়।

হঠাৎ মনে পড়ে গেল পনর বছর আগের কথা। তোমার জ্বর হয়েছিল, বহু সাধনার পর আমার তৃষিত দুটি কর তোমার শুভ্র ললাট স্পর্শ করতে পেরেছিল; তোমার তপ্ত ললাটের স্পর্শ যেন আজো অনুভব করতে পারি। তুমি কি চিয়ে দেখেছিলে? আমার চোখে ছিলো জল, হাতে সেবা করার আকুল স্পৃহা, অন্তরে শ্রীবিধাতার চরণে তোমার আরোগ্য লাভের জন্য করুন মিনতি। মনে হয় যেন কালকের কথা। মহাকাল যে স্মৃতি মুছে ফেলতে পারলেন না। কী উদগ্র অতৃপ্তি, কী দুর্দমনীয় প্রেমের জোয়ারই সেদিন এসেছিল। সারা দিন রাত আমার চোখে ঘুম ছিল না।

যাক আজ চলেছি জীবনের অস্তমান দিনের শেষে রশ্মি ধরে ভাটার স্রোতে, তোমার ক্ষমতা নেই সে পথ থেকে ফেরানোর। আর তার চেষ্টা করোনা। তোমাকে লিখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি বিশ্বাস করো আমার অক্ষয় আশির্বাদ কবচ তোমায় ঘিরে থাকবে। তুমি সুখি হও, শান্তি পাও এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস করো, আমি তত মন্দ নই এই আমার শেষ কৈফিয়ৎ।

ইতি
নিত্য শুভার্থী
নজরুল ইসলাম


[সংগৃহীত]

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৬

এম এম করিম বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আসলেই কি হয়েছিলো সেটা বোধ হয় কেউ কখনো জানবেনা।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৬

সালমান মাহফুজ বলেছেন: সত্যিই দারুণ হৃদয়স্পর্শী । কবি তাঁর প্রেম-অভিমান দুটোই চমৎকার শৌল্পিক ভাষায় খোদাই করে দিয়ে গেছেন এই চিঠিতে ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১৮

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: আমার প্রায়ই মনে হয় কি জানেন- নজরুল এর সুদীর্ঘ জীবনের বাকশক্তিহীনতাটা শুরু থেকেই ছিল না।
শত রকমের মনের দুঃখে নজরুল নিজেই একসময় চুপ হয়ে যান, গুটিয়ে নেন। :(

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:


নজরুল ইসলাম, অনেক বড় ভুল করেছিলেন।

নার্গিসকে উনি অনেক কস্ট দিয়েছিলেন, মন খারাপ হয়, নার্গিসের কথা মনে হলে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: নার্গিস শিক্ষিত ও বিচক্ষণ মহিলা ছিলেন এবং তার সাথে যতজন কবি-সাহিত্যিকদের দেখা হয়, তাদের ভাষ্যমতে নার্গিস কিন্তু কখনই নজরুলকে দোষারোপ করেননি। অবশ্য, স্পষ্ট কিছুও বলেলনি।
ধরে নেয়া যায়- নজরুল এর ভিতরে এমনই অজানা প্রচন্ড কষ্ট ছিল, যার কারণে নজরুলের মত ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষের থেকে যাওয়াটা সম্ভব হয়নি।

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০৯

পার্থ তালুকদার বলেছেন: চমৎকার।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৩৭

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: :)

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২০

মাথা ঠান্ডা বলেছেন: অসাধারন।

৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অনেক বিখ্যাত চিঠি। সম্ভবত কবির কুৎসা রটনা করেছেন কিছু লোক।

আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস করো, আমি তত মন্দ নই এই আমার শেষ কৈফিয়ৎ।

এটুকু থেকে তাই প্রতীয়মান হয়েছে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: ঠিক তাই

৭| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

সোহানী বলেছেন: অসাধারন চিঠিটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

আমি একজন মেয়ে হিসেবে নার্গিসের ক্ষতটা বুঝি। কি গভীর দু:খ নিয়ে তিনি ১৫ বছর ধরে কবিকে চিঠি লিখে গেছেন.... যতই রাগ দু:খ থাকুক ভালোবাসার কাছে তা হার মানা উচিত ছিল। তাই সময়ের কাঠগড়ায়, ভালোবাসার আদালতে কবিকে বার বার দাড়াঁতে হবেই।

++++++++

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: নার্গিস শিক্ষিত ও বিচক্ষণ মহিলা ছিলেন এবং তার সাথে যতজন কবি-সাহিত্যিকদের দেখা হয়, তাদের ভাষ্যমতে নার্গিস কিন্তু কখনই নজরুলকে দোষারোপ করেননি। অবশ্য, স্পষ্ট কিছুও বলেলনি।
ধরে নেয়া যায়- নজরুল এর ভিতরে এমনই অজানা প্রচন্ড কষ্ট ছিল, যার কারণে নজরুলের মত ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষের থেকে যাওয়াটা সম্ভব হয়নি।

৮| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

উড়াল পঙ্খী সজল বলেছেন: অসাধারন

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই

৯| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

কি চমৎকার শৈল্পিক কারুকার্যময় চিঠি।

ধন্যবাদ শেয়ারে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: এজন্যই 'অমর প্রেমপত্র'

১০| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ২:২৪

বাঘামিলন বলেছেন: চমৎকার

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.