![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত[1]।”
সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থেকে হারাম অর্থ গ্রহণই হচ্ছে ঘুষ। এই ঘুষ যারা দেয় তারাও সমান অপরাধী। বেআইনী ফায়দা হাসিলের জন্য যারা কর্তাব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন সুবিধা বা টাকা পয়সা দিয়ে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে তারাই এই গুনাহ সংঘটনের অন্যতম শরীক। যারা ঘুষকে একটি অঘোষিত ব্যবস্থা হিসেবে প্রশ্রয় দেয় তারাই অপরাধী। দেখা যায় মাঝে মধ্যে বেড়াই ক্ষেত খায়, রক্ষকই হয় ভক্ষক। ন্যায়কে যাদের লালন করার কথা তারাই অন্যায়কে ধারণ করছে। এভাবে দুর্নীতির ডালপালা সারা দেশে বিস্তার লাভ করে।
ঘুষ বা উৎকোচ আসে নজরানার রূপ ধরে। “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন- সরকারী কর্মচারীর কি হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না[2]।”
একবার এক সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে কিছু উপহার দিলেন। উপহারগুলো দেখে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন- তুমি যে বললে এগুলো বায়তুলমালের আর এগুলো আমার উপহার! তুমি এই পদ ছেড়ে বাপের ঘরে বসে থাক, দেখ তো কে তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসে।” সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার এই জ্ঞান ও সাহসের জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল-ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন। কবি ফররুখ বলেছেন-
“আজকে উমর পন্থী পথিক দিকে দিকে প্রয়োজন
পিঠে বোঝা নিয়ে পাড়ি দেবে যারা প্রান্তর প্রাণপণ।”
কিন্তু হায়! এখন মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের এই সমাজের চিত্র দেখলে প্রশ্ন জাগে ইসলামের সেই মহান শিক্ষার প্রতিফলন কোথায়? এ জন্যেই কবি নজরুল বলেছেন:
ইসলাম সে তো পরশ মানিক তারে কে পেরেছে খুঁজি,
পরশে তাহার ধন্য যারা তাদেরই আমরা বুঝি।
ইসলামের পরশ আমাদের কলবে পৌঁছেনি বলেই আজ আমরা ঘুষকে উপহার ভাবি। অফিসের ফাইল ঘুষ না পেলে সামনে চলে না। যার ফলে দেশ ও জাতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয় না। কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে মেধাহীনদের রাজত্ব চলে। ঘুষ দিয়ে যে চাকুরী পেতে হয় সেই চাকুরীকে সেবা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর তাই ঘুষ দিয়ে শিক্ষকের চাকুরী পাওয়া লোকটির কাছ থেকে তার ছাত্ররা কতটুকু এলেমদার হবে তা নিয়ে মনে অনেক সংশয় থেকে যায়।
এই ঘুষের জামানায় পাকা দড়িবাজরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে দেখে আল্লাহর নেক বান্দারা মাঝে মাঝে ভাবে, যে কি নেক নিয়তের কি কোনো দাম নেই? এটা কি বোকামি? কিন্তু তিতা ফলের চারা লাগিয়ে যেমন সুমিষ্ট ফলের আশা করা যায় না তেমনি দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে উঠা ব্যবস্থাপনার কাছে কোনো কল্যাণ আশা করা যায় না। তাই ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ قَوۡلًا غَيۡرَ ٱلَّذِي قِيلَ لَهُمۡ فَأَنزَلۡنَا عَلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ رِجۡزٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ ﴾ [البقرة: ٥٩]“এরপর যালিমরা বদলে দিল যা তাদের বলা হয়েছিল। তার পরিবর্তে অন্য কথা। এ কারণে যারা যুলুম করল তাদের উপর নাযিল করলাম আকাশ হতে এক মহাশাস্তি। কারণ, তারা অধর্ম-অন্যায় কাজ করেছিলো।” (আল-কুরআন, ২:৫৯)
এ আয়াতে সত্যকে বদলে দেওয়ার শাস্তির উল্লেখ আছে। ঘুষও সত্যকে বদলে দেয়। পাসকে ফেল দেখিয়ে দেয়। একজন হকদারের হক বদলে দিয়ে অন্যকে অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়।
অতীত যামানায় যারা ঘুষ গ্রহণ করত, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ধর্মের বাণীতে জালিয়াতি করত তাদের সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿ فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩ ﴾ [البقرة: ٧٩]সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে- এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তরা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের।” (আল-কুরআন, ২:৭৯)
ঘুষ হচ্ছে একটি হারাম জিনিস। যদিও ঘুষখোর এটাকে হারাম মনে করে না। আয়াতে ঘুষ খেয়ে ধর্মের বাণী বদলে দেওয়ার কথা বলা হলেও সকল জালিয়াতির জন্যই শাস্তি প্রযোজ্য।
ঘুষ সব সময় টাকা-পয়সা হয় না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান বস্তু ও বিষয় হতে পারে। এ জন্যই হাদীসের ভাষায় এটিকে বলে ‘রিশওয়াহ’ বা দড়ি। দড়ি দিয়ে কুপের ভেতর থেকে বালতি টেনে উঠাবার মত ঘুষ অন্যের হক নিজের ঘরে নিয়ে আসে। এজন্য এই প্রক্রিয়ায় তিনটি পক্ষ থাকে। ১. রাশী راشى যে ঘুষ প্রদান করে, ২. মুরতাশী مرتشى যে ঘুষ গ্রহণ করে এবং ৩. রায়েশ رائش যে অনুঘটক হয়ে কাজ করে। আল্লামা সান‘আনী তার বিখ্যাত গ্রন্থ সুবুলুস সালাম শারহু বুলুগিল মারাম গ্রন্থে বলেন- রায়েশ বা ঘুষের ঘটক হচ্ছে্ ওই ব্যক্তি যে ঘুষখোর ও ঘুষদাতার মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে থাকে।[3] তবে মূলপক্ষ হচ্ছে দুটি: যে ঘুষ দেয় ও যে ঘুষ খায়।
২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩১
ভাঙ্গা মাস্তুল!! বলেছেন: ভাই আপনের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স কি ঘুষ দিয়া করছেন নাকি ঘুষ ছাড়া করছেন!!
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১৭
রওনক বলেছেন: +,
একটা লিংক, Click This Link -এই বিষয়ে আপনার মত কী?