![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসলে পুলিশ কেন গ্রেফতার করে? ইঁদুর কেন কাটে? সাপ কেন দংশন করে? এই প্রশ্ন গুলু প্রায় একই রকমের। উত্তর একই রকমের না হলেও তাদের মধ্যে মিল আছে।
ছোট বাচ্ছাদের ভয় লাগানোর জন্য একসময় বর্গি শব্দটা ব্যাবহার হলেও পরে এখন পুলিশ শব্দটাই যথেষ্ট। পুলিশ দেখলে কি শুধু ছোটরা ভয় পায়? কিশোর, যুবক, বৃদ্ব, সকল পেশার এবং সকল শ্রেনীর মানুষই ভয় পায়। আর বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ হলে সেই ক্ষেত্রে পুলিশকে সবচেয়ে বেশী ভয় অবশ্য সাধারন মানুষও এত ভয় পায় না পুলিশকে।
সাধারনত গ্রেফতারকরনে পুলিশের দুই শ্রেনীর ক্ষমতা আছে: ১. আদালত কতৃক আদীষ্ট হয়ে বা আদালত কতৃক ওয়ার্যান্ট প্রাপ্ত হয়ে, ২. নিজস্ব গ্রেফতারের আইনগত ক্ষমতা বলে।
বাংলাদেশে যত আইন আছে এবং সে মতে যত অপরাধ আছে সব ক্ষেত্রেই আদালতের ক্ষমতা আছে অপরাধীর বিরুদ্বে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করার, কিন্তু সবক্ষেত্রে পুলিশ আসামীকে বা অপরাধীকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা রাখেনা।ফউজদারী আইনের জগতে দুটি শব্দ আছে: ১. আমলযোগ্য অপরাধ বা কগনিজেবল অফেন্স, ২. অ আমলযোগ্য অপরাধ বা নন কগনিজেবল অফেন্স। এই দুইটা অপরাধের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে ফউজদারী কার্য্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা- ৪ এর (এফ) এবং ( এন) আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেই সব অপরাধকে, যা করলে পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে, আর অ আমলযোগ্য অপরাধ বলতে বুঝানো হয়ছে সেই সমস্ত অপরাধকে, যা করলে আসামীকে পুলিশ আদালতের আদেশ ব্যতীত গ্রেফতার করতে পারে না।
অপরাধ বলতে বুঝানো হয়েছে সেই সকল কাজ বা কার্য্য বিরতিকে যাহা কোন আইনে অপরাধ হিসাবে সংগায়িত করা হয়েছে ( ধারা-৪(ও))। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর অধিনেকৃত অপরাধে জডিত অপরাধীর ক্ষেত্রে, আদালত তাকে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতে চাইলে ফউজদারী কার্য্যবিধি ১৮৯৮ এর ২য় তফসীলের ৪ র্থ কলামের বিধি অনুসরন করবেন আর অন্যকোন বিশেষ আইনে কৃত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান অনুসরন করবেন। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর অধিনেকৃত অপরাধীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশ ফউজদারী কার্য্যবিধি, ১৮৯৮ এর ২ য় তফসীলের ৩য় কলাম অনুসরন করবে।
এবার আসি গ্রেফতার বিষয়ে ফউজদারী কার্য্যবিধির বিধান সমুহে, এই বিষয়ে ধারা- (৫৪- ৫৯) পাঠ্য।
"৫৪ ধারা " শব্দটা বাংগালীর বড়ই পরিচিত একটা শব্দ, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দল গুলুকে দমানোর জন্য পুলিশকে এই ধারার অধীনে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার জন্য উদ্ভুদ্ব করে। শুধু তাই নয় শান্তির সময়েও পুলিশ সাধারন বা অসাধারণ সকল ধরনের মানুষকে গ্রেফতার বা হয়রানি করতে এই ধারার বিশেষ ব্যাবহার করে থাকে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি এই যে গ্রেফতার বিষয়ে ৫৪ ধারা একটা কম্পলিট আইন, পুলিশের গ্রেফতার করার যত ক্ষমতা সব এই ধারাতেই। ৫৪ ধারার ক্ষমতা ব্যাতীত পুলিশ কোন ব্যাক্তিকে কোন দিনও গ্রেফতার করতে পারেনা, এই বিষয়ে আইনজিবি, আদালত ও সাধারন জনগন সবার মধ্যেই একটা ভুল ধারনা আছে। ৫৪ ধারার ক্ষমতাব্যাতীত পুলিশ একটা বিষ বিহীন সাপ কামডাতে পারবে, ভয় দেখাতে পারবে কিন্তু মেরে ফেলতে পারবে না তেমনি পুলিশও সব করতে পারবে কিন্তু আসামী গ্রেফতার করতে পারবে না।আমরা সাধারনত ৫৪ ধারায় গ্রেফতার মানে সন্দেহজনক গ্রেফতার বুঝি? এই সন্দেহজনক গ্রেফতার কি? আমলযোগ্য অপরাধ সংগঠন করার সন্দেহজনক সম্ভাবনা। এইটা আসলে শুধু মাত্র একটা শ্রেনী বাকি রয়েছে আরও ৮ টা শ্রেনী।
৯টি বিশেষ শ্রেণীর অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ ৫৪ ধারার অধীনে, এই ৯ শ্রেনীর অপরাধীকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশের আদালতের আদেশ লাগেনা, অবশ্য এই ৯ শ্রেনীর বাইরে খুব কমই অপরাধী আছে।এবার দেখা যাক এই গুলু কি কি:
১. আমলযোগ্য অপরাধ যদি কেউ করে থাকে অথবা তাতে জড়িত থাকার সম্ভাবনা/ সন্দেহ করার যুক্তিযুক্ত কারন। এইটা একটা ব্যাপক ক্ষমতা এর কারনে পুলিশ এত ক্ষমতাশালী এবং পুলিশের চাকরি এত লোভনীয়।
২. কারও কাছে ঘর ভাংগার সরঞ্জামাদি থাকলে।
৩. সরকার কাউকে অপরাধী বলে ঘোষনা করলে।
৪. কারও কাছে চোরাইমাল পাওয়া গেলে।
৫. পুলিশ কে তার কাজে বাধাদান বা আইনগত হেফাজত থেকে পলায়নকারী ব্যাক্তি।
৬. সশস্ত্রবাহিনী হতে পলায়নকারী ব্যাক্তি।
৭. দেশের বাইরে কৃত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যাক্তি, যদি অপরাধটি বাংলাদেশে করলে অপরাধ হয়ে থাকে।
৮. সাজাভোগ করে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী যদি একই অপরাধ আবার করে।
৯. অন্যকোন থানা হতে আসামী গ্রেফতারের অনুরোধ পাওয়া গেলে।
এর বাইরে ধারা- ৫৫ মতে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় ভবঘুরে, অভ্যাসগত চোর, ডাকাত,ছিনতাইকারী, গৃহ ভংগকারীদের গ্রেফতার করতে পারে।
ধারা- ৫৬ তে শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই বিনা পরোয়ানায় আসামীকে গ্রেফতারের ক্ষমতা" দেয়া হয়েছে, তিনি যদি অন্যকোন পুলিশকে এই ক্ষমতা অর্পন করতে চান তবে লিখিত আদেশ দিয়ে এই ক্ষমতা অর্পন করতে হবে, এবং এইক্ষেত্রে আসামী দেখতে চাইলে সেই লিখিত আদেশ খানা তাকে দেখাতে পুলিশ বাধ্য থাকবে।
ধারা- ৫৭ তে অ আমলযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকেও গ্রেফতার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যদি সে শুদ্ব নাম ঠিকানা পুলিশকে না জানায়, তবে শুদ্ব তথ্য দেয়ার সাথে সাথে তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
ধারা- ৫৯ এ বলা হয়েছে সাধারন ব্যাক্তিও চাইলে আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে, খুশী হবার কোন কারন বাস্তবে পুলিশ না আসা পযন্ত আসামীকে আটক রাখার ক্ষমতা দিয়েছে গ্রেফতারের নয়।
এবার আসি সকল পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে কিনা? উত্তর না আমি আমার লেখায় যতবারই পুলিশ শব্দটা ব্যাবহার করেছি আইন সেই জায়গা গুলুতে বারবার পুলিশ অফিসার শব্দটা ব্যাবহার করেছে। পুলিশ অফিসার শব্দটির ব্যাখ্যা পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেংগল, ১৯৪৩ বা সংক্ষেপে পি আর বির কোথাও নেই। কিন্তু পুলিশ অফিসার বলতে কাদের বুঝায় তার একটা আভাষ পাওয়া যায় ফউজদারী কার্য্যবিধির ধারা- ৪(পি) এ, এইখানে কনস্টেবল ছাড়া তার উপরের পদবী ধারী বাকি সকল পুলিশকে অফিসার হিসাবে গন্য করা হয়।
আসলে ৫৪ ধারাই সব, গ্রেফতার বিষয়ে পূর্নাংগ আইন। পুলিশকে দন্ডবিধির অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে ৫৪ ধারা মতেই করতে হয়। আর বিশেষ আইনসমুহ অনুসারে গ্রেফতার করতে হলে ৫৪ ধারা ছাড়া আর কোন উপায়ই নাই। কারন এই সমস্ত আইন সমুহে গ্রেফতার সম্পর্কিত বিধানে একটাই কথা লিখা থাকে আর তা হল "এই আইনের অধীনে অপরাধগুলু হবে আমলযোগ্য" আর আমলযোগ্য অপরাধে গ্রেফতার করতে হলে অবশ্যই ৫৪ ধারা মতেই করতে হবে।
©somewhere in net ltd.