"বন্ধুত্বের মৃত্যু নেই"

১৭ ই জুন, ২০১০ রাত ১:২২

আজ থেকে বছর দেড়েক আগে, আমার পরিচয় হয়েছলো এক বন্ধুর সাথে । পরিচয় বলতে সচরাচর আমরা যা বুঝি এটা ঠিক তেমন না। কোনো এক চ্যাটিং সাইটে প্রথমে হাই হ্যালো, তার কিছুদিন পর কুশল বিনিময়-আরও কিছুদিন পর থেকে নিয়মিত মেসেজ আদান প্রদান। এভাবে অনেকদিন যাবার পর মোবাইল নম্বর বিনিময়। দিন রাত-সময়ে অসময়ে কথা বলা কথার মালা গাঁথা যাকে বলে কথার ফুলঝুরি ঝরানো! মোটামূটি এই হলো বন্ধুর সাথে আমার পরিচয়ের পর্ব।



সহজ সরল মিষ্টভাষী আমার বন্ধুটি বেশ হাসিখুশী মনেই নিয়মিত যোগাযো্গ রেখে চলেছে। আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে নেই কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসাব,নেই কোনো সীমা লঙ্ঘিত সম্পর্কের অবকাশ। নির্মল পবিত্র বন্ধুত্ত্ব বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। একে অপরের সুখ দুঃখ গুলোনিয়ে আলোচনা আর সেগুলোকে অন্তর দিয়ে ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা আমরা করি।তবে তার মাঝেও কিছুটা খুন্সুটি মান অভিমান সেটা যে মোটেও নেই বা হয় না তা বলা যাবেনা।কিন্তু সে নিতান্তই ক্ষনিকের জন্য। সে যদি একদিনও কথা না বলে তাহলে আমার মনে হয় যেনো কতদিন আমি তার থেকে দূরে চলে গেছি। আবার আমি যদি কথা না বলি তখন দেখি তার সে কি উন্মাদনা!!





এতো যে হৃদয়ের টান, তার মাঝেও আছে অনেক বাধা বিপত্তি।আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি যেখানে পদে পদে নিয়ম আর ধর্মিও অনুভুতিগুলো আমাদের পবিত্র সম্পর্কের মাঝে তুলে দেয় সুবিশাল প্রাচির। আমি আমার যে বন্ধুটির কথা বলছি, সে একটা মেয়ে আর আমি একটা ছেলে। এটা একটা বড় পার্থক্য আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে।আমাদের সমাজে একটা ধারনা প্রচলিত আছে, ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না।তারা নাকি বন্ধুত্বের আবরনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। অস্বীকার করারও উপায় নেই,কারন হরহামেসা সেটা হচ্ছেও।তাই বলে যে নিখাদ বন্ধুও নেই তা তো হতে পারে না!





আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে সবচে মুখ্য যে বাধা তা হলো ধর্মিও অনুভুতি। আমি হিন্দু আর সে মুসলমান। একে তো ছেলে আর মেয়ে তার উপর আবার হিন্দু আর মুসলমান-দু পরিবারের যারা সদস্য,তাদের ধারনা আমরা জাত খোয়াতে বসেছি। বন্ধুত্ব করে আমরা বোধ হয় অনেক অপরাধ করে ফেলেছি। ব্যাস-শুরু হলো বিধিনিষেধ! ইদানিং আমার সে প্রিয় বন্ধুটি আর নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে না। অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে নাকি ফোন করতে হয় তাকে। আমি ও চায় না আমার বন্ধুত্বের মুল্য দিতে গিয়ে তাকে তার পরিবার আর সমাজের কাছে ছোট হতে হোক। তবু অন্তরের যে টান তাকে দমিয়ে রাখাও অনেক কষ্টের।





সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলাম আজ,যখন আমার প্রিয় বন্ধুটি বল্লো, দ্বীপ আজ থেকে তুমি আর আমার সাথে কথা বলনা,আমার মোবাইল নম্বরটি তুমি ডিলেট করে দিও।আমি ভাবতেও পারিনি এমন একটা কথা আমাকে শুনতে হতে পারে। জানি এ কথাগুলো তার না,নিশ্চয় সে বাধ্য হয়েছে এ কথাগুলো বলতে। হয়তো তার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে,প্রতিজ্ঞা করানো হয়েছে আমার সাথে কথা না বলার। আর তাই আমার কষ্টটাও বেশী সেখানেই-আমরা নাকি আধুনিক সমাজে বাস করি,নারী পুরুষের স্বাধীনতার কথা বলি!! হায় রে সমাজ-হায় রে ধর্মিও গোড়ামি!!! যে সমাজ পবিত্র বন্ধুত্বকে নোংরামি আর ইতরামির চোখে দেখে, সন্দেহের আঙ্গুল তোলে। আর ধর্মিও অনুশাষন দুটি কোমল হৃদয়কে হত্যা করে- সে সমাজ কিছুতেই সভ্য সমাজ হতে পারে না। সে সমাজকে আমি ধিক্কার জানাই। শুধু এ টুকু বলতে চায়, বন্ধু-জেনে রেখো আমি তোমার বন্ধু ছিলাম,বন্ধু আছি-থাকব আজীবন!! হয়তো কথা হবে না দেখা হবেনা তবুও অন্তরের অনুভুতি দিয়ে আমরা অনুভব করব আমাদের বন্ধুত্বকে। আমার সমস্ত সত্বা জুড়ে তুমি থাকবে অনন্তকাল ধরে, কারন বন্ধুত্বের জন্ম হৃদয়ে,হৃদয় থাকতে সেখান থেকে কেও কোনো দিন বন্ধুকে সরাতে পারে না। পারবেনা কখনও.........কারন, বন্ধুত্বের মৃত্যু নেই।।

১৪ টি +৬/-০