![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কোন কবি নই, আমি কোন সাহিত্যিক-ও নই। তবুও মাঝে মাঝে এক একটি গভীর রাতের কিছুটা সময় আমার আঙুল প্রসব করে গল্প, ছোট গল্প, অনুগল্প, কবিতা নাম না জানা আমার আরোও অনেক সন্তান। এড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে চতুর্দিকে। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন আমি বিরক্ত হই না। আমি সাহিত্য পড়ি না। জন্ম দেই। আমি জীবন থেকে নেই না্, বরং জীবন আমার থেকে নেয়। আমি মোটেও কেউকেটা নই, কীটস্ব-কীট আমি। আমার ধনবল নেই, শিক্ষা গৌরব নেই। আমি প্রকৃতি থেকে শিখি । বই পড়ে শিখি । অন্যের কথা শুনে শিখি । বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিখি । বিভিন্ন উৎসে বিচরন করি । জানার চেষ্টা করি । এভাবে লেখার রসদ সংগ্রহ করি । তারপর নিজের ভাবনা, বোধ, বিশ্বাস, অভিব্যক্তি দিয়ে মাঝেমধ্যে লেখার চেষ্টা করি । এক্ষেত্রে কিছু যোগ-বিয়োগ করি ।
আমার আবাস পশ্চিম রাজাবাজার থেকে চন্দ্রিমা পার্ক এবং সংসদ ভবন দুটোই অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি এবং আমি সময় পেলে বা অস্বস্থি লাগলে ঐখানে যেয়ে কিছু সময় কাটাই তা আমার পরিচিত কয়েকজন ফেসবুকারও জানেন। এই শীতের সময় প্রায় সকালেই রোদ পোহাতে সেখানে যেতাম এবং যথারীতি চা-কফি ওয়ালারা আমাকে একরকম জোরপূর্বক চা দিয়ে যেতো,
বলতো- স্যার সবাই ম্যাডামেরে লইয়া আহে আর আপনে একলা বইস্যা আছেন,
বুজ্জি আপনের মনডা খারাপ লাগতেসে গো স্যার, লন আমাত্তে এককাপ চা খান তাইলে ভাল্লাগবো, এইকথা বলতে বলতে চায়ের কাপ আমার হাতে তুলে দিত শত মানা করা সত্বেও।
গত পরশুদিনের আগের দিন থেকে সর্দি-জ্বরে ভূগতেছি, সেইরকম অবস্থা, খাবার পাশে পড়ে আছে কিন্তু অরুচির সাথে যুদ্ধে পেরেউঠছিলাম না তাই খেতেও পারছিলাম না।
কোন মতে অফিসে একটা ই-মেইল করে ছুটিও নিছি।
পরশুদিনের কথা বলছি, বিছানায় গড়াগড়ি করেই কেটেছিল সারাদিন, বিকেলে খাবারটা গলধকরন করলাম কারন ঔষধ গলধকরন করার আগে খাবার গলধকরন করা আবশ্যিক। একটা পেমেন্ট পাবার কথা ছিল এই মার্চের ১০ তারিখের এবং ঐ পেমেন্ট এর আশায় আরো দুজনকে পেমেন্ট করার কথা দিয়েছি আমি নিজে কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত পাইনি যার কারনে মেজাজ চরম খারাপ।
তো, শরীরে ব্যাথা আর মস্তিষ্কে ক্ষোভ নিয়ে সারাদিন বিছানায় গড়াগড়ি করতে করতে ভাবলাম যাই একটু হেঠে আসি তাহলে শরীরের ব্যাথাটা এবং ক্ষোভটা একটু হালকা লাগতে পারে।
তাই হাঠতে হাঠতে চলে গেলাম সংসদ ভবন এলাকায়। আমি এর আগে বেশিরভাগ সময়ই ঐ এলাকায় বিকেলের দিকেই যেতাম, সন্ধ্যার সময় এটা ছিল আমার প্রথম। সূর্য্য তখন ডুবি ডুবি। ওখানে সবাই যে যার মতো বসে আড্ডা-গান, যা খুশি করছে, আমি আমার ক্রোধিত বাংলার ৫ মার্কা চেহারা নিয়ে এক কোনে বসে পড়লাম।
যথারীতি চা ওয়ালা এলো কিন্তু এবার আর চাওয়ালা বেশি কিছু বলার আগে আমি আমার অগ্নি মুর্তি দেখিয়ে চাওয়ালাকে বিতাড়িত করলাম।
বসে আছি, মেজাজ চরম খারাপ, কথার নড়-চড় করতে আমি অভস্ত্য নই সেটা অনেকেই জানে এবং আমি সরি+প্লিজ এই শব্দগুলো খুব কম ব্যবহার করতে পছন্ধ করি।
যেমন কয়দিন আগে আমার বাসার মালিক বলছে - ভাই , আমার আব্বা তো সৌদী থেকে আসছেন, তো আমরা ভেবেছিলাম যে তিনি হয়তো আবার চলে যাবেন কিন্তু তিনি বলছেন যে তিনি একেবারে চলে আসছেন তো আমাদেরই এখন জায়গার প্রয়োজন তো তোমার কি বাসাটা ছেড়েদিলে খুব অসুবিধা হবে!
আমি তখনও আমার বাসার মালিককে বলিনি যে- সরি, আমার অসুবিধা হবে, প্লিজ আমাকে আরোও সময় দিন যদিও জানি যে আমার চরম অসুবিধা হবে কারন আমি ঢাকায় বসে বসে সিলেটে বাসা খুজার মতো ওতটা পারদর্শী নই।
তো এবার বোধহয় ঐ পেমেন্টটা পাবার আশায় যে দুটা এক্সট্রা স্টেপ নিতে গিয়ে দুজনকে কথা দিয়েছি সেটার নড়চড় হয়ে যাচ্ছে!! একথাগুলোই ভাবছিলাম এবং আরোও ভাবছিলাম যে বাসায় থাকলে গায়ে যত জ্বর-ই থাকুক না কেন অন্ত:ত এভাবে না খেয়ে থাকতে পারতাম না। আমার রয়েল বেঙ্গল 'মা' ঠিকই বিড়ালছানার মতো কান ধরে টেনে নিয়ে ঘাড়ধরে আমাকে খাইয়ে দিতেন। সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে বসে বসে এগুলোই ভাবছিলাম।
এদিকে ক্রমশ আধার ঘনিয়ে এসেছে। হঠৎ আমার পাশে এক মেয়ে এসে বসলো।
বয়স আনুমানিক ২২/২৪ হবে। আমি হতবাক, নির্বাক।
ভাবছি কাম সারছে, নিশ্চয় হাইজ্যাকার, কিন্তু মাসের শেষ, ২৬তারিখ, টাকাপয়সা তো সব শেষ, মানিব্যাগে তো ২৭ টাকা আছে মাত্র আর পকেটে চায়না মোবাইল যার কনফিগারেশন হচ্ছে অটো চার্জারে চার্জ হয় আর লাউড স্পিকারে কথা বলতে হয় নতুবা হেডফোনে কথা বলতে হলে আবার হেডফোনের গোড়ায় চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হয়। এখন এগুলো তে ওর পোষাবে না অতএব আমার অবস্থা শেষ কারন আমার যতটুকু জানা তাতে এরা সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে কাজ করে।
এগুলা ভাবতে ভাবতে আমার সমস্ত শরীর ঘেমে যাচ্ছে। আমি কোনকিছু বলার আগেই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলছে-
আমাকে একটু সাহয্য করবেন! বিশ্বাস করুন আমার টাকার খুব প্রয়োজন।
আমি স্বেচ্ছায় এপথে আসিনি। আমার প্রয়োজন আমাকে এ পথে আসতে বাধ্য করেছে।
আমি এবং আমার হ্যাজবেন্ড এটা এন.জি.ও তে চাকরি করি কিন্তু এ থেকে যা বেতন পাই তাতে সংসার চলে না এমনকি আমার ১বছর বয়সী একটা বাচ্চার লেকটুজেন-1 টাকাটাও বাচে না মাসের শেষে।
মেয়েটার নমনীয় কতাবার্তা শুনে, ভেতর ভেতর সাহস আটলাম যে আমিও নমনীয়ভাবে এপলজাইস হয়ে কোনমতে পালাবো, কারন হাজার হলেও নারীঘটিত ব্যাপার।
মেয়ে চিৎকার দিলে সবাই ঐ মেয়ে যা বলবে সে কথাই বিশ্বাস করবে আর গনধোলাইয়ের কিল-ঘুষি একটাও মাটিতে পড়বে না।
তো,
আমিও বললাম- আপা, আপনার নামটা কি?
বললো- খাদিজা সুলতানা।
ওকে, খাদিজা আপা, আমি নিজেও টাকা পয়সার কারনে অনেক বিষন্নতায় আছি।
আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না।
মেয়েটা বললো- আমি আপনার বিষন্নতা কাটিয়ে দেবো বিনিময়ে আপনি আমাকে আর্থিক সাহায্য করবেন। প্লিজ- অন্ত:ত এতটুকু করুন, আমার টাকার খুব-খুব প্রয়োজন।
আমি অভাবের তাড়নায় একাজ করতে বাধ্য।
বললাম- আর্থিক সমস্যায় তো আমিও আছি আর আপনি ভুল মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছেন। তাছাড়া, অভাবের কারনে হোক আর যে কারনেই হোক না কেন আপনি যা করছেন তা সমাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ঠিক নয়।
মেয়েটা উঠে দাড়িয়ে ধর্ম এবং সমাজের মুখে আলতো করে থুথু ছুড়ে দিয়ে বললো-
কোন সমাজের কথা বলছেন আপনি? অনার্স পাশ করার পরও চাকরীর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মামা-চাচার জোর না থাকার কারনে যে সমাজ আমাকে একটা ভাল চাকরী দিতে পারেনি সে সমাজের কথা বলছেন আপনি?
আর, ধর্ম! সৃষ্টিকর্তা!
আরে, সৃষ্টিকর্তা তো থাকেন ঐ বিত্তবানদের মাঝে, অভিজাত পাড়ায়।
সৃষ্টিকর্তা ওদের জন্যই, আমাদের জন্য না। যদি আমাদের জন্য হতেন তাহলে আমাকে অভাবের তাড়নায় এমন ঘৃন্য অপমানের অন্ধকার পথে পা বাড়াতে হতো না।
দেখলাম মেয়েটা রেগে যাচ্ছে। তাই বললাম-
আপা, গরীবের পা'য়ে লক্ষী। আপনি বরং আপনার উদ্দেশ্যে হাঠেন।
আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দু:খিত।
চরম হতাশাভরা মুখ নিয়ে মেয়েটা হাঠতে লাগলো। আমিও হাঠতে হাঠতে মেসে ফিরলাম।
ঘেমে গেছি, জ্বর সেরে গেছে এটা ভেবে বাথরুমে ঢুকে স্নান করছি।
শাওয়ারের বরষাধারা আমাকে সিক্ত করছে, আমি চোখ বুঝে ভাবছি- বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, চিকিৎসাব্যয় বাড়ছে, বাসাভাড়া বছর বছর বাড়ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঘোড়া লাগামহীন, আপন কাউকে ঐ মেয়েটার স্থলে কল্পনা করছি আর শিউরে উঠছি।
স্নান শেষে বেরিয়ে এসে দেখি টেবিলে পড়ে আছে পত্রিকা, বড় করে লেখা জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ বুকে নাম উঠাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তারপর,
ফেসবুকে ঢু মেরে দেখি এই রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়। ব্যয় ৯ কোটি টাকা। অংকে ৯,০০,০০,০০০।
বাহ! আমাদের দেশে বোর্ড পরীক্ষায় পাশের হার রেকর্ড সংখ্যক হবে।
রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাবে।
রেকর্ড সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী চান্স না পেয়ে উচ্চমূল্যে উচ্চশিক্ষা কিনতে না পেরে ঝরে পড়বে। চাকরীর জন্য রেকর্ডসংখ্যক চাকুরীপ্রার্থী আবেদন করবে কিন্তু রেকর্ডমূলক ক্ষত চিহ্ন গায়ে না থাকার কারনে চাকরী পাবে না।
আমরা দারিদ্রতার রেকর্ড করবো, সামাজিক অস্থীতিশীলতার রেকর্ড করবো,
পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য দেশ বলে রেকর্ড বুকে স্থান করে নেবে আমাদের এ দেশ।
বাহ! সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয় ৯,০০,০০,০০০ টাকা খরচ করে গিনেজ বুকে নাম উঠাবে।
ঐ একই দিনে এক মা তার বুকের মানিকের খাবার যোগাতে না পেরে অন্ধকার পথে হাঠতে থাকবে।
এভাবে চলতে থাকলে সেইদিন বেশি দূরে নয় যেদিন ঐসমস্ত নারীর ধিক্কার নিয়ে বাংলাদেশের নাম গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে স্থান পাবে।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
মামুন রশিদ বলেছেন: লেখাটা ছুঁয়ে গেল!