![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা অসাড় অনুভূতি নিয়ে ঘরে ফিরলাম, সেন্সলেস হবার আগে যে রকম ঝিম-ঝিম একটা অনুভূতি হয়, ঠিক সে রকম, মাথাটা ভারী, ঘাড়ে চিনচিনে ব্যাথা।
আমি, যে মেয়েটা বাসার বাইরে আসলে আর ফিরতে চাইনা, প্রায় জোর করে ঘরমুখো করতে হয়, আজ সেই মেয়েই বললাম, "বাসায় যাবো"
অসুস্থ লাগছে জেনে অনন্ত ভাইয়া এক বোতল পানি এনে বললেন, "এটাতে ব্লগ আছে, খা! পুরাটাই শেষ করবি"... হাসতে হাসতে পানিটুকু শেষ করলাম, হাঁটতে পারছিলাম না বলে পৃথিলটার বাহু খামচে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ, পাগলটা একা আসতে দেবেনা কিছুতেই, ফেরার পথে কৌশিকটা সঙ্গী হল, বাসার কাছে এনে তবেই ছাড়লো...
আসলে রক্তক্ষরণটা সহ্য করতে পারিনা কিছুতেই...
আমরা ক'জন গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে, আহত তানিয়ার খোঁজে, যে কিনা গতকাল খেলনা ভেবে ককটেল হাতে নিয়ে দেখতে গিয়ে অকালে হাতটা হারালো...
প্রথমে শিশু ওয়ার্ডের একটা রুমে ঢুকলাম, ক'জন মহিলা ও একজন নার্স একটা বাচ্চাকে ঘিরে বসে, অনিরুদ্ধ বলল, মু্নাপুকে কথা বলতে দাও,
নার্সকে জিগ্যেস করার জন্য ভেতরে গেলাম, বাচ্চাটাকে দেখে গলার মধ্যে সমস্ত কথা আটকে গেলো আমার... নাকে নল দেয়া, মুখ বেয়ে ফেনা বেরোচ্ছে, নিঃশ্বাস নিচ্ছে হেঁচকির মতো, জীবনের শেষ মুহূর্ত প্রায়...
একছুটে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে এলাম...
তানিয়াকে খুঁজতে গিয়ে পেলাম সোহানের দেখা, ছ'বছর বয়স কেবল... জীবন শুরু করার আগেই যে পেল মৃত্যুর স্বাদ...
গত এগার তারিখ থেকে পড়ে আছে হাসপাতালে... মায়ের কোলে বসে বাসে করে যাচ্ছিলো... একটা ইট হঠাৎ এসে বাসের জানালা ভেঙ্গে কাঁচের গুঁড়ো সহ মাথায় আঘাত হানে তার! তার অপরাধ, সেদিন হরতালসত্ত্বেও ঘর থেকে বেরিয়েছিল সে মায়ের সাথে! আঘাতে তার মাথার একপাশটা অনেকটা চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, তার মায়ের ভাষায় "হাড় ভেঙ্গে গেছে" চোখটা ফোলা ভীষণ, কেমন যেন উদাসী ভঙ্গিতে বসে তাকিয়ে ছিল দেয়ালে... সেদিনের সে আঘাত শুধু তার শরীরে নয়, তার ছোট্টমনেও ফেলেছে ভীষণ বাজে প্রভাব... সেই এগার তারিখের পর থেকে হাসতে ভুলে গেছে সে, চুপচাপ নির্বাক বসে থাকে শুধু... চোখের সামনে নিজের সন্তানের এই বদলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মা! কথা বলতেই নারাজ সে আমাদের সাথে...
বেশীক্ষণ সহ্য হলনা আমার, শ্রাবন কয়েকটা প্রশ্ন করলো, আমি রেকর্ড করলাম, [রেডিওতে প্রচার হবে একটু পরেই] কোনরকমে স্টেটমেন্ট নিয়ে আবার শুরু হল তানিয়াকে খোঁজা।
একটা ওয়ার্ডে গেলাম, শ্রাবণ আর প্রিথিল কথা বলছিলো নার্সের সাথে, আমি বামে ঘুরে দেখতেই একটা মহিলাকে দেখলাম অর্ধঅচেতন হয়ে পড়ে আছে... মুখ দিয়ে গড়াচ্ছে তাজা রক্ত! দমকে দমকে নিচ্ছে শ্বাস, এরও সময় শেষ প্রায়... আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম...
নাহ! কোথাও নেই তানিয়া...
চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম, হাসপাতাল থেকে বেরোনোর ঠিক আগ মুহূর্তে একজন আহতের মুখোমুখি হলাম আমরা, পুরো শরীর জুড়ে টকটকে লাল রক্ত! একটা দম বন্ধ অনুভূতি নিয়ে ঝাঁকুনি খেলাম নিজের অজান্তে...
খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম হাসপাতাল থেকে, শ্বাস নিলাম মুক্ত বাতাসে, তবু মনে হল হাসপাতালের সেই অদ্ভুত গন্ধটা নাকে লেগে আছে এখনো, সত্যিই অদ্ভুত, মৃত্যুর গন্ধ যেন...
নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম, "আমি বাসায় যাবো"
©somewhere in net ltd.