![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মতের অমিল হওয়াটা কখনই খারাপ কিছু নয়। মতের অমিল রয়েছে বলেই আলোচনা-সমালোচনার আবির্ভাব ঘটেছে। পৃথিবীর সবাই যদি একই রকম ভাবতো তাহলে পৃথিবীও ঘূর্ণন বন্ধ করে দিত। তবে মতের অমিল যুক্তি দিয়ে খণ্ডানো উচিৎ আর যুক্তি খণ্ডানো সম্ভব না হলে উদারচিত্তে কারো মন্তব্য মেনে নেয়া উচিৎ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অঙ্কুরোদ্গম হয়েছিল সেই ১৯৫২ সনে, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এই আন্দোলনের হাত ধরেই নিষ্পেষিত নির্যাতিত বাঙ্গালীরা এক সময় বিস্ফোরিত হয় ১৯৭১ এ সেই রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে, যা এনে দিয়েছিল এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এই ইতিহাস কম বেশী সবারই জানা, তাই নতুন করে বলার কিছু নেই। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশও এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে কখনো কারো উপর ভাষা বা অন্য কিছু চাপিয়ে দেয়ার সাহস করেনি। কিন্তু ক্ষোভ হয় যখন দেখি ভাষা আন্দোলনের এই দেশে কিছু মানুষ বাংলার চাইতে অন্য ভাষায় কথা বলতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, গর্ববোধ করে। তখন মনে হয় সেই সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ অন্যান্য যত ভাষা শহীদ ছিলেন, তারা আজকের এই অবস্থা দেখলে আত্মহত্যা করতেন। পাকিস্তানীরা অত্যন্ত মাথা মোটা ও স্থূলবুদ্ধির ছিল এটা বোঝা যায়, না হলে এভাবে ভাষা না চাপিয়ে ডোরেমন টাইপ কার্টুন কিংবা চোখ ধাঁধানো উর্দু সিরিয়াল বা সিনেমা বানিয়ে দিলেই হত, বাঙ্গালীরা ধীরে ধীরে এমনিই উর্দুতে কথা বলত, যেমনটা আজকে হিন্দির বেলায় দেখা যাচ্ছে।
সেদিন দেখলাম আমার এক মামাতো ভাই যে কিনা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, এবার JSC পরীক্ষা দিয়েছে, খুব আগ্রহ নিয়ে ডোরেমন দেখছে, আমিও কিছুক্ষন দেখলাম তার সাথে, কোন আগ্রহ পাই কিনা দেখার জন্য। বলে রাখি ব্যক্তিগত ভাবে আমি কার্টুন অসম্ভব রকম পছন্দ করি, আমার পছন্দের তালিকায় টম অ্যান্ড জেরি, পাপাই শো ছাড়াও আরও অনেক কার্টুন আছে। যাই হোক অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না ডোরেমনে কি এমন আছে, যতদূর দেখলাম এখানে শিখানো হচ্ছে বন্ধুদের মিথ্যা বলা, ক্লাসে ফাকিবাজির বুদ্ধি আর ছোটদেরও গার্লফ্রেন্ড থাকা উচিৎ এবং কিভাবে তাকে পটাতে হবে ইত্যাদি, বলা বাহুল্য; কার্টুনটি দেখানো হয় ডিজনি চ্যানেলে এবং হিন্দিতে ডাবিং করা। এরপর আমি টিভির ভলিউম কমিয়ে তার কাছে ডোরেমন পছন্দ করার কারন জানতে চাইলাম। এরপর তাকে কিছুক্ষন বোঝালাম এই ফালতু কার্টুন না দেখে ডিসকভারি কিংবা কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতে, ইংরেজি শেখার জন্য। এটাও বলা বাহুল্য, ইংরেজি যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা তাই আমরা একে ভালবাসি আর নাই বাসি, উচ্চ শিক্ষার জন্য অথবা ক্যারিয়ারের জন্য এটা শিখতেই হবে। সে বলল ইংরেজি নাকি খুব ভাল বোঝে, তার এই উত্তরে আমি খুব খুশি হয়ে এবার তাকে কিছু শব্দের বাংলা অর্থ জিজ্ঞেস করলাম। সে ইনিয়ে বিনিয়ে কোন শব্দের অর্থই ঠিক ভাবে বলতে পারছিলো না। দুই একটা শব্দের অর্থ হিন্দিতেও বলে বসল কিন্তু বাংলা উত্তর পেলাম না। এবার আরেক জনগোষ্ঠীর কথা বলি, এরা ছোট বেলা থেকেই ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করছে। এদের কাছে বাংলা সাহিত্য রীতিমত এলিয়েনদের ভাষা। শুধু যে কথাগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করি সেগুলোই বোঝে।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের বাংলা ব্যকরন পড়ানো হয়, যদিও এর গুরুত্ব কোনদিনই আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়নি। কারন মাতৃভাষায় কথা বলতে ব্যকরনের প্রয়োজন হয় না, ব্যকরন প্রয়োজন হয় অন্য ভাষা শেখার জন্য। আমরা সাহিত্য পড়েছি মুখস্ত করার জন্য, বুঝে প্রশ্নের উত্তর লিখার জন্য, অথচ সাহিত্যের উদ্দেশ্য পাঠককে আনন্দ দেয়া, সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করা। আর আজকাল বাচ্চাদের বই পড়ার কোন আগ্রহ দেখা যায় না, সাইবার স্পেসে কিংবা মোবাইল ফোন নিয়েই বেশী সময় কাঁটায় ওরা। জানার আগ্রহের চাইতে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়ার আগ্রহ বেশী। যদিও এটা আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ফল। যে দেশে বাচ্চারা A+ না পাওয়ার দুঃখে আত্মহত্যা করে, অথচ শুধু ফলাফল দিয়ে প্রকৃত মেধা যাচাই কখনই সম্ভব নয়। আর মুখস্ত করার অভ্যাস জানার আগ্রহকে মেরে ফেলে এটাও আমরা জানি।
এবার আসি ভাষার দূষণ প্রসঙ্গে, ছোটবেলায় দেখেছি সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ দূষণীয়। এখনো আছে কিনা জানি না, তবে এতোটুকু জানি এই কথাটি শুধুমাত্র বাংলা ১ম ও ২য় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নের উপরিভাগে লেখা থাকতো, তাও ঐ লেখা পর্যন্তই, বাস্তবায়ন হতে দেখিনি। এর আরেকটি কারনও থাকতে পারে, যেমন বাংলায় কে কত পেল তা নিয়ে বাবা মা কিংবা অন্য কারো মাথা ব্যথা নেই। কথা প্রসঙ্গে বলতে হয় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আমরা বাংলা ভাষায় অনেক বিষয়ই পড়ি। অথচ আর কোথাও ভাষার দূষণ নিয়ে বলা হয় না। আর এখন তো দূষণ নিয়ে কেউ চিন্তাও করে না, একটি জগা খিচুড়ি মার্কা ভাষায় আমাদের বর্তমান প্রজন্ম দীক্ষিত হচ্ছে। এগুলো দেখে মনে হয়, আরেকটি ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজন খুব শীঘ্রই।
দেশপ্রেম নিয়ে বলার তেমন কিছু নেই। প্রত্যেকে যদি তার অবস্থানে থেকে দেশকে ভালবাসে, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে নিজের দায়িত্ব পালন করে, দেশের মানুষকে ভালবাসে তাহলেই হয়। অন্য দেশকে সম্মান করা যেতে পারে, কিংবা তাদের সংস্কৃতি বা ভাষা ভাল লাগতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা শুধুমাত্রই স্বদেশের জন্য থাকা উচিৎ। অন্য দেশের মানুষ আমার দেশকে ভালবাসুক তা আমি চাইনা, কারন মায়ের চাইতে মাসীর দরদ বেশী থাকা ভয়ানক ব্যাপার। সেদিন আমার এক সহপাঠীর সাথে সীমান্তে ভারতের আগ্রাসন নিয়ে কথা বলছিলাম, সে এক চেটিয়া ভারতের পক্ষে সাফাই গাইছিল। বলছিল বাংলাদেশীদেরই যত দোষ, তারা সীমান্তে যায় কেন? আমি বললাম, মানলাম দোষ বাংলাদেশীদের, কিন্তু এই দোষে গুলি করে কিভাবে, লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেয়াটা কি ঠিক? তখন সে বলল, দেখ ইন্ডিয়া চাইলে যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশ দখল করতে পারে, সেই তুলনায় সীমান্তে দুই একটা খুন তেমন কিছু না (কথাটা বলে মনে হল সে অনেক আনন্দ লাভ করলো)। আমি পুরোপুরি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, বলে কি এই লোক। আমি তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, আমিও তো চাইলে এই মুহূর্তে থাপড়াইয়া তোমার সবগুলা দাঁত ফালাইয়া দিতে পারি, তো তুমি কি প্রতিবাদ করবে না??? রাগে আমার সমস্ত শরীর কাপছিল, ভাবছিলাম কাল যদি সত্যি সত্যি ইন্ডিয়া বাংলাদেশে আক্রমন করে বসে, সর্বপ্রথম এই লোকই তো আমার গলায় ছুরি চালাবে। যে কিনা এখনই একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করে অথচ একে ভারতের অঙ্গরাজ্য ভাবতে শুরু করে দিয়েছে, আর বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ থাকা তো দূরে থাক বরং গর্ববোধ করছে। চিহ্নিত রাজাকারদের চাইতে তো এরা আরও বেশী জঘন্য।
আরেকটি ঘটনা ক্রিকেট খেলা নিয়ে, গত T20 এশিয়া কাপে সম্ভবত, যেখানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে ফাইনাল খেলেছিল। এর কিছুদিন আগে ফেবুতে আমার একটি স্ট্যাটাসে এক বন্ধু (বলতে লজ্জা হয়) কমেন্ট দিয়ে বোঝাতে চাইল, বাংলাদেশ কোন দলই নয়, বরং ইন্ডিয়া ফাইনালে গেলে সে বেশী খুশি হয়। এটা সত্যি বাংলাদেশ দলের চাইতে ইন্ডিয়ান দল অনেক অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী, কিন্তু সবলের পক্ষে থাকতে গিয়ে যদি নিজের সত্তা বিক্রি করে দিতে হয়, তাহলে আমার মনে হয় এর চাইতে জঘন্য আর কিছু হতে পারে না। অন্য যে কোন দলের মধ্যে ইন্ডিয়াকে সমর্থন করাটা আমার কাছে খারাপ কিছু মনে হয় না, কিন্তু যখন নিজের দেশ, তখন কিভাবে কেউ অন্য দেশ সমর্থন করতে পারে? আফসোস হয় যখন দেখি আমাদের দেশী কিছু জারজ, যাদেরকে ইন্ডিয়া কোনদিনই স্বীকৃতি দেয়া তো দূরের কথা, ওদের বিষ্ঠাও মনে করে না, এরা যখন নিজের দেশের চাইতে ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে, ওদেরই গুণগান গায়।
শেষ কথা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হয়েছিল বলে আজকে পাঞ্জাবী পাজামা, টুপি দাড়িওয়ালাদের আমরা যুদ্ধাপরাধী খেতাব দিয়েছি, যদিও প্যান্ট সার্ট কিংবা সুট টাই পড়া রাজাকারও ছিল, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যদি ইন্ডিয়ার সাথে হত, তাহলে কারা হত যুদ্ধাপরাধী???
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৯
doha057 বলেছেন: সরকারের থেকে আশা করা ছেড়ে দিয়েছি বহু আগে, সুস্থ ধারার বিনোদন তৈরি করা দরকার ভাই। কষ্ট হয় যখন দেখি বাংলা চ্যানেল গুলো এখন হিন্দি সিরিয়ালের আদতে নাটক বানানো শুরু করে দিয়েছে।
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৪
জেনারেশন সুপারস্টার বলেছেন: সহমত।আমাদের মধ্যে একতা একটু কম।ভারত-পাকিস্তান রাষ্ট্রদুটির আফিম যতদিন না দূর করা যাবে বাঙ্গালীর মনস্তাত্তিকতা থেকে ততদিন এর একটা সুরাহা সম্ভব নয়।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০২
doha057 বলেছেন: নামে বাংলাদেশী হলেও কাজে-কর্মে আমরা এখনো ভারত-পাকিস্তানের দোসর হয়ে আছি আমরা, আপনার কমেন্টের সাথে ও সহমত।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২২
মন মাতাল বলেছেন: আমরা এখন চাইলেও অন্য দেশের ভাষা বিশেষ করে ভারতের হিন্দি ভাষা রোধ করতে পারবো না। এটাকে আমাদের সমাজ অনেক দিন আগ থেকেই গুরুত্ব দিতে শুর করেছে। তাই এ কাজে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। উচিত হবে এখনই যে কোন মুল্যে দেশের সকল মিডিয়াগুলো থেকে হিন্দি চ্যানেল বাদ দেওয়া। তারপরও যদি চালাতেই হয় তবে বাংলায় ডাবিং করে চলবে।