ওরা যেতে চায় নি, ওরা যেতে চায় নাঃ

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৬

চোখের পাতা দুটো কিছুতেই এক করতে পারছি না । চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছি, এক একটা লাশ এসে আর্তনাদের ভঙ্গিতে নয় বিপ্লবীর বেশে জবাব চাচ্ছে ? আমি শিউরে উঠছি বারবার । এক একজনের চেহেরায় এক এক রকমের আকুতি ।



ঢাকয় আসছি মাত্র দেড় মাস হইছে । অনেক স্বপ্ন অনেক সাধ নিয়া এই ঢাকায় আইছিলাম । আওনের সময় দাদি কইছিলু, চাকরি হইলে বেতন পাইয়া আমার লাইগা একটা বাতের ঘড়ি আনবি কিন্তু । মায়েরে জিগাইছিলাম, মা তোমার কিছু লাগব না ? মা কাইন্দা কইছিল, তুই ঠিকমত ফিরা আইলেই আমি খুশি বাপ । প্রথম মাসের বেতন দিয়া দাদির লাইগা একটা বাতের বেসলাইট আর মার লাইগা খুব সুন্দর একখান শাড়ী লইছিলাম । এতেই সব টাকা শেষ হইয়া গেল । তাই ভাবলাম, পড়ে মাসেই বাড়ি যামু । ওরা আমারে যাইতে দিল না । জানেন, আমি না করছিলাম । ওরা আমারে জোড় কইরা ঢুকাইছে ।



স্পষ্ট কান্নার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি । লাইট জ্বালিয়ে কিছুই চোখে পড়ল না ।



বৌডা নিষেদ করছিল, ‘আজ কামে যাওন লাগব না’ । উল্টা গালিগালাজ করছি, ‘কামে না গেলে কি কাউন দিব কি তর বাপে ?’ জানেন, পুরাডা রাস্তাই ভাবছি ওর চুপসে যাওয়া মুখটার কথা । শেষে ভাবলাম, না আজ ফিরা যামু । কিন্তু ওরা আমারে ফিরতে দিল না । অহন ছয় মাসের অসুস্থ পুলাডারে লইয়া বউডা আমার ক্যামনে বাঁচব । না আমি যামু না । সব কয়টারে লইয়া যামু । চলেন । কই চলেন ।



আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠি !!



মা আর ছোট একটা ভাই । আর কেউ নেই দুনিয়াতে আমার । জানেন, ওদের ও না আমি ছাড়া কেউ নেই । ভাইটা এবার এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে । পড়াশুনায় খুবই ভাল । আমার ভীষণ ইচ্ছা ছিল, ওরে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশুনা করাবো । এখন ওর কি হবে, একবার ভেবে দেখেছেন ? ও কি পারবে ওর পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে । তবে ওর খরচ চালাবে কে ? কলেজের ফি, খাতা, কলম, ওর নিজের জামা কাপড় আর মায়ের ওষধ । এইটুকু মাত্র ছেলে ! কিন্তু ও কি নিরাপদ ? ও যদি আমার মত । না ! না ! বেরিয়ে আয় ভাই আমার । এই ঘর নিরাপদ নয় । বেরিয়ে আয় । এখনি ভেঙ্গে পড়বে তুর মাথায় । চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবি তুই । অনেক কষ্ট হবে তুর, যেমন আমার হয়েছিল । তুর কষ্ট আমি সয্য করতে পারবো না রে । বেরিয়ে আয়-য়-য়-য় ।



আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না !!



স্পষ্ট শুনতে পাই গুঞ্জন । মিছিল হবে মিছিল । সব মূর্ধা উঠে আসবে এক এক করে । যুগ দিবে অর্ধ-মৃতরাও । মিশে যাবে সব জীবিত লাশদের সঙ্গে । এক এক করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে সবাইকে ।



ভয়ার্ত আমি সারারাত জেগে থাকি । বেঁচে থাকতে চাই বলে । তবুও ভয় কাটে না । মনে এই বুঝি মাথার উপর ঘোরতে থাকা ফ্যানটা এসে ছিটকে পড়ল গাঁয়ে । অথবা পুরো বিল্ডিংটাই আমার উপর !!!!

২ টি +০/-০