“আহা, আজি শ্রাবণের ধারা মোরে করিল পাষাণ, তোমারে করিছে লাবণ্যময় । “

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

“আহা, আজি শ্রাবণের ধারা মোরে করিল পাষাণ, তোমারে করিছে লাবণ্যময় । “

কার কথা ? ঠিক মনে করতে পারছি না ।

সকালটা খুব সুন্দর ছিল এমন নয় । আরও আট দশটা দিনের মত আজও ঘুম ভেঙেছে সকাল ৮ টায় । ঘুম থেকে উঠেই জানালার দিখে থাকালাম । বাইরে চমৎকার বৃষ্টি হচ্ছে । ভাবটা এমন, আর বুঝি থামবেই না । অনন্ত কাল ধরে আমার জানালার ধারে, না সমস্ত পৃথিবীর পরে ঝরতে থাকবে আনমনে, অবিরাম ধারায় । অদ্ভুত প্রশান্তিতে মনটা ভরে গেল ।

“কিরে অফিসে যাবি না ।“__ পার্থর কথায় ধ্যান ফিরে আসল । আজ আর গোসল করতে ইচ্ছে করছে না । এমনি হাত-মুখ ধুয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম । কিন্তু এই বৃষ্টিতে যাব কি করে ?

তবে কি ওর সাহায্য নিতেই হবে আমাকে ? হাত পাততে হবে ওর কাছে । এঁর আগেও অনেক বৃষ্টিতে একা বেড়িয়ে গেছি । ওর পানে ফিরেও থাকাইনি । অথচ আমি চাইলে ও যেতে চাইত না, বিষয়টা এমন নয় । আমি ইচ্ছে করেই কাছে ডাকিনী ওকে । কেমন স্বার্থপর মনে হবে নিজেকে ! ভাবা যায় ? এমনিতে কোন দিন ওর কথা একটি বারের জন্যও মনে করি না । একা একা ঘুরে বেড়াই । এঁর কাছ থেকে ওর কাছে যাই । বিষণ্ণতার ধুলি ওড়াই । স্বস্তির খোঁড়াক যোগাই । বিশ্বজোড়া খুঁজিয়া বেড়াই একটি কদম ফুল । অথচ আজ ! নাহ ! এ হয় না । কিছুতেই না । আজ বৃষ্টির দিন বলে ওকে কাছে ডাকব ? ওর হাতে হাত রেখে হাঁটব ? ওর ছায়ায় লুকিয়ে রাখব নিজেকে !

শেষ পর্যন্ত ওরই জয় হল । ওকে সঙ্গে নিয়েই বের হলাম । ছাতাটা অনেক সুন্দর । ভালই মানিয়েছে আমার হাতে । বেশ যত্ন করে বাঁচিয়ে দিচ্ছে আমায়, এই শ্রাবণের বৃষ্টির অঝোর ধারা থেকে ।।

যা ভেবেছিলাম তার একটু সত্য নয় । রাস্তায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড় । অন্য আট দশটা সাধারণ কর্মব্যস্থ দিনের মতই সবার মাঝে অদ্ভুত এক তাড়া স্পষ্ট । তবে কেমন জানি হাহাকার আর অস্ফুস্ত আর্তনাদ দেখতে পাচ্ছি প্রতিটি চেহারায় । প্রত্যেকের মাঝে মনের কোনে লুকিয়ে রাখা প্রিয়জনের সান্যিথ্য পাবার আখাঙ্খা স্পষ্ট ।

অফিসের বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে ছিলাম । আমার পাশে দাঁড়ানো ছিল দুটি মেয়ে । খুব যে সুন্দর হবে এমন নয় । তবে এই ঝিম লাগানো বৃষ্টির সাথে খোলা আকাশের নিচে বিশাল রাজপথের পাশে ছোট্ট যাত্রীছাওনীতে ওদের মানিয়েছে বেশ । অনেকক্ষণ পর খেয়াল করলাম, কি বোকার মত থাকিয়ে আছি আমি । কি ভাববে বলুনতো । না কিছু মনে করেনি ওরা । ওদের একজন বেশ উপভোগ করছে বিষয়টা । তবে চেহেরায় কারো কোন উদ্যত ভাব দেখতে পাচ্ছি না আমি । মনে হচ্ছে আজ যদি সমস্ত পৃথিবীটাও চাওয়া হয় তাদের কাছে, বিনা বাখ্যে বিলিয় দিবে । কোন আপত্তি করবে না । “ আজি বহে হৃদয়, দহন কালে মিলিয়া যাইবার আশে ।“ কে জানি বলেছিল !

কাছাকাছি এসে দাড়াই আমরা । কারো মুখে কোন বাখ্যব্যয় হচ্ছে না । কথা হচ্ছে চোখে চোখে, মনে মনে । হটাত একটা বাস এসে দাঁড়ালো বাসস্টপে । মুহুরথেই উঠে পড়ল ওরা দুজন । নিজেকে পুনরায় একাকিত্তে আবিষ্কার করলাম । সবাই যে যার মত ব্যস্ত । আমি ঠায় দাড়িয়ে পরবর্তী বাসের অপেক্ষায় !!

০ টি +০/-০