![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]
(আগের পর্ব: Click This Link)
ধুলা আর জমাট পানি এড়িয়ে মেইন রাস্তায় উঠল কুতুবুদ্দি। রবারের স্যাণ্ডেলে ভেজা বালু কিচ কিচ করছিল বলে মাদ্রাসা মসজিদের খোলা কলে পা ভিজিয়ে নিল।
এখান থেকে মেইন রোডটা ধনুকের মতো বেঁকে গেছে। মেইন রোডে না গিয়ে বাইবাস গলিতে যাওয়া যায়। ক্যাসিও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখল। একবার মনে হয় মেইন রোডটাই দ্রুততর হবে। অবশ্য কয়েকশত গজ দুরে গভর্মেন্ট স্কুলের জ্যাম। দিবা শাখার ক্লাস শুরু হয়েছে। হজমি-আইসক্রিমওয়ালাদের অত্যাচার আর অযথা অভিভাববকদের ভিড় এড়িয়ে হাটা তার বিরক্ত লাগে। তাছাড়া স্কুলের উল্টা দিকে অবৈধ দোকানপাট উঠেছে। দপ্তরীরও ফলের দোকান বসেছে, গত সপ্তাহে যেখান থেকে এক ডজন কমলা কিনেছিল। তার টাকা এখনো দেয়া হয় নি। হয়তো পাওনাদারের দর্শন এড়াতে কুতুবুদ্দি চট করে গলিতে ঢুকে পড়ল।
গলিটা স্যাত স্যাতে । কয়েকদিন আগে মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছিল। ইটের দেয়ালে সবুজ শ্যাওলা পুষ্ট হয়েছে। ঢেঁকিশাক ফনা তুলে বাতাসে দুলছে। দিন দুপুরেও অন্ধকার লাগে। উপরে তাকালে বারান্দায় ঝুলন্ত কাপড় চোখে পড়ল।
এখানে থাকার কিছু সুখও আছে। যেমন উপর তলার বাসিন্দারা উচ্ছিস্ট ফেলার কাজ সহজ করতে ময়লার প্যাকেট নিচের নর্দমায় ছুড়ে দেয়। একটা লক্ষভ্রষ্ট প্যাকেট থেকে বের হওয়া সেন্টের শিশি চোখে পড়ল। আর হঠাৎ করে প্রথম স্ত্রী আম্বিয়ার মুখ ভেসে উঠল। গায়ের রঙ মিশকালো হলেও খুব সাজুনী ছিল সে। ফোটা ফোটা স্নো দিয়ে গাল পালিশ করত, তেলে চুপ চুপ করে রাখতো চুল, গলায় ট্যালকম পাউডারের কড়া গন্ধ থাকত । গন্ধটা কেমন কেমন, ঠিক বকুলও না আবার জুঁইও না। মাঝামাঝি।
কষ্টকর জিনিস ভুলে যাওয়া উত্তম। প্রথম বিয়ের পর আম্বিয়ার বিদায়ের কাহিনী কুতুবকে আর কষ্ট দেয় না। মনের কষ্টগুলো তার কাছে সয়াবিন তেলের বোতল। বড় সাইজের বোতল ঢুকলে আড়ালে ছোট বোতল খুঁজে পাওয়া দায়। পুরান ঘটনা বেশীক্ষণ ভাবে না সে। ভাবলে তেলের নীলচে গাঁদের মতো অন্তরেও কষ্ট জমে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী ময়মুনা আর তিন সন্তানের ক্রমবর্ধমান চাহিদাসমূহ কেরোসিনের ড্রামের মতো সব ভাবনা আড়াল করে ফেলেছে ।
******
বাড়ির কাছেই একটা বাস কাউন্টার। আলহাজ্ব পরিবহন। কাউন্টারের ম্যানেজার বলল, কুতুব সাব, কদমারে তো দেখলাম না
-কি বলেন?
আলগা দরদ নিয়ে ম্যানেজার বলে,
-আমি তো ভাবছিলাম পুলাপান মানুস, বিস্টি বাদলার দিন গেছে। ভিজ্যা না অসুখটসুখ বান্দাইছে। পরে বুঝছি সক্কালে আইছিলো। সামনে টুল ঠিকই আছে। মনে হয় এগুলা ফালায় ফেলাক্স লয়া পলাইছে।
কুতুব বিস্মিত হয়ে বলল, চিন্তার বিষয়, আমি যাই।বাড়িতে জিগায়া দেখি।
প্রসঙ্গ পাল্টে কুতুবুদ্দি বলল,
-আচ্ছা বাসের কাউন্টার শুনলাম জাগা বদলাইতাসেন। আর কয় দিন আছেন?
-দেড় মাস।
-নতুন জাগা পাইছেন?
-হ
কুতুবুদ্দি অযথা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । বাস কাউন্টারের বাড়িটা তার খুব পছন্দের ছিল। তিন রাস্তার মোড়, দিন রাত মানুষের সমাগম হয়। তার যদি একটা নিজের দোকান থাকতো!
ম্যানেজার কথায় কথায় বলল, আচ্ছা, হুনলাম আপনের দোকানে বলে আজকে বিষ মিশানি তেল পাইছে? কুতুবুদ্দি কিছু বলে না। তাদের দোকানের ঘটনাটা এতদুরে ছড়িয়ে গেছে জেনে বিস্মিত হয়।
সে বাড়িতে পৌছল। দোতলায় উঠার সময় "কদমা-ও কদমা" ডাকল। নিচের তলার বাসিন্দা দরজা খুলে বলল, কদমা যে পলাইছে শোনেন নাই? আসনের সময় লোহার বিরিজের তলে ফেলাক্স হাতে হাটতাছিল। কুতুবুদ্দি খুব অবাক হয়ে বলল, কিন্তু ও পলাইতে যাইব ক্যান? আমি তারে তো পুরা ইনকামই দেই।
ছেলেটাকে তার বেঈমান মনে হয় নি। তেলের মহাজন দোকানে দোকানে তেলের ডেলিভারীর জন্য কদমাকে নিয়েছিল। ছেলেটার বয়স ১১/১২ বছর হবে। কিন্তু দেখায় আরও ছোট। অথচ নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা কুড়ি পচিশটা বোতল সে টানতে পারে। কুতুবুদ্দির মায়া হয়। যে বোঝা কুতুবুদ্দি টানতে পারে না শিশুটাকে দিয়ে তাই সে টানায়। ওর শরীর শীর্ণ। মাংস নেই। প্রতিদিনই রোদে পোড়া পিঠে একটা হাতাকাটা গেঞ্জী পরে আসে। একদিন তার ছেলের একটা প্যাণ্ট তাকে দিল। পরে অবসরে তাকে ডাকল। বলল
-এই পোলা, তোর বাসা কই?
-বাসা বাড়ি নাই। ইস্টিশনের পেলাট ফর্মে ঘুমাই
-কেউ নাই?
-আছে, বাপে নাই। ভাত বেচে যে হেরে খালা ডাকি।
-অইন্য কোন কাম করবি? থাকবি আমার লগে?
-কি কাম?
-পান সুপারির বাক্স বানায় দেই। ব'বি?
ওর চোখ মনে খুশিতে চক চক করে ওঠে। হ পারুম।
*****
কুতুবুদ্দির দীর্ঘ দিন ধরে একটা দোকান দেয়ার স্বপ্ন ছিল। দোকান দেয়া অনেক পয়সার বিষয়। রুকনুদ্দি সরাফুদ্দির পড়ালেখা শিখছে - শিক্ষিত হয়ে সবার সামনে বাপের পরিচয়টা দিতে চায় না।
সেই রাতে সে ঠিক করল একটা পানের দোকান দিলে কদমার উপার্জন হবে, সংসারেও হয়তো কিছু যোগ হবে। আর বাস কাউন্টারের সামনে অনেক লোক। ম্যানেজারকে বলে বসার জায়গা পাওয়া যাবে। ময়মুনাকে ধীরে সুস্থে সে পরিকল্পনা পেশ করে। ময়মুনা রাজি হয় না।
-আপনের কি ভিমরতি ধরছে। নিজের পোলাপান টাননেরই পয়সা নাই আর রাস্তার পোলাপানরে জিয়াফত খাওয়াইতে সাধ!
কুতুবুদ্দি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিল যে বাস স্ট্যান্ডেঐ খানে পানের দোকান ভাল চলবে। প্যাসেঞ্জার ভাত না খেলেও পান খাবেই। সব ঠিক হলে পরদিন কদমাকে নিয়ে ওয়াইজ ঘাটে যায়। পাইকারী দরে এক পণ(আশিটা পান) দুইশ চল্লিশ টাকা দরে কিনে আনে । কেঁচি দিয়ে বড় পান চার ভাগ করে খিলি বানানো ট্রেনিং দেয়। স্ত্রীর আঁচলে জমানো টাকা উদ্ধার করে তিন লিটারের চায়ের ফ্ল্যাক্সও কিনে দিয়েছিল কদমাকে।
******
কুতুবুদ্দিন এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকতেই শুনল
-এই যে রুকনের বাপ, দেখছেন আপনের কদমা কী করছে? ফেলাস্ক আর পানের দোকাল লয়া ভাগছে। আগে কত কইছি পোলাডার খাসিলত খারাপ।
-আচ্ছা অহন থাম তো। খাইতি আইসা খাই। অত ফ্যাচ ফ্যাচ ভাললাগে না।
-থামন ছাড়া উপায় কি। বিপদ তো আপনেই আনেন।
-বুছছি। কিন্তু গাদ্দারী যে কেউই করবার পারে। কদমা কই গেছে খোঁজ লয়া লই। পরে দেখা যাইব।
-আপনে বেশি বুঝদার। বালিশ চাইপা ঘুম পাড়েন। কয়শ বার কইছি পথের মানুষরে দুধকলা খাওইয়েন না। এরা দেখবেন কালসাপের ছোবল দিব।
কুতুবুদ্দির মাথা ময়মুনার অত্যাচারে সপ্তমে চড়ে গেলে । চাঁছা ছোলা গলায় সে বলে ফেলল
-এতই যখন বুঝনের খেমতা, ছোট পোলাডা কি করে, কই যায় হেইডা জানস না ক্যান? আইজ তো দেখলাম এক ছেমড়ির লগে বেবি দিয়া ঘুরতাসে।
এসব তর্ক বিতর্ক নতুন কিছু না। বাক্য বিনিময় করতে করতেই টেবিলে খানা দেয় ময়মুনা।
শুনেন। আমারেও একটা মোবাইল কিন্যা দেন। মাইনষের মোবাইল দিয়া বিপদের দিন কথা কওন যায়? পোলাডা নিমক হারামি করনের খবর আগেই দিতাম। কুতুবুদ্দি চুপ থাকে। ভাত খেতে খেতে মরিচে কামড় দিয়ে শান্ত ভাবে বলল
-হুমম। বুঝলাম। তয় শুইনা রাখ, চুরি কইরা কেউ বড়লোক হয় না। তোরে কি কইছি মিলাদের দিন ফেলাস্কে আয়াতুল কুরসীর খেইখা দিছে হুজুর। মনে রাখিস চোরের বিচার হাশরের দিন হইব।
ময়মুনা এসবে না গলে ব্যাঙ্গ করে বলল,
- আহারে, কি কামেল মানুষের ঘর করি রে। আপনের এই পয়সা কি হালাল? ভাতের পয়সা আনেন মানুষ ঠকায়া ভেজাল তেল বেইচা।
শেষ বাক্যটি শোনার পর কুতুবুদ্দির মুখের ভাত মুখেই থেকে যায়। রুজি রোজগারের খোটা তার বুকে বল্লমের মত বিদ্ধ হয়। হাত ধুয়ে ফেলে সে উঠে দাঁড়ায়। মরিয়ম পিছন থেকে বলে
-উইঠা পড়লেন ক্যান? খারাপ কিছু কইছি?
কুতুবুদ্দি নি:শব্দে দরজার দিকে পা বাড়ালো। সে কি তবে অসৎ? চোর? হারাম উপর্জন করে? কিন্তু তার কী দোষ? ভেজালে লাভ হলে মহাজনই পায়। চাউলের আড়তে কাজ করেছে দেড় বছর সেই খানেও ভেজা চাউলে ওজন বাড়ায় , পাথর-কাঁঙ্করের মিশ দেয়। পাল্লায় ফের দিতে কত কায়দা। তার যে হক মজুরী তার মধ্যেও কি অসৎ পয়সা মিশানো আছে? আর সংসারের সুখের জন্য মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। তার তো জমি জিরাত নাই। সঞ্চয়ও নাই।
***
সন্ধা সাড়ে সাতটায় শরাফুদ্দি দোস্তদের সঙ্গে আড্ডা সেরে ফিরে বাড়ি আসে। আড্ডায় একজনের প্যান্টের আকিকা হয়েছে। মুখ খুলে স্প্রাইটের ঢেকুর তোলে শরাফুদ্দি।
ময়মুনা বলল, শরাইফ্যা তোর বাপের খোঁজ ল। সেই যে বাইরঅইছে আর আসে নাই। রুকনুদ্দিকে ও বলে। ডাইরীতে একটা ছবি ঢুকাতে ঢুকাতে সে চেচিয়ে উত্তর দেয়, আম্মা, অত ভাবতাছ ক্যান? তার বয়স হইছে না? যাইবো আর কই?
-না রে দুপরে কি কইতে কি কইছি। মুখ ভার কইরা বাইর অইছে। আমারই দোষ রে।
ছোট মেয়ে কুলসুম আক্তার ডিশের চ্যানেলে মগ্ন। বাবার বিলম্বের সুযোগে বিছানায় শুয়ে হাটু ভাজ করে নখের রঙ ঠিক করে। গালে ব্রন দুর করার উপায় শুনছে। ব্রন দুর করার জন্য কয় চামচ শসাবাটা দিতে হবে সেই সংখ্যাটা মায়ের চিল্লাপাল্লার জন্য মিস হয়। রুকনুদ্দি অন্যঘরে নিউমার্কেট থেকে কেনা একটা কার্ডে কারো নাম লেখে। ময়মুনা দুশ্চিন্তায় পড়েন। মৃদু বাল্বের আলোয় ঘড়িতে রাত নয়টা বাজে। মায়ের চেচামেটিতে অগত্যা শরাফুদ্দি টর্চ হাতে বাইরে আসে। নামাজ পড়তে বাবা হয়তো মসজিদে গেছে। রুকনুদ্দি তার পিছনে পিছনে আসে। মায়ের কথামত তেলের ভাণ্ডারের ঠিকানায় "খালি রিক্সা" ডাকে। অনেক রাত পর্যন্ত কুতুবুদ্দির খোঁজ পাওয়া যায় না। নিচতলার ভাড়াটিয়া এসে মিটফোর্ড আর মেডিক্যালে খোঁজ নিতে উপদেশ দেয়। না পেলে থানায় জিডি করতে।
*****
রাত বাড়ছে। রেল স্টেশনের একটা সিমেন্টের বেদীতে পা গুটিয়ে কুতুবুদ্দি বসে আছে। মাথা ঝুঁকে। বিষন্ন মনে মনে একশ থেকে এক পর্যন্ত গুনছিল। তার এক বন্ধু বলেছিল সমস্যায় বা রাগে উল্টো গুনলে ফজিলত পাওয়া যায়। এভাবে কতবার পর্যন্ত গুনলে সে স্থির হবে। দোকানে ফিরে মহাজনের কাছে অকথ্য গালিগালাজ শুনেছে। সে যেন একটা পশু। মার খেয়েও সহ্য করতে হবে। আর তার সংসারেও সে কেউ না। সৌরজগতের কেন্দ্রে তপ্ত সূর্যের মতো সে ছিল এক সময়। এখন সেই তারা মরে যাচ্ছে। গ্রহগুলোও চারদিকে ছিটকে পড়ছে।
কুতুবুদ্দির একটি মন তাকে বলছিল, এই অভিমান বড় বেমানান। বয়স বাড়লে নিজের ইচ্ছা বলে কিছু থাকতে নেই। আমরণ ট্রাকের মতো মাল বহন করে যাওয়া দুনিয়ার নিয়ম। সমস্ত বয়স্ক মানুষকেই নির্লজ্জ হতে হয়। অদুরে সাঁকোর মতো দুই পা আড়াআড়ি করে ময়লা লুঙ্গীতে নেশাগ্রস্ত কিছু পাগল ঝিমাচ্ছে। দু কয়েকটা পথের মেয়ে সস্তা ঠোট রঞ্জনীতে হিহি করে আলাপ করছে। বহু আগে শহরে আসার সময় এমন দৃশ্যে সে রাত কাটিয়েছে। তারপর কত জায়গায় কাজ করেছে - সংসারের জন্যই তো উপার্জন। কুতুবুদ্দি স্থির করল সে একলা দুরে কোথাও চলে যাবে। পালিয়ে। ট্রেন যে স্টেশনে থামবে সে খানে থাকবে। ময়মুনার দেখা শোনা করার জন্য ছেলেমেয়েরা থাকুক। ভেজাল কারখানায় যাবে না। মরে যেতে পারলে হতো কিন্তু বুকে মরার সাহসও নেই। স্টেশনের অনেকেই দেখে এক লোক চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করে কিছু বলছে। যেন কাঁদছে। চোখ মুছছে।
রাত দেড়টা । হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কুতুবুদ্দির তন্দ্রা ভাঙে। পরিচিত কচি এক জোড়া হাত তার পা জড়িয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে দেয়।
-স্যার, স্যার
-কে? কে? - ধড়ফড় করে উঠে বসে কুতুবুদ্দি।
-আমি কদমা।
কান্নার গতি বাড়ে কদমার।
-আমারে মাফ কইরা দেন স্যার।আমি দুফরে দোকান রাইখা আইছিলাম। আইজকা বাসের লোকে আপনেরে চোর বইলা গালি দিসে। আমারে কইছে ....(কাঁদে)
-উঠ উঠ। যারা কওনের কইছে । তুই পলাইলি ক্যান?
-ভুল অইছে, স্যার। মাফ কইরা দেন।আপনে আমার বাপ আপনে আমার মা। আমারে মারেন, লাথ্থি দেন।
তারপর তার প্যান্টের পকেটের দিকে দেখিয়ে বলে,
-আমি এইখানে যা বেচছি দেখেন একটা পয়সা খাই নাই। এগুলান আপনের হিসাব।
স্যার, এই যে দেহেন একশ পচাশি টেকা।
কুতুবুদ্দি তাকে পাশে বসতে বললে বলল।
-আপনে এই ইস্টিশনে আইছেন, রাইত তো ম্যালা। ঘুমাইবেন কই?
কুতুবুদ্দির দুনিয়ার দিকে অদ্ভুত রাগটা পড়ে যায় । বাস্তবে ফিরে এসে কদমার ছোট হাতের কব্জি ধরে বলে। উঠ উঠ। এগুলান আর করিস না। তার পর শীত কমাতে হঠাৎ কদমাকে বুকের ভেতর টেনে নেয় কুতুবুদ্দি।
রাতে কিছু খাওয়া হয় নি। মাটি ফুঁড়ে খিদে উঠে আসে কুতুবুদ্দির। ঐ, তুই রাইতে কিছু খাইসস?
-না
-উঠ! ল আগে কিছু খায়া লই।
(শেষ)
----
ড্রাফট ১.০
০৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫০
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এটা খুব যে প্ল্যান করে লিখতে পেরেছি তা না।
একজন সাধারণ লোকের জীবনের কিছু দিন তুলে আনতে চেয়েছি। আর তার পাশের ডিটেইলিং এ সমাজের ছোট খাট কিছু জিনিস এসেছে। আমার দেখো মতে বয়স বাড়লে মানুষের কিছু অভিমান তৈরি হয়, সে কিছু প্রতিদান না পেলে কষ্টে ভেঙে যায়। আর সামান্য ভালবাসায় সে আত্মহারা হয়।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৪৭
আরিশ ময়ুখ বলেছেন: অসাধারণ মানবিক গল্প।কুতুবুদ্দির যে মানবিক বোধের পরিচয় পাওয়া গেল,তা এ দেশের অনেক বড়(অর্থের দিক থেকে) মানুষের থাকে না।দু'টো পর্ব একসঙ্গে পড়লাম
০৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫৫
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন:
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আরিশ।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:২৮
রেজোওয়ানা বলেছেন: প্রথম পর্বটা আগে পড়ে আসি........
০৫ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আচ্ছা
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৩৩
এক রাশ তরঙ্গ বলেছেন: চরম বাস্তব এবং নির্মম সুন্দর লেখা!
০৫ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এক রাশ তরঙ্গ
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৪০
ভাঙ্গন বলেছেন: অফ টপিক:
আমার ভীষন খারাপ লাগছে। এবার বইমেলায় সব'চে কম দু'বার গিয়েছি। একবার শুরুর দিকে। যখন আপনার বইটা প্রকাশ পায়নি। দ্বিতীয়বার শেষের দিকে। কিন্তু, দু:খের বিষয়, তখন প্রকাশনা সংস্থার নামটা মনে করতে পারছিলাম না।
যাহোক, বাংলাবাজার গেলে 'বিদ্যাপ্রকাশ' এর ওখানে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আপনার জন্য সব সময়ের শুভ কামনা। প্রিয় হাসনাইন।
০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৪৯
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আমার বইটির জন্য এতবার মেলায় গিয়েছেন এতেই কতটুকু খুশী হয়েছি বোঝানোর ভাষা নেই। বিদ্যাপ্রকাশে পাবেন বাংলাবাজারে। দোতলার মানুষ নাম বললেই তারা চিনে নেবে।
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫০
শূণ্য উপত্যকা বলেছেন: বাস্তবতা এমনি। আর আপনার লেখাতে বরাবরই চারপাশের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠে।
চমৎকার হাসনাইন ভাই।
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৫৯
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শূণ্য উপত্যকা।
৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:০৯
ইসতিয়াক আহমদ আদনান বলেছেন: পড়তে বেশ ভাল লাগছে। পরের পর্বটার অপেক্ষায় রইলাম।
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:০০
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এটা শেষ করেও আপনার কথায় মনে হচ্ছে পরের পর্ব আসলে মন্দ হয় না।
৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২৩
শুভ রহমান বলেছেন: কথা সত্য
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:০০
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ শুভ
৯| ০৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৪১
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: বর্তমান সমাজটাকে মনে হয় ভালভাবে ধরেছেন ...
যদিও কুতুবদ্দিকে এইসময়ে পাওয়া বড়ই কঠিন...
ভাল থাকুন...সবসময়...
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:০০
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: কেমন চলছে সুপান্থ ?
১০| ০৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ২:৩৫
আবদুর রাজ্জাক শিপন বলেছেন:
লেখা দুর্দান্ত হচ্ছে । অন্তত আমাদের দেশের তথাকথিত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সুমন্ত আসলাম আর আনিসুল হক সাহেবের চেয়েও ভালো একটা উপন্যাস আপনি লিখতে যাচ্ছেন , এইটুকু বলতে পারি ।
আপনার 'দোতলার মানুষ' সংগৃহীত হয়েছে । আমিতো ছ'হাজার মাইল দূরে থাকি, হাতে পৌঁছাতে আরো ১৫দিনের মতো সময় লাগবে ।
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:২২
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শিপন। ব্লগের এই লেখাগুলো অনেকটা অনুশীলনের মতো। এটার পর্ব বাড়ানোর ইচ্ছে ছিল না ..তবে এখন মনে হচ্ছে চলতে পারে।
বইটা হাতে পেলে জানাবেন কেমন হল।
অবিরত ভাল থাকুন
১১| ০৬ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:১৫
ভুত. বলেছেন: গল্পটা খুব বাস্তব।
০৬ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:২৩
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ ভুত
১২| ০৭ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৮:২৫
জুন বলেছেন: হাসনাইন তুমি যে কেমন লেখো তা মনে হয় তুমি নিজেই ভালো করে জানো। অসম্ভব সুক্ষ পর্যবেক্ষন আর তার বিশ্লেষনে তোমার অসাধারন দক্ষতা সামান্য ঘটনাকেও অসামান্য করে তোলে স্বদেশ।
কুতুবুদ্দির মানবিকতা আর কদমার সততা মনকে নাড়া দিয়ে গেল গভীর ভাবে।
অনেক ভালোলাগা।
০৭ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৮:৩৬
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আবারও ধন্যবাদ । জুনের এমন উৎসাহের কাছে সবসময়ই ঋনী।
১৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:২৭
ডেইফ বলেছেন:
আরেকটি পর্ব নিয়ে এলে আরও ভাল হবে আশাকরি।
সুন্দর লাগলো গল্পটি।
"দোতলার মানুষ" শেষ করলাম ক'দিন আগে, বইটির জন্যও ধন্যবাদ রইল আপনাকে।
০৮ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:০২
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ ডেইফ। এটাকে একটু সময় নিয়ে আরও একপর্ব বাড়াব।
বইয়ের জন্য তো ধন্যবাদ আমি দেব!
ভাল থাকবেন
১৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:১৪
অন্ধ আগন্তুক বলেছেন: স্বদেশ হাসনাইন , আম আপনার গল্প পাঠে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবি ।
গল্পকার স্বদেশ হাসনাইনের গল্পকথন চলতে থাকুক ।
শুভকামনা ।
০৯ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১২
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন:
বহু আকাঙ্খিত অন্ধ আগন্তুকের মন্তব্য ।ভাল লাগল। পথ চলা যেন না থামে।
১৫| ১২ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:০৭
টিয়া ময়না বলেছেন: াল লাগলো গল্পটি
১২ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫৪
স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ গল্পকার
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৩৪
চেম্বার জজ বলেছেন: ভাই, আপনার লেখার নিরব পাঠক আমি, ভক্ততো বটেই। কিন্তু লেখাটার মর্মার্থ আমি বুঝতে পারিনি-এটা আমার ব্যার্থতা।