নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
: দুনিয়াটা যে বেশি দিন আর দুনিয়ার জায়গায় থাকবে না সেটা মোটামোটি সবাই বুঝতে পারছে। : হু,আমিও বুঝতে পারছি।দুপুর বারটা বাজে ঢাকা শহরে কেউ ঘর থেকে এক পা বাহিরের ফেললেই শুধু হাড়ে-হাড়ে না,, হাড়ে-মাংসেও বিষয়টা টের পেয়ে যাবে।।
: কিন্তু,উদ্ভট মানুষদের আবার এই সব হিসাব করার সময় নাই।এদের আবার দুপুর বারোটার আগে ঘর থেকেই বের হতেই ইচ্ছা করে না। আর সেই সাথে থাকে ভর দুপুরে এসিরুমে বসে গরম গরম কফি খাওয়ার ভূত।।
: এই ভর দুপুরে বসে বসে গরম কফি খেতে খেতে, এই কাঁচে ঘেরা দেয়ালগুলোর মাঝ থেকে নিচের ছুটন্ত রাস্তাটার চলন্ত মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্যে আদ্ভুত এক বিষন্ন সৌন্দর্যতা খুজে পাওয়া যায়।এই রুফটপ রেস্টুরেন্টগুলোক বসে বসে ইট-পাথরের এই শহরটার খেই হারানো মুর্হূতগুলোকে ধরার চেষ্টা।।
২
: এই শহরে বেঁচে থাকাটাই দায়..তবুও প্রতিদিন -রোজ নতুন করে মানুষেরা ভিড় জমায় এই শহরে।। তবুও নিঃশেষ এই শহরাটায় মানবিক অনুভূতিগুলো বিলীন প্রায় হলেও ঠিক কিছু একটা সম্ভবত এখনো রয়ে গেছে।..হুম,সেটা সম্ভবত ‘মায়া’!!
: ‘বার্ড আই ভিউ’ কিংবা ‘ঈশ্বরদৃষ্টি’ দিয়ে উপর থেকে তাকালে নির্বাক আর নিস্তদ্ধ এক মায়া চশমাটায় ধরা পরে।চশমার কাঁচের আস্তরণটায় লেগে যায় অদ্ভুত এক প্রলেপ।এই মায়ার জালে আটকা পরেই সম্ভবত মানুষগুলো শত ইচ্ছা সত্ত্বেও এই শহরটা ছাড়তে পারে না।।
: আমার এই তাকিয়ে থাকার ঘোরটা অধিকাংশ সময়ই বেশ লম্বা হয়..এমনকি অনেক সময় ওয়েটারের “এক্সকিউজমি ম্যাম”বলার আগ পর্যন্ত শেষ হয় না।
:বইটা থেকে চোখ সরিয়ে কখন যে আপন ভাবনায় ডুব দিয়েছিলাম বুঝতেই পারি নি। ” The Art of Thinking Clearly” বইটা পড়ার অদ্ভুত একটা রেশ খুজে পাচ্ছি মাথায়।।চিন্তামগ্ন হয়ে পড়তে পড়তে কখন যে খেই হারিয়ে ফেললাম বুঝতেই পারলাম না।।
৩
: ওয়েটারের ডাকে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলাম।কিছুক্ষণ থেকেই সামনে দিকে এক বাচ্চার জ্বালাতন মাখা দুষ্টমির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।এতক্ষণ সাবকন্সাস থাকায় তাকানো হয় নি। বাচ্চাটার কার্য-করণ দেখে মুর্হুতে মনটা ভালো হয়ে গেলো।বাচ্চাদের দুষ্টমিগুলোই এত্ত অদ্ভুত নিমিষেই বিরক্তিগুলো উবে গিয়ে হাসতে বাধ্য হয় সবাই।পাশে বসা বাবা-মারও সম্ভবত একই অবস্থা… মুহূর্তেই রাগ দেখাচ্ছে আবার পর মুহূর্তেই হেসে ফেলছে।
: হঠাতই চোখ সরিয়ে পাশে বসা মায়ের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল মুখটায়।চেনা চেনা চেহরাটার দিকে একটু ভালোভাবে তাকাতেই মনের পর্দাগুলো ভেদ করে হারিয়ে গেলাম বহু বছর আগে.. রঙিন সেই দিনগুলোতে। এ যেনো রীতিমত ভাবনার সাগরে ডুব দিলাম।।
:নাহ,খুব বেশি দূর যেতে হলো না।স্মৃতির সাগরটা ধরে সামান্য কিছু দূর হাটতেই রাশি রাশি স্মৃতির বালুকণাগুলো চোখের আঙ্গিণায় দেখা দিতে লাগলো।।
: আপাতত এখানে আর বসে থাকতে পারছি না…আনমনেই সেই চলা থামিয়ে, জায়গাটা থেকে বের হয়ে আসলাম।
৪
: গাড়িতেই বসতেই রতন চাচাকে বললাম, কমলাপুর হয়ে ধানমন্ডির দিকে যেতে।বেচারা সম্ভবত এই তপ্তদুপুরে এই ভবঘুরে যাত্রার কোন সুবোধ কারণ খুজে না পায়ে,ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন।পর মুর্হুতে আমার নড়ে বসা দেখে গাড়ি চালাতে শুরু করলেন।এসিটা অফ করে জানালাটা খুলে দিতে বললাম।এই চিলেকোঠা দুপুরে আমার যে ভীষণ প্রকৃতি দেখতে ইচ্ছে করছে।।
:ঠিক প্রকৃতি কি না জানি না;আমি সম্ভবত কিছু পদচিহ্ন আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি। চিহ্নের মধ্যে পুরোনো কিছু আবেগের অকারণ আবদারগুলো নিয়ে ভাবনায় ডুবে যাচ্ছি।।
:মেয়েবেলার সাথীদের নিয়ে হাজারো জল্পনা -কল্পনা আর তার অকারণ বিচ্ছেদ যাতনা মাখা স্মৃতি হাতড়িয়ে তলিয়ে যাচ্ছি।।
:ঠিক কারণগুলো উদঘাটন করতে পারলে ভালো লাগতো।দূর্বল মানবিক অনুভূতিগুলো উর্ধে উঠতে না পারার ব্যর্থগুলোর জন্য ঠিক কাকে দায় ভাবা যায় সেটা আমি জানি না।তবে,দিন শেষে তা আমাদের সকলকেই পোড়ায়; এই যেমন আজকের এই আমি।।
৫
:জামিলের সাথে আজকে বেশ লম্বা একটা কনভারসেশনে যেতে হবে। আজকের টপিকটা হবে,”এই পৃথিবীটা অদ্ভুত নাকি এই পৃথিবীর মানুষগুলো অদ্ভুত” না কি… “এই অদ্ভুত পৃথিবীটা মানুষগুলোকে অদ্ভুত বানালো নাকি অদ্ভুত মানুষগুলো পৃথিবীটাকে অদ্ভুত বানালো”।
হুম,বিষয়টা নিয়ে আগে কখনো চিন্তা করা হয় নি…ভীষণ চিন্তার বিষয় বলেই ধরা দিচ্ছে।।
আপাতত কেনো জানি নিউরনগুলো চিন্তায় মোটেই সাড়া দিচ্ছে না..সব চিন্তাগুলো মগজের পাশ দিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে।।
:আচ্ছা,এই রকম কেনো হয়..??চিন্তার সাথে সাথে এই হাটতে না পারা অথবা গুমোট কোন ভাবনার চোরবালিতে এভাবে আটকে যাওয়ার কি সদুত্তর কারো জানা আছে..??
:সম্ভবত নেই।।
:তাই মনযোগ দিয়ে চেনা রাস্তা গুলোর অচেনা রূপভেদ করে পুরোনো রূপে খুজে পাওয়ার নিভৃত ব্যর্থ চেষ্টায় ডুব দিতে চাইলাম।ফেরারী মনটার নিভৃতে কিশোরী বেলার সেই দুর্দান্ত সময়গুলোর ভিতর দিয়ে হারিয়া যাওয়া সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টাগুলোকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।।
৬
:সম্পর্কে হিসেব-কিতাবে আমি বরাবরই বেশ ব্যর্থ একজন মানুষ।। কেনো জানি কিছু বিশেষ বিশেষ কারণে অযাচিতভাবে পেয়ে এই বিশেষপ্রাপ্তিগুলো পাওনার ঝুলিটাকে এত্ত বিশাল করে দেয়।।
: হামিদা আপার সাথে কথা বললে মুহূর্তেই মনটা ভালো লাগায় ভরে যায়।মানুষের মনটা এতটা সুন্দর আর উচ্ছলতা লুকিয়ে থাকে!!
: কারো গলার স্বরে এতটা মায়া আর ভালোবাসাগুলোয় এতটা টইটুম্বুর কিভাবে থাকে আর তার উচ্ছল প্রকাশভঙ্গি যা কি না প্রতি মুহূর্তে আপনাকে বুঝিয়ে দিবে তার সরল মনের ঐকান্তিক কামনাগুলো!!
:আমি আসলেই ভেবে পাই না।কোন এক বৃষ্টির দিনে প্লাবিত ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো ডিঙ্গিয়ে ওনার সাথে গিয়েছিলাম চাকরির একটা ইন্টারভিউ দিতে।বেচারি জন্মঅন্ধ।উনি ধরেই নিয়েছিলেন আমি আজ আসবো না।কিন্তু আমিও বা কি করি…কথা দিয়ে রেখে ছিলাম যে।।
: কিভাবে কিভাবে ওনার চাকরিটাও হয়ে যায়।আর ওনিও সম্ভবত আমার নামটা মনের চোখটায় লিখে ফেলেন… না হলে এতদিন পর কেনোই বা উনি আমাকে ভুলে গেলেন না।আমি যতবার মন থেকে যতবার বোঝাতে চেয়েছি যে,আমার পাওয়াটাও কোন অংশে কম না ততবার উনি আমাকে ভালোবাসার কৃতজ্ঞতায় ভাসিযে দিয়েছেন।।
: সমাজের চোখে অপূর্ণাঙ্গ এই মানুষগুলোর যতটুকু নেই, তার চেয়ে কতটা বেশি যে এদের মধ্যে লুকিয়ে আছে, তা যদি এই দিব্য চোখের কর্ণিয়া সরিয়ে আমরা কতটু দেখতে পেতাম।।
৭
: জামিল আমার এই চুপচাপ এক কোণে বসে থাকার স্বভাবটা একদমই পছন্দ করে না।আমার আশেপাশে থাকলে আমার এই ধ্যানমগ্ন মুহূর্তগুলোকে তার কথার কলকাকলিতে বারোটা বাজিয়েই ছাড়বে।।
: আমার বহুদিনের সাধনার পর যখন আমি জামিলকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, আমার কিছু একান্ত নিজের আর একার কিছু মুহূর্ত দরকার এবং ও যখন বুঝতে পেরেছে যে আমার এই নাজুক মনের উপশমের জন্য এই রকম কিছু মুহূর্ত খুব দরকার, তখন থেকে নির্দ্বিধায় আমার এই অপছন্দীয় আবদার মেনে নিয়েছে।।
: জীবনের প্রাপ্তির বিশাল বিশাল অংশগুলো পেরিয়ে যা সকল কিছুকে হার মানিয়ে দেয় তা হচ্ছে,দিন শেষে পাশে একজন থাকাটা যে কি না চুপ করে আপনার সব কথা চুপটি করে শুনতে রাজি।।
: আপাতত নিজের মনের নাজুক অংশগুলোয় একটা আস্তরণ দিতে শিখে গেছি।এর পিছনে জামিলের সেই অনবরত অধ্যবসায়গুলোর ভুলে যাওয়ার একদম সুযোগ নেই।।
৮
: সকালের বইটা আর মাত্র কয়েকটা পৃষ্ঠা বাকি রয়ে গেছে..ইচ্ছা ছিল সকালের মধ্যে বইটা শেষ করবো!! : জামিল আসার সময় হয়ে গেছে…আপাতত তার কথার বাণে জর্জরিত হওয়ার সময় প্রায় সমউপস্থিত।।
: কিন্তু আজ যে আমারই অনেক কথা বলতে হবে তাকে।অনেক কথা জমে গেছে এই কয়দিনে।। : শুনেছি কথার ব্যামো সংক্রামক..ইদানিং সম্ভবত আমিও এই রোগে আক্রান্ত।।
: আশেপাশের মানুষগুলোর আচরণের বিষবাষ্প যখন কোঁকিয়ে তোলে ঠিক সেই সময়তাই একজন পাশে এসে দাড়িয়ে ছিল।।
: মানব সমাজে বসবাসের সবচেয়ে অন্তিম আর সত্য বাণীর সাথে আমার পরিচয় করে দিয়েছিল।মানুষকে ভালবাসা মুলমন্ত্রগুলোর দীক্ষা পেয়েছিলাম ।ঠিক মানুষ মতো বেচেঁ থাকার জন্য মনের কাঠিন্যতা আর নাজুকতা মধ্যে ভারসাম্য করতে শিখেয়েছিল।সবাই সম্ভবত সমাজ থেকে এই সব শিখে নিতে পারে না…এর আগেই তারা ভেঙ্গে পরে..আমিও তাদের মতোই একজন।।
৯
: তবুও কেনো জানি এই একাকী মুর্হুতগুলো আমি সব সূত্রগুলো ভুলে একাকার হয়ে যাই।নিজেই নিজেকে একেক পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকি..বারবার শুধু একটা প্রশ্ন মনের আঙ্গিনায় তড়পাতে থাকে,”ঠিক আমার ভুলটা কোথায়”!!
:স্মৃতিকাতরতা যদি মানবচরিত্রের অন্যতম কোন গুণ হয়ে থাকে, তবে আমি বলবো তা অন্যতম বিড়ম্বনাও বটে।।
: না হলে একই মানুষের সাথে সুখস্মৃতির বৈপরীত্যগুলো আমাকে এত ভোগাবে কোনো????কেনইবা আমি সেই স্মৃতিদের আচড়ে জুবুথুবু হয়ে পরবো!!
: সুখস্মৃতির মুখরতাময় হাসিগুলো কেনইবা নিমিষে বিলীন হয়ে যাবে এদের মাঝে।।
১০
খুব তাড়াতাড়ি এই মুর্হুতগুলো থেকে বের হয়ে আসা উচিত।। এদের কাছ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি সাধারণত আশ্রয় নেই চিরন্তন বাণী সম্বলিত এই গানটারঃ
“ আচ্ছা কেন মানুষগুলো এমন হয়ে যায়
চেনাজানা মুখগুলো সব কেমন হয়ে যায়
দিন বদলের খেলাতে
মন বদলের মেলাতে
মানুষগুলো দিনে দিনে
বদলে কেন যায়।।’’
উৎসর্গপত্র: ‘প্রিয় অকারণ অনুভূতিরা’
“অকারণ অত্যাচার বন্ধ কর,
অসময় জ্বালাতন করে,মাথা নষ্ট করার কি দরকার??
উত্তম কর্মপন্থার মাধ্যমে, ভবিষ্যত আলোকিত করতে সাহায্য কর,
ছাইপাঁশ লেখা বন্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করো���।।”
উৎসর্গটি আপাতত শেষ হলো।।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৩
নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: গল্পোই তো লিখেছি..কেনো??ডায়েরির পাতা মনে হচ্ছে..???
(দুঃখিত..উত্তর দিতে দেরী হয়ে গেলো..)
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৯
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অনেক দিন পর এমন একটি লেখা পড়লাম , যেখানে অনেক আবেগ আছে ।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৫
নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!!
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি লিখেছেন?
গল্প? ডায়েরী?