![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অতি সাধারন একটা ছেলে। গ্রামে থাকি। স্বপ্ন দেখি একদিন বড় সাংবাদিক হবো। সে প্রচেষ্টায় থাকি প্রতিটা মুহুর্ত। আপাতত একটি অনলাইন মিডিয়ায় সম্পৃক্ত।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। গান শুনছি আমি। নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর কন্ঠে, আমার অন্যতম প্রিয় গান, “আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, মনে পড়লো তোমায়, অশ্রু ভরা দুটি চোখ, তুমি ব্যথার কাজল মেখে লুকিয়েছিলে ঐ মুখ”। বৃষ্টির দিনে অসম্ভব ভাল লাগে গানটি। আর বৃষ্টি জিনিসটাও আমার মাঝে এক অদ্ভুত উন্মাদনার সৃষ্টি করে সেই ছেলেবেলা থেকেই। অফিসের জানলা দিয়ে মুষলধারায় বৃষ্টিঝরা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির স্নিগ্ধ ছোয়া অনুভব করলাম কিছুক্ষণ। মনের ভিতর অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো। আবার সঙ্গে সঙ্গেই বুকের ভেতর পুষে রাখা কষ্টগুলোও নাড়া দিয়ে জানান দিয়ে গেলো, আমি আছি তোমাতে, ছেড়ে যাইনি তার মতো।
বৃষ্টিদিনের অনেক স্মৃতি আছে আমার। আছে অজস্র হাসি-আনন্দ, আড্ডাবাজি, আর অপরিনিত বয়সের প্রেম-বিরহের নানা স্মৃতি। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন বৃষ্টি নামলেই, আমাকে আর ক্লাসে খুজে পাওয়া যেতনা। শুধু আমাকে নয়, আমার সঙ্গে ৫/৬ সদস্যবিশিষ্ট আমার বাহিনীও। জনি, লিপি, জেসমিন, দুলাল আর আমি। কে কত বেশী ভিজে আর অন্যকে কে ভিজিয়ে দিতে পারে তার প্রতিযোগীতা শুরু হতো। কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরতাম। বাসায় ফিরে মায়ের বকুনী খেতেও দারুণ লাগতো তখন। খুব বেশি আনন্দের ছিলো সেই দিনগুলো। বৃষ্টির দিনে অল্প পানির পুকুরে নেমে, মামাতো ভাইদের সঙ্গে কাঁদায় মাখামাখি হয়ে মাছ ধরা, শাপলা শালুক তোলা, আর কদম ফুল তুলে বৃষ্টি শেষে কদমের পাপড়ি বৃষ্টি করা এসব স্মৃতি আমার হৃদয়পটে চিরসবুজ হয়ে আছে। বৃষ্টি দেখলেই ভাইদের কথা খুব মনে পড়ে যায়।
যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন বৃত্তির টাকায় একটা পুরোনা সাইকেল কিনি আমি। আর এরপরেই বৃষ্টি নামলেই সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তাম। ছোট ভাইদের বা বন্ধুদের সামনে পিছনে বসাতাম। গ্রামের পাকা ফাঁকা রাস্তায় আমার ভাঙা সাইকেলটা যেনো যাদুর পরশ পেতো। আমার দু'চাকার হাওয়ার গাড়ি পালসার গতিতে ছুটে চলতো। দুরে কোথাও গিয়ে রাস্তায় শুয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে বৃষ্টির রহস্য বুঝতে চেষ্টা করতাম। আর বৃষ্টিতে ভিজতাম। এভাবেই শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকলো আমার বৃষ্টির আনন্দের ধরণ।
কলেজে পড়ি। গ্রামের সাধারণ কলেজ। বছরের প্রায় ৬ মাসই ক্লাস বন্ধ থাকে। এস.এস.সি, এইচ.এস.সি আর ডিগ্রী পরীক্ষার সেন্টার হয় আমাদের কলেজে। এসব পরীক্ষার সময় টোটালি কলেজ বন্ধ থাকতো। তাই কলেজের বৃষ্টির দিনগুলি তেমন একটা উপভোগ করতে পারিনি। বন্ধুদের সাথে তাস, দাবা বা ক্যারাম খেলেই সময় কাটাতাম। শৈশবের দিনগুলোতে আকাশ কাঁদলেও, হেসেছি আমি। যখন কৈশোরে আমি, তারপরই বৃষ্টি মানেই তো এমনো দিনে তারে বলা যায়, কিংবা আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখর বাদল দিনে গান শোনা। আর শরৎ বাবুর সব কালজয়ী প্রেমের উপন্যাসে চোখ মুখ ডুবিয়ে রাখা। আর এভাবেই পাল্টাতে থাকে আমার বৃষ্টির দিনের রুটিন আর অনুভূতিগুলো।
হাই স্কুলে পড়ার সময় এক বৃষ্টির সকালের বড্ড মনে লেগে যায় একজনকে। সেই থেকে ভালো লাগা শুরু। দিন, মাস, বছর... এভাবেই কেটে যায় সাত সাতটি বছর তার সঙ্গে। সেই ছোট্ট মেয়েটির সাথে আমিও পাল্লা দিয়ে বড় হতে থাকি। খুব ভালো বন্ধুত্বও হয় আমাদের মাঝে।
স্কুল ছাড়িয়ে কলেজে আমরা। ইন্টার মিডিয়েট প্রথম বর্ষ। একদিন হঠাৎ মনে মনে ভাবি, বেশ বড় হয়েছি আমি। এবার সময় বুঝে বলাই যায়, ভালোবাসি তোরে...। ঠিক এমনই এক রিমঝিম, ঝুমঝুম বৃষ্টি-মুখর দিনে কাঁপা কাঁপা হাতে তাকে গোলাপ দিতে গিয়েছিলাম আমি। গোলাপের মিষ্ট সুভাসের সঙ্গে মিষ্টি করে বলেই দেবো আজ। কিন্তু নাহ! বলা হলো না। বরঞ্চ সেদিন আমার সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্ধবী’রি মায়াবী কন্ঠের টানা কয়েক মিনিটের বকুনী খেয়েছিলাম আমি। আবার সময় আর ভাগ্যের পরিক্রমায় এমনই এক বৃষ্টির দিনে কলেজ শেষে বাসায় ফেরার সময়, আমাকে ধমকের সুরে বলেছিল, “কিরে পেছন পেছন কি করিস? সাইকেল নিয়ে চলে যানা। তুই ক্যানো ভিজছিস? কি? কিছু বলার সাহস করছিস নাকি? একদম আজেবাজে কিছু বলবিনা”। আমি নিরব নিথর হয়ে মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকলাম পাশাপাশি হয়ে। ও নিজেও কিছুক্ষণ নিরব থেকে, তারপরে বললো, “ঐ দাঁড়া। আমার দিকে তাকা”। আমি ওর দিকে তাকালাম, ওঁ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, “ জানি, তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস। আমারও তোকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসি তোরে”। আমি থ’ মেরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। ওঁ এবার মুচকি হেসে বললো, “ জানি, তুই এখন কথা বলতে পারবিনা। যা নারে ঐ বিলের মাঝে ফুটে থাকা শাপলাটা এনে দে, খুব সুন্দর লাগছে ফুলটা”। --- আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ আর সাইকেল প্রিয় এক বন্ধুর কাছে জমা রেখে, পাগলের মতো ঝাপিয়ে পড়ি বিলের জলে। জিন্সের প্যান্ট ভিজে দেহের ওজন দ্বিগুণ হয়ে গেলো। সাতরিয়ে শাপলা এনে দিই ওর হাতে। অবশ্য আমি যখন পানিতে নামতে যাবো, তখন খুব করে নিষেধ করেছিলো ও। তবে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলাম। শাপলা এনে হাতে দিলাম। বললাম, “আবার বলনারে... ঐ কথাটা”। “এখন আর হবেনা (ওর সোজাসাপটা উত্তর) । আবার কোনো শুভক্ষণ দেখে বলবো” বলেই আমার চোখে তাকিয়ে হৃদয়েছোয়া হাসিতে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দিলো আমায়।
এরপর থেকেই আকাশে মেঘেদের ছোটাছুটি দেখলেই মনে অন্যরকম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হতো । বাতাসে খুঁজে পেতাম বৃষ্টির ঘ্রাণ। বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে ওর ছোয়া অনুভব করতাম। মনে করতে না করতেই ওর টেক্সট চলে আসতো মোবাইলে অথবা কল। কখনো ম্যাসেজিং করতাম অনবরত আবার কখনো কথামালার ফুলঝুড়িতে ভাসতাম দু’জনে।
কিন্তু এখন আর আসেনা। কিন্তু কোনো এক গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিময় সন্ধ্যায় বৃষ্টির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে দিয়ে চলে গেলো সে। সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখিদের মতো সেও উড়ে গেলে। তবে নতুন সে নীড়। ভেঙে দিয়ে গেলো আমার ছোট্ট নীড়ের সাজানো সব স্বপ্নগুলো।
আহ! বৃষ্টি! খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়। তুমিই আমার সব আনন্দ বেদনা আর পাওয়া না পাওয়ার নীরব স্বাক্ষী।
এখনো বৃষ্টি দেখি। অফিসের জানলা দিয়ে। ভিজতে পারিনা। তবে ভুল করিনা, বৃষ্টির পানির স্পর্শ নিতে। প্রতিটা ফোঁটায় ওর স্পর্শ খুঁজি। এখন আকাশের কান্নার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিরবে কেঁদে যায় আমার মন। বৃথাই খুজে ফিরি সেই সব ভালো লাগার ছোট্ট একটা মুহুর্ত।
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১০
মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাল্পনিক ভালোবাসা। রসহীন এতো বড় লেখাটি কষ্ট করে পড়েছেন জেনে খুবই আনন্দিত হলাম। শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৫৭
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ভাল হয়েছে লিখাটা। বর্ণনাভঙ্গী উপভোগ্য।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০৫
মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর মন্তব্যে ভালো লাগলো। আমি লেখক নই, সাহিত্যে নেই বিন্দুমাত্র ধারণা। আমার অতীত স্মৃতিগুলো লিখনীতে লিপিবদ্ধ করেছি মাত্র। ভালো হয়েছে জেনে খুশি হলাম।
শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বৃষ্টি কথন ভালো লাগল। ভালো লিখেছেন।