![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ হিসেবে একটু ভাবুক টাইপের , যেসব ভাবনার সমাধান আগে হয়নি আর সামনেও হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই ।
“ কিছু সুখ বিক্রি হবে, সুখ, নিবেন ? সুখ বিক্রি হবে ? আশ্চর্য ! কীসের বিনিময়ে ? আকাঙ্ক্ষার বিনিময়ে ! কীভাবে ? আপনি আপনার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা আমায় দিয়ে দেন, আমি আপনাকে আমৃত্যু অফুরন্ত সুখ দিয়ে দিব !’’ কোন এক বইয়ে মনে হয় অনেক আগে এভাবেই পড়েছিলাম । মানুষের সামগ্রিক বেঁচে থাকাটাই এই সুখ নামক অধরা পাখিকে পোষ মানানোর জন্য । মানুষ তার ইন্দ্রিয়শক্তি দিয়ে যা কিছু অনুভব করে তার অনেক কিছুই অপর মানুষের কাছ থেকে সে পেয়ে থাকে কিন্তু সুখটাকে নিজের ভেতর থেকেই জন্ম দিতে হয়, অনুভব করতে হয় । অনেক ছোটবেলায় আমরা অনেকেই ‘সুখী মানুষের গল্প’ পড়েছিলাম । যার নিজের বলতে তেমন কিছুই ছিল না । প্রকৃত ব্যাপারটা কিন্তু তাই । যে যত শূন্য সেই তত ভরাট ! মানে আপনি যত কুড়াবেন সুখটা ততই হারাবেন । অনেকের কাছেই আবার সুখটা আপেক্ষিক । একটা মানুষকে সমস্ত সত্তা দিয়ে ভালোবাসেন, পছন্দ করেন, সারা জীবনের জন্য পেতে চান , ঘর বাঁধতে চান এবং একসাথে মরতেও চান; মানুষটাও আপনাকে বলল, সেও তাই ভাবে । আপনি যেন তখন সুখের মহাসমুদ্রে ভাসলেন ! কিন্তু মানুষটি যদি তার উল্টো ভাবে ? আপনি কাঁদলেন আজীবন মনের লুকানো জগতে ; তার মানে আপনি দুঃখ পেলেন গভীরভাবে । প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে কাঁপছেন । বাবা বা মা মাথায় শীতল হাতের পরশ দিচ্ছেন, বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন সমস্ত সোহাগ দিয়ে – আপনি বুকের মধ্যে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করছেন ? এটাও সুখ ! কিন্তু আপনার বাবা আর মা সারাদিন পার্টিতে, সামাজিক অনুষ্ঠানে মত্ত । নামমাত্র আপনার সাথে তাদের আত্মিক বন্ধন ! তাহলে ব্যাপারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? আপনার কাছে মনে হবে পৃথিবীতে আসলে কোন সুখই নেই ! এটা একটা জাহান্নাম ! বন্ধুদের সঙ্গে ফুচকা, আড্ডা, খুনসুটি, কখনো গাল ফুলে থাকা, সৈকতে পানি ছিটাছিটি – সে আবার আরেক ধরণের সুখ ! এই জন্যই সুখটা আপেক্ষিক। এই আপেক্ষিকতার জন্যই মান্না দে হয়তো গেয়ে গেছেন ‘কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না’ !
কারো কাছে আবার সুখটা একধরণের মাদকতা । আজ অফিস শেষে ফিরছি হেটে হেটে । রাস্তার বা পাশের এক কোল্ড ড্রিংকসের দোকানে কীর্তন গান বড় স্পীকারে বাজছে । ভেতরে আট-দশ বছরের একটা বালক আর ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ মাথা ঝোকাচ্ছে পরম তৃপ্তিতে । এই মাদকতার নামও হয়তো সুখ ! গত দু সপ্তাহ আগে ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলাম । পথিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক বাউল ফকির ট্রেনে উঠলো । কিছু ইচড়ে পাকা শহুরে পিচ্চি জেদ করে ধরলো তাকে গান শোনানোর জন্য । সে প্রথম যে গানটা গাইলো সেটি হল – ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ! দোতারার তালে পিচ্চিদের শরীর দুলানো আর আনন্দে গলা মেলানো দেখে পুরো বগির লোকেরাই হতবাক ! এ গানের মর্ম ওরা বুঝুক বা না বুঝুক ওদের এই শুভ্র মনের উন্মাদনা – এটাই সুখ ! অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র । আমাদের পাড়ায় এক বড় ভাই গোছের একজন ছিল যে সারাদিন টুপড়ি বা ভাড় ( মাটি বহন করার ডালা ) তৈরি করতো আর সপ্তাহে দুদিন সেগুলো হাটে বিক্রি করতো । উনি প্রায়ই বলতো, “দিন শেষে আমি সকল টুপড়ি ভাড় বিক্রি করে এসে লাল মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা, আর বিলের টাটকা টাকি মাছের ঝোল দিয়ে দু মুঠো ভাত খাই । ঘরের সামনের আঙিনায় পাটি বিছিয়ে দেই । দখিনা বাতাস, আর আকশে স্বচ্ছ চাঁদ দেখতে দেখতে যে পরম আনন্দে আমি ঘুমাই, আমার বিশ্বাস, কোন কোটিপতি একটি রাতও সে সুখ নিয়ে ঘুমাতে পারেনা । কোটিপতির টাকাই তাকে ঘুমাতে দেয় না ।” কী অনুভূতি সুখের, দেখেছেন ! কিন্তু ভেবে বসেন না আবার টাকার অনুপস্থিতিও কিন্তু সুখের একমাত্র উপায় নয় । ওটারও দরকার আছে তবে তা পরিমাণ মত । এই যে আত্মতুষ্টি, অল্পে তুষ্টি - এটা অকল্পনীয় এক সুখ । এর জন্য মনকে অনেক বড় বানাতে হয় । মানুষের প্রতিক্রিয়ায় নিজের প্রতিক্রিয়া অনেক সময় দমিয়ে রাখতে হয় । আবার কারো কাছে সুখ মানে অপরের জন্যই চিরদিন করে যাওয়া । এই ধরণের মানুষগুলিই পৃথিবীতে ‘মহামানব’ হয়ে মানুষের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকে । ডেল কার্নেগী যেমন বলেছেন ‘ ভালোবেসে আপনি তখনই কোন কষ্ট পাবেন না যখন আপনি তার কাছ থেকে ফিরতি ভালোবাসা প্রত্যাশা করবেন না ।’ রোগে শোকে, দুর্যোগে, চরম দারিদ্রে, ক্ষুধায়, পিছিয়ে পড়া মানুষের সাড়িতে দাঁড়িয়ে আপনি যখন ফিরতি কোন কিছুর প্রত্যাশা না করে তাদের আলোয় নিয়ে আসার জন্য কাজ করবেন তখন দেখবেন আপনার ভেতরে একটা শীতল অনুভুতি ভেসে বেড়াচ্ছে – এরই নামই সুখ ।
পরিশেষে একজনের অসাধারণ একটি কথা দিয়ে ইতি টানবো । উনি হলেন ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের’ প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ । ঐ অনুষ্ঠানে থাকার পরম সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল । আমাদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করলো, আচ্ছা স্যার, আমরা সবসময় বলি আমি এটা হব, ওটা হব, এটা করব , ওটা করবো । যখন তা হই বা করি তখন আবার আরেকটা আকাঙ্ক্ষা আমরা সামনে দাড় করাই । এভাবে অবিরাম চলতেই থাকে আকাঙ্ক্ষার পেছনে ছোটাছুটি । আসলে এর শেষ কোথায় ? স্যার উত্তর দিলেন, “ তোমাকে একটা সীমারেখা তৈরি করে নিতে হবে । আর নিজেকে কথা দিতে হবে আমি এই সীমারেখা কোন অবস্থাতেই অতিক্রম করবো না । যদি তুমি তা করতে পার তবেই তুমি একজন সফল সুখী মানুষ হতে পারবে ।”
©somewhere in net ltd.