নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, উইকিপিডিয়ান, শখের পরিব্রাজক আর সৌখিন লেখক এই মোর পরিচয়।

এফ রহমান

নিজেকে সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক ভাবি। পড়িই বেশী। মাঝে মাঝে লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করি।

এফ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোজা স্মৃতি

০১ লা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০০

বিশ্ববিদ্যালয় রোজার মাসে ছুটি হয়ে যেত। ছাত্রজীবনে রমজান শুরু হলেই আমি বাড়ি চলে যেতাম। কেউ আমাকে আর আটকে রাখতে পারতো না। ত্রিশটি দিন একই রুটিনে কেটে যেত। তবু কত মধুর ছিলো সেই ফেলে আসা দিন। সেহেরি খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। উঠতাম সকাল আটটায়। তার পরে ঘুমানো আম্মার সংবিধান অনুসারে অবৈধ। আমরা না উঠতে চাইলে তিনি হাঁড়ি কুড়ি এত খটরমটর করবেন যে ঘুমানোর উপায় থাকে না।



আম্মা বলতেন কুরআন শরীফ নিয়ে বস। কলিকালের পোলা আমি। আমি বসতাম ডেক্সটপে। ম্যুভি দেখে অথবা গেম খেলে দুপুর গড়িয়ে দিতাম। আম্মা গোছলের জন্য তাগাদা দিতেন। দুপুরে নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ তেলওয়াত করতাম। আসরের নামাজ পড়ে মোবাইলটা হাতে করে নদীর ঘাটে গিয়ে বসে থাকতাম। প্রথম দিকে মিগ৩৩ এর চ্যাটে পরের বছরগুলোতে ফেসবুকে মেতে থাকতাম। ২০০৭ সালে মিগে আমার এক ইন্দোনেশিয়ান বান্ধবী হয় মিগে। আজো থিয়া পুস্পিতাসারির সাথে বন্ধুত্ব টিকে আছে ফেসবুকে। তার কাছ থেকে শেখা গুটিকয়েক ইন্দোনেশীয় বাক্য আজো আমার ঠোঁটস্থ হয়ে আছে। নদীর নাম চুনকুড়ি নদী। এর এক মাথা মিলেছে পশুর নদীর সাথে। পশুর নদীর পাড়ে মংলা সমুদ্র বন্দর অবস্থিত। অন্য মাথায় শিবসা নদী। শিবসা সুন্দরবনের গাঁ ঘেঁসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। নদী দিয়ে অনবরত নৌকা ট্রলার ছুটে চলেছে গন্তব্যে। দক্ষিণ দিক থেকে শরীর জুড়ানো বাতাস ভেসে আসে। দখিনা হাওয়ায় মন উতলা হয়।



মাগরিবের আধা ঘন্টা আগে আমি বাসায় ছুটতাম। আম্মা তখনও রান্নাঘরে ইফতারীর আইটেম বানাচ্ছেন। আম্মা একেকদিন একেকটা আইটেম বানান। কোনদিন বেগুনী, কোনদিন পেঁয়াজু, ছোলাটা কমন থাকে। চুলা ফিচফিচ শব্দে মুখর। আব্বা বারান্দায় এক গাঁদা কাগজপত্র নিয়ে বসে আছেন। লেবুর সরবত বানানো। চিনির পরিমান নিয়ে বেশীরভাগ সময়ে গড়বড় লেগে যেত। চিনি কম হলে আব্বু অনুযোগ করতেন আর বেশী হলে আম্মু। তাই ক্যালকুলেশান করে চামচ মেপে চিনি দেয়ার চেষ্টা করতাম। আখ, পেয়ারা, আনারস ইত্যাদি কেটে পিস করা এগুলা ছিলো আমার দ্বায়িত্ব। এমনকি আজান পড়ার মিনিট দুই আগে ছোলা মুড়ি মাখাতে হবে। না হলে মুড়ি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

ছোট ভাইটা মসজিদে চলে যেত ইফতারী করতে। আমাদের এলাকায় এখনো রোজার মাসে রোজাদারদের মসজিদে ইফতারী করানো হয়। আমার ছোটবেলা থেকে মসজিদে যেতে কেন জানি সংকোচ হত। আমি বাসাতেই ইফতারী করতাম। মাদ্রাসার মসজিদ থেকে আজান ভেসে আসতো। ইফতারীর দোয়া জিভের আগায় এসে বসে আছে, আল্লাহুম্মা ছুমতু লাকা...। আব্বু, আম্মু আর আমি তিনজন মিলে ইফতারী করতাম। দিন শেষে এক গ্লাস লেবুর সরবত প্রশান্তি বয়ে আনতো। দিনগুলো বড় মধুর ছিলো।



চাকরী পাওয়ার পরে আমি আর রোজার মাসে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ করে উঠতে পারিনি। এই নিয়ে তৃতীয় রমজান চলছে। অফিসের কলিগদের সাথে বসে ইফতারী করি। ইফতারীর আইটেমও থাকছে অনেক। বাড়িতে থাকতো হাতে গোনা কয়েকটা। তবুও যখন ইফতারী সামনে নিয়ে বসি। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে। ছোট ভাইটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইফতারীর সন্ধ্যাগুলো আব্বু আম্মু দুজন নিরব ঘরে বসে কাটিয়ে দিচ্ছেন।

আল্লাহ তকদিরে চাকরি করা যখন লিখেছ তখন এটুকু অন্তত লেখো যেন বাবা মায়ের কাছাকাছি থেকে ভালো কোন চাকরি করতে পারি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২০

আবদুল্লাহ-আল-মারুফ বলেছেন: সারা জীবন ইফতারির ভুল দোয়া পরেসেন । সঠিক দোয়া হবে
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ...

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩০

এফ রহমান বলেছেন: ভাই সাহেব অন্যকে ভূল বলার আগে নিজের জানার পরিধিকে জেনে নিন। আমি কোন এক গ্রামের কথা বলেছি। এবং গ্রামের মানুষ এভাবেই ইফতারী দোয়া করে। আপনার লাকা ছুমতু দোয়াও আমার জানা আছে। কিন্তু গ্রামের কথা লিখতে গিয়ে গ্রামের মতই করে লিখেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.