নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, উইকিপিডিয়ান, শখের পরিব্রাজক আর সৌখিন লেখক এই মোর পরিচয়।

এফ রহমান

নিজেকে সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক ভাবি। পড়িই বেশী। মাঝে মাঝে লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করি।

এফ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রামের মসজিদে ইফতারী

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২৫

মাগরিবের আর বেশী বাকি নেই। গ্রামের ছেলে যুবক বুড়ো সবাই পানির ছোট জগ হাতে মসজিদের দিকে চলেছে। সময়টা তখন ৯৫/৯৬ সাল হবে। আমাদের গ্রামের মসজিদের ইটের দেয়ালের গায়ে সিমেন্টে খোদাই করে লেখা ছিলো ভাগবাহ পূর্বপাড়া জামে মসজিদ। মসজিদেরও যে নাম থাকে তা আমি এই মসজিদ দেখেই প্রথম জানি। ইটের দেয়ালের উপর গোলপাতার ছাউনি ছিলো। পরে টিনশেড দেয়া হয়। বছর দুয়েক আগে একবার গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তখন দেখেছিলাম মেঝেতে টাইলস বসানো হয়েছে। এখন শুনেছি মসজিদে ছাদ দেয়া হয়ছে। অনেকদিন যাওয়া হয় না।



বাবার চাকরি সুত্রে আমি বড় হয়েছ পাশের থানায়। রোজায় পুরো মাস স্কুল ছুটি হয়ে যেত। আমিও পাখির মত নাচতে নাচতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে হাজির হতাম। মজার ব্যাপার হলো আমার নানা বাড়ি দাদা বাড়ি একই গ্রামে। এই পাড়া থেকে ওই পাড়ায় যেতে পাঁচমিনিটও লাগেনা। একই পাড়া বলা চলে। রাস্তার এপাশে ওপাশে দুই বংশ। ছোট বেলায় আমি খোঁজ রাখতাম কোন বাড়িতে কি রান্না হচ্ছে। যেখানে ভালো রান্না হচ্ছে সেখানেই খেতে বসে যেতাম।



কৈশোরে আমি দেখেছি মসজিদের বারান্দায় মাটির সানকি গাদা করে রাখা হত। যিনি ইফতারী করাবেন তার বাড়ি থেকে গুড়ের পায়েস এসে হাজির হত মসজিদের বারান্দায়। মাটির সানকিতে পায়েস বেড়ে রাখা হতো। মসজিদের লাগোয়া গাছে বাঁধা ছিলো গ্রামের একমাত্র মাইক। মাইকে ইমাম সাহেব কিছুক্ষণ দোয়া দরুদ পড়ে মোনাজাত ধরেন। মসজিদের বারান্দায় সবাই হুজুরের সাথে হাত তোলে। বাড়িতে মা চাচী খালা দাদীরা সবাই হাত তুলে মোনাজাতে শরীক হয়। হুজুর দোয়া করেন ফসলের জন্য, হুজুর দোয়া করেন মাছের জন্য, হুজুর দোয়া করেন সুন্দরবনে যারা জীবিকার সন্ধানে গেছে তাদের জন্য, হুজুর দোয়া করেন সেই সব মানুষের জন্য যাদের পদচারণায় মুখর ছিলো এই গ্রামের ধূলিমাখা পথ যারা আজ শুয়ে আছে মাটির কবরে। মোনাজাত শেষে হুজুর আজান দেন। সবাই ইফতারী খুলতে ব্যস্ত। ইফতারী খেয়ে যার যার মাটির সানকি পুকুরে ধুয়ে বারান্দায় নির্ধারিত জায়গায় রেখে জামাতে শরীক হয় সবাই।



সময় একটু একটু করে বেশ গড়িয়েছে। মসজিদের পুকুরে সান বাঁধানো ঘাট হয়েছে। মাটির সানকির জায়গায় এসেছিলো প্লাস্টিকের প্লেট। সেই জায়গা দখল করেছে মেলামাইনের প্লেট। গুড়ের পায়েসের জায়গা নিয়েছে সেমাই, ছোলা মুড়ি, চপ পেঁয়াজু। মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এখনো মাগরিবের আধা ঘন্টা আগে ছেলে জোয়ান বুড়ো সবাই বোতলে পানি নিয়ে মসজিদে ইফতারী করতে আসে। একত্রে বসে সবাই মিলে ইফতারী করে। আশে পাশে আরো কয়েকটি মসজিদ হয়েছে। মসজিদের ছাদে রাখা জোড়া মাইকে ইমাম সাহেবের আযানের সুর প্রতিধ্বনিত হয় গ্রামের আকাশে বাতাসে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এখনও এই ধারা প্রচলিত রয়েছে।

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪০

এফ রহমান বলেছেন: হুম। কিন্তু সব জায়গাতে নেই। অনেক জায়গায় এখন বাসা থেকে ইফতারী করে মসজিদে যেতে হয়।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

মুহাম্মদ তৌহিদ বলেছেন: প্রাঞ্জল ভাষায় সুন্দর বর্ণনা করেছেন।

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪২

এফ রহমান বলেছেন: এমন প্রশংসা পেলে কার না ভালো লাগে বলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.