নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, উইকিপিডিয়ান, শখের পরিব্রাজক আর সৌখিন লেখক এই মোর পরিচয়।

এফ রহমান

নিজেকে সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক ভাবি। পড়িই বেশী। মাঝে মাঝে লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করি।

এফ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথ ০১

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪১

ইন্ডাস্ট্রি থেকে বের হতেই আকাশে খটখটা রোদ উঠলো। উজ্জ্বল কিছুটা বিরক্ত হলো। ভাদ্রের দিনগুলোতে এই বৃষ্টি তো এই রোদ। শেয়াল কুকুরের বিয়ে মনে হয় একটু বেশীই হচ্ছে আজকাল। কিছুক্ষণ আগে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি হয়ে গেছে। পিচের রাস্তা এখনো ভেজা। একখানা মাত্র রিকশা দাঁড়িয়ে। রিকশাচালক বৃদ্ধ দেখে তার মেজাজটাই বিগড়ে গেলো। আজ তার মেজাজ কিছুটা খারাপ। সঙ্গত কারণে খারাপ বলা যাবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘাড়ে ব্যাথা করছে। ঘুমুতে গিয়ে ঘাড়ে ব্যাথা পাওয়া উজ্জ্বলের জন্য নতুন কিছু নয়। মাসে একবার সে অন্তত ঘাড়ে ব্যাথা পেয়ে থাকে। কিন্তু আজ তার ঢাকায় যাওয়ার কথা। বিন্দু আপু এবং সাকির সাথে দেখা করার কথা। সে বার দুয়েক দুজনকে ফেসবুকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। নানা এক্সিউজ দেখিয়েছে। তবু দুজনেই নাছোড় বান্দা। অগস্ত্যা যাত্রা করতেই হলো।



মেঘনা ব্রিজ পেরিয়ে দোঁয়েল বাসের কাউন্টারে যেতে না যেতেই একখানা বাস ছেড়ে যাচ্ছে দেখে সে হাত উঁচিয়ে বাস থামালো। দৌড়ে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে বাসে উঠে বসলো। পথিমধ্যে মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে মিনিট সাতেক বাস দাঁড়িয়েছিলো। কাঁচপুর ব্রিজের সামনে থেকে শুরু হলো মহা জ্যাম। পাক্কা এক ঘন্টা পেরিয়ে গেলো ব্রিজ পার হতে। চিটাগাং রোডে এসে দেখে বঙ্গবন্ধুর সেবকেরা বঙ্গ বন্ধুর খুনীর দাবীতে মানব বন্ধন করছেন। বড়ই উত্তম কথা। আমিও চাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আগস্ট মাস শোকের মাস হয়ে যায়। মাস ব্যাপী নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া এই দিনে জন্মদিন পালন করেন বলেন দেশে এক মহা বাকযুদ্ধও শুরু হয়। অথচ এই মাসেই ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালনের সময় খোদ আওয়ামী লীগ ভূলে যায় এটা শোকে মাস। আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বরে এসে এই লোক দেখানো মানববন্ধনে উজ্জ্বল বিরক্ত না হয়ে পারলো না। সদিচ্ছা থাকলে রাস্তায় না দাঁড়িয়ে রাস্তার নিচে দাঁড়িয়েও মানববন্ধন করা যায়। কিন্তু জ্যাম লেগে খবরের শিরোনাম না হলে কিভাবে মানববন্ধনের খবর মহাজনেদের দৃষ্টিগোচর হবে!



গুলিস্তানে বাস পৌঁছাতেই সাড় পাঁচটা বেজে গেলো। এরই মধ্যে বিন্দু আপা বারদুয়েক ফোন করেছে, ''কই তুই?'' । এই তো পৌঁছে গেলাম বলতে হলো তাকে। ফ্লাইওভারের নিচে বাস নামতেই নবাবপুরের দিকের চৌরাস্তায় একটা জটে পড়ে বাস। উজ্জ্বল নেমে পড়লো। হাঁটা শুরু করেই সে প্রকৃতির ডাক অনুভব করলো। পুলিশ বক্স লাগোয়া পাবলিক টয়লেটের দিকে ছুট লাগালো। এই দেশে এক গ্লাস পানি খেতে লাগে এক থেকে দুইটাকা কিন্তু হোমিওপ্যাথিকের এক শিশি মূত্র বিসর্জনে দিতে হয় তিন থেকে পাঁচ টাকা!



আপুর অফিস ছুটি হয়ে গেছে। তিনি ফুটপাতের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। ফুটপাত সব হকারদের দখলে। উজ্জ্বল পৌঁছাতেই আপু তাকে নিয়ে বিআরটিসির দোতলা বাসে উঠলেন। লেডিস সিটগুলোই ফাঁকা আছে শুধু। সে বললো, চলো আপু দোতলায় যাই। আপু রাজী হলো না। আপু বসলো সামনের সারির ফাঁকা সিটে। উজ্জ্বল বসলো ড্রাইভারের পিঠ ঘেসা উলটো দিকে ফেরানো চেয়ারগুলোর একটাতে। হেলপার বললো বইসেন না মামু, লেডিস সিট। উজ্জ্বল জানালো সমস্যা নাই। এলে সিট ছেড়ে দেবে। ইতোমধ্যে বাকি লেডিস সিটগুলো পুরুষে ভরে গেলো। সাকিকে ফোন দেয়া হলো বার দুয়েক। সে অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা। আপু তাকে সোজা জাহাঙ্গীর গেটে চলে আসতে বললেন। সাকি একটা বেসরকারী ব্যাঙ্কে চাকুরী করে। কয়েকমাস হলো জয়েন করেছে। ব্যাংক তাদের নতুন এমপ্লয়িদেরকে ঢাকার হেড অফিসে বদলি করে আনছে। সাকিকেও এনেছে। সে তো মহা টেনশানে আছে। এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা সব কিছুকে ভয় পায়। সাকী সেই শ্রেণীর লোক। কিছু হলেই টেনশান করতে করতে মাথা খারাপ করে ফেলার যোগাড়। নতুনকে ভয় পাওয়ার দলে উজ্জ্বলও আছে। কিন্তু সে প্রকাশ করে না। যান্ত্রিক জীবনের পদচারনায় সে মনের ভাব গোপন করে রাখতে শিখে গেছে।



রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। গাড়িগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে যেন। গুলিস্তান থেকে শাহবাগ আসতে ঘন্টা খানেক লেগে গেলো। শাহবাগ মোড় পেরিয়ে পিজি হাসপাতালের সামনে আসতে একজোড়া ছেলে মেয়ে দৌড়ে বাসে উঠলো। রিস্ক নিয়েই উঠলো। আমি সিট ছেড়ে উঠতে যাবো এরই মধ্যে মেয়েটি দরজার পাশের টুল বক্সে উঠে বসলো। ছেলেটি তার গা ঘেঁসেই পাশে দাঁড়ালো। মেয়েটি বেশ ফর্সা। কিন্তু সুন্দরী বলা চলেনা। দাঁত গুলো বড় বড়, মুখের সাথে মানায় না। ছেলেটি আর মেয়েটি সেই লোক ভরা বাসের মধ্যে কিছু বাজে ছোঁয়াছুয়িতে মেতে উঠলো। যৌবন আমাদেরকে কি অন্ধ করে দিচ্ছে! না হলে আমরা কুকুরের মত কেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি। প্রবৃত্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করছি। জীবনের ম্যোরাল ভূল্লে যাচ্ছি। এরা খুব সম্ভবত ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। উজ্জ্বল একবার ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। ছেলেটা নার্ভাস হয়ে গেলো। মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাঁপ দেখলাম।



জাহাঙ্গীর গেটে অবশেষে পৌঁছালো। ক্যাপ্টেইনসের সামনে বিন্দু ও উজ্জ্বল নেমে পড়লো। সাকি তখনও পৌঁছাতে পারেনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.