![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালীরা বঞ্চিত, প্রভাব পড়বে আসন্ন নির্বাচনে
খাগড়াছড়ি-বান্দরবান জেলায় ৭ হাজার উপজাতি পরিবারকে ৩৫ হাজার একর ভূমি বন্দোবস্তী দিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়
বিশেষ সংবাদদাতা/ পার্বত্যনিউজ.কম
তিন পার্বত্য জেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান বন্ধ রাখা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কৌশলে প্রায় ৭ হাজার উপজাতি পরিবারকে প্রায় ৩৫ হাজার একর সরকারি ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান করতে যাচ্ছে। বাঙ্গালী গুচ্ছগ্রামবাসীদেরকে তাদের বন্দোবস্তী ভূমিতে পুনর্বাসন ব্যতিরেকে মন্ত্রণালয় একতরফাভাবে উপজাতীয় পরিবারদের পুনর্বাসনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে পাহাড়ে আবারও নতুন করে অশান্তি দাবানল জ্বলে উঠতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। তাই একতরফা ভূমি বন্দোবস্তী বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করতে সরকারের প্রতি অনেকে দাবী তুলেছেন। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম এর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্দোবস্তী প্রদান বন্ধ রয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা, উচুঁ ভূমি বন্দোবস্তীকরণ প্রকল্পের অধীনে জুমিয়া পরিবারদেরকে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী নীতিমালার আওতায় একটি প্রকল্পের অধীনে বন্দোবস্তী প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান চালু থাকলেও ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মণি স্বপন দেওয়ানের নির্দেশে তিন পার্বত্য জেলায় সকল প্রকার ভূমি বন্দোবস্তী বন্ধ করে দেয়া হয়। বিগত ১৮ মে ২০০২ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহসিনা ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্রে তিন পার্বত্য জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকগণকে নির্দেশনা দেয়া হয় যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত উচুঁ ভূমি বন্দোবস্তীকরণ-২য় পর্যায় প্রকল্পের অধীনে পুনর্বাসিত পরিবারদের ভূমি বন্দোবস্তী প্রদানের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না। ২০০৩ সালের ১০ মে এবং ২০০৫ সালের ২০ নভেম্বর তিন পার্বত্য জেলার সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সরকারি খাস ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে ২ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভূমি বন্দোবস্তী প্রদানে স্থগিতাদেশ কেস-টু-কেস ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিচার বিশ্লেষণ করে শিথিল করতে পারবে। যেমন-শিক্ষা-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, শ্মশান, কবরস্থান, সরকারি দপ্তরে জরুরী প্রয়োজনে ভূমি প্রদান করা যাবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তি পর্যায়ে সরকারি ভূমি বন্দোবস্তী প্রদানে কোন প্রকার সুযোগ না থাকলেও মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত উঁচুভূমি বন্দোবস্তীকরণ প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে কৌশলে ৪ হাজার ৫৮ পরিবারকে ৫ একর করে রাবার বাগানের ভূমি বরাদ্দ দিয়ে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন মৌজায় পুনর্বাসনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ৩ হাজার ৭০০টি মামলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর হয়ে আছে। ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আরও প্রায় কয়েকশত মামলা জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর হয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাবরে প্রেরণের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বান্দরবানে রয়েছে ৮শটি মামলা। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী খাগড়াছড়ি সফর করার কথা রয়েছে। তাকে দিয়েই মন্ত্রণালয় উপজাতীয় পরিবারগুলোর মাঝে ভূমি বন্দোবস্তীর কাগজ হস্তান্তর করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। এছাড়া হর্টিকালচার প্রকল্পের অধীনেও কয়েক হাজার উপজাতীয়কে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ২০০২ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে পত্র নং-সিডি/মাপ্র/৭(৬৪)/৯২-৩৮৪,তারিখ-৩/০৮/২০০২ইং তারিখে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রেরিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নামে ১০ হাজার ভূমি বন্দোবস্তী মামলা আইন অনুযায়ী পূর্বানুমোদন দিয়ে নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়। উক্ত পত্রের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিগত ২০ আগস্ট ২০০২ তারিখে মন্ত্রী পরিষদের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে নির্দেশনা প্রদান করে। সেই নির্দেশনার আলোকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ১০ হাজার মামলার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ১ হাজার ৫ শত বন্দোবস্তী মামলা পূর্বানুমোদন দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে। উক্ত সময়ে জেলা প্রশাসক মামলাগুলো নিষ্পত্তি করেনি। মামলাগুলো পুর্বানুমোদন দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানোর কিছুদিনের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে স্মারক: পাচবিম/(প-১)/বিবিধ/ভূমি-৯৮/২০০০/১৯৬ মোতাবেক মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ফলে বাঙালীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক ভূমি পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। অথচ মন্ত্রণালয় কৌশলে একতরফাভাবে উপজাতীয় পরিবারদেরকে শীঘ্রই ভূমি বন্দোবস্তী দিতে যাচ্ছে।
এদিকে ১৯৮১-৮২ সালে সরকার খাগড়াছড়ি জেলায় ২৬ হাজার ২ শ ২০ বাঙালী পরিবারকে পুনর্বাসন করে। কিন্তু তৎসময়ে শান্তিবাহিনীর অব্যাহত হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বাঙালীদের নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে তৎকালীন সরকার তাদেরকে নিজ নিজ বাগান-বাগিচা, বসতবাড়ী থেকে তুলে এনে গুচ্ছগ্রাম নামক বন্দীশালায় আটক করে। কিছু কিছু পরিবার ইতিমধ্যে পুনর্বাসিত হলেও অধিকাংশ পরিবার দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত তাদের ফেলে আসা বসতবাড়ী ও বাগানÑ বাগিচায় যেতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তাদের অনিশ্চিত মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোন দিক নির্দেশনা না থাকায় বাঙালীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছে। এদিকে, বন্দোবস্তী দেয়া এসব ভূমির মধ্যে পূর্বে বাঙালীদের নামে বন্দোবস্তী দেয়া বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে বলে বাঙালীদেও অভিযোগ। ফলে তারা অধিকার রক্ষায় যেকোনো সময় বড় ধরণের আন্দোলনে নামতে পাওে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত ২৮ফেব্রুয়ারী ২০১৩ পার্বত্য বাঙালী দলপতি পরিষদের সভাপতি আব্দুল আজিজ আখন্দ, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করেছে। উক্তপত্রে বাঙালীদের রেকর্ডীয় ভূমির উপর উপজাতীয়দেরকে একাধিক বন্দোবস্তী প্রদান বন্ধ রাখা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভূমি বন্দোবস্তী প্রদান বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রকল্পের নাম দিয়ে উপজাতীয়দেরকে বন্দোবস্তী প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে এরা ভূমির মালিকানা পাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক সূত্র এ প্রতিবেদকে বলেন যে, বিগত কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ভোট বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা যায় যে, উপজাতীয়দের কিছু নেতা বিএনপি আওয়ামী লীগ করলেও তাদের বেশিরভাগ ভোটই যায় ইউপিডিএফ ও জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীদের বাক্সে। আর বাঙালীরা ইউপিডিএফ জেএসএস প্রার্থীদের ভোট দেয়না। ফলে তাদের ভোটই ভাগ হয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাক্সে যায় এবং তাতেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। কাজেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সামনে একতরফাভাবে বাঙালীদের বঞ্চিত করে বা তাদের দাবীকৃত জমি উপজাতীয়দের বরাদ্দ করলে তা বাঙালীদের বিক্ষুদ্ধ করবে। এতে একদিকে যেমন পাহাড়ে আবার বাঙালী-পাহাড়ী দাঙ্গা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এ নিয়ে রাজনীতি করে সরকার বিরোধী পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোটের রাজনীতি সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে- যা সরকারের নিশ্চিত বিপক্ষে যারার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নামকে এমন বিতর্কিত একটি বিষয়ে ব্যবহার করা এবং তাকে দিয়ে এ প্রকল্পের উদ্বোধন খোদ সরকারী দলের বাঙালী সদস্যরাও মেনে নিতে পারছেন না।
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২
মো কবির বলেছেন: ভাই মাজহারুল হুসাইন একদম ঠিক বলেছেন, ওদের কাছে কিছু আশা করা মানে শুধুই ব্যর্থ হয়ে কষ্ট পাওয়া।
এই দেশে প্রয়োজন নতুন রাজনৈতিক দল। যাদের আইন হবে স্পষ্ট।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭
মাজহারুল হুসাইন বলেছেন: ৩০ হাজার বাঙালীর হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীকে যে দলের অ্যাটর্নী শান্তিতে নোবেল দিতে বলে, তাও আবার তার দলের নেত্রীর সাথে । সে দলের কাছ থেকে, এর থেকে ভাল কোন আউটপুট পাওয়ার আশা করাই তো বলদামী ।