![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজে আজাইরা, অন্যরেও আজাইরা থাকতে উৎসাহিত করি।
আমার বাবা পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত, তার চাকুরীজীবনকে আমি বর্ণাঢ্য বলতে না পারলেও, ভালো বলতে পারি অনায়েসে, চাকুরি অবস্থায় তিনি অজস্র মানুষের কাছে পেয়েছেন সম্মান আর অফুরন্ত ভালবাসা।
উনি চাকুরী করেছেন অনেক স্কুলে, তার মধ্যে সবচাইতে বেশি এবং ভালো সময় কেটেছে নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বলতে গেলে উনার শিক্ষক-কালীন সময়ের দুই তৃতীয়াংশ সময়ই তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।ছোট্ট একটি মফস্বল শহরের অনেকটা প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুলের আশ- পাশের গ্রামগুলিতে তিনি শিক্ষার এক দারুণ বিপ্লব ঘটিয়েছেন, অনেকটাই নিভৃতে।
যেই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই ছিল নিরক্ষর সেখানে তিনি তাদের মাঝে শিক্ষার যে আলো ছড়িয়ে দিয়েছেলেন, পরবর্তীতে তার দীপ্তি ছুঁয়ে গিয়েছিল পুরো শহরটিকে।
“কত লাকসাম, কত বাত্তি” এই প্রবাদে পরিচিত হলেও তৎকালে লাকসামের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মোটামুটি অন্ধকারেই, নাম-মাত্র কিছু পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়াশুনার সুযোগ পেত, বাকিদের বাবা-মায়েরা সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর চাইতে কৃষিকাজ অথবা ঘরের কাজেই পারদর্শী করতে বেশি মনযোগী ছিলেন, এমন এক পরিবেশে “ সবার জন্য শিক্ষা” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাবা কাজ করে গেছেন নিরলস ভাবে। শিক্ষাদানের পথে হেঁটেছেন অবিচল, আর এই চলার পথটা যে মোটেই মসৃণ ছিল না, সেটা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না।
খুব সম্ভব আশির দশকের শুরুতেই বাবার এই স্কুলে পোস্টিং হয়, তারপর ১৯৮৭ সালটি ছিল উনার জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি বছর, আমি মানে উনার সবচাইতে ছোট সন্তানের জন্ম তখনি,যদিও এটি উল্লেখ করার মত কিছু নয়, তবে এই বছরই আমার বাবা নিজের রোজগারের টাকায় করা বাড়িতে উঠলেন সবাইকে নিয়ে, হোক সেটা অজপাড়া-গাঁয়ে, তবু নিজের বাড়ি তো। উনি সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নোতি লাভ করলেনও এই বছরেই, সেই সাথে উনার স্কুল থেকে রেকর্ড ১৯জন সরকারী প্রাথমিক বৃত্তি লাভ করল,যা কিনা পরবর্তীতে উনাকে এনে দেয় উপজেলার (থানা) শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সম্মান, সেই সাথে সেই সময়ে বিটিভিতে প্রচারিত কিশলয় অনুষ্ঠানেও নিজের স্কুলকে উপস্থাপনের সুযোগ পান তিনি, অবশ্য এতে স্কুলের গভর্নিং-বডির সেই সময়কার সভাপতি মরহুম ওয়াদুদ আঙ্কেলের অবদান অনস্বীকার্য। এইসব প্রাপ্তি ছিল বাবার পরিশ্রমের ফসল, উনি এই স্কুলটিকে দেখতেন নিজের সন্তানের মত করে,হতে পারে এটাই ছিল উনার দায়িত্ব, তবে অর্পিত দায়িত্ব যিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারেন সফলতা একমাত্র তাঁর কাছেই ধরা দেয় আর এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন হয় নিজের কাজকে সর্বোচ্চ ভালবাসার, যা উনি পেরেছিলেন।
মনে পড়ে স্কুলের নতুন দ্বিতল ভবনের কাজ যেদিন থেকে শুরু হোল, উনি উনার নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেলেন, সারাক্ষণ লেগে থাকলেন এই কাজের তদারকিতে, নিজ হাতে স্কুলের আঙ্গিনায় লাগালেন কৃষ্ণচূড়া আর রাবার গাছ।
ছিলেন সংস্কৃতিমনা, বেশ ভালো হারমোনিয়াম বাজাতেন, আবৃত্তি করতেন আর নজরুল সংগীতটা গাইতেনও বেশ, নিজের এই গুনটিকেও উনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন উনার ছাত্র- ছাত্রীদের মাঝে,প্রতিবার বার্ষিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাবার গাওয়া গান ছিল সবারই আকর্ষণের কেন্দ্র-বিন্দুতে।
যেই স্কুলকে ঘিরে এতো ভালবাসা,সপ্ন আর সপ্নপুরনও বটে, সেই স্কুল থেকেই উনার বিদায় ঘটেছিল অনেকটা আকস্মিক ভাবেই, ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর, উনি আওয়ামী-পন্থী এই ধোঁয়া তুলে তাঁর বদলী ঘটানো হয়েছিল স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার অঙ্গুলি-হেলনে, যদিও বাবাকে কখনোই কোন রাজনৈতিক সভা – সমাবেশে দেখা যায়নি, তথাপি উনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের কারন ছিল ওই নেতার জোর-পূর্বক গভর্নিং কমিটির সভাপতির পদ হাসিল করাকে কেন্দ্র করে, এলাকার কেউ- কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেই প্রতিবাদ ধোপে টিকলো না ওই রাজনৈতিক নেতার হীন উদ্দেশ্যের কাছে, বাবাকে বদলী করা হল অপর উপজেলার দুর্গম এক অঞ্চলে, বাড়ি থেকে সেখানে যাতায়াতটা ছিল বেশ ব্যয়বহুল। যা আমাদের পরিবারের উপরে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। বাবাকে পড়তে হয়েছিল ভীষণ অর্থকষ্টে।
১৯ বছর সময় ধরে একটি প্রতিষ্ঠানকে তিল-তিল করে গড়ে তোলার পর তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছিল, চাপা ক্ষোভ আর দুঃখ বুকে নিয়ে, বদলির নোটিশ পেয়ে আমি বাসায় বসে উনাকে কাঁদতে দেখেছিলাম, যা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না, আর সেই থেকেই আমাদের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমার সম্মানের জায়গা টুকু নড়ে গেছে ভীষণভাবে, ধিক্কার সেই সকল রাজনৈতিক নেতাদের যারা আজো ছাত্র- শিক্ষকদের স্বীয় ক্ষমতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
শিক্ষকদের যদি জাতির বিবেক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবে সেদিন এই বিবেককে টুটি চেপে হত্যা করতে চেয়েছিল কোন এক রাজনৈতিক আবর্জনা।
আজকে এতদিন পর দূর প্রবাসে বসে যখন বাবার কথা ভাবি তখন বার –বার শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে, “বাবা”
যতদিন এই নশরতপুর স্কুল টিকে থাকবে ততদিন আমি অথবা তোমার অপরাপর সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীরা তোমার অবদানকে ভুলে যাবো না, আমি ঠিক জানি ইতিহাস তোমাকেই ধরে রাখবে আর সব রাজনৈতিক উচ্ছিষ্টের জায়গা হবে আবর্জনার আস্তাকুলে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪১
হাসান িজয়াউল বলেছেন: ধন্যবাদ,
আপনার জন্য শুভকামনা
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:১৮
নুর ফ্য়জুর রেজা বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি রইল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইল। রাজনীতির করাল গ্রাস এখন শিক্ষাঙ্গনের সব জায়গাতেই। ভালো থাকবেন।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৩
হাসান িজয়াউল বলেছেন: হুম,
শিক্ষাখাতকে আজকে অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে এদের ছত্র- ছায়াতেই।
শুভকামনা
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:১৯
আহাদিল বলেছেন: খুব ভালো লাগল আপনার বাবার গল্প- একজন ন্যায়বান শিক্ষকের গল্প!
আপনার বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা!
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪
হাসান িজয়াউল বলেছেন: ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩৬
ঐক্যতান বলেছেন: আপনার বাবার মত একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষকের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৫
হাসান িজয়াউল বলেছেন: আপনার জন্য শুভকামনা
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৭
অপটিমাস বলেছেন: মনে করিয়ে দিলেন বগুড়া জেলা স্কুলের হেডস্যার আব্দুল হাই স্যার,পুলিশ লাইন স্কুলের হান্নান স্যার ,কুদরত স্যার, বিশ্বনাথ স্যার ......
সেই সময়ের স্যারদের স্কুলের প্রতি এই ভালবাসা ভুলবার নয় ।
উনাদের সালাম ।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৭
হাসান িজয়াউল বলেছেন: হ্যাঁ,
তাঁরা সেবার ব্রত নিয়েই এই মহান পেশা বেছে নিয়েছিলেন, দুঃখ, আজকাল অনেককেই শিক্ষক কম, ব্যবসায়ী বেশি মনে হয়।
৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৩৫
ঝটিকা বলেছেন: আপনার বাবার মত মানুষদের গল্প যখন শুনি মনে হয় সমাজে কিছু দেওয়ার মত মানুষ এখনো আছে।
ইস আপনার আমার মত সবাই যদি সার্থান্বেষী রাজনীতি বিদ ঘৃনা ভরে দুরে ঠেলে দিত!!!
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫১
হাসান িজয়াউল বলেছেন: লেখক বলেছেন: আছে,
তবে সমাজ অথবা তাঁর অন্তর্গত মানুষজন তাঁর কদর খুব কমই করেন,সার্থান্বেষী রাজনীতিবদের ঘৃনা ভরে দুরে ঠেলে দিতেই হবে, তবে এই কাতারে সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ফেলা যাবে না কিছুতেই।
ধন্যবাদ
৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:২৬
তোমোদাচি বলেছেন: আমার বাবা ও ছিলেন প্রায়মারী স্কুলের শিক্ষক, আমি আমার বাবা কে নিয়ে গর্ব করি। বাবার আদর্শে অনুপ্রনীত হয়েই শিক্ষক হয়েছি।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৮
হাসান িজয়াউল বলেছেন: বাবার আদর্শ যেন ধরে রাখা হয়,
ধন্যবাদ
৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:৩৪
দীপ্তপন বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। স্যালুট মহান শিক্ষককে। আপনি কোন দেশে থাকেন?
৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪১
হাসান িজয়াউল বলেছেন: ধন্যবাদ,
আমি আরব আমিরাতে আছি বর্তমানে, শারজাহ।
৯| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪৭
আফসিন তৃষা বলেছেন: ভালো লাগা
৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৬
হাসান িজয়াউল বলেছেন: ধন্যবাদ,
১০| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৪
ড্রীমার বলেছেন: স্যালুট আপনার বাবার মত মানুষ গড়ার কারিগড়দের
ঘৃণা সেইসব সমাজ ধংশের নায়ক রাজনিতীবিদদের
৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৬
হাসান িজয়াউল বলেছেন: শুভ-কামনা আপনার জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২১
ক্লান্ত২০১০ বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। ভালো থাকবেন।