![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোকোর মৃত্যু, জয়ের ‘অপহরণ’ : মিডিয়ার দুই আচরণ ..........।শিশির আব্দুল্লাহ
দু’টি ঘটনা। দু’টি খবর। এই দুই খবরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আরো কিছু খবর। ঘটনা দু’টির প্রধান দুই ‘চরিত্র’ (ব্যক্তি) দুই মেরুর মানুষ। তারা পরস্পর বিরোধী। দেশীয় মিডিয়া তাদের দুইজনের দুই ঘটনারই খবর প্রচার করেছে।
মূল ঘটনা দুটি কিছুটা ভিন্নধর্মী হলেও এই দুই ঘটনায় মিডিয়ার তুলনামূলক আচরণ বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে যে, মিডিয়া কি আসলেই তার পাঠককে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ তথ্য জানিয়েছে? নাকি কোন বিশেষ ঘটনার প্রতি তাদের ‘পক্ষপাতিত্ব’ ছিল?
ঘটনা দু’টি হচ্ছে- ১. আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু। ২. সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘অপহরণ’।
হ্যাঁ, দ্বিতীয় ঘটনাটিকে বেশিরভাগ মানুষ ‘অপহরণ’ হিসেবেই জানে। এবং এটা মিডিয়ার কল্যাণেই। ‘প্রধানমন্ত্রীপূত্র জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের চেষ্টা করেছে বিএনপি’- এই ভাষায়ই খবরটি বাংলাদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্রে প্রচারিত তথ্য এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বলছে ঘটনা ভিন্ন। সেই ‘ভিন্ন’টা কী? সেটা আলোচনা থেকেই বুঝা যাবে।
তবে প্রথম ঘটনা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। কারণ, কোকো সত্যি সত্যি মারা গেছেন এবং বহু মানুষের সামনে তাকে কবর দেয়া হয়েছে।
দুই ঘটনার পরবর্তী মিডিয়ার আচরণ খেয়াল করতে গিয়ে যেসব বিষয় সামনে এসেছে সেগুলো খুবই সংক্ষিপ্তভাবে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি-
পুরো পর্যবেক্ষণে ৩টি বিষয় লক্ষ্য করেছি-
এক.
প্রথম ঘটনায় মিডিয়ার উৎসাহ কম। অন্যদিকে দ্বিতীয়টির জন্য ‘অতি উঃসাহ’ লক্ষ্য করা গেছে।
দুই.
প্রথম ঘটনায় বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চোখে পড়েছে। দ্বিতীয় ঘটনায় অবাস্তবকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা ছিল।
তিন.
প্রথম ঘটনার বিবরণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাষায় সহানুভূতির উপস্থিতি না থকলেও দ্বিতীয় ঘটনায় সেটা ছিল ‘কল্পিত অপহরণকারী প্রতিপক্ষ’ এর প্রতি ভাষার আক্রমণ ছিল।
নীচে পয়েন্ট আকারে দুই ঘটনায় মিডিয়ার আচরণ সংক্রান্ত যে তথ্যগুলো দেব তার প্রতিটিই উপরের ৩ ক্যাটাগরির কোন না কোনটায় পড়বে।
প্রথম ঘটনা- কোকোর মৃত্যু:
# কোকোর মৃত্যুতে তখন অবরুদ্ধ থাকা মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে মানবজমিন, শীর্ষনউজ এবং প্রথম আলো অনলাইন (প্রিন্টে নয়) ছাড়া কোন পত্রিকা/অনলাইন কোন ধরেনর মানবিক স্টোরি প্রকাশ করেনি। যেটা সাধরাণ বহু মৃত্যুতেও করা হয়। অথচ, পরিবার-পরিজন ছাড়া একা একা নিজের কার্যালয়ে পড়ে থাকা মূহ্যমান খালেদাকে নিয়ে এমন রিপোর্টে মিডিয়া অনুৎসাহী ছিল।
# একই বিষয় প্রযোজ্য কোকোর দুই শিশু মেয়ে এবং বিধবা স্ত্রীর ক্ষেত্রে। বাচ্চাদের বাবা হারানো নিয়ে মানবিক আবেদন সম্পন্ন প্রতিবেদন হতে পারতো, কিন্তু ছিল না।
# বরং কোকোর লাশ দাফনের আগেই মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপিয়েছে প্রথম আলো।
# দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া খালেদার ছেলেকে শেষ বিদায় দেয়ার সংবাদগুলোতে হৃদয়গ্রাহী বিবরণ দেয়াতে অনাগ্রহী ছিল মিডিয়াগুলো। তবে একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা নিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মর্মস্পর্শী সহানুভূতিশীল ভাষার ব্যবহার। (দুয়ারে প্রধানমন্ত্রী ‘ঘুমিয়ে’ খালেদা’- ইত্তেফাকের লীড শিরোনাম)
# কোকোর বিশাল জানাযার ছবি বড় উপস্থিতি দেখিয়ে কেউ প্রকাশ করেনি (দুই একটা ব্যতিক্রম ছিল)।
# দাফনের পর দিনই প্রথম আলো হাসান ফেরদৌসের কলাম ‘কোকো কাহিনী’ প্রকাশ করে। যেখানে কোকো এবং তার পরিবারের প্রতি আক্রমাণাত্মক ভাষার সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল।
# ক্রিকেটে কোকোর ‘অসাধরণ’ অবদান ছিল বলে ডেইলি স্টার পত্রিকা তাদের খেলার পাতায় একটি বক্স আইটেম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু অন্য সব মিডিয়া কোকো এই ইতিবাচক দিকটি নিয়ে একদম নীরব ছিল।
# লাশ দাফনের আগে, পরে এবং কোকোর মেয়েরা মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আক্রমানাত্মক বক্তব্যগুলো হাইলাইট করে প্রচার করা হয়।
দ্বিতীয় ঘটনা- জয়কে ‘অপহরণ’:
# জয়কে কথিত অপহরণের ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে। এবং সেখানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সব পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের নিজস্ব একা বা একাধিক প্রতিনিধি রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতার ছেলে কর্তৃক জয়কে অপহরণের খবর সবাই সরকারি সংবাদ সংস্থা বিএসএস- এর উদ্ধৃতিতে যা বলা হয়েছে তাই প্রকাশ করে। সে তথ্য যাচাইয়ের জন্য নিজেদের প্রতিনিধিদের ব্যবহার করা হয়নি।
# লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল, পত্রিকাগুলো বিএসএস-এর খবরে দেয়া ‘অপহরণ’ শব্দটিকে বিনা কৌটেশনে উল্লেখ করলেও এর প্রতিবাদ জানিয়ে পাঠানো বিএনপির বক্তব্যকে কৌট-আনকৌট ভাবে ছাপানো হয়েছে। যেমন প্রথম আলো’র উদাহরণ-
৭ মার্চ প্রথম আলো তাদের অনলাইনে দেয়া রিপোর্টটির শিরোনাম দিয়েছে- “জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্রে বিএনপি নেতার ছেলের কারাদণ্ড”। ১০ মার্চ প্রিন্ট ভার্সনে সংবাদ ছিল- “জয়ের অপহরণের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য নেই”।
মাঝখোনে ৯ মার্চ আরেকটি শিরোনাম ছিল- “জয়কে অপহরণের চেষ্টার আলোচনাকে ‘কল্পকাহিনি’ বলল বিএনপি”।
দেখা যাচ্ছে, বিএসএস এর সরবরাহ করা অপহরণ বিষয়ক তথ্যকে প্রথম আলো বিনা সন্দেহে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু বিএনপির বলা ‘কল্পকাহিনি’ শব্দটিকে কৌট-আনকৌট করে দিয়েছে। অর্থাৎ, বিএনপির অভিযোগ নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে বা এটা তাদের পত্রিকার বক্তব্য নয়, বিএনপির নিজস্ব। কিন্তু বিএসএস- বক্তব্য সন্দেহাতীত!
# আবার অন্য একটি বিষয় হচ্ছে, প্রথম আলোর “জয়ের অপহরণের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য নেই” খবরটির মূল তথ্য হচ্ছে- ‘যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে জয়কে অপহরণের অভিযোগ সেটা ঘেঁটে দেখা গেছে তাতে আসলে অপহরণের কোন কথা নেই।’ রিপোর্টটি শেষে এ কথাগুলো আছে। (“যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই রায়-সম্পর্কিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, যে বাংলাদেশি নাগরিক সম্পর্কে তথ্য লেনদেনের চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাঁর কোনো পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এতে কোনো অপহরণচেষ্টার কথাও নেই।” সূত্র: ১০ মার্চ, প্রথম আলো)।
কিন্তু এই তথ্য দিয়েও প্রথম আলো শিরোনামটা ভিন্নভাবে করেছে।
# মজার ব্যাপার, সরকার সমর্থক বলে পরিচিত বিডিনিউজ এর এ সংক্রান্ত খবরটির শিরোনাম হচ্ছে- “এফবিআইকে ঘুষ: যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতার ছেলের দণ্ড”। খবরের কোথাও তারা ‘অপহরণ’ শব্দটি লিখেনি! পরদিন অবশ্য জাতীয় সংসদে এটি নিয়ে আলোচনার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে ‘অপহরণ’ ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ ইত্যাদি লিখেছে।
# এদিকে তথ্যটি গুরুত্বহীনভাবে প্রকাশ করলেও প্রথম আলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে ১০ মার্চ স্বীকার করেছে যে, অভিযোগে অপহরণের কোন কথা নেই।
কিন্তু বাংলানিউজ “মামলা সংক্রান্ত নথির বরাত দিয়ে দায়িত্বশীল সূত্র” উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, “অভিযুক্তরা তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের লক্ষ্যেই তারা দীর্ঘ পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। তারই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তার বাসস্থান, কর্মস্থলসহ পারিবারিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।”।
# বাকি প্রায় সব পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবরটি বিএসএস এর বরাতেই প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রথম আলো’র মতো পরে তারা মূল তথ্যটি কী তা জানায়নি। বরং ওই কথিত ‘অপহরণ’ এর প্রতিবাদে দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যেসব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সেগুলো নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছে। এই সংবাদের মিডিয়ার উৎসাহ লক্ষ্য করার মতো।
# সংবাদটি প্রচারের পর সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে বাসসের দেয়া ‘অপহরণ’কে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেন। এরপর থেকে অনেক পত্রিকাতে ‘অপহরণ’ এর পাশাপাশি ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ শব্দগুলোও কোন ধরনের কৌট-আনকৌট ছাড়াই লেখা হচ্ছে।http://www.bd-today.net/newsdetail/detail/49/118340
©somewhere in net ltd.