![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- কী রে কালু, কই গেলি?
- এইতো ভাই আছি, কিছু কইবেন?
- রেডি হ, বের হওন লাগবো।
খালি গায়ে ফর্সা রঙের কালু পাশের ঘর থেকে খুব মনোযোগের সাথে নিজের মোটা পেটটাকে প্যান্টের বেল্টের মাঝে আটকাতে আটকাতে ভাইয়ের সামনে এসে দাড়ায়-
- কই যাইবেন ভাই?
- বালুর মাঠে- দাদু যাইতে কইছে, নতুন একটা পার্টি নাকি আইছে অর্ডার লইয়া। যন্ত্রটা লইয়া লইস, আইজকাই নাকি কামডা সাড়ন লাগবো।
- ভাই, আইজকাই করন লাগবো? কাইলকা করলে হয় না?
- ক্যান, কাইল ক্যান? আইজকা কি তোর শ্বশুরের বিয়া?
- না ভাই, আসলে আইজকা একটু বাড়ি যাইতে চাইছিলাম...
- আগে কামডা সাইরা লই।
কালু আর কোন কথা বলে না, ভাই যা বলবে সেটাই ওকে শুনতে হবে। মানুষটাকে ও যতটা ভয় পায়, তার থেকে বেশি শ্রদ্ধা করে বলে তার কোন সিদ্ধান্তে ও প্রশ্ন করে না। তাই ভাইয়ের কথামত এতক্ষন ধরে পেছনের ঘরে বসে পরিষ্কার করতে থাকা ছোট্ট অস্ত্রটা কোমরে গুজে নেয়। কত ছোট্ট একটা অস্ত্র অথচ কী তার শক্তি! কালুর মত খুব সাধারণ একটা মানুষকে যেই অস্ত্রটা এতটা ভয়ানক করে তুলতে পারে, তার শক্তি নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা না। কালুকে যখন ভাই প্রথম অস্ত্রটা দিয়েছিলো, সে বলেছিলো-
কালু, এইডা কিন্তু কোন যন্ত্র না, এইটা একটা তাবিজ। ওই যে শরীর বন্ধকের তাবিজে দেখস না ক্যামনে বদ জীন দূরে সরাইয়া রাখে? এইটা হইলো তেমন একটা তাবিজ। তয় হুজুরের দেওয়া তাবিজ খালি শয়তানের কাছ থেইক্কা বাঁচায় আর এই তাবিজ ডর যেমন ভাগাইয়া দেয় তেমনে মাইনসেরে ডর দেখাইতেও পারে, বুঝলি?
ঘর থেকে বেড়িয়ে ওদের চলার সঙ্গী পুরনো মোটর সাইকেলটায় চেপে দুজন যখন বালুর মাঠে পৌছায়, তখন প্রায় দুপুর। কংক্রিটের জঞ্জালে ভরা বালুর মাঠের এক কোনায় লিটনের চায়ের দোকান- ওদের সব কাজ কর্মের অফিস। দুজনে দুটো চা খেয়ে সিগারেট টানতে টানতে দাদুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই দাদু হাজির হয়। সাদা রঙের লুঙ্গি আর পাঞ্জাবিতে আজ দাদুকে নেতা নেতা লাগছে। কালু দূরে বসে ভাই আর দাদুর আলাপ দেখতে থাকে। কাজের কথার সময় ওর কাছে যাওয়া নিষেধ। তাই অপেক্ষা করতে থাকে আলাপ শেষ হওয়ার।
চলে যাওয়ার আগে দাদু ওকে কাছে ডাকে-
- কিরে, কী অবস্থা তোর?
বিনয়ে গলে গিয়ে লাজুক একটা হাসি দেয় কালু-
- জী দাদু, ভালো।
- হুম, ভালো হইলেই ভালো। কামডা ঠিকমতো করিস, ঠিক আছে? গেলাম।
প্রথম বারের মত দাদু ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলেছে বলে চেহারায় ফুটতে থাকা আনন্দের ভাব নিয়েই ভাইয়ের কাছে যায় কালু। দেখে ভাইয়ের হাতে টাকার একটা ছোট্ট বাণ্ডিল, কিন্তু মুখ চিন্তিত। কালু ভাবনার কারণ জানতে চায় কিন্তু ভাই কোন জবাব দেয় না। একটা সিগারেট ধরিয়ে দোকানের টুলে বসে কিছু ভাবতে থাকে। কথার জবাব না পেয়ে কালু বুঝতে পারে চিন্তা করার মত কিছু মনে হয় হয়েছে। তাই ভাইয়ের কথা বলার আগে চুপ থাকাটাই শ্রেয়।
- কালু, তুই না বাড়ি যাবি? যা...
- ক্যান ভাই, কাম করবেন না?
- হ, তয় আইজকা কামডা একলাই করমু।
- না ভাই, একলা করবেন ক্যান? পরে কোন ঝামেলা হইলে? আমিও যামু...
- নারে, আইজকা একলাই যাওন লাগবো। তুই বাড়ি যা। কাইলকা আইস।
কালু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। এরপরে উঠে কিছুটা দূরে হেঁটে গিয়ে আবার ফেরত আসে। আজকে সে ভাইকে একা ফেলে যাবে না। নিশ্চয়-ই কিছু সমস্যা আছে, নইলে ভাই যেখানে একা কিছুই করে না, সেখানে এতগুলো টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ার মত বড় একটা কাজ একা কীভাবে করবে?
- ভাই, আমি যামু না। বাড়ি কাইলকা গেলেও চলবে...
কালুর জোরালো মনোভাব দেখে ভাই আর কিছু বলে না, নীরবে মোটর সাইকেল স্টার্ট দেয় সে। কালুও পেছনে উঠে বসে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে ভাই বলে-
- কালুরে, আইজকার কামডা করতে মন টানতাছে না।
- ক্যান ভাই?
- ভাইরে, বহুত মাইনষেরে পিডাইছি, ধমকাইছি কিন্তু আইজকা...
- ক্যান ভাই, আইজ কী কাম দিছে?
- মার্ডার!
কথাটা শুনে কালু নিজের ভিতরেই একটা ঝাকুনি খায়। প্রথমবারের মত ও বুঝতে পারে কথার শক্তি। তাবিজের শক্তির সাথে ভাই যেমন ছোট্ট পিস্তলের শক্তির তুলনা দিয়েছিলেন, মন্ত্রের শক্তির তুলনা এবার ও নিজেই আবিষ্কার করে। ছোট্ট একটা কথা- মার্ডার! কিন্তু কোমরে পিস্তল থাকা সত্ত্বেও ওর ভিতরে যে ভয়টা ছড়িয়ে পড়েছে তাতেই ও এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারে।
কিছুক্ষণের মাঝে ওরা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। কিছুক্ষণ পরে এই স্টেশন থেকে ওদের শিকার ট্রেনে উঠবে। দাদু নিজেও তখন স্টেশনে আসবেন। ওরা দাড়িয়ে থাকবে স্টেশনের মূল গেটে, আর দাদু থাকবেন ওদের ঠিক উল্টোদিকে। সেই লোক গেট থেকে ঢুকার সময় দাদু কোন না কোন বাহানায় তার সাথে একটু কথা বলে চলে যাবেন। আর ওদের কাজ হবে লোকটাকে চিনে রেখে যত তারাতারি সম্ভব কাজ শেষ করা।
স্টেশনের বাইরে বসে ওরা সুন্দর সুন্দর মানুষগুলোকে দেখে সময় কাটাতে থাকে। আর সময় কাটার সাথে সাথে ওদের কপালে ঘামের রেখাও স্পষ্ট থেকে আরও বেশি স্পষ্ট হতে থাকে। ওদের দুজনের-ই খুব ইচ্ছা করে এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু ওরা পারে না। দাদুর দেয়া কাজকে অবহেলা করার মত সাহস ওদের নেই। কালুর কাছে ভাই যেমন, ভাইয়ের কাছে দাদু তেমন। কালুকে যেমন ভাই ওর বিপদের সময়ে সাহায্য করেছে, খাবার দিয়েছে- অর্থের সংস্থান করার জন্য কাজ দিয়েছে, তেমনি ভাইকেও দাদু রাস্তায় ভিক্ষা করতে থাকা শিশু থেকে আজকের এখানে নিয়ে এসেছে। হয়তো ওকে দিয়ে সে সমাজের বিপরীত স্রোতের কাজ করায়, কিন্তু ভাইয়ের তাতে কিছু আসে যায় না। ওকে কাজ দিয়ে, খাবার দিয়ে, থাকার জায়গা দিয়ে সে বাঁচিয়ে রেখেছে। এমনকি বর্তমানে কাজের জন্য টাকার শতকরা হিসেবে ভাগ দেয়! সেই মানুষের দেয়া একটা কাজ- সেটা যেমন-ই হোক- ও আগেও করেছে আর আজকেও করবে।
কিছুক্ষণ পরে দাদুকে আসতে দেখে ভাই তারাতারি নিজের হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আড়াআড়ি দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। ও জানে এখন-ই যে কোন সময় ওদের শিকার আসবে। তাই ওকে আরও মনোযোগ রাখতে হবে।
কিছুক্ষণ কেটে গেলে হঠাৎ ভাই দেখতে পায় সুন্দর কালো রঙের একটা গাড়ি থেকে নেমে আসা প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী ফুলহাতা শার্ট আর টাক মাথা ওয়ালা একজন মানুষের সাথে দাদু কথা বলছেন!
কালু এর আগে মানুষের গায়ে গুলি না করলেও ট্রিগার টেনেছে অনেকবার। তবে সেগুলো ছিলো শুধুই ফাঁকা শব্দ, যাতে মানুষ আতঙ্কিত হয়। আজ ও প্রথমবারের মত নিশানার উপর ট্রিগার টানবে, তাই ওর গলাটা একটু শুকিয়ে আসতে থাকে। ভাইয়ের মানসিক অবস্থা তার কঠিন চেহারার জন্য বোঝা না গেলেও পকেটে ঢুকানো হাত থেকে তার সংকল্পের অনুমান করা যায়।
লোকটা এখন ট্রেনের দরজার দিকে আসছেন। কালু আর ভাই কিছুটা দূরত্ব নিয়ে পেছন পেছন আসে। লোকটা দরজায় পা দিলেই কাজটা শেষ করতে চায় বলে ওরা দাড়িয়ে যায়। ধীর গতিতে মানুষটা উঠছেন, দরজায় একটা পা দিতেই ভাইকে নিজের কোমরে লুকানো পিস্তল বের করতে দেখে কালুও নিজেরটা বের করে নেয়। ভাই প্রথম গুলি ছুঁড়ে, সাথে সাথে কালু ও! পরপর বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দে মাঝারী রেল স্টেশনটায় হুলস্থুল লেগে যায়। মানুষের ছোটাছুটির মাঝেই ওরা দৌড় লাগায়। ওই যে সামনেই গেট, যেখানে ওদের মোটর সাইকেলটা রাখা আছে, ওখানে পৌঁছুতে পারলেই হয়!
দৌড়তে দৌড়তে হঠাৎ পায়ের কাছে কিছু একটাতে বেঁধে ভাই প্লাটফর্ম থেকে ছিটকে পড়ে। কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে কালু যখন বুঝতে পারে ভাই সাথে নেই- ও দৌড়ানো অবস্থায়-ই পিছনে তাকায়, দেখে- ভাই প্লাটফর্ম থেকে ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে উরু চেপে ধরে সেখানেই পড়ে যাচ্ছে, আবার চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না। পেছন থেকে অনেকগুলো মানুষ হই হই করতে করতে ছুটে আসছে। ভাইকে বাঁচাতেই হবে, তাই কালু উল্টো ঘুরে আবার ভাইয়ের কাছে চলে আসে, তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। আবার চেষ্টা করে কিন্তু এতক্ষনে মানুষগুলো ওদের ঘিরে ধরেছে। কেউ একজন প্রথম কালুর গায়ে আঘাত করে, এরপর আর কিছুই দেখা যায় না, শুধু কিছু অগোছালো ক্ষিপ্ত কণ্ঠের জোরালো কথা আর চিৎকার শোনা যায়। অস্ত্র হিসেবে কারো হাতে কিছুই দেখা যায় না, শুধু কতগুলো ক্ষিপ্র হাত আর বলিষ্ঠ পা।
কালুর হাতে এমনকি ভাইয়ের হাতেও তখনো সেই ছোট্ট যন্ত্রটা ছিলো, যেটায় আছে সেই আশ্চর্য ক্ষমতা। কিন্তু কোন ক্ষমতাই তখন কার্যকর হলো না। বিধ্বস্ত সাহস আর জেঁকে বসা আতঙ্ক নিয়ে ওরা দুজন শুধু দেখতে থাকে। কিছুই করার থাকে না। এখন ওদের রক্ষা করতে না পারলেও কিছুক্ষণ আগে ওরা যেভাবে ওদের ক্ষমতা দিয়ে একটি মানুষকে তার ঠিকানায় যাওয়া থেকে চিরতরে বঞ্চিত করে দিলো, সেভাবেই নিরীহ জনতার খণ্ডিত অংশের একীভূত ক্ষমতা গালভরা সমাজের অসামাজিক মানুষ ভাইকে সমাজ থেকে মুছে দিতে কিংবা কালুকে তার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ থেকে চিরতরে বঞ্চিত করার জন্য কার্যকর প্রমাণিত হল। যদিও সেই ক্ষমতা দাদু কিংবা পর্দার আড়ালের কাজের নির্দেশ দেয়া মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৪
সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: হুম
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭
নাহিদ ইসলাম ৩৫০ বলেছেন: ভালো.....................................।
প্রযুক্তি বিষয়ক বাংলা ব্লগঃ আইডিয়া বাজ
২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৬
সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: হুম
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
আজীব ০০৭ বলেছেন: যদিও সেই ক্ষমতা দাদু কিংবা পর্দার আড়ালের কাজের নির্দেশ দেয়া মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট নয়।