নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি একটা খারাপ কাজ করেছো তার মানে তুমি একজন মানুষ; তুমি সেই খারাপ কাজটার জন্য অনুতপ্ত হয়েছো তার মানে তুমি একজন ভাল মানুষ। \n\nwww.facebook.com/bandar.khola

হাফিজ রাহমান

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।

হাফিজ রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ রজব মাস : প্রেক্ষিত মধ্যপন্থা বনাম প্রান্তিকতা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩০

মহিমান্বিত রমাযান মাসের পূর্বে আমাদের সামনে রয়েছে দুটি মাস; রজব ও শা’বান। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা রজব মাসের পালনীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে কিছু আলোচনা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো।

রজব মাস

রজবের শাব্দিক অর্থ সম্মান। জাহেলী যুগে মানুষ এ মাসকে সম্মান করতো বলে এর নামকরণ হয়েছে রজব। এ মাসকে ‘রাজাবু মুযার’ও বলা হয়। কারণ মুযার গোত্রীয় লোকেরা এ মাসকে সর্বাধিক মর্যাদায় ভূষিত করতো। (আস-সিহাহ ফিল-লুগাহ ১/২৪৩)
রজব মাসের ঐতিহাসিক একটি বিশিষ্টতা ও পটভূমি রয়েছে। আছে এর শব্দগত ও নামগত আরো তাত্ত্বিক আলোচনা। আমরা আপাতত সেদিকে অগ্রসর হবো না। তবে রজব ‘আশহুরে হুরুম’ (মর্যাদাপূর্ণ মাসসমূহ) অন্তর্গত একটি অন্যতম সম্মানিত মাস। আরবের পৌত্তলিকরা এ মাসকে কেন্দ্র করে পশু বলিসহ নানা রকম কুসংস্কৃতি চর্চায় বুঁদ হয়ে থাকত। তারা এ মাসের মর্যাদা চর্চায় প্রান্তিকতা ও গোঁড়ামির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতো। এমন কি রজব মাস উদযাপনে তারা যুদ্ধ বিগ্রহ আর রক্তপাতের মতো অতি আবশ্যক(?) ব্রতটিকেও ‘সাজঘরে’ পাঠিয়ে দিতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসকেন্দ্রিক এ জাতীয় নষ্ট কালচারের আমূল সংস্কার সাধন করেন। কিন্তু আক্ষেপের কথা হল, আজকের মুসলিম সমাজে রজব মাসকেন্দ্রিক সে নষ্ট আচার-আনুষ্ঠাকিতা দীনী শিরোনামে নব অবয়বে চর্চিত হচ্ছে। নিম্নে রজব মাসকেন্দ্রিক সেসব রসম-রেওয়াজের কিছু ফিরিস্তি ‘বর্জনীয় বিষয়’ শিরোনামে তুলে ধরা হচ্ছে।

বর্জনীয় বিষয়

(১) সালাতুর রাগায়েব : এটি ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ তথা রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের বিশেষ নিয়মের নামায; যা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বিশেষ নিয়মে আদায় করা হয়। এর বিনিময়ে পূণ্য-নেকীর ফল্গুধারা প্রাপ্তির সরল বর্ণনা এসেছে। এটি একটি জাল বর্ণনা। আল্লামা আবু বকর মুহাম্মদ তুরতূশী রহ. বলেন, ৪৮০ হিজরীর পরবর্তী যুগে বাইতুল মাকদিসে এ জাতীয় সালাতের উদ্ভব হয়েছে। এর আগে এসবের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ইমাম ইবনুস সালাহ রহ. বলেন, এটি একটি ঘৃণিত বিদআত। হিজরী বর্ষের চার শত বছর পরে সিরিয়া ভূখ-ে এর উদ্ভব হয়েছে। এরপর এখান থেকে অন্যান্য অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব ঘটে। (আব্দুল হাই লক্ষেèৗবী, আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ ১/৬২,৭২, ১৩৭, ইমাম শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমু‘আহ ১/৪৮, ইমাম যাহাবী, তালখীসু কিতাবিল মাউযুআত ১/১০৭)

(২) ‘শবে এস্তেফতাহ’ এর নামায : ১৪ রজব দিবাগত রাতে বিশেষ নিয়মে চার বা পঞ্চাশ রাকাত নামায আদায়োত্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করে এস্তেফতাহের এ নামায আদায় করা হয়। এ নামাযের বিনিময়েও পূণ্য-মার্জনা প্রাপ্তির ফুলঝুরি দেখানো হয়েছে। এটিও একটি জাল বর্ণনা। (আব্দুল হাই লক্ষেèৗবী, আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ ১/১১২)

(৩) সালাতে ওয়াইস কারনী : ৩, ৪ অথবা ৫ রজবের প্রথম প্রহরে সীমাহীন সাধনাযোগে বিশেষ নিয়মে ছয় রাকাত নামায আদায়ের মাধ্যমে এ নামায আদায় করা হয়। এটিও একটি জাল বর্ণনা। (আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ ১/১১১)
এছাড়া রজবের প্রথম রাত্রিতে মাগরিবের নামাযের পর বিশেষ নিয়মের বিশ বা চল্লিশ রাকাত নামায, ১৪ রজবের দিবাগত রাত্রিতে চৌদ্দ রাকাত নামায, ২৬ রজব দিবাগত রাতের ১২ রাকাত নামায, এ মাসে আয়াতুল কুরসী এবং একশত বার সূরা ইখলাস পাঠ সম্বলিত বিশেষ নিয়মের চার রাকাত নামায, এ মাসের শেষ জুমু‘আয় পঠিত বিশেষ নিয়মের বার রাকাত নামায এবং এ মাসের শেষ তারিখের দিবাগত রাতের বিশেষ নিয়মের বার রাকাত নামাযÑ এসবই জাল বর্ণনা আশ্রিত নামাযের বিবরণ। আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ, ইবনুল জাউযী রহ. রচিত কিতাবুল মাউযুআতসহ বিভিন্ন মাউযু হাদীস গ্রন্থে রজব মাসের এ জাতীয় নামাযের অপাঙক্তেয়তা প্রমাণে ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় রচিত হয়েছে।

ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, আব্দুল কাদের জিলানী রহ. এর নামে প্রচলিত গুনইয়াতুত তালিবীন, আবু তালেব মাক্কী কৃত ক্বুতুল ক্বুলূব এবং বাংলা মোকসেদুল মোমেনীন, নেয়ামুল কুরআন, আমালুল কুরআন, বার চান্দের আমল প্রভৃতি পুস্তিকায় চটকদার জাল হাদীসের ভাষায় সালাতুর রাগায়েবসহ এজাতীয় নামাযের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। বর্ণনাগুলো সর্বৈব মিথ্যা এবং বানোয়াট। মানব রচিত এ জাতীয় ‘হাদীসের’ ওপর আমল করার কোনোই সুযোগ নেই। কষ্টসাধ্য এসব নামায আদায় করতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা আরোপের শাস্তি প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি অর্জন ব্যতিরেকে আর কিছুই লাভ হবে না।

(৪) রজব মাসের নির্দিষ্ট দিন-তারিখের রোযা : রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারের রোযা, মি’রাজের রোযা তথা ২৭ রজবের রোযা, এ মাসে এক থেকে পনেরটি রোযা পালন এবং প্রত্যেক সংখ্যক রোযার জন্য আলাদা আলাদা পূণ্য-মার্জনার সমাহার প্রদর্শন, তেমনিভাবে তিন, সাত, আট, পনের এবং পূর্ণ রজবের রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাহাত্ম্যের বর্ণায়নসহ রজব মাসের বিভিন্ন দিন তারিখের রোযা সম্বলিত যেসব হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের নামে সমাজে বা বই-পুস্তকে প্রচলিত আছে তা সবই হাদীস শাস্ত্রবিদদের মতে ভিত্তিহীন এবং অপাঙ্ক্তেয়। এ জাতীয় রোযা রেখে উপোস থাকার কোনোই সুযোগ নেই। বিশিষ্ট তাবেয়ী আতা ইবনে আবি রাবাহ রহ. বলেন, ইবনে আব্বাস রাযি. পূর্ণ রজব মাস রোযা রাখতে নিষেধ করতেন; যাতে এ মাসকে উৎসব হিসেবে উদযাপন না করা হয়। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক (হা.নং ৭৮৫৪)

(৫) পশু জবাই : আনুমানিক ১১৯২ খ্রিস্টাব্দের দিকে বর্তমান আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের অন্তর্গত ‘চিশত’ এলাকা থেকে ভারতের আজমীর শহরে আগমন করেন মহান সাধক মনীষী মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. (৬২০/৬২৭/ ৬৩৩/৬৩৪হি.)। এ মহান সাধকের মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে ভারতের আজমীরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উরস-উৎসবের আয়োজন করা হয়। মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. কিংবা আজমীর ‘শরীফ’-এর নামে মানুষ পশু মানত করে। মানতের সেসব পশু এসব উরসে জবাই করা হয়। এটা আরব্য জাহেলী যুগের নতুন বলিপ্রথা বৈ কিছুই নয়। জাহেলী যুগের লোকেরা তাদের প্রতিমাদের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে পশু বলি দিয়ে রজব মাস উদযাপন করতো। আবু হুরায়রা রাযি. সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামে আতীরা তথা রজব মাসের প্রথম দিনে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু বলি দেয়ার প্রথা নেই। (সহীহ বুখারী হা.নং ৫৪৭৪, ফাতহুল বারী ২০/৩৯১)
রজব মাসের এ পশু বলিদানকে কেন্দ্র করেই ترجيبُ العَتيرَةِ শব্দটির প্রচলন হয়। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার উদ্দেশে প্রাণ বিসর্জন দেয়া। সুতরাং প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু বলিদান এবং মাজার কিংবা কোনো ব্যক্তির উদ্দেশে পশু জবাই বিধানগত দিক থেকে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। বাস্তবে এ দুটোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। উভয়টিই স্পষ্ট শিরক। (তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহরি রাজাব ১/ ২৫, শাহরু রাজাব বাইনাল মুবতাদা’ ওয়াল মাশরু’ ৩, মাহামূদ আব্দুর রউফ, আল-কাশফু আন হাকীকাতিস সুফিয়াহ ১/৩৪০)
(৬) আজমীরী ডেগ চর্চা : মহিমান্বিত এ রজব মাসে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অলিগলিতে লাল কাপড়ে মোড়ানো কিম্ভূতকিমাকার বহু রঙিন ডেগ চোখে পড়ে। ‘আজমীর’ভক্ত ভাইয়েরা মুঈনদ্দীন চিশতী রহ. এর মৃত্যু দিবস পালনের উদ্দেশ্যে অর্থের যোগান দিতে এ ডেগ পন্থার আবিষ্কার করেছেন। আর আত্মভোলা কিছু মানুষ এদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এসব ডেগ-ডেগচিতে নিয়ায মানতের অর্থ দিয়ে নিজেদের ঈমান-আমলকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। এসব ঈমান হরণকারী ডেগে টাকা দেওয়াও নিষেধ এবং এ টাকায় সংগৃহীত খাদ্যদ্রব্য আহার করাও নিষেধ।

একটি প্রশ্ন, মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. কি রজব মাসে ইন্তেকাল করেছিলেন? বিশুদ্ধভাবে কি তাঁর ইন্তেকাল-মাস প্রমাণিত? বস্তুত তিনি ঠিক কত হিজরী সনে ইন্তেকাল করেছেন তা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। ৬২০, ৬২৭, ৬৩৩, ৬৩৪ হিজরীÑ তাঁর মৃত্যু সনের এ চারটি মত পাওয়া যায়। মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ.এর সুনির্দিষ্ট মৃত্যু-তারিখটি বোধ হয় ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। আমাদের সমাজে ধোঁয়াশাচ্ছান্ন মৃত্যু কিংবা জন্ম দিবস উদযাপনের অনেক নযীর রয়েছে। অথচ মৃত্যু বা জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব পালন করার কোন অনুমতি ইসলামে নেই। (তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহরি রাজাব; ২৫)

(৭) শবে মি’রাজ উদযাপন : ১৭ মে (০৩ জ্যৈষ্ঠ), ২৭ রজব ‘শব-ই-মিরাজ’ উপলক্ষে সরকারী ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারী ছুটিই প্রমাণ করে এ দিবসটির গুরুত্ব কত বেশি! মিরাজের ব্যাপারটি একটি তাৎপর্যম-িত ঘটনা। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নতুন কিছু আবিষ্কার করে ধর্মাচারের রূপ দান করার কোনো সুযোগ ইসলামে আছে কি না তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন। মিরাজের রাত্রিকে কেন্দ্র করে কোনো আচার আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ইসলাম-অনুমোদিত নয়। উপরন্তু বিদগ্ধ উলামায়ে কেরামের মতে ‘মি’রাজের ঘটনাটি রজব মাসে হয়েছে’ এটা লোকমুখে প্রসিদ্ধ হলেও ঐতিহাসিকভাবে সুনিশ্চিত স্বীকৃত নয়। সীরাত-ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে মিরাজের তারিখ নিয়ে বহু উক্তি রয়েছে। এ কারণে সুনির্দিষ্ট করে মিরাজের রজনী ঘোষণা করার অবকাশ নেই। আর ২৭ রজবের ব্যাপারে ইমাম ইবরাহীম হারবী, ইবনে রজব হাম্বলীসহ অনেকে স্পষ্ট করেই বলেছেন, এ রাতে মিরাজ সংঘটিত হয় নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। এছাড়াও এ মাসের আমল হিসেবে অন্নদান করা, বস্ত্রদান করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা করা, জানাযা পড়া, পানীয় পান করানো, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া, কুরআন খতম করা ইত্যাদির বিনিময়ে অফুরন্ত ফযীলত লাভসহ দু‘আ কবুল হওয়া এবং বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সংক্রান্ত যেসব হাদীস সমাজে প্রচলিত আছে তার সবই ভিত্তিহীন, জাল ও বানোয়াট। (তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহরি রাজাব ১/২০-২৫, লাতায়িফুল মা‘আরিফ ১/১২৬)
সারকথা, ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ‘স্বতন্ত্রভাবে রজব মাসের মাহাত্ম্য, এ মাসের বিশেষ দিনের রোযা এবং বিশেষ নিয়মের নামায সম্বন্ধে প্রমাণযোগ্য কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি। (তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহরি রাজাব ২)

পালনীয় বিষয়

কুরআন-হাদীসের ভাষ্য মতে রজব একটি সম্মানিত মাস। তবে এ মাসে সুনির্দিষ্টভাবে পালন করার মতো কোনো বিষয় নেই। হাদীস ও আসারের বর্ণনায় এ মাসের সম্মান ও মর্যাদা বিবেচনায় যাবতীয় পাপাচার পরিহার করা এবং স্বাভাবিক ইবাদতে অধিক মনোযোগী হওয়ার কথা এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
অর্থ, তোমরা সম্মানিত এ মাসগুলোতে নিজেদের উপর অবিচার করো না। (সূরা তওবা- ৩৬)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বারটি মাসের মধ্য হতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং সেগুলোকে সম্মানিত করেছেন এবং এ মাসের পাপাচারকে অধিক গুরুতর করেছেন।’ (তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ৩৫/১৩০)
আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ রাযি. উক্ত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ তোমরা এ মাসগুলোতে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে এবং তাঁর আনুগত্য পরিত্যাগ করে নিজেদের উপর অবিচার করো না। (প্রাগুক্ত ৩৫/১৪২)
সালেম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রাযি. আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত মাসগুলোতে রোযা রাখতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক; হা.নং ৭৮৫৬)
উসমান ইবনে হাকীম রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. কে রজব মাসের রোযা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. কে বলতে শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোযা রাখতেন তখন এত পরিমাণ রোযা রাখতেন, আমরা ভাবতাম, তিনি আর রোযা পরিত্যাগ করবেন না। আবার যখন তিনি রোযা না রাখা শুরু করতেন তখন আমাদের মনে হতো, তিনি আর রোযা রাখবেন না। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৭৮২)
হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন, সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. এ হাদীস উপস্থাপন করে এ কথা প্রমাণ করতে চান, রজব মাসের রোযা সম্বন্ধে বিশেষ কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বিধি-আজ্ঞা নেই। বরং এ মাসের রোযার বিধান স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য মাসের নফল রোযার মতো। তবে সুনানে আবু দাউদের একটি বর্ণনামতে সম্মানিত মাসগুলোতে রোযা রাখা বাঞ্ছনীয় বলে প্রমাণিত। সেখানে বলা হয়েছে, জনৈক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অধিক রোযা রাখার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তিনবার বলেন, সম্মানিত মাসগুলোতে রোযা রাখো এবং মাঝে মধ্যে পরিত্যাগ করো। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৪২৮, শরহু সহীহ মুসলিম, ইমাম নববী ১৭/৩৮)
আসমা বিনতে আবু বকর রাযি. তাঁর গোলাম আব্দুল্লাহকে ইবনে উমর রাযি.-এর কাছে এ কথা জিজ্ঞেস করে পাঠালেন, আমি শুনতে পেলাম, আপনি তিনটি বিষয়কে নিষিদ্ধ করেছেন। ... (তন্মধ্য হতে একটি হল,) রজব মাসের রোযা। তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রোযা রাখে সে রজবের রোযাকে কী করে নিষিদ্ধ মনে করতে পারে?... (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৫৫৩০)
তবে এ মাসের মর্যাদাকে পুঁজি করে ইবাদতের স্বাভাবিক গতিধারাকে ব্যাহত করার কোনো সুযোগ নেই। উমর রাযি. কিছু লোককে রজব মাসের রোযার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করতে দেখে তাদেরকে আহার গ্রহণে বাধ্য করেন এবং বলেন, এ মাসকে তো জাহেলী যুগের লোকেরা সীমাতিরিক্ত সম্মান করত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৬/২৯৪)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: জালতো আপনিও হতে পারেন এবং আপনার রেফারেন্সও হতে পারে।

০২ রা মে, ২০১৭ ভোর ৫:৫৯

হাফিজ রাহমান বলেছেন: ফরিদ ভাই ! কষ্ট করে হলেও লেখাটি পড়েছেন। এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাই ! যে কোনো বিষয়কে সম্ভাবনা বা সংশয়ের জায়গায় রেখে দেয়া উচিৎ নয়। আপনি যে বিষয়টিতে সংশয় বা সম্ভাবনা সৃষ্টি করছেন তা দূরী করণে অসংখ্য উপায় উপকরণ রয়েছে। বিষয়টি সত্য হবে আবার একই সময় তা মিথ্যা হবে- এমনটি কখনো হতে পারে না। আপনি লেখাটির বিষয়ে সন্দিগ্ধ। আমি কিন্তু সামান্য পরিমাণও সংশয়ী নই। আপনার সংশয় সৃষ্টির পেছনের বিষয়গুলো নিয়ে আসুন; আমরা সংলাপে বসি। আপনার দলিল- প্রমাণ থাকলে তাও উপস্থাপন করুন। কারো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাও গ্রহণ করুন। আপনারটি সত্য প্রমাণিত হলে আমাদের মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ উদারতা ও সৎসাহস আমরা লালন করি। যে করেই হোক একটি সিদ্ধান্তে আসা চাই। আপনি বলেছেন, জাল তো আপনিও হতে পারেন। অর্থাৎ আমার জন্মসূত্র নিয়ে আপনার সংশয়। তবে আপনার জন্মসূত্রের ব্যাপারে আমার কোন সংশয় সন্দেহ নেই। ভাই ! বিনীত অনুরোধের সুরেই বলছি, আসুন এ সংশয়টা বিদূরীত করে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপস্থিত হোন। ভাই ! সংশয় সন্দেহ দিয়ে তো আর মন্তব্য হয় না। সুনির্দিষ্টভাবে ক্লিয়ার হয়েই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে হয়। তবুও মন্তব্য করেছেন। তাই আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.