নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যিকারের স্বাধীনতার খোঁজ কোথায় পাব!!

নিজের সম্পর্কে নিজে না বলাই ভালো।

ভুমিহিন জমিদার

নিজের সম্পর্কে না হয় নাই বললাম

ভুমিহিন জমিদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবুও প্রতীক্ষা

১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৯

“আস-সালামুআলাইকুম চাচা” অফিসের দরজার সামনে আবেদ চৌধুরী কে দেখেই সন্মান জানাতে উঠে দাঁড়ালাম আমি।

“ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো বাবা??” আমার সামনে বসতে বসতে বললেন ষাট ঊর্ধ্ব এই ভদ্রলোক।

রোদে পুরে আসা এক হারা রুগ্ন শরির দেখে কে বলবে এই ভদ্রলোক এক সময় দুর্দান্ত সাহসী আর্মি অফিসার ছিলেন! মাথাটা ঝুকে পরেছে, যেন শরীর আর মাথার ভার নিতে পারছে না। চোখের নিচে গভীর কাল দাগ, উদ্ভ্রান্ত চাহুনি, হাতের শীর্ণ আঙ্গুল গুলো লাঠির উপর কাঁপছে।

“চা দিতে বলব, চাচা?” জিজ্ঞেস করি আমি।

-“না বাবা। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না”

“অন্তত একগ্লাস সরবত বা জুস তো খান, যা গরম পরেছে” কলিংবেল চেপে অফিস বয় কে জুস দিতে বলি আমি।

-“কোণ খবর আছে বাবা?” হতাশা স্বরে প্রশ্নটি করলেও, কোথায় যেন একটা আশার কথা শোনার আকুতি ছিল কণ্ঠে।

“না চাচা, আমি তো বলেছি কোণ খবর পেলে আমি আপনাকে জানাবো। আপানার প্রতিদিন কষ্ট করে আসতে হবে না আপনাকে। নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন এত দূর কষ্ট করে আসার দরকার নেই আপনার। আপনি তো আরও অসুস্থ হয়ে পরবেন”।

“কি আর হবে বাবা বল। এমনিতেও সারাদিন ঘরে বসে থাকি। বের হলে একটু ঘোরাও হয়, আর খোঁজ টাও নেয়া হয়। যদি কিছু জানা যায়”।

এর মধ্যে অফিস বয় এসে এক গ্লাস ঠাণ্ডা জুস দিয়ে গেল।

“আপনি আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাকে যে কোণ খবর পেলেই জানাব। নিন চাচা জুস নিন”।

আবেদ চৌধুরী অনিচ্ছা সত্ত্বেও জুসের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো- “আমি তাহলে আসি আজ বাবা”।

“আচ্ছা চাচা, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমি তো আছি এখানে। আমি অবশই আপানকে যে কোণ খবর জানাবো। আপনার কষ্ট করে আসতে হবে না”।

“আচ্ছা বাবা” বলে জীর্ণ শরীরটা নিয়ে দরজার দিকে আগালেন আবেদ চৌধুরী।

পিছন থেকে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। জানি, তিনি আগামিকাল আবার আসবেন। গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন আসছেন এই এয়ারলাইন্স এর অফিসে। যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই আসবেন তিনি। তার ছেলের খোঁজ নিতে। আমার বন্ধু রাজীবের খোঁজ নিতে।

সাড়ে তিন বছর আগে আমি আর রাজীব এক সাথেই জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জয়েন করেছিলাম এই বেসরকারি এয়ারলাইন্সে। একসাথে পরীক্ষা দিয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং লাইসেন্স পেয়েছিলাম আমারা।

চাকুরী জীবনে এসে রাজীবের মত এমন বন্ধু পাওয়াটাও ছিল আমার সৌভাগ্য। একসাথে ডিউটি, একসাথে ফ্লাইট চেক, একসাথে আড্ডা... সব কিছু ভালই চলছিল।

দুই বছর আগে। দিনটা ছিল ২৮ জানুয়ারি ফ্লাইটে কিছুটা সমস্যা থাকার পরেও কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় ঢাকা থেকে দুবাই এর উদ্দেশ্যে আকাশে ওড়ে বোইং ৭৭৭-৩০০ বিমানটি। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার রাজীব। যাওয়ার আগে আমার আগে আমার রুমে একবার ঢুঁ মেরে গেল রাজীব। “গেলাম দোস্ত, পরশু দেখা হবে” শেষ কথা ছিল ওর।

ওরা আকাশে ওড়ার ঠিক ৩৫ মিনিট পরে খবর পেলাম ফুয়েল টাংকিতে আগুন লেগে ৯৭ জন যাত্রী নিয়ে সাগরে আছড়ে পড়েছে রাজীবরা...............

জীবিত পাওয়া গেল ১৩ জন কে। আর ৭২ টা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ। বাকিরা নিখোঁজ। নিখোঁজের তালিকায় রাজীব একজন। রাজীবের পরিবারও এমনটাই জানে।

এর পর থেকে বাবা আবেদ চৌধুরী প্রতিদিন আমার কাছে আসেন তার ছেলের খোঁজ নিতে। গত দুই বছরের প্রতিটি দিন। বিশ্বাস তার ছেলের খোঁজ পাওয়া যাবে।

কিন্তু আমি জানি। আমি জানি রাজীব আর ফিরবে না। আর কোণ খোঁজ আসবে না ওর।

রাজীবের ডেথ সার্টিফিকেট টা গত দুই বছর ধরে আমার ড্রয়ারে। প্রতিদিন ভাবি, আগামিকাল চাচাকে দিব। কিন্তু কোথায় যেন আটকে যাই আমি।

বৃদ্ধ মানুষটা একটা আশা নিয়ে বেঁচে আছে। তার ছেলে ফিরে আসবে।

এই মানুষটার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ার সাহস আমার হয়ে ওঠে না……………………

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.