নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

রন্তু'র কালো আকাশ - ৪ (ধারাবাহিক)

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩





রন্তু'র কালো আকাশ (সব পর্ব)



বাবার কথা উঠতেই রন্তুর মনটা খারাপ হয়ে গেল, বাবার উপর খুব অভিমান হল। রন্তু যদি ভিজে ভিজে বাসায় ফিরতে পারে, বাবা কি ভিজে ভিজেই রন্তুর সাথে দেখা করতে আসতে পারলো না। রন্তু ছোট মামার ঘর থেকে ছাদে চলে এলো। সকালের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ, কিছু ধবধবে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। কোন এক বাসা হতে কেউ লাল রঙের একটা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ঘুড়িটাকে দেখে রন্তুর মনে হল, সে যদি ঐ ঘুড়িটার মত উড়ে উড়ে ঐ সুদূর আকাশে হারিয়ে যেতে পারতো। অনেক দূরে, কোথায় তা রন্তুর জানা নেই।



=========================

'রন্তু'র কালো আকাশ' এর গত পর্ব এখানেই শেষ হয়েছিল। 'রন্তু'র কালো আকাশ' প্রথমে একটি এক পর্বের ছোট গল্প আকারে লিখেছিলাম। কিন্তু 'রন্তু' আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্র বিধায় আমি সিদ্ধান্ত নিই ২৫ পর্বের একটি ধারাবাহিক আকারে উপন্যাস লিখবো (যদিও জানি সে যোগ্যতা আমার নেই, তারপরও অপচেষ্টা আরকি)। সেই থেকে এই লেখা। তবে প্রতিটি পর্ব আমি এমনভাবে লেখার চেষ্টা করছি যেন একেকটা পর্বই একটা ছোট গল্প হিসেবে পাঠক পড়তে পারে। আর আগ্রহীদের জন্য শুরুতেই সবগুলো পর্ব একসাথে লিংক আকারে দিয়ে দিয়েছি।



=========================



৪.

আজ বেশ কয়েকদিন পর স্কুলে এসেছে রন্তু। দু’দিন জ্বরে ভুগেছে, এরপর মাঝে ছিল বৃহস্পতিবার, নানু বলল স্কুলে আজ আর যাওয়ার দরকার নেই, একেবারে সামনে রবিবার থেকে যেয়েো। টানা পাঁচদিন! পাঁচদিন স্কুল আসে নাই রন্তু, আর তাতেই তার কেমন কেমন যেন লাগছে। একটু কেমন যেন, ছোট্ট মাথায় সেই কেমন কেমনটা ধরা দেয় না। এখন টিফিন টাইম, ছেলে-মেয়েরা সব স্কুলের মাঠে ধুলো উড়িয়ে খেলছে।



রন্তু মাঠের উত্তর পাশটাতে যে ছাতিম গাছটা আছে, তার তলায় বসে আছে। ইদানীং তার খেলতে মন চায় না, টিফিনের এই সময়টায় এই ছাতিম গাছের নীচে বসে থাকতে তার ভালো লাগে। বসে বসে রন্তু অনেক কিছুই ভাবে। এই যেমন ভাবছে কীভাবে ছোট মামাকে দাবা খেলায় হারানো যায়, পারলে তিন চালে। এরকম একেকদিন একেক ভাবনা আসে মনে। মাঝে মাঝে রন্তু ভাবে তার বাবা-মা আবার মিলেমিশে গেছেন, আর তাদের মধ্যে রাগ নেই, আড়ি নেই। যেমন তোতোনের সাথে এখন আর তার আড়ি নেই, মিল হয়ে গেছে। তোতোনের সাথে কি ঝগড়াটাই না হয়েছিলো রন্তুর!



টিফিনে রন্তু তেমন কিছুই একটা খায় না, ভোর বেলা নানু ঘুম থেকে উঠে তার জন্য নাশতা রেডি করে দেয়। অবশ্য শুধু তার জন্যই না, মা আর ছোট মামা’র জন্যও রেডি করে। এত্ত সকালবেলা এত্তগুলো খাবার খেতে মোটেও ভালো লাগে না রন্তু’র। নানুটা মহা দুষ্টু, জোর করে তাকে রোজ একগাদা খাবার খাইয়ে দিবে। আর তাই রন্তু স্কুলে টিফিন নিয়ে আসে না, যদিও নানু এক্ষেত্রেও জোরাজুরি করে অনেক। মাঝে মাঝে রন্তু’র আম্মু তাকে পাঁচ টাকা কি দশ টাকা দিয়ে দেয়, কিন্তু রোজ না। বেশীরভাগ দিনই রন্তু টাকাগুলো খরচ করে না, রেখে দেয় তার পুরোনো জ্যামিতি বক্সটার ভেতর। মাঝে মাঝে আমসত্ত্ব আর মালাই কুলফি খায়, এই দুটো খুব ভালো লাগে রন্তুর। ঘণ্টা বাজছে, টিফিন পিরিয়ড শেষ, সবাই ক্লাসের দিকে ছুটছে। পুরো মাঠ জুড়ে যেন ধুলোর তুফান।



ক্লাসে আসতেই রন্তু দেখল সবাই বই নিয়ে পড়ায় খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে, ঘটনা কি? আজও! আবার! উফ... রন্তুকে বিমর্ষ দেখালো। এখন মারজিনা ম্যামের ক্লাস, উনি জেনারেল নলেজ ক্লাস নেন, সপ্তাহে দুইদিন, বৃহস্পতিবার আর রবিবার। প্রায় সপ্তাহেই তিনি বৃহস্পতিবার হঠাৎ কুইজ নেন। রন্তু গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসে নাই, তাই সে জানে না। আর জানলেই বা কি? ম্যাম কোথা থেকে যে উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন করেন, কেউ বুঝে উঠতে পারে না। পুরো সাধারণ জ্ঞান বই পড়ে শেষ করে ফেললেও কোন লাভ হয় নাই, ম্যাম এই আচমকা টেস্টে যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলো ঐ বইগুলোয় খুঁজে পাওয়া যায় না। আর মজার ব্যাপার হল, ম্যাম পরে বোর্ডে সেইসব প্রশ্ন এবং উত্তর লিখে দেন। সেগুলো স্টুডেন্টদের তুলে নিতে হয় খাতায় এবং নেক্সট ক্লাসে সেগুলো তিনি পড়া ধরেন। আজ যেমন ধরবেন!



রন্তু চুপচাপ তার সিটে গিয়ে বসে রইল, পাশ থেকে তোতোন কয়েকবার তাকে ওর খাতা থেকে পড়তে বলল, কিন্তু রন্তুর মন চাইছে না। এইসব ছাইপাশ পড়তে ভালো লাগে না তার, আর এগুলো থেকে একটাও ফাইনাল এক্সামে আসবে না। আসবে সেই সাধারণ জ্ঞান বই থেকেই। একটু পর মারজিনা ম্যাম ক্লাসে এলেন, উনি সবসময়ই একটু দেরী করে ক্লাসে আসেন। ক্লাসে ঢুকেই তিনি বললেন, ‘এই যে লিটল লিটল বিচ্ছুরা, পড়া শিখে এসেছো?’ সবাই সমস্বরে উত্তরে জানালো হ্যাঁ। রন্তু বোকার মত ঘাড় নেড়ে না জানালো এবং মারজিনা ম্যামের তা চোখ এড়াতে পারলো না।



‘কি ব্যাপার রন্তু, ঘাড় নাড়ছো কেন?’



‘ম্যাম আমি গতদিন আসি নাই, তাই পড়া পড়ে আসি নাই।’



‘আচ্ছা তাই নাকি? ইয়েস, ইয়েস... গতদিন তোমাকে দেখি নাই। তো কোথায় গিয়েছিলে? মামা বাসা বেড়াতে? নাকি খালা বাসা?’ ম্যাম হেসে উঠলেন।



‘ম্যাম...জ্বর...জ্বর এসেছিলো...’



‘ও আচ্ছা! গুড গুড... ভালো বাহানা স্কুল কামাই দেবার। এখন বলো ইথুপিয়ার রাজধানীর নাম কি?’



‘ম্যাম জানিনা...’



‘না জানলেতো হবে না... যা ক্লাসের বাইরে গিয়ে নীল ডাউন হয়ে বসে থাক’



রন্তু মুখ গোঁজ করে দাঁড়িয়ে রইলো, সে মরে গেলেও এমনটা করতে পারবে না। বাইরে নীল ডাউন হওয়া মানে পুরো স্কুলের ছেলে মেয়েদের দেখা।



‘কিরে? কথা শুনিস না?’... মারজিনা ম্যাম কাছে এসে উনার ভয়াবহ শাস্তিটি দিলেন। দুই আঙ্গুলের মাঝখানে কাঠ পেন্সিল রেখে জোরে আচমকা চাপ দিলেন। মট করে একটা শব্দ রন্তুর চিৎকারের শব্দে ঢাকা পরে গেলো। ম্যাম রন্তুকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদের দিকে মনোযোগ দিলেন। রন্তু তার আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে দেখে ফুলে টোল হয়ে আছে জায়গাটা, কেমন নীল হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ব্যাথা হচ্ছে, ব্যাথায় রন্তুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।



রন্তু ব্যাথা নিয়ে কোনমত ক্লাস শেষ করল, ক্লাশ শেষ হতেই ওয়াশরুমে গিয়ে অনেকক্ষন পানি দিল ফুলে ওঠা আঙ্গুলটায়। পরের দুইটা ক্লাস কোনমতে পার করলো, একটুও মন বসাতে পারে নাই ক্লাসে। ম্যাথ রন্তুর খুবই প্রিয় সাবজেক্ট, সেই ম্যাথ ক্লাসেই সে মনোযোগ দিতে পারলো না। আজ ছিল জ্যামিতির ক্লাস, আঁকাঝোঁকার সাথে গনিত, রন্তুর খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজ সেই জ্যামিতি ক্লাসেও রন্তুর মন বসে নাই। স্যারের কোন কথাই যেন মাথায় ঢুকছিলো না। ছুটির ঘণ্টা পড়তে রন্তু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।



আজ অনেকক্ষণ রন্ত একা একা ক্লাসে বসে রইল। সব ছেলে মেয়ে বের হয়ে গিয়ে যখন প্রায় মাঠ ফাঁকা, তখন সে মেইন গেটের দিকে পা বাড়াল। হাতে খুব ব্যাথা হচ্ছে, মারজিনা ম্যামটা এমনই, কিচ্ছু বুঝতে চায় না। তার জ্বর ছিল শুনেও বিশ্বাস করলো না, তাকে শাস্তি দিয়ে দিল। স্কুল এক্সামে কিন্তু জেনারেল নলেজে রন্তুই হাইয়েস্ট মার্কস পায়। রন্তু হঠাৎ আকাশে ঘুড়ি দেখল, নীল-সাদা ডোরাকাটা ঘুড়ি। ঘুড়ি দেখলেই রন্তুর খুব ভালো লাগে, মনে হয় সে যদি ঘুড়ি হতে পারতো! তবে ঐ ঘুড়ির মত নীলাকাশে উড়ে উড়ে সুদূরে হারিয়ে যেত।



স্কুল গেট দিয়ে বের হতেই রন্তু খুব বড় অবাক হল। রাস্তার অপর পাশে রন্তুর বাবা জাভেদ দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে দেখে রন্তু যারপরনাই খুশী হল, কিন্তু সাথে সাথে প্রচণ্ড অভিমানও হল। এতদিনে সময় হল বাবার, সেই দুই মাস আগে এসেছিলো, আর আজ এলো। রন্তুকে বাবার বুঝি আর মনে পরে না! অভিমান করে রন্তু বাবাকে না দেখার ভান করে সোজা হাটতে লাগলো।



জাভেদ কিন্তু রাস্তার অপর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছেলের কাণ্ড দেখছিল। ছেলেকে হাঁটা আরম্ভ করতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ছেলের হাত ধরতেই রন্তু ‘উফ’ করে উঠলো। সেই আঙ্গুলটায় জাভেদের হাতের চাপ পড়েছিল।



‘কি হল রন্তু, এমন করছো কেন?’



‘কৈ, কিছু হয়নিতো। তুমি কবে এলে?’



‘আমি কবে এলাম? তুমি কিন্তু গেট থেকে বের হয়েই আমাকে দেখেছো...’



‘নাহতো...!’ রন্তু কপট অভিনয় করলো।



‘আমার সাথে মিথ্যে কথা বলবে না রন্তু। আমি মিথ্যে কথা একদম পছন্দ করি না’



রন্তু কিছু বলল না। মনে মনে বলল, তুমি যে দুই মাস এলে না? তোমার জন্য গতদিন ভিজে ভিজে বাসায় গেলাম, তিনদিন জ্বরে ভুগেছি... তুমি খুব খারাপ বাবা, তুমি খুব খারাপ।



‘কি হল রন্তু? কথা বলছ না কেন? আমার রাগ উঠাবে না কিন্তু...”



কথাটা বলেই জাভেদ থেমে গেল। রন্তু কেমন হিংস্র চোখে তার দিকে তাকালো মনে হল? নাহ, এ হয়তো তার দেখার ভুল। ঐতো রন্তু, মাথা নিচু করে হাঁটছে তার সাথে সাথে, এখনো রন্তুর কচি সরু হাতটি তার হাতে ধরা। দীর্ঘ দুই মাস পর ছেলেকে দেখছে, শায়লাকে দেখেনা কত দিন? জাভেদের রাগ! তার রাগ তাকে শেষ করে দিল। স্ত্রী, ছেলে, সংসার... সব। সব তছনছ হয়ে আজ এক যন্ত্রণার জীবন সে ভোগ করছে। তার এই যন্ত্রণা কি কেউ বুঝবে? কেউ বুঝবে না। অথচ তারই সন্তান, রন্তু কি সুন্দর, শান্ত, চুপচাপ প্রকৃতির হয়েছে। জাভেদ ছেলের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে পিচ ঢালা পথ ধরে কোন অজানায়? এতো কাছে থেকেও সে আজ রন্তুর কত দূরে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

সুমন কর বলেছেন: আপনার এই সিরিজটি পড়া হয়নি। তাই মন্তব্য করছি না। যদি পড়ি, অবশ্যই মন্তব্য করবো।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.