নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যথার মৃত্যু নেই, ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।

স্ব জীব (হাসান মেহেদী)

বেদে পাড়ার সাপ গুলো হাঁটতে জানে।ওখানে মানুষের চেয়ে সাপ বেশি।দুঃখও খুব সস্তা।পালতোলা নৌকা,নৌকা ভর্তী দুঃখ,সেই নৌকা তীর খোজে।নৌকায় চুলা সমেত ভাতের হাড়ি। মানুষগুলোর শরীরে সাপের সুগন্ধি। মানুষ না,ওরা বেদুঈন ওরা সাপ।কয়েকটা সাপ গান গায়,আমার হিংসে হয়।

স্ব জীব (হাসান মেহেদী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্রবিন্দুতে বিসর্গ

১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:৪২

প্রতি পূর্ণিমারাতে জাফর তার আধা পাকা বাড়ি ছেড়ে দূরে খোলা মাঠে সিদ্ধি নিয়ে বসে।সিদ্ধিতে টান দিয়ে সে তার মায়ের কথা ভাবে।বছর দশেক আগে বিএ পড়া অবস্থায়,মায়ের গয়না চুরি করে সে মিতুকে নিয়ে পালিয়েছিল। গয়না চুরির লজ্জায় গত বছর মায়ের মৃত্যুতেও জাফর বাড়ি ফিরেনি। ইশ্বরদিতে পৈত্রিক ভিটা ফেলে বন্ধু জাহিদের সহযোগীতায় সে ব্রামনবাড়িয়ার কসবায় এসে উঠে।একটা আধা পাকা পুরোনো বাড়িতে। এই বাড়ির প্রতিটি ইট তার দশ বছরের সংসারের সাক্ষী।। ছোট্ট একটা চাকুরী,চার বছর বয়সী ছেলে জিব্রান আর স্ত্রী মিতু; এই নিয়ে তার সংসার।জাহিদ এই সংসারের প্রতিদিনকার অতিথি।
শ্রাবণ মাস।কালো মেঘের ছোটাছুটি আকাশে।মেঘের আড়াল থেকে চাদের তামাটে আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।অদূরে কোথাও কুপির আলো জ্বলছে। জাফর সিদ্ধির ধোঁয়া ছেড়ে ষাটোর্ধ বয়সী হারিছ উদ্দিনের দিকে তাকায়।হারিছ উদ্ধিন এই পরিত্যক্ত বাড়িটার দারোয়ান।বাড়ির সামনেই প্রশ্বস্ত মাঠ।মাঠে বসে বসে চাঁদের নেশা ভরা আলোতে হারিছ উদ্দিনের গলায় বিচ্ছেদী গান শুনে জাফর।হারিছ উদ্দিন মাজার ভক্ত মানুষ।সংসার নেই।নেই আগামীকালের চিন্তা।হারিছ উদ্দিনের সাথে সম্পর্কের পর থেকে জাফরের সংসার আর সঙ্গম দুটোতেই অতিমাত্রায় অনিহা।
সুন্দর করে পান খায় হারিছ উদ্দিন।পানের ফিক ফেলতে ফেলতে হারিছ উদ্দিন, তার হারাধন থেকে হারিছ উদ্দিন হওয়ার গল্প বলে।যুদ্ধের সময় সাদেক রাজাকার তাকে মিলিটারির ভয় দেখিয়ে মুসলমান বানিয়ে ফেলে।আজ সে পীরের মুরিদ।জীবনের গতিপথ কখন কিভাবে বাঁক নেয় তা কেইবা জানে।বাতাস বাড়ছে। হারিছ উদ্দিনের বিষন্নতা বাতাসে মিশে গেছে।কিছু মানুষ তার নিজের থেকেও দ্বিগুণ ওজনের দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছে।
আকাশে মেঘ জমছে।চাঁদের ম্লান আলো।জাফর হাত ঘড়ি দেখল।ঘড়ির কাটা দুটা ছুঁই ছুঁই।হারিছ উদ্দিনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে জাফর বাড়ির পথে হাঁটা দিল।জাহিদ বোধহয় বাসায় চলে এসেছে।জোৎস্না রাতে জাহিদ আর জাফর এক সাথে সারা রাত আড্ডা দেয়।কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ।শ্রাবণ মাসের গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মিতুকে অনেক দিন হলো আদর করে না জাফর।নিতান্তই অনিহার কারণে।আজ তার ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে মিতুর মায়া ভরা চোখে চোখ রেখে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলতে।জাফর বাড়ির উঠোনে আসা মাত্রই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।খোলা দরজা দিয়ে জাফর ঘরে ঢুকতেই বিদ্যুৎ চলে গেছে।বাহিরে বজ্রপাত শুরু হয়েছে।
জাফর তার রুমের পাশ থেকে মিতুর আনন্দঘন গোঙ্গানির শব্দ শুনতে পায়।জাহিদ আর মিতুর ফিসফিসানি শব্দ,কাম উত্তেজক কথাবার্তা আর জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া বিদ্যুৎ চমকানো আলোয় তাদের অন্তরঙ্গতা দরজার আড়াল থেকে দেখে জাফর।
অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে বাহিরে।জাফর বৃষ্টিতে নেমে পড়ে।ভাবতে থাকে ছেলে জিব্রানের কথা।জীব্রান আর জাহিদ দুজনের মধ্যে কত মিল।দুজনই বামহাতি।জাফর এসব ভাবতে ভাবতে হারিছ উদ্দিনের ভাঙা এক চালা ঘরের উঠেনে এসে দাড়ায়।বাহির থেকে হারিছ উদ্দিনের নাম ধরে ডাকতে চেষ্টা করে জাফর।জাফরের গলা দিয়ে শব্দ বেরোয় না।তবুও কষ্ট করে ডাকছে সে...
-হারিছ মিয়া,হারিছ মিয়া।তোমার কাছে আরেকটু সিদ্ধি হবে।
একথা বলেই বৃষ্টি ভেজা উঠোনে পড়ে যায় জাফর।বৃষ্টি আর বজ্রপাতে সে কথা হারিছের কানে পৌঁছায় না।জাফরের চোখের জল আর বৃষ্টির পানি উঠোনে মিশে থাকে।পড়ে থাকে ছোট বেলায় বাবা হারানো,ভালোবেসে মা হারানো আস্ত একটা শরীর যেখানে দুঃখ রাখার আর একবিন্দু ঠাঁই নেই।

১৪ই এপ্রিল,২০১৫।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.