নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যথার মৃত্যু নেই, ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।

স্ব জীব (হাসান মেহেদী)

বেদে পাড়ার সাপ গুলো হাঁটতে জানে।ওখানে মানুষের চেয়ে সাপ বেশি।দুঃখও খুব সস্তা।পালতোলা নৌকা,নৌকা ভর্তী দুঃখ,সেই নৌকা তীর খোজে।নৌকায় চুলা সমেত ভাতের হাড়ি। মানুষগুলোর শরীরে সাপের সুগন্ধি। মানুষ না,ওরা বেদুঈন ওরা সাপ।কয়েকটা সাপ গান গায়,আমার হিংসে হয়।

স্ব জীব (হাসান মেহেদী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহমত চাচা

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০০

দেখা হলেই রহমত চাচা গালভর্তি হাসি দিয়ে কথা বলেন। কাঁচা-পাকা দাড়ি গোপ।আর কপালের কাটা দাগটার মত প্রৌঢ় বয়সি মানুষটার ভাগ্যটাও কেমন যেনো!

সারা দিন অন্যের জমিতে খেটে দিন শেষে বস্তা ভর্তি গাল-মন্দ, দু সের চাল আর এক হালি ডিম নিয়ে বাড়ি পিরে।বাড়ি বলতে একচালা একটা ঘর। পাশেই নারিকেল পাতার চাউনিতে একটা মাটির চুলা,সেখানে তিনি রান্না করেন।

অল্প লেখা পড়া জানা মানুষ। মার্জিত কথাবার্তা। তবে মুখ দিয়ে কথা খুব একটা বেরোয় না। চুপচাপ থাকেন।

প্রায় পূর্ণিমায়ই আমি চাচার কাছে বেড়াতে যেতাম। এই গাঁয়েই থাকে,কিন্তু গ্রাম বিচ্ছিন্ন একা একটি বাড়িতে। যেই বাড়ির ছোট্ট উঠোনটায় অন্ধকার নেমে এলেই জোনাকিরা খেলা করে আর পূর্ণিমায় জোৎস্নার ঢেউ।

শেষবার যখন গিয়েছি, হাতে ছিলো দুটো কপি মগ।মগ দুটো দেখেই বললেন—
—কিরে, তোদের ঢাকায় ‘লাল চায়ের’ কাপ পাওয়া যায় না?

-সব সময় লাল চা খেলে হবে!
মাঝে মাঝে সাহেবদের মত কপিও খেতে হবে।

এই বলে দুজনেই হেসে উঠি…

মানুষটা একা। যৌবনে বিয়ে করেছেন। বছর তিনেকের সংসারে একটা ছেলে ছিলো। হঠাৎ একদিন ফযরের পরে উনি উঠে দেখে, পাশে শুধু দুবছর বয়সী রাসেদ ঘুমোচ্ছে। কিন্তু,ঘরের দরজাটা খোলা। এরপর থেকে সেই খোলা দরজাটা তিনি একা একাই বন্ধ করতেন।

ছোট ভাইয়ের সাথে, নিজের স্ত্রী চলে যাওয়ায় খুব লজ্জা পেলেন। মাসুদের চা দোকানে দিনভর রহমত চাচার পুরুষত্ব নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা চলতেই থাকলো। এরপর থেকেই উনি বাজার বিমুখ।

বাতাস বইছে। শীতল বাতাস।রহমত চাচা অন্ধকারে উঠোনের পাশের বকুল তলার মাচায় বসে আছে, সাথে আমিও। কুড়ি বছর আগের এক বর্ষার এই দিনে তিনি ছেলে হারালেন। বেশ আদরের ছেলে ছিলো। নিজে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে তাই ইচ্ছে ছিলো ছেলেটাকে মাধ্যমিক পাশ করাবে।

লাল চা খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা চাচা, রাসেদ কিভাবে মারা যায়?

চায়ের ধুমায়িত মগটা নামিয়ে রেখে চাচা বিড়ি ধরালো। বিড়ি টানতে টানতে বলল,
—পাশের ডোবায় পড়ে।

-রাসেদকে ডোবায় পড়তে কেউ দেখেনি?

—নাহ,অনেক রাত ছিলোতো, তাই।

-অনেক রাতে মানে?

বাতাসে ধোয়া ছেড়ে বললেন,
—’মা’ চলে যাওয়া ছেলেটার জীবন খুব দুঃখের হবে। একটা ভয়ংকর যন্ত্রনায় কাটবে তার সারাটা জীবন। মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বড় হবে সে। মায়ের প্রতি ঘৃণা থাকলে কারো মনে ভালোবাসা জন্মাতে পারে না। যদি ভালোবাসা নাই থাকে তবে বেঁচে থাকার মানে নেই।

-মানে??

—রাত তখন তিনটা,রাসেদ ঘুমোচ্ছে। আমি তাকে বুকে জড়িয়ে দরজা খুলে বাহির হই। কপালে চুমু খাই।এরপর ডোবার পাশে গিয়ে পানিতে পেলে দি।

বেশ ক্ষানিকটা সময় কেটা যায়, চুপচাপ দুজনেই।

নিরবতা ভেঙে চাচা বলল,
-বিড়ি খাবি?

বাতাস বইছে।শীতল বাতাস। রহমত চাচার বিষন্নতা বাতাসে দুলছে। চারপাশ অন্ধকার।রাত,অনেক রাত। জোনাকিরা ছুটোছুটি করছে। দু-একটা নক্ষত্র চোখ মিটমিট করছে।
আমি তাকিয়ে আছি।

বিড়ি ধরালাম।
-চাচা,যাই।কাল আসবো।
এই বলে বাড়ির পথে রওনা হলাম।

পরদিন বেলা এগারোটায় শিবরামপুরবাসী রহমত চাচার গামছায় ফাঁস দেয়া দেহটার জানাযা হবে কিনা, এই তর্কে মেতে উঠলো। তারপর জানাযা না পড়িয়ে কবর দিলো। রহমত চাচার কবরে একটা বকুল ফুলের চারা লাগিয়ে আমিও ঢাকার বাসে চড়ে বসি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.