নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হীসান হক

হীসান হক

লেখার জন্য লিখি.... লেখালেখির অভ্যাস নেই। ভাল না লাগলে আমি লেখক দায়ী।

হীসান হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের গানের দল

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬







এক.



“এই কলটির বিল পরিশোধের জন্য কলার আপনাকে অনুরোধ করেছেন। রাজি থাকলে……”



শীতের এই রাতে ২টা/৩টায় এই জাতীয় কলে মনটা খুবই উদাস হয়ে যায়। জানি.. কলার আজো স্বাধীনতা প্রাংগনে গান গেয়ে তার আগের একমাত্র ভক্তের ফিডব্যাক কল পায়নি…

“এই পাগল… আরেকবার কর…. ভালো লাগছে…

পাগল মনের সুখে ধরেছে

“চন্দনা গো রাগ করো না…..”

দূর হতে সুমধুর শব্দ। কান পেতে শুনতে হয়।



আর এখন তার কলে রাজি সূচক এক চাপলেই করুন আর্তনাদ

: স্যার…. কেউ ডাকে না স্যার, আবার আসেন স্যার… আবার আসেন।

শীতার্থ গাইবান্ধায় শীত খুবই বেশি… পিএটিসিতে আরো…

কান্নায় আর শীতে ঐপাশের মানুষটি কাপতে থাকে… ভারী হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিবেশ..

এই পাশের মানুষটির অনুভূতি হয়তো বা ভোতা..

কিছুক্ষণ পর বলে,

“ধর, গানটা…”

ঐ পাশ থেকে ভেসে আসে..

“চন্দনা গো রাগ করো না…..”



আর এই পাশে তার রুম মেটের গগন বিদীর্ণ নাক গর্জন। দূর থেকে ভেসে আসছে গাড়ীর পাওয়ার হর্ণ।



দুই.



সিরাজুল ইসলাম সোনার কড়া আপত্তি

: স্যার, এই ছেলেকে আমাদের গানের দলে নিলে এর দায়-দায়িত্ব আমাদের নয়। ওর সা-রে-গা-মা নেই।



সা-রে-গা-মা অনেকেরই নেই।আমারও নেই। তারপরও সিরাজুল ইসলাম সোনা ও নূর হাসানের তৈরি আমি..সৃষ্টি মাঝে মাঝে স্রষ্টাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে.. আমিও ঝুকিঁ নিলাম।



তিন.



শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ। ঐখানেই বসে গাইবান্ধার একমাত্র নিয়মিত অনিয়মিত সাংস্কৃতিক আয়োজন :এলোমেলো হাওয়া বয়।

সাধারণ শাখার বড় বাবু মতিয়ার রহমান ঠিক ছয়টায় হাজির। মিলনায়তন প্রস্তুত। পাচমিশালী গানের আসর। শ্রোতা: আশে-পাশের পথচারী, চা বিক্রেতা হরিয়া, ডিপটির মা।ডরমেটরির বুয়াও ভাওয়াইয়ার শ্রোতা। ৩০ ব্যাচের দুই অফিসারও আসে। আসে না শুধু সা-রে-গা-মা না থাকা পাগল।

ড্রাইভার মারুফ মাঝে মাঝে বলে: ওয়ান মোর…

উৎসাহ পেয়ে শিল্পী হয়তো ধরছেন: ও লাল মেরে.. ..



চার.



আরেক মঞ্চ পুরাতন জেল খানার আম্ররঙ্গমঞ্চ ।

আম গাছের নীচে।

পাকা স্থায়ী মঞ্চ।

সাথে আছে মে মাসের ভেজা আবহাওয়া ও দক্ষিণা বাতাস।

আজ লালন উৎসব।

আমাদের গানের দলের অসাধারণ পরিবেশনা। কুষ্টিয়ার ছেউরিয়ার পরিবেশ চারদিকে।ধুপ জ্বলছে। আলো আধারী।

সবাই আছে।

লালন বেশে পাগল গাইছে: লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে..



পাচ.



“এই কলটির বিল পরিশোধের জন্য কলার আপনাকে অনুরোধ করেছেন। রাজি থাকলে……”

আজ সকালে কল.. বুঝলাম… সোনার শহর গাইবান্ধারই হবে…

ধরলাম।

: (কান্না আর চিৎকার)স্যার.. আমি ঢাকায়..

:কেন?

:বউরে..পোলাটারে খাবার দিতে পারি না… কাম নাই..

:কেন? মুহুরির কাজটা…

:পারি না.. বুদ্ধি নাই.. শিক্ষা নাই..

:তাহলে?

:রিকশা চালাই স্যার।কষ্ট… বুক ভরা কষ্ট স্যার, বুক ভরা কষ্ট।

কান্না চলতে থাকে…

কান পেতে শুনতে থাকি করুণ আর্তনাদ।

নাটক হলে ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়তো বাজতো.. “আমি ওহন রিকশা চালাই ঢাকার শহরে”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.