| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাথরের কান্না
শোক হোক শক্তি
আমি এখন যে বাড়িটায় থাকি ঠিক এক বছর আগে তার দক্ষিণ দিকটায় একটা আম-কাঁঠালের বাগান ছিল। আর পশ্চিম দিকের বারান্দার দিকটাও ছিল ফাঁকা। সেখানে বসে পড়ন্ত বিকেলের সেই ভেজা-ভেজা আমেজ আজ বড় মনে পড়ে। বারান্দাটা ছিল আমার একান্ত আপন এক জায়গা। যেখানে বসে কল্পনার পর কল্পনার জাল বুনে কাটিয়েছি কত বিকেল…
আর এখন! প্রোমোটারদের দৌলতে দক্ষিণ-পশ্চিমের সেই সব ফাঁকা স্থানে একটা-একটা করে ফ্ল্যাটবাড়ি মাথা তুলে দাড়াচ্ছে। অবশ্য ঢাকা জুড়েই এই হিড়িক— সব ফাঁকা মাঠ জমি পুকুর অদৃশ্য, কোথাও এক টুকরো ফাঁকা জায়গা দেখতে পায় তো প্রোমোটার গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চোখের সামনে দেখলাম আমার বাড়ির চারদিকে সব গাছ নিরিবিলি উধাও— হৈ-হৈ করে ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে।
সারাদিন মিস্ত্রিদের চিৎকার চেচাঁমেচি, যান্ত্রিক করাত দিয়ে লোহা কাটার কর্কশ আওয়াজ তো আছেই, সিমেন্ট মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দ, তার ওপর আবার যোগ হয়েছে মোবাইল ফোনে গান শোনা আর বিশ্রী চিৎকারের মতো এফ এম রেডিও। এখন তো রেডিও চ্যানেলেরও অভাব নেই। আমার বিরক্তি লাগে এই জন্য যে নিজেদের শুনতে ইচ্ছে হয় শোনো, কানে হেডফোন গুঁজে শোনো না বাপু। অন্যকে শোনানোর তো দরকার নেই।
কিন্তু এদের বোঝাবে কে? আর এই সারাক্ষণ সিনেমার গানে মজে থাকার কালচারটাও তো অদ্ভূত। রাগ করবোই বা কাদের ওপর, সেই প্রোমোটারগুলোর ওপর যারা একটুকরো জমিকেও ছাড়ছে না, নাকি এই গরীব মিস্ত্রিদের ওপর যারা রাত-দিন রেডিও ছেড়ে গান শুনছে আর খোলা ছাদের নীচে শীতে কুঁকড়ে ঘুমোচ্ছে, না এই রেডিও চ্যানেলগুলোর ওপর যেখানে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি মেশানো কিম্ভূত ভাষায় জকিরা অনর্গল অর্থহীন শব্দ আর যান্ত্রিক বিনোদনের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে।
সাহস কী তোমার যে এর মধ্যে নিরিবিলি খোঁজো?
আমার পরিচিত একজন বলেছিল যে প্রাইভেসি এখন কিনতে হয়। কথাটা খুব ঠিক, যে যত বেশি মূল্য দিতে পারবে সে তত বেশি ‘কমফোর্ট’ কিনতে পারবে। যে কিনতে পারবে না তার আর কিচ্ছু করার নেই। তাকে বাধ্য হয়ে সব কিছু মেনে নিতে হবে।
আগে আমাদের দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে রোদ আসতো। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে ছুটির দিনে গল্পের বই পড়ার আনন্দটা ছিল, কিন্তু এখন দিনরাত দক্ষিণ দিকের সব জানালা বন্ধ রাখতে হয়। রোদ আসাটাও বন্ধ। নিজের বাড়িতে নিজেরাই বন্দি। নিজের ভালোলাগা সবকিছু, এভাবে ধীরে ধীরে কোনও না কোনও ভাবে কেউ না কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে। আর আমি বাধ্য হচ্ছি এই সবকিছু চুপচাপ মেনে নিতে।
সত্যিই কি আমার মতো, আমাদের মতো মানুষের কাছে কোন অলটারনেটিভ নেই? নাকি আছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা যারা একটু নিজের মত থাকতে ভালবাসি, যারা তথাকথিতভাবে সামাজিক নই, যারা এই বাজার তৈরি শীত উৎসবে মেতে উঠতে পারছি না, যারা এই মিশ্র কালচারে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি না; তারা তো এই একশো ভাগের মধ্য এক ভাগ হলেও আছি। কোথায় খুঁজবো নিরিবিলি?
খুঁজছি, খুঁজে চলেছি…![]()
![]()
![]()
![]()
![]()
![]()
২৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:২৬
পাথরের কান্না বলেছেন: ধন্যবাদ ফাইরুজ ..............
২|
২৯ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:৫১
জলধি বলেছেন: আসলেই তাই..মাঝেমাঝে একটু নিরিবিলি চারপাশ পাবার লোভে কত কিই যে করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই একঘেয়ে বাড়ি তৈরীর শোরগোল, অসহ্য চিত্কার, কানের অত্যাচারকৃত গান.. এতসব থাকতে নির্জনতার সাধ্য কি কাছে আসে! তারপরেও আশায় থাকি, এইসব যন্ত্রনা থামবে একদিন.. ঠিকমত আলো না পাই, নৈঃশব্দের উত্সব তো পাবো![]()
২৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:২৪
পাথরের কান্না বলেছেন: ভাল বলেছেন জলধি,নৈঃশব্দের উত্সব এর কামনা রইল.......
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:২৭
ফাইরুজ বলেছেন: নিরিবিলি খুঁজে পাওয়া যাবেনা এখন আর কিনতে হবে। ভাল লাগলো খুব।