নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিম মরিসন

সে এক বিরাট ইতিহাস!!

জিম মরিসন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃতীয় মাত্রাঃ প্রাচীন, বিগত ও বর্তমান

০২ রা মে, ২০১৫ সকাল ৭:২২

০৩ মার্চ, ২০০৫

মোহাম্মদপুর থেকে আসাদগেট... মানিকমিয়া এভিনিউয়ের প্রশস্ততা পেরিয়ে যখন বাস বদল করেছি, তখন বেলা পড়ে এসেছে।



ডবলডেকারের দোতলা... একেবারে পেছনের সিট... বিষাদের একটা পাতলা কুয়াশায় চারপাশে আচ্ছাদন, আমি আচ্ছন্ন! পথ চলতি মানুষ, তাদেরই বয়ে চলা বাহনের ভীড়ে এই দোতলা দৈত্য-শকট এগোয় শম্বুকগতিতে!



দোতলায় কেউ নেই আর... আমি ছাড়া! যদিও লক্ষ মানুষের মিলনমেলাও আমার এই একাকিত্ব থেকে করতে পারবেনা আলাদা... দুঃখিত, ভুল বলেছি... পাশে অদৃশ্য কেউ আছে! ফুসফুস ভরে নিঃশ্বাস টানি... পোড়া ডিজেলের গন্ধের মাঝেও নাকে চারুলতার পরিচিত সুবাস খুঁজে পাই! সুদীর্ঘ এক প্রশ্বাসে খালি হয়ে যাওয়া বুকের পকেটে হাত দেই... আমাকে লেখা ওর দুটো চিঠি আছে ওখানে!



আর পারি না... ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে... একটা চিঠির ভাঁজ খুলতেই কোলে শুকনো গোলাপের কিছু পাঁপড়ি ঝরে পরে... একটা দুটো বাসের মেঝেতে! দ্রুত হাতে কুড়িয়ে আনি... জড়ো করে নাকের কাছে এনে গন্ধ নেই বুক ভর্তি করে! তারপর... তাদের সযত্নে স্থাপন করি বুকের পকেটে!



চিঠি খোলার প্রয়াস পাই... একটা দুমড়ে যাওয়া কাগজ আবার যত্ন করে সোজা করা চিহ্ন... এখানে সেখানে ময়লার দাগ... চারুলতার হাতের লেখা সামান্য এলোমেলো... বোধকরি মনটা ওর একটু চঞ্চল ছিলো লেখার সময়... সময়টাও ছিলো বুঝি প্রতিকুল! চারুলতা লিখেছে...



"বর্ণ,

কি করো? মানিকগঞ্জে এসেছি হঠাৎ করেই... সন্ধ্যায় ফিরে যাবো। দুদিন কথা হয়নি তোমার সাথে, তুমি জানতে আমি এই শিক্ষাসফরে আসবো না। আম্মা হঠাৎই গতরাতে ডেকে বললেন আমি যেন যাই। ফোনটাও হারিয়েছো সময়মতো, তোমাকে জানানো হলোনা। তোমার বাসার টিএন্ডটিতে কল করেছি দুবার... ভাইয়া বাসায় গেছেন কবে? আমি কল কেটে দিয়েছি। কে জানে তিনি কি ভেবেছেন!



সকালবেলা এসেছি এখানে... প্রশিকার একটা শাখা অফিস... চারদিক অনেক 'সবুজ'... তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে! বন্ধুরা অনেক মজা করছে, কত রকমের ছেলেমানুষী যে হচ্ছে... ভাবতেও পারবেনা! তবুও আমার কিছুই ভালো লাগছে না!



আমার কেন এমন হয়? মন খারাপ হলে তোমার বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে! যদি কিছুতে আনন্দ হয়, খুশিতে আপ্লুত হই... তোমাকে সাথে নিয়ে উদযাপন করতে ইচ্ছে করে! ছাদে দাঁড়িয়ে তোমাকে লিখছি... ওইযে নিচে উল্লাসের মূহুর্তগুলো, একটুও ইচ্ছে করছে না ওখানে ফিরে যেতে... তবুও যেতেই হবে! ঠিক যেমন তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না, তবুও ফিরে যেতে হয় ঘরে... দমবন্ধ করা বাড়িতে... যদিও আমার একটুও ইচ্ছে করে না... একটুও না!



আজকাল আমার একা থাকতেই ভালো লাগে! হয় তুমি থাকো পাশে... নয়তো কেউ নয়!



তোমার দেয়া সিডিটা শুনেছি। যদিও আগে শুনেছিলাম, তবুও তোমার দেয়া বলে 'কষ্ট' এ্যালবামটা আবারও শোনা হলো! 'হয়তো কোথাও পাবে আমাকে' শুনে কান্না পাচ্ছিলো! এতো সিগারেট খাও কেন? আমাকে তুমি ভালোবাসোনা একটুও!!



তুমি কেমন আছো? কি করছো? আর লিখতে পারছি না... ওরা ডাকছে... রাহিন বোধহয় ছাদেই উঠে আসবে! যাই? ভালো থেকো??



তোমার-

চারুলতা




বাস হঠাৎ গতি পায়... খোলা ডবলডেকারের জানালায় অজস্র বাতাস! চোখে কাঁটা কাঁটা লাগে... আমি কি কাঁদছি??





০৩ মার্চ, ২০১৩

আকাশে একখণ্ড ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে, দুরন্ত এক চিল নিয়েছে তার পিছু। স্তব্ধ নয় পৃথিবী... পাখিদের কোলাহল, আশেপাশের কোন বাড়ির কলঘরে ঘটাং ঘটাং, চঞ্চল শিশুদের বৈকালিক খেলাধূলার উৎসব, বাসার সামনের পথে রিক্সার ঘন্টা, টিনের চালে ঝরে পরা পাতাদের গড়িয়ে চলা, টেবিলের ঘড়িটার টিকটিক... এই পৃথিবী শব্দময়! ঘরের দেয়াল জুড়ে এক অপার্থিব আলোছায়ার গম্ভীর জটলা, পড়ন্ত বিকেলের রোদ তৈরি করেছে বিচিত্রতম নকশা!



জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এক অলস সন্ধ্যা আসছে ঘনিয়ে... কোথাও যাবার নেই... গেলে ফিরে আসার তাড়া নেই! এভাবেই যেন দিন কেটে গেছে আমার, কাটবে আরোও অনন্তকাল!



মুঠোফোন এয়ারপ্লেন মোডে... জানি, কেউ কল করে বিরক্ত করবার নেই, ফোন বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্নও হবার নেই অবশিষ্ট কেউ আর! তবুও... বন্ধ করে রেখেছি মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক।



মাগরিবের আজান হয়ে গেছে বেশ অনেকটা সময়। পৃথিবী একটু একটু করে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে! মিউজিক সিস্টেমে গান বাজছে... 'চেনা শহর চেনা রাস্তা... পরিচিত ঢাকা... ভেসে যাচ্ছি চোখে আলো জ্বেলে... জাহাজীর মতো একা!'



বেসিনের সামনে গিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে চোখেমুখে পানি দেই... অবসাদ কাটে না তবুও! এ কি যে এক উৎকন্ঠা আমায় ঘিরে থাকে, জাপটে রাখে ধরে! ঘরে ফিরে আলো জ্বালি না... যদিও দুবার খসখসে শব্দের পর দেয়াশলাই জ্বলে ওঠে... সিগারেটের ধোঁয়ায় ভর্তি করি বুক! আবার গিয়ে দাঁড়াই জানালায়... সন্ধ্যা গাঢ়তা পেয়েছে রাতেরই মতো!



শিরোনামহীন শেষে বাচ্চু ভাই আসেন প্লেয়ারে... কাকতাল বুঝি?



'খোলা জানালার নীল পর্দায়

আমাদের প্রিয় রূপালী সন্ধ্যায়

পড়ে থাকি পিতলের এ্যাশট্রেতে!'



চারুলতার কথা মনে পড়ে ভীষণ! বুক উজাড় করা এক দীর্ঘশ্বাস জিজ্ঞেস করে... 'চারুলতা, কেমন আছো?'





০৩ মার্চ, ২০১৫

প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগেই মনে হলো, আজ নিয়ম ভাঙ্গার দিন... একদিন অফিসে না গেলে যদি চাকরি না থাকে, তবে এ চাকরজীবনের সমাপ্তি হোক আজই। মুঠোফোন সুইচড অফ করে পাশ ফিরে শুই!



দুপুর গড়াগড়ি খাচ্ছে যখন বিকেল হতে, পুনরায় চেতনার বিস্তার। বিছানা থেকেই জানালাটা খুলে দেই, ঝাপসা আলোয় আলোকিত হয় ঘর।



আকাশে গাঢ় ধূসর মেঘেদের আনাগোনা বেশ। অলস সময় নিয়ে স্নান, ঠান্ডা খাবারে উদরের পূর্তি শেষে সিগারেট জ্বেলে ভাবতে বসি... কিভাবে যাপন হবে আজকের উৎসব! তারপর... গিটার কাঁধে নিয়ে কিছুটা হেঁটে এসে মেট্রোস্টেশন।



ট্রেনের অদ্ভুত ছন্দময় যাত্রা... অনেকটা পথ গিয়ে আসে গন্তব্য, স্টেশন থেকে বেরিয়ে ডানদিকে যে পথটা গেছে, তার মাথায় গিয়ে একটা শপিংমলে ঢুকি। স্কচ হুইস্কির একটা ছোট বোতল, কিছু স্ন্যাকস, এক প্যাকেট সিগারেট। আরোও কিছুদূর পর সমুদ্রসৈকত!



দুরন্ত বাতাস... অনতিবর্তী ঢেউয়ের নির্জনতা... বালুচরে বসে একটু একটু করে মাতাল হই! তারপর মাতি... বিষাদীয় উৎসবে!



'কি খুঁজি মানুষের বিষাদের চোখে?

কোথায় আলোর উৎসবে স্বপ্নের প্রতিবিম্ব ভাঙে?

একা একা আমি থাকি দাঁড়ায়ে

স্মৃতির ঝড়ো বাতাসে দুজনার শরীর মেশাই!'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.