নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিকুঞ্জ পাগল এক আলোর সন্ন্যাসী

ইশতিয়াক ফাহাদ

ইশতিয়াক ফাহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ হাসিনার সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যরা সরাসরি নির্বাচনী রাজনীতিতে আসেননি ?

১৬ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে শেখ হাসিনা একটি অবিচ্ছেদ্য নাম—যিনি একাধারে শেখ মুজিব কন্যা, একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের দীর্ঘস্থায়ী নেতা এবং বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসক । কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, তাঁর সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যরা সরাসরি নির্বাচনী রাজনীতিতে আসেননি। এই অনুপস্থিতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেউ বলেন এটি ছিল কৌশলগত সিদ্ধান্ত, কেউবা বলেন—এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক বা প্রতিবেশী দেশের চাপ।

শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে বরাবরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এই সম্পর্ক অনেকে 'কৌশলগত বন্ধুত্ব' হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে 'নিয়ন্ত্রণ' বলেও ব্যাখ্যা করেন । তবে , বিগত বছর গুলো তে ভারতের আচরনে তাই বুঝা গিয়েছে

পরিবারকে রাজনীতির বাইরে রাখার অন্যতম যুক্তি হতে পারে—এক নেতা, এক নেতৃত্বের মডেল বজায় রাখা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবারতন্ত্র নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শেখ হাসিনা হয়তো চেয়েছেন জনসমর্থন নষ্ট না হয় এবং নেতৃত্বে বিভক্তি না আসে। পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ভয়াবহ পারিবারিক ট্র্যাজেডি তাঁর মনে রাজনীতি নিয়ে একটি নিরাপত্তাহীনতা ও ট্রমা তৈরি করে থাকতে পারে, যার কারণে তিনি তাঁর সন্তানকে রাজনৈতিক ঝুঁকি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন।

অনেকে আবার বলেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারত বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল। কেউ কেউ 'র' বা নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার গোপন ভূমিকার কথাও বলেন। "RAW" ট্র্যাপ নিজে ফেঁসে গিয়েছেন তাই হয়তো চান না পরিবারের কেউ ফেসে যাক ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ও তার পরবর্তী সময়কালে ‘র’ বা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্তর আলোচনা চলে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট, বিশ্লেষণ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ উঠে আসে, যেখানে বলা হয়—RAW সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে সহায়তা করেছে। ভারতের কৌশলগত স্বার্থে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল ও মিত্রপন্থী সরকার দরকার ছিল, এবং সেই জায়গা থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকেই তারা উপযুক্ত মনে করেছিল।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা রহস্যজনকভাবে স্তিমিত হয়ে যায়, এবং তাঁর বিদেশ সফর ও ফেরত আসার পথ পরিষ্কার হয়। অনেকে মনে করেন, এর পেছনে ভারতের কূটনৈতিক চাপ এবং RAW-এর কৌশলগত তৎপরতা ছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাধিক সূত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে—ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের ‘নিরাপত্তা সমন্বয়’ চলছিল, যাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করা হয়।

আর এখানেই প্রশ্ন ওঠে—শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারকে রাজনীতিতে আনলেন না কেন?

এই প্রশ্নের জবাবের একটা অংশ লুকিয়ে থাকতে পারে RAW বা ভারতের ভূমিকায়। যদি ধরে নিই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে ভারত কৌশলগতভাবে মেনে নিয়েছিল, তাহলে একটি ‘একক নেতৃত্ব’ ও 'নিয়ন্ত্রিত ভারসাম্য' রক্ষার জন্য পরিবারকে রাজনীতির বাইরে রাখার পরামর্শ বা পরোক্ষ শর্ত থাকতে পারে। কারণ একাধিক রাজনৈতিক মুখ বা পরিবারতন্ত্র বৃদ্ধি পেলে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়—বিশেষত যদি ভারতের স্বার্থনির্ভর নীতিনির্ধারণের বিষয় থাকে।

এখানে আরেকটি বিষয় প্রাসঙ্গিক: শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে রাজনীতি করছেন, তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত নন। সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হলেও সরাসরি কোনো মন্ত্রণালয় বা নির্বাচনী রাজনীতিতে নেই।

এটি প্রমাণ করে, তাঁরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও তারা সরাসরি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই, এবং সম্ভবত সেটাই ছিল কৌশলগতভাবে পরিকল্পিত।

তাছাড়া রাজনৈতিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক স্পর্শকাতর কাঠামোতে শেখ হাসিনা নিজেও হয়তো বুঝতেন—তার পরিবারের সরাসরি অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক মহলে ‘বংশবাদী রাজনীতির’ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে, যা পশ্চিমা মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। আর ভারতের দিক থেকেও একই ধরনের ধারণা থাকতে পারে—'একজন নেত্রী, কিন্তু পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভরযোগ্যতা'। এই তত্ত্বকেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ‘RAW doctrine’ নামে অভিহিত করেছেন।

তবে সব কথার শেষে এটি সত্য—RAW-এর কিছু কার্যক্রম ও সংশ্লিষ্টতা নানাভাবে প্রমাণিতকিন্তু যেহেতু রাজনীতি শুধু প্রকাশ্য মাঠে খেলা হয় না—বরং এর বড় একটা অংশ ছায়া রাজনীতিতে ও কূটনৈতিক চ্যানেলে গড়ে ওঠে, তাই অনেক সময় সিদ্ধান্তের বাস্তব কারণগুলো থেকে যায় ‘অদৃশ্য দৃশ্যপট’-এর আড়ালে।


সুতরাং বলা যায়, শেখ হাসিনার পরিবারের রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকার পেছনে একাধিক স্তরের বাস্তবতা, দূরদর্শিতা, কৌশল ও পারিবারিক অভিজ্ঞতা কাজ করেছে। এটিকে শুধু “ভারতের নির্দেশ” বলে সরলীকরণ করা হলে বিষয়টির গভীরতা ও বাস্তবতা উপেক্ষিত হয়। বরং মনে হয়, নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা ও জনমত রক্ষার ভারসাম্য বজায় রাখাই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.