নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখতে না পড়তে ভালো লাগে, বলতে না শুনতে ভালোবাসি, সেমি-ইন্ট্রোভার্ট।
আমাদের সমাজে ‘বাঁশ’একটি নেতিবাচক শব্দ হিসেবে বহুল প্রচলিত অথচ এই বাঁশ’ই বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং পরিবেশে বয়ে আনতে পারে এক আমূল পরিবর্তন। সেই আদিকাল হতে মানব সমাজ দৈনন্দিন নানাবিধ কাজে বাঁশ ব্যবহার করে আসছে যা অদ্য পর্যন্ত বিদ্যমান। সময়ের সাথে সাথে এবং আধুনিক টেকনোলজির আবির্ভাবে বাঁশ এখন শুধু গৃহস্থালির কাজেই সিমাবদ্ধ নেই, বর্তমানে বাঁশের রয়েছে বৈচিত্রময় সব ব্যবহার; বিশেষ করে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) শোষণ সেই সাথে নাবায়ণযোগ্য জ্বালানী (Renewable energy source) এর উৎস হিসেবে বাঁশ হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বান্ধব এক উপাদান। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে শুধুমাত্র বাঁশ চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি চাঙ্গা, বেকারত্ব হ্রাস এবং বায়ুমণ্ডল হতে কর্বন (CO₂) শোষণ করার মত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কর্ম একইসাথে সম্পাদন করা যায়। যদিও বিষয়টি বেশ জটিল এবং কঠিন সেই সাথে সময় সাপেক্ষও বটে তবে অসম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি- একটু উদ্যোগ একটু চেষ্টা বয়ে আনে সফলতা।
তো চলুন শুরু করা যাক-
বাঁশ প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের ঘাস, তবে এটি একটি বিশেষ ধরনের ঘাস যা Poaceae (ঘাস) পরিবারভুক্ত। বাঁশের গাছ দেখতে বড় এবং কাঠের মতো শক্ত হলেও উদ্ভিদবিজ্ঞানে এটিকে ঘাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাঁশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর কাঠামো মজবুত ও টেকসই।
বাঁশ কেন ঘাস?
• বাঁশের শিকড় এবং বৃদ্ধি কাঠামো অন্যান্য ঘাসের মতোই, এবং এটি Rhizome বা শিকড় থেকে দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
• বাঁশের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত—কিছু প্রজাতি দিনে এক মিটার পর্যন্তও বাড়তে পারে।
এ কারণেই উদ্ভিদবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বাঁশকে ঘাস হিসাবে গণ্য করা হয়, যদিও এটি দৈহিক গঠন ও উপকারিতার কারণে অনেকটা গাছের মতোই মনে হয়।
Source: Bamboo vs. Trees: The Scientific Facts!
এই ঘাস বা বাঁশ ঠিক কিভাবে দেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে?
আজকের এই যুগে বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বের প্রধান যে তিনটি সমস্যা তা হলো-
(১) অর্থনৈতিক সংকট।
(২) দারিদ্রতা ও বেকারত্বের অভিশাপ।
(৩) প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুপ প্রভাব বা জলবায়ুর উষ্ণায়ন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ৩য় নং সমস্যাটি শুধু তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা নয় এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণায় দেখে যায়- জলবায়ুর বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থের দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই রয়েছে সবার উপরে।
For the Poorest Countries, Climate Action is Development in Action
উপরোক্ত তিনটি সমস্যা মোকাবেলায় বাঁশ কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে?
হ্যাঁ তিনটি সমস্যা মোকাবেলায়’ই বাঁশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে, তার আগে আমাদের বুঝতে হবে বাঁশ থেকে আমরা কি কি পেতে পারি যার মাধ্যমে আমরা উপরোক্ত তিনটি সমস্যার সমাধান একসাথে করতে পারি।
গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে, হস্তশিল্প, কারুশিল্প এবং কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশের রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার কিন্তু আমরা এখানে আলোকপাত করবো বাঁশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস (Renewable energy source) হিসেবে ব্যবহার করে কিভাবে বাঁশ থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ শক্তি (Energy) পেতে পারি যা একটি দেশের প্রধান চালিকা শক্তি, এবং যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
Beema Bamboo for Energy Plantation
সম্পূর্ণ কার্বন নিরপেক্ষ (CO₂ neutral) পদ্ধতিতে বাঁশ থেকে আমরা যে সকল শক্তি (Energy) পেতে পারি তা হলো-
১: বিদ্যুৎ (Electricity)
২: ইথানল (Ethanol)
৩: বায়ো সিএনজি (BioCNG)
৪: ফুরফুরাল (Furfural)
৫: অ্যাসিডক এসিড (Acetic Acid)
বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে- শুধুমাত্র একটি শক্তির উৎস একটি দেশের অর্থনীতিকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে যেমন- তেল, গ্যস, কয়লা ইত্যাদির খনি।
আমি আমার পরবর্তী পোস্টে দেখাবো শুধুমাত্র বাঁশ কিভাবে উপরোক্ত ৫ টি শক্তির অফুরন্ত উৎস হতে পারে এবং এই পাঁচটি শক্তির উপর নির্ভর করেই কিভাবে দেশে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়া সম্ভব। আমি এখানে ‘অফুরন্ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছি এজন্য যে- সাধারণত তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির খনিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি মজুদ থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর উত্তোলোন করা যায় না বা শেষ হয়ে যায় যে কারণে এগুলোকে Non renewable energy বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে বড় কথা Fossil energy পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকারক, এগুলো উত্তোলনে যেমন ভূগর্ভের ক্ষতি হয় আবার ব্যবহারের সময় বযুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণে কর্বন (CO₂) নিঃসরণ হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি বসবাস যোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের জরুরী ভিত্তিতে Fossil energy এর বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে। আর এজন্য বাঁশ হতে পারে সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। (বিস্তারিত আসছে পরবর্তী পোস্টে)
সঙ্গত কারণেই বিশ্ব এখন নায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুকছে আর তাই আমাদের শুধু সে পথেই এগুলে চলবে না বরং আমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে, কারণ বাঁশ চাষে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া এবং ভুমি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। আমরা যদি নিজেদের শক্তি নিজেরাই উৎপন্ন করতে পারি তাহলে আমাদের আর উন্নত বিশ্বের মুখাপেক্ষী হতে হবে না, শুধুমাত্র বাঁশ চাষের মাধ্যমেই আমরা পশ্চিমা বিশ্বকে ‘বাঁশ’ দিয়ে দিতে পারি, আর তা কিভাবে সে বিষয়েই আলোকপাত করার ইচ্ছে প্রকাশ করছি পরবর্তী পোস্টে, ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
Say no to Fossil fuels
৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:১৫
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: হা হা! ভালো বলেছেন, আমরা তো চিরকাল বাঁশ দেওয়া নেওয়ার মাঝেই ব্যস্ত ছিলাম তাই ভাবলাম এবার এই বাঁশ দিয়েই ভালো কিছু করা যায় কি না?
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:৩৩
মুনতাসির বলেছেন: ক্লিন এনার্জি আসলে কতটা ক্লিন, সেটা একটা প্রশ্ন। যদি কারবন ফুতপ্রিন্ত এর কথা বিবেচনা করা হয় তবে, অঙ্ক টা আর জটিল। I have a piece on it.
https://www.thedailystar.net/tech-startup/news/decoding-the-ev-craze-are-they-just-hype-3421786
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০৫
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: বিষয়টিতে আপনার আগ্রহ আছে জেনে ভালো লাগলো। বেশ বড় একটি কলাম লিখছেন Decoding the EV craze: Are they just a hype? আপনার লেখাটি পড়লাম। আর্টিকেলটিতে আপনি বেশ যৌক্তিক কিছু প্রশ্নের অবতারণা করছেন যার সাথে আমিও একমত যেমন- যেমন পরিবেশ বান্ধব যে সকল ভবন এর কথা আমারা শুনে থাকি এগুলা শুধুই লোক দেখানো প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়, একটা ভবন এর ছাদে, বারান্দায় কিছু গাছ রেখে দিলেই কি তা পরিবেশ বন্ধব হয়? আমি মনে করি গ্রীষ্মকালের তাপে হিট হওয়া থেকে একটা ভবনকে রাক্ষা করার পদ্ধতি এবং যথেষ্ট আলো বাতাস প্রবাহের পদ্ধতি না করতে পারলে ওটা কখনো পরিবশ বান্ধব ভবন হয় না। শুধুমাত্র এই দুটি পদ্ধতির আবিষ্কারের মাধ্যমেই একটি ভবনে লাইট, ফ্যান, এসির ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
-বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারী চালিত গাড়ি তখনই পরিবেশ বান্ধব বলে গন্য হবে যখন উক্ত বিদ্যুতের সোর্স হবে সম্পুর্ণ Non fossil energy থেকে। আমার/আমাদের প্রস্তাবিত বাঁশ থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপানের যে প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে তাতে বায়ুণ্ডলে Zero কার্বন নির্গত হবে, ক্ষেত্র বিশেষে এবং যুক্তি তর্ক সাপেক্ষে এটাকে কার্বন নেগেটিভ প্রজেক্টও বলা যেতে পারে
It is an ongoing process. Climate change is an ongoing reality, continuously happening and will continue to occur. - জ্বলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে চিরন্তন এক প্রকৃিয়া। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি ঠিক এই মূহুর্তে থেকে যদি পুরো পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ সম্পুর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয় তবুও সময়ের সাথে সাথে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাবে কারণ এটা প্রকৃতির চলমান এক প্রকৃিয়া যা ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। তবে, কার্বন নিঃসরণ যেহেতু দ্রুত্ জলাবয়ু উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ আর এ বিষয়ে সকল বিজ্ঞানীগণই যেহেতু একমত তাই আমাদের যতটা সম্ভব কার্বন মুক্ত পৃথবী গড়ে তুলতে হবে।
But so far, we have not been able to establish a direct connection between climate change and money. - আমার মনে হয় আমাদের বাঁশ প্রজেক্টের মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
There is a reason for that. To clear the path for direct involvement with business, various catalysts are created. For example, environmentally friendly businesses, eco-friendly buildings, and environmentally friendly initiatives, to name a few. - আসলে ব্যবসায়ীরা মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করে, কিন্তু তার মধ্যে বাস্তবতা কতটুকা তা কেউ খাতিয়ে দেখে না। ধর্ম নিয়েও এ ধরণের ব্যবসা বিরাজমান। তবে ধীরে ধীরে মানুষ পরিবেশ বন্ধব প্রডাক্টের দিকে ঝুঁকছে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে কিছুদিন আগে Biomass vs Solar energy নিয়ে ছোট একটি পিডিএফ ফাইল তেরি করছিলাম, একনজড় বুলাতে পারেন।
আপনার মতামতের কল্যাণে পোস্ট'টি আরও তথ্য সমৃদ্ধ হলো সেজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪০
রবিন.হুড বলেছেন: ঠিক বলেছেন কারো পিছনে বাঁশ নিয়ে না ঘুরে বাঁশের সঠিক ব্যবহার করলে দেশ ও দশের কল্যাণ হবে।
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১১
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
শুধুমাত্র বাঁশের যথাথ ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা উন্নত বিশ্বকে ‘বাঁশ’ দিয়ে দিতে পারি।
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৩
মুনতাসির বলেছেন: আপনি এত টা সময় নিয়ে পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। কথা সত্য, আমরা ঠিক সে পন্থা বেশি আনুসরন করি যাতে আমাদের বেক্তিগত লাভ বেশি হয়। আপনার প্রস্তাবনা অবশ্য লজিকাল। আপনার মনে আছে কর্ণফুলী কাগজ বলে এক ধরনের কাগজ পাওয়া যেত? দিস্তা হিসেবে নিউজ প্রিন্ট এর থেকে বেশি দাম ছিল। কালি চুষত না। যেহেতু ঝরনা কলম দিয়ে আমরা ভাই বোনেরা মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি তাই এই কাগজ ছিল খুব পরিচিত। এটা বললাম তার কারণ হল কর্ণফুলী পেপার মিল টা চলত বাঁশ কে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। সেই মিল বদকরি বন্ধ হয়ে গাছে শুদু কাঁচামালের ওভাবে। বাঁশ দারুণ কিন্তু এটার জন্য যে পরিমাণ জায়গার দরকার হবে সেটা হয়ত আমাদের নাই। আমরা মনে হয় বাঁশ আমদানি করি। বার্মা থেকে।
আমাদের এখানে উৎপাদিত বাঁশের পণ্যের খরচ অনেকাংশে কাঠের সমান বা বেশি পরে যায়। তার উপর চীনে এত বেশি বাঁশ হয় যে তাঁরা সারা দুনিয়া তে বাঁশ জাতীয় বেশিরভাগ পণ্য এত কম দামে দিতে পারে যে অন্য কারো পক্ষে সারভিভে করা কঠিন। বাঁশের সব থেকে কঠিন ব্যাপার হল এটাকে প্রচেসস করা। সরকারি উদ্যোগ আছে কিন্তু তাও বেশ খরচের।
আমি হয়ত মূল জায়গা থেকে সরে এসেছি কিন্তু এত কিছু বললাম তার কারণ হল, আগে উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আর তাকে সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে। যেটা হয়ত আমাদের জন্য কঠিন।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:০৯
আজব লিংকন বলেছেন: জীবটাই আমার বাঁশের বাগান। এই পোষ্ট এতদিন খুঁজতেছিলাম। মনে হচ্ছে বাঁশ বেইচ্যা এইবার কোটিপতি হব।