নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদের “বিশ্বাস”

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩০



বছর পনেরো আগে আমার এক সাংবাদিক আত্মিয় গেলেন হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিতে তাঁর ধানমন্ডীর আগের বাসায়। রোজার মাস। সাংবাদিক রোজা রেখেছেন। বিকেলের পরের দিকে সময়টা। ঈফতারের আয়োজন প্রায় শেষের পর্যায়ে। হুমায়ূন আরো কিছু বন্ধু সমেত আড্ডা পেটাচ্ছেন, এবং আযানের আগেই খাচ্ছেন। হুট করে তাঁর মনে হলো সাংবাদিক রোজা না তো? জিজ্ঞেস করে জানলেন রিপোর্টার রোজাদার। অগত্যা আযানের পরই আবার খেলেন, রসিকতা করলেন ”তোমার সৌজন্যে আমাদেরও কিছু সওয়াব-টওয়াব হয়ে যেতে পারে।”

তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে পাড় নাস্তিক ছিলেন। জীবনেও ধর্ম-কর্মের ধার ধারেন নাই। ব্যাক্তিগত প্র্যাক্টিসে এসব রাখেন নাই। নাস্তিকদের যেমন ব্যাক্তিগত আইন-কানুন থাকে, দৃষ্টিভঙ্গী থাকে, তারও ছিলো।

বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি ফেললে আমরা দেখতে পাবো, তাঁর লেখার পরতে-পরতে ধর্ম নিয়ে ফাইজলামী। এক ইউনুস নবীর মাছের পেট থেকে খালাস হবার কথিত ঘটনাটা খুব কম উপন্যাসই আছে যেখানে বিষয়টার কৌতুকময় উপস্থাপন নাই। হিমু ঝামেলায় পরে ফুপার সামনে বা পুলিশ কাস্টডিতে, তাঁর স্মরণ হয় দোয়া ইউনুস পড়ে ইউনুস নবী মাছের পেট থেকে খালাস পেয়েছিলেন, তাই কৌতুক করে হিমুর দোয়া ইউনুস পড়ার কথা মাথায় আসে।
জ্বীন নিয়ে বিস্তর দুষ্টুমী কথাবার্তা লেখা, সেইসাথে এ’ও উল্লেখ করা যে কোরআন শরীফে জ্বীনের উল্লেখ আছে। অর্থ্যাৎ ট্রিটিমেন্টটা হচ্ছে এহেন আজগুবী বিষয় কোরআন স্বীকার করে। যারা জ্বীন নামানোর কথা বলে ধান্দাবাজী করে বেড়ায় তাঁদের ব্যাপারে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি নিজ পরিবারের। যেখানে জ্বীন একটি মিথ্যা প্রপাগান্ডা হিসেবে প্রমাণিত হয়। অনেকগুলি মিসির আলি গল্পে নায়ক মিসির আলি জ্বীনের অস্তিত্ব ভুল প্রমাণ করে দেখান যে রুগী কোন জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
হুমায়ূনের লেখায় কথিত বেহেশতের হুরপরীর প্রসঙ্গ এমন ঠাট্টাচ্ছলে উল্লেখ করা হয়, যেকেউ বুঝতে পারবেন হুরের প্রতি লেখকের বিন্দুমাত্র আস্থাও নাই।
মিডিয়া জীবনে হুমায়ূন আহমেদের কাছের মানুষদের কাছেও অনুরূপটাই শুনেছি, তিনি ঘোর অবিশ্বাসী ছিলেন।

কিন্তু…

সেন্টু খাওয়ার বিষয়টা সামনে এসে দাঁড়ায় একাধিকবার। (১) ১৯৯৪ সালে (সম্ভবত) অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের উদ্যোগে একটা সাক্ষাৎকার ভিত্তিক বই প্রকাশিত হয়, ”হাজার প্রশ্নে হুমায়ূন”। মাহফুজ এক জায়গায় প্রশ্ন করেন,

– ”আপনি কি বিশ্বাসী?”

কিছু একটা বলে হুমায়ূন এড়িয়ে যান। মাহফুজ নাছোরবান্দা, এই উত্তর লাগবেই। তখন তিনি বলেন,

– ”হ্যাঁ, আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মাঝে-মাঝেই সন্দেহবাতিকতায় আক্রান্ত হই, আধুনিক মানুষের এই এক সমস্যা”। (স্মৃতি থেকে লিখছি, বাক্যগঠন হুবুহু এমনটা না’ও হতে পারে, তবে মানেটা এ’ই ছিলো)।
(২) দৈনিক প্রথম আলোর একটা কলামে তিনি হুট করে নিয়ে আসেন শতাব্দী প্রাচীন নাইকন ক্যামেরা থিওরি, যা অন্তত ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে যায়।
(৩) একই সময়ে কালের-কন্ঠে প্রকাশিত একটা কলাম ”ধর্ম-কর্ম”, কিন্তু সুফীজমের কথা বলে ছেড়ে দেন, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন না।
(৪) ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এর একটা অংশেও এক নাস্তিক নিয়ে আসেন, কিন্তু বিভ্রান্তীকর ট্রিটমেন্ট দিয়ে শেষ করেন।
(৫) কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেন লেখায় মাঝে-মাঝে।
(৬) বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস কেন ঈশ্বরকে খারিজ করে দিলেন? এই প্রশ্ন তুলে হুমায়ূন প্রথম আলোতে লিখেন হকিংস ঈশ্বরকে খারিজ করার কেউ নন। ভিন্ন একটি কলামে লিখে বসেন, ”ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, বিজ্ঞান থাকবে বিজ্ঞানের জায়গায়”!
(৭) ২০০৪ এ সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে বিবাহবিচ্ছেদ প্রসঙ্গে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত দেশবাসী প্রতি খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন হযরত মুহম্মদও তাঁর স্ত্রীর সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ করেছিলেন। বিষয়টা জাস্টিফিকেশনের অকাট্য যুক্তি বটে!

হুজুর চরিত্র হুমায়ূনের লেখায় ইতিবাচক হয়ে উঠে এসেছে বেশিরভাগই, তবে সেসব হুজুরের ধর্ম-কর্মের কারণে নয়। ব্যাক্তিগত সরলতা, মানসিক সীমাবদ্ধতা, আর পশ্চাতগামী ও সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে উঠে এসেছে। ‘এই মেঘ রৌদ্রছায়া’র ঈমাম এক ভয়ে থরথর কম্পমান আল্লাহর বান্দা, যে কম-বেশি বিচ্যুত হন, কোরআন মুখস্ত করার সপ্নে বিভোর এই চরিত্রের আবার ভুজঙ্গবাবুর যাত্রাভিনয় দেখার ইচ্ছাও করে, কিন্তু ধর্মীয় বাধানিষেধের কারণে যেতে পারেন না, মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপুরী জাতীয় মৌলিক প্রশ্নে এক বিভ্রান্ত পথিক, অখন্ড পাকিস্তানকে তিনি মনে করেন আল্লাহর দেশ, আসমানীরা তিন বোন(?)-উপন্যাসে মসজিদের ঈমাম ঘুষ খেয়ে তাঁর এলাকায় সার্কাস পার্টিকে তাবু খাটানোর অনুমতি দেন ইসলামী আন্দোলনের হুমকি প্রত্যাহার করে। ‘জ্বীন কফিল’ গল্পে ঈমামের স্ত্রী যিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পরেন তাঁর স্বামী অনাধুনিক এক হুজুর বলে। রুগী তাঁর সমস্যাসঙ্কুল সময়ে ভিন্ন কন্ঠে তাচ্ছিল্য মাখা হুংকার ছাড়েন, ”মোল্লা আইছে, তারে অযু করার পানি দেও”।
অর্থ্যাৎ, ধার্মিক ক্যারেক্টারগুলি দোষে-গুনে, সুখে-দুখে সাধারণ মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত এবং জীবনমুখী।

”শ্রাবণ মেঘের দিন” উপন্যাসে নায়িকার বাবা একজন নাস্তিক। তিনি ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ”আল্লাহপাক অংক শাস্ত্রে কাঁচা, তাই ইসলামী আইনে নারী-পুরুষের সম্পদের হিসাব ভুলভাবে দেয়া কোরআনে। হযরত আলী এই ভুল অঙ্ক সংশোধন করে আল্লাহপাকের ইজ্জত বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।”
কোরআনের এই ভুল সম্পদ বন্টনের আয়াত আমরা সবাই জানি। হুমায়ূন আহমেদ এই ডায়লগের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন পাঠকদের কাছে।

হুমায়ূন অন্তত সংশয়বাদী ছিলেন নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু পাঠকদের বিভক্ত না করার, অপ্রত্যাশিত বিতর্ক তৈরি না করার একটা টেকনিক জনপ্রিয় ধারার লোকেরা ভালোই রপ্ত করতে শেখেন। হুমায়ূন তাঁর ব্যাতিক্রম ছিলেন না। অন্যদের তুলনায় আনলে আমরা দেখতে পাবো হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর নিজেদের বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট অবস্থান পরিস্কার করেছিলন বলে সামগ্রিক গণমানুষের কাছে সেভাবে জনপ্রিয় হতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদ যেন সেই জায়গায় যেতে চান না বলেই অস্পষ্ট, মধ্যপন্থী, বিভ্রান্তিকর সব অবস্থান নিয়ে-নিয়ে এই প্রসংগকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। এই জনপ্রিয়ধারাটাকে যৌক্তিক করতে, প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হুমায়ূন প্রেম প্রকাশ করেন মাজার সংস্কৃতি এবং সুফীজমের প্রতি, যাদের সাধারণত কোনধরনের হিংসায় আক্রান্ত হতে দেখা যায় না। হুমায়ূন আহমেদ তাঁদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেন ঠিকই, কিন্তু নিজের অবস্থান সেদিকে কিনা সেটাও স্পষ্ট করেন না। এর ধারাবাহিকতায় লেখক শীর্ষেন্দূ মুখোপাধ্যায়ের পাবনার সনাতন গুরু শ্রী অনুকুল ঠাকুরের বদন্যতায় নবজীবন লাভের উল্লেখ আমরা বারবার পাই। যেই ভাবধারায় ‘ভাব’টাই ঈশ্বর।

হুমায়ূন তাঁর লেখায় লালন সাইয়ের উল্লেখ করেছেন জীবনে একবার। কিন্তু হাসন রাজার প্রতি প্রেম প্রকাশ পেয়েছে বিস্তর। মুলত আধুনিক বাংলায় সামগ্রিক গণমানুষের কাছে হাসনকে পুন-প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনিই। হাসনের গান প্রশ্ন করে ছেড়ে দেয়, ”কানাই তুমি খেইড় খেলাও ক্যানে?” জীবনের উদ্দেশ্য কী হাসন জানেন না, কেবল অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করেন, এর গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা হাসনের নেই, যেকারনে হুমায়ুন আজাদ হাসন রাজাকে জ্ঞ্যানহীন প্রতিভা ঘোষণা করেছিলেন। হাসনের উক্তি লালনের মতো গভীরে যায় না, যেতে পারে না ইন-ফ্যাক্ট। অনেক সমালোচকের দৃষ্টিতে একই সাথে প্রতিভাবান এবং অগভীর হুমায়ূন স্বভাবসুলভভাবে প্রতিভাবান অগভীর হাসনকেই গুরু মানেন।

হুমায়ূন তাঁর লেখায় অসংখ্য বাংলা এবং অন্যান্য ভাষার ব্যাপক জ্ঞানভান্ডারের পরিচয় দেন। প্রচুর রেফারেন্স টানেন, তাঁর পড়াশোনার পরিধী অবাক করার মতো। কিন্তু কখনই কোন ফিলসফারের প্রসংগ টানেননি। শেষ বয়সে একটা প্রথম-আলো কলামে ডিরেক্ট ঘোষণা দিয়ে বসেন, ”ফিলসফি একটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়”! আমরা বিস্ময়ে হতবাক হই! লেখকের কাজ ফিলসফিক্যালি ক্লিয়ার থাকা, এবং লেখনীতে সেই সুর ধরে রাখা! তবে এ কী! জনপ্রিয়তাই সার? পাঠক ধরে রাখাই লেখকের উদ্দেশ্য হতে পারে?

হুমায়ূন আহমেদ মাঝে-মাঝে পরিবর্তনকামী কথাবার্তা লিখে থাকলেও তাঁর সংস্কৃতি প্রেম পরিবর্তনকামীতার উর্ধে বিরাজ করে, যা হঠকারী সিদ্ধানে এসে উপনিত হয়। পুরুষতান্ত্রিক ফ্যান্টাসীতে আক্রান্ত হুমায়ূনের তাঁর লেখায় নারী ধূমপায়ী দেখান প্রায়শ, কিন্তু নারীমুক্তির প্রশ্নে স্পষ্ট কোন ধারণায় উপনীত হতে পারেন না। আমরা জানি নারীমুক্তির বুলি বাংলায় জনপ্রিয় নয়। ম্যাস পিপলের কাছে তেমনই অজনপ্রিয় নারী-পুরুষের ঘনিষ্ট অবস্থান। এক হিমু বইতে হিমু গাড়ির ড্রাইভারকে প্ররোচিত করে সামনে একটি গাড়িকে উপুর্যপুরী ধাক্কা দিতে কারণ সেই গাড়িতে এক প্রেমিক-যুগল ঘনিষ্টাবস্থায় বসে আছে।

এসমস্ত সংস্কৃতি-প্রেম, গণমানুষের গড় মানসিকতাকে পূজা অর্পন, এবং জনপ্রিয় ধারায় পাঠক ধরে রাখার টেন্ডেন্সি হুমায়ূন আহমেদকে পশ্চাতগামী করে, বিভ্রান্তীকর ভাবমূর্তী তৈরি করে, এবং সম্ভবত গণমুক্তির প্রশ্নে পরিত্যাজ্যও করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.