![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তিরমিজি শরিফে হজরত আমর ইবনে মায়মুন আদাবি রা.-এর বরাতে বর্ণিত আছে, হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পাঁচটি অবস্থার আগে পাঁচটি অবস্থার মূল্য দিও। ব্যস্ততার আগে অবসর, অসুস্থতার আগে সুস্থতা, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতা, বার্ধক্যের আগে তারুণ্য ও মরণের আগে জীবনকে। অর্থাৎ মানুষের জীবনে যখন সুযোগ আসে, তখন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিত। সেই সুযোগ লাভজনক ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা উচিত। হাদিসে পাঁচটি অসুবিধার পাশাপাশি পাঁচটি সুযোগের উল্লেখ করা হয়েছে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য যে, সুযোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ব্যস্ততা যে কোনো সময় আসতে পারে। তাই অবসর সময়কে যদি নিয়ম অনুযায়ী কাজে লাগানো হয়, সময়ের যদি মূল্য দেয়া হয়, তাহলে পরে যখন ব্যস্ততা আসবে, তখন আফসোস করতে হবে না। শরীর যখন সুস্থ থাকে, তখন প্রয়োজনীয় কর্তব্য সম্পন্ন করে নেয়া উচিত। অবহেলা ও আলসেমিতে সময় পার করে এবং জরুরি কাজ পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিলে হতে পারে সে কাজটি করার সময় আর পাওয়া যাবে না। কেননা অসুস্থতা জানান দিয়ে আসে না। তাই সুস্থ সময়ের মূল্য অনুধাবন করে অসুস্থতার আশঙ্কা মাথায় রেখে কর্তব্য পালনে তৎপর থাকা উচিত। বার্ধক্যকালে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তারুণ্যে যত উদ্যম ও চাঞ্চল্য নিয়ে কাজ করা যায়, বার্ধক্যে তা পারা যায় না। তাই তরুণ বয়সের সদ্ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। তেমনি সচ্ছল সময়ে শান্ত মনে অনেক ভালো কাজের চিন্তা করা যায়। প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করার সুযোগ থাকে। এ সচ্ছলতার সুযোগ নেক কাজে ব্যয় করা উচিত। আর সবশেষ বিষয় মৃত্যুর আগে জীবনকালের মূল্য দেয়া উচিত। দুনিয়ার জীবন আখিরাতের জন্য পাথেয় সংগ্রহের সময়। যতদিন হায়াত আছে, ততদিন নেক কাজ বা ইবাদতের সুযোগ আছে। মৃত্যু কখন আসবে তা কারো জানা নেই। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন লাভজনক কাজে। মোটকথা সুযোগের সদ্ব্যবহার করা এবং সুযোগকে কাজে লাগানোর প্রতি ইসলামে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যদি সুযোগের সদ্ব্যবহার না করা হয়, তাহলে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানদের চারটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক পাও নড়তে দেয়া হবে না। তার জীবনকাল কিসে ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল কিসে ব্যয় করেছে, তার জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু কাজ করেছে এবং সে কোথা থেকে সম্পদ উপার্জন করেছে আর কোথায় তা ব্যয় করেছে। এসব সুবিধা ও সুযোগ আল্লাহর দান। আল্লাহতায়ালার হুকুম অনুযায়ীই এগুলো ব্যয় করতে হবে। অন্যথা হলে জবাবদিহি করতে হবে। রমজান মাসও একটি বড় নিয়ামত। অন্য মাসগুলোর তুলনায় এ মাসে অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায় প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে। বুদ্ধিমান সেই, যে এ সময়ে বেশি ইবাদত করে, অন্যায় কাজে একটুও সময় নষ্ট করে না এবং অহেতুক সময় ব্যয় করে না। কেননা যে সময়টি চলে যায়, তা আর ফিরে আসে না। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। মাসের শেষভাগে এসে হিসাব করে দেখতে হবে এত সুবর্ণ সুযোগের কতটুকু সুফল লাভ করা হলো। কেননা পৃথিবীর জীবন মোটেই স্থায়ী নয়। তাই ইসলামের শিক্ষা পার্থিব জীবনকে ক্ষণস্থায়ী ভেবে নেহাত প্রয়োজন ছাড়া কোনো কিছু ভোগ করার মানসিকতা রাখাও উচিত নয়। এ কথাই বলেছেন আল্লাহর রাসূল সা.। তিনি বলেন, তুমি দুনিয়াতে থাকবে যেন তুমি একজন প্রবাসী কিংবা পথিক। আর নিজেকে গণ্য করবে কবরবাসীদের মধ্যে। অর্থাৎ একজন প্রবাসী যেমন তার প্রবাস জীবনে স্থায়ী আবাস স্থাপনের দিকে মনোযোগ দেয় না বরং প্রকৃত বাসস্থানের কথা সব সময় মনে রাখতে হয়, তেমনি পৃথিবীর সব আয়োজন থাকবে অস্থায়ী ভিত্তিতে। পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহের প্রতি সব সময় মনোযোগ রাখা প্রয়োজন। এটাই পার্থিব জীবনের মূল লক্ষ্য থাকা উচিত। তাই রমজানের শেষ ভাগে এসে অতীতের দিনগুলোর হিসাব মেলানো ও সামনের দিনগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চিন্তা করা উচিত।
©somewhere in net ltd.