নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে...............

জানতেএলাম

সত্যের সন্ধানে...............

জানতেএলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মসনবীয়ে রুমী ” লেখকঃ হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১০

বাংলা অনুবাদ

*** প্রথম পর্ব ***

“কান পেতে শোন বাঁশী (রুহ) কি বলে!

সে বিরহ বিচ্ছেদের (আল্লাহ্‌ তা’আলা থেকে) অভিযোগ করে।”



“যখন থেকে আমাকে বাঁশবন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে,

আমার কান্না ও আর্তনাদে নারী পুরুষ সকলে কেঁদেছে।”



“বিরহ ব্যথায় যাদের হৃদয় বিদীর্ণ,

আমার প্রেম ব্যথা প্রকাশের জন্য এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হৃদয়ই প্রয়োজন।”



“যে ব্যক্তি নিজের বাসস্থান থেকে দূরে চলে এসেছে ,

সে পুনরায় তা ফিরে পেতে চায়।”

*** ( কবি এখানে রুপকের মাধ্যমে বলছেন যে, বাঁশী যেমন তার সুমধুর করুন সুর এর মাধ্যমে মূলত বাঁশবন থেকে তার বিচ্ছেদের ব্যথা প্রকাশ করে ঠিক তেমনি কবির আত্মা (রুহ) আল্লাহ্‌ তা’আলা থেকে বিচ্ছেদের কারণে সর্বদা কাঁদতে থাকে। কারণ পৃথিবীতে আসার পূর্বে তিনি আল্লাহ্‌ তা’আলা’র পরম সান্নিদ্ধে ছিলেন।) ***



“প্রতিটি জনসমাবেশে আমি কেঁদেছি,

ভাল মন্দ সবার সাথে মিলিত হয়েছি।”



“প্রত্যেকে নিজ নিজ খেয়াল ও ধারনা অনুযায়ী আমার বন্ধু হল ,

কিন্তু আমার অন্তরে লুকায়িত গুপ্ত রহস্যের সন্ধান কেউ পেল না।”



“অথচ আমার গোপন ব্যথা, আমার কান্না ও আবেগের সাথেই জড়িত,

কিন্তু চোখ ও কানের সেই জ্যোতি নেই।”



“দেহ প্রান থেকে এবং প্রান দেহ থেকে আলাদা নয়,

কিন্তু প্রান কে কেউ দেখতে পায় না!”



“বাঁশীর এই সুর মৃদু সমীরণ নয়, এটা আগুন ।

যার মাঝে এই আগুন নেই তার জন্য মৃত্যুই ভাল।”



“প্রেমের আগুন যা বাঁশীতে বাজে,

প্রেমের মত্ততা যা শরাবে থাকে।”



“যারা নিজ বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন বাঁশী তাদের প্রকৃত বন্ধু,

এই বাঁশীর সুর আমাদের অন্তরের আবরণ ছিন্ন করে।”



“বাঁশীর মত বিষ ও বিষনাশক ওষুধ কেউ দেখেছে কি?

বাঁশীর ন্যায় হিতৈষী বন্ধু ও উৎসাহী প্রেমিক কে দেখেছে?”



“বাঁশী রক্তিম প্রেমের পথের অবস্থা বর্ণনা করে,

মজনুর প্রেমের কাহিনী শোনায়।”



“বেহুশ ছারা এই হুশের সন্ধান কেউ পায় নাই ,

কান না থাকলে কি কথা শোনা যায়?”



“বাঁশীর আহাজারির যদি কোন ফল না থাকত ,

তবে বাঁশী বিশ্বকে মিষ্টি দ্বারা পূর্ণ করতে পারত না।”



“চিন্তা পেরেশানিতে আমার জীবনের দিনগুলিই বিফল হল,

সারা জীবনের সবগুলি দিনই একমাত্র জ্বালা যন্ত্রণার সাথী হয়ে থাকল।”



“জীবনের এই দিনগুলি যদি বিফল ও বিনষ্ট হয়েও থাকে তবে বলে দাও কোন ক্ষতি নাই,

কেননা হে অনুপম পবিত্র প্রেম, তুমি আমার সাথে আছ।”



“যারা মৎস্য (অর্থাৎ আসেকে এলাহির) গুনবিহীন তারা স্বল্প পানিতে তৃপ্ত,

এই পথে যারা জীবিকাহীন (একেবারে বঞ্চিত) তাদের জীবন অকাজে নষ্ট হয়েছে।”



“অপরিপক্ক ব্যক্তি কামেল অলি আল্লাহ্‌ গনের অবস্থা উপলব্ধি করতে অক্ষম,

কাজেই কথা বন্ধ করে সালাম দিয়ে বিদায় গ্রহন করাই উত্তম।”



“ধন সম্পদের শৃঙ্খল ছিন্ন করে ফেল,

আর কতকাল সোনা রুপার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকবে!”



“সমুদ্রকে যদি একটি পিয়ালায় ঢাল, তবে কতটুকু সংকুলান হবে?

একদিন ব্যবহারের সমপরিমান অধিক নয়!”



“লোভী ব্যক্তির চক্ষু পিয়ালা কখনও পূর্ণ হয় না,

অল্পে তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ঝিনুক মুক্তা পূর্ণ হয় না।”



“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা’আলাকে ভালবাসতে পেরেছে,

সে লোভ ও দোষ ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়েছে।”



“তোমার মঙ্গল হোক হে প্রেম! তুমি আমাদের উত্তম ধ্যান ধারণা,

তুমি আমাদের সকল রোগের চিকিৎসক।”



“তুমি আমাদের অহংকার ও যশ লিপ্সা রুপ রোগের ওষুধ,

তুমি আমাদের আফ্লাতুন ও জালিনুস।”



“প্রেমের কারনে মাটির দেহ আসমানের উপর উঠল (মিরাজ শরীফ),

পাহাড় আনন্দে মত্ত হয়ে নাচতে লাগল (তূর পাহাড়)।”



“প্রেম যখন তূর পাহাড়ের প্রান হল,

তখন তূর উন্মত্ত ও মুসা আলাইহিস সাল্লাম মূর্ছিত হয়ে গেলেন।”



“আহা! আমি যদি আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর ঠোঁটের সাথে মিলিত হতে পারতাম!

তবে বাঁশীর মত আমিও বহু বলার কথা বলতাম।”



“যে ব্যক্তি স্বীয় কথার সাথী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে,

সে অফুরন্ত উপকরণের অধিকারী হলেও একেবারেই নিঃসম্বল!”



“ফুলের মৌসুম অতীত হলে যখন উদ্যান বিরান হয়ে যায়,

তখন আর বুলবুলের গান শুনবে না।”



“ফুলের মৌসুম অতীত হবার পর যখন বাগান উজাড় হয়ে যায়,

তখন ফুলের সুবাস কোথায় পাব? গোলাপ নির্যাস থেকে!”



“বাঁশীর মিহিন ও উচ্চ সুরের মধ্যে গোপন তথ্য নিহিত আছে,

যদি তা প্রকাশ করি বিশ্ব জগত উলট পালট হয়ে যাবে।”



“মিহিন ও উচ্চ এই দ্বিবিধ সুরে বাঁশী যা কিছু বলছে,

যদি আমি তা প্রকাশ করি তবে বিশ্ব জগত রসাতলে যাবে।”



“জগতের সবকিছু মাশুক (প্রেমাস্পদ) আর সমস্ত আশিক আবরন,

মাশুক জিবিত আর আশিক মৃত।”



“মাশুক যদি আশিকের প্রতি কৃপা দৃষ্টি না করেন,

তবে সে পালকহীন পাখীর মত থেকে যাবে।”



“আমার মাহবুবের আলো যদি আমার সাথী না হয়,

তবে আমি অগ্র পশ্চাতের খবর কিভাবে রাখব!”



“তাঁর নূর ডানে, বামে, উপরে, নীচে,

আমার মাথার উপর ঘিরে আছে।”



“প্রেম চায় যে তার কথা সবাই জানুক,

কিন্তু হে শ্রোতা! তোমার হৃদয় দর্পণ স্বচ্ছ না হলে তা কিভাবে সম্ভব!”



“তুমি কি জান কেন তোমার হৃদয় দর্পণ স্বচ্ছ নয়?

কারণ তার উপর থেকে মরিচা দূর করা হয় নি।”



“যে দর্পণ ময়লা ও মরিচা থেকে পরিষ্কার,

আল্লাহ্‌’র সূর্যের আলো তাতে সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হবে।”



“যাও হৃদয় দর্পণের চেহারা থেকে মরিচা পরিষ্কার কর,

তারপর ঐ নূর উপলব্ধি কর।”



*** বাদশাহ ও বাঁদির কাহিনী ***



“বন্ধুরা! আমার এই কাহিনীটি শোন,

এই ঘটনাটি আমাদের বর্তমান অবস্থার অবিকল ছবি।”



“আমরা যদি আমাদের অবস্থার মধ্যে গভীর ভাবে চিন্তা করতে থাকি,

তাহলে ইহলোক ও পরলোক উভয় জগতেরই উপকার ও মঙ্গল ভোগ করতে পারব।”



“এই বাস্তব ঘটনাটি দিলের কান দিয়ে শোন,

তাহলে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে কাদা পানি থেকে বাহির হতে পারবে।”



“বিবেক কে একত্রিত করে নাও ও মনোযোগী হও,

অতঃপর উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পা বাড়াও।”



“পূর্বযুগে (রাসুল ছল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানার আগে) একজন বাদশাহ ছিলেন,

তিনি দ্বীন দুনিয়া উভয় রাজত্বের অধিকারী ছিলেন।”



“ঘটনাক্রমে বাদশাহ একদিন নিজের মোসাহেববর্গ নিয়ে

শিকারের উদ্দেশ্যে ঘোড়ায় চেপে যাত্রা শুরু করলেন।”



“শিকারের উদ্দেশ্যে তিনি পাহাড়ে ময়দানে ঘোরাফেরা করছিলেন,

হঠাৎ প্রেমের ফাঁদে তিনি নিজেই শিকার হয়ে গেলেন।”



“তিনি রাজপথে একটি বাঁদি দেখতে পেলেন,

দেখামাত্র বাদশাহ’র প্রান ঐ বাঁদির গোলাম হয়ে গেল।”



“বাদশাহ’র প্রান-পাখি দেহ-পিঞ্জিরে ছটফট করতে লাগল,

তিনি প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে ঐ বাঁদিকে কিনলেন।”



“যখন বাদশাহ ঐ বাঁদি কিনে সফল হলেন,

তখন দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ বাঁদি রোগাক্রান্ত হল।”



“এক ব্যক্তির একটা গাধা ছিল কিন্তু তার গদি ছিল না,

পরে গদি পেল কিন্তু নেকড়ে বাঘ গাধাটি নিয়ে গেল!”



“আর এক ব্যক্তির পেয়ালা ছিল কিন্তু পানি পাচ্ছিল না,

পরে যখন পানি পেল পিয়ালাটি ভেঙ্গে গেল।”



“বাদশাহ চতুর্দিক থেকে চিকিৎসক একত্রিত করলেন,

বললেনঃ আমাদের উভয়ের প্রান আপনাদের হাতে।”



“আমার প্রান তো কিছুই নয়, ঐ বাঁদিই আমার জানের জান,

আমি পীড়িত ও হৃদয় আহত, বাঁদিই আমার ওষুধ ও চিকিৎসা।”



“যে ব্যক্তি আমার জান (মাশুক) কে চিকিৎসা দ্বারা রোগমুক্ত করবে,

সে আমার মনি-মুক্তা প্রবালের ভাণ্ডার নিয়ে যাবার হকদার হবে।”



“চিকিৎসকগন একবাক্যে বাদশাহকে বললেনঃ আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করব, গভীর গবেষণা করব,

এবং পরস্পর পরামর্শ করে সম্মিলিতভাবে কাজ করব।”



“আমরা প্রত্যেকেই এক একজন জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞ চিকিৎসক,

আমাদের হাতে প্রত্যেক জখমেরই মলম আছে।”



“সেই চিকিৎসকগণ অহংকারবশে ইনশাল্লাহ বলে নাই,

সুতরাং আল্লাহ্‌ তায়ালা তাদের মানবিক দুর্বলতা দেখিয়ে দিলেন।”



“ইনশাল্লাহ না বলার অর্থ অন্তরের কাঠিন্যতা, শুধু এমনি মুখে বলা না,

কেননা এটা তো একটা অস্থায়ী অবস্থা।”



“এমন বহু লোক আছে যারা মুখে ইনশাল্লাহ বলেন না,

কিন্তু তাদের অন্তর ইনশাল্লাহ মর্মার্থের মধ্যে ডুবে থাকে।”



“উক্ত চিকিৎসকগণ ওষুধ যা দিল

তাতে রোগ না কমে বরং বাড়তে থাকল।”



“বাঁদি রোগে দুর্বল ও শুকিয়ে গেল ,

বাঁদির চিন্তায় বাদশাহ’ র রক্তাস্রু বইতে থাকল।”



“রুগ্ন ব্যক্তির ভাগ্য বিড়ম্বনা ঘটলে চিকিৎসক নির্বোধ হয়ে যায়,

ওষুধ তখন উপকারের স্থলে অপকার করে।”



“হরতকি তখন কোষ্ঠকাঠিন্য আনে,

পানি আগুনের মত দাউ দাউ করে জ্বলে!”



“বাদশাহ বিসন্ন হলেন, অনিদ্রায় চোখ জ্বালা পোড়া করতে লাগল,

মনের ব্যথা ও অশান্তিতে তিনি মুষড়ে পরলেন।”



*** আল্লাহ্‌’র নিকট বাদশাহ’র প্রার্থনা ও বিজ্ঞ চিকিৎসক প্রাপ্তি ***



“বাদশাহ চিকিৎসকদের ব্যর্থতা দেখে

নগ্ন পায়ে মসজিদ পানে ছুটে গেলেন।”



“মসজিদে গিয়ে বাদশাহ সোজাসুজি সিজদায় পরে গেলেন,

বাদশাহ’র অশ্রু ঝরে সিজদা’র স্থান ভিজে গেল।”



“বললেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমার সমস্থ রাজত্ব আপনার দানের যৎকিঞ্চিত মাত্র,

আমার মনের আবেদন আমি কি প্রকাশ করব আপনি তো সবকিছু অবগত আছেন!”



“আমার অবস্থা এবং এই চিকিৎসকদের অবস্থা

আপনার অসীম দয়ার সম্মুখে কিছুই না!”



“হে আল্লাহ্‌! আপনি সর্বদা আমাদের যাবতীয় প্রয়োজনে আশ্রয়স্থল,

আমরা পুনরায় পথ ভুল করলাম!”



“কিন্তু আপনি যেহেতু বলেছেন যে তোমার গোপন কথা যদিও আমি অবগত,

তবুও তুমি তোমার মুখে আবেগময় কণ্ঠে তা প্রকাশ কর।”



“বাদশাহ যখন অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রার্থনা করলেন,

তখন আল্লাহ্‌ তা’আলার দয়ার সাগর উথলে উঠল।”



“ক্রন্দন অবস্থায় বাদশাহ ঘুমিয়ে গেলেন,

স্বপ্নে দেখলেন এক বৃদ্ধ তার কাছে উপস্থিত।”



“বৃদ্ধ বললেনঃ হে বাদশাহ! সুসংবাদ শোন, তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করা হয়েছে,

আগামীকাল প্রভাতে যদি কোন আগন্তক তোমার নিকট উপস্থিত হয় তবে তাকে আমার নিকট থেকে প্রেরিত মনে করবে।”



“যখন তিনি আসবেন তখন তাকে বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ চিকিৎসক মনে করবে,

তাকে সত্যবাদী বলে মনে কর কারণ তিনি বিশ্বস্ত ও মহৎ।”



“তার জাদুকরি চিকিৎসা তুমি দেখতে পাবে,

তার স্বভাব ও কাজের মধ্যে আল্লাহ্‌’ র কুদরতের মহিমা চাক্ষুষ দেখতে পাবে।”



“এই স্বপ্ন দেখে ঘুমন্ত বাদশাহ জেগে উঠলেন,

বাঁদির দাস ছিলেন এখন বাদশাহ হলেন।”



“যখন ঐ প্রতিশ্রুত সময় এসে পড়ল এবং দিবালোক প্রকাশ পেল,

পূর্বাকাশ থেকে সূর্য উঠে নক্ষত্রসমূহ কে বিলুপ্ত ও স্তিমিত করে দিল।”



“বাদশাহ শাহী মহলের খিড়কির ধারে বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন,

যেন সেই রহস্য দেখতে পান যা তার উপর প্রকাশ করা হয়েছিল।”



“বাদশাহ একজন মহাগুনি কামেল ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন,

যেন একটি সূর্য ছায়ার মধ্যে আসছেন।”



“নতুন চাঁদের মত দূর থেকে ক্ষীণ ও কৃশ আকারে আসছিলেন,

কল্পনার মূর্তির মত কখনও দৃষ্টি গোচর হচ্ছিলেন কখনও হচ্ছিলেন না।”



“দুনিয়াতে খেয়াল একটি অস্তিত্বহীন বস্তু তুল্য,

তা সত্ত্বেও তুমি সমস্থ দুনিয়াকে এই খেয়াল ও কল্পনার উপরই চলতে দেখবে!”



“মানুষের সন্ধি ও যুদ্ধ তাদের খেয়ালের উপরই নির্ভর করে,

খেয়ালের দরুনই মানুষের গর্ব, খেয়ালের কারনেই মানুষের লজ্জা।”



“ঐ সমস্থ খেয়াল যা আউলিয়ায়ে কেরামের ফাঁদ

তা আল্লাহ্‌ তা’আলার বাগানের চন্দ্রাননের প্রতিচ্ছবি।”



“সেই কাল্পনিক ছবি যা বাদশাহ স্বপ্নে দেখেছিলেন,

অভ্যাগত মেহমানের চেহারায় তা উত্তমভাবে প্রকাশিত ছিল।”



“আল্লাহ্‌’র অলিদের মধ্যে আল্লাহ্‌ তা’আলার নূর দীপ্তিমান থাকে,

তোমার অন্তর্দৃষ্টি নিখুত হলে তুমি তা দেখতে পাবে।”



“যখন সেই অলি আল্লাহ্‌ লোকটি দূর থেকে দৃশ্যমান হলেন,

তখন দেখা গেল তাঁর আপাদমস্তক প্রতিটি লোমকূপ থেকে নূরের ধারা বর্ষিত হচ্ছে।”



“বাদশাহ স্বয়ং দারবানরুপে

সেই গায়েবি মেহমানের সম্মুখে উপস্থিত হলেন।”



“বাদশাহ যখন তাঁকে সংবর্ধনা জানালেন তখন তাঁকে আবেগে জরিয়ে ধরলেন,

যেন তিনি চিনির ন্যায় গোলাপ ফুলের সাথে মিশে গেলেন।”



“মনে কর তাদের একজন তৃষ্ণার্ত অপর জন পানির মত তৃপ্তিদায়ক,

একজন ছিলেন মাতাল অপরজন ছিলেন শরাবতুল্য।”



“তাঁরা উভয়ে ছিলেন মারেফতের সমুদ্রে সন্তরণপটু,

উভয়ের আত্মা সিলাই ব্যতীত সিলাইকৃত ছিল।”



“বাদশাহ বললেনঃ বাঁদি নয় আসলে আপনিই ছিলেন আমার প্রেমাস্পদ,

কিন্তু দুনিয়াতে এক কাজ দ্বারা অপর কাজ সমাধা হয়।”



“হে মহান! আপনি আমার জন্য মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তুল্য,

আর আমি যেন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র ন্যায় আপনার খেদমতের জন্য কোমর বাঁধলাম।”



*** বে-আদবির কুফল ***



“আমরা আল্লাহ্‌ তা’আলার দরবারে আদব রক্ষা করার তাওফিক প্রার্থনা করছি,

বস্তুত বে-আদব ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা’আলার মেহেরবানী থেকে বঞ্চিত।”



“বে-আদব কেবল নিজেরই ক্ষতি করে না,

বরং বিশ্বের সবদিকে আগুন ছড়িয়ে দেয়।”



“খাঞ্চা আসমান থেকে ক্রয়-বিক্রয় এবং

কোন রকম বলা-শোনা ছাড়াই আসত।”



“মুসা আলাইহিস সাল্লাম এর কতিপয় বে-আদব ব্যক্তি

বললঃ রসূন ও মসুরের ডাল কোথায়?”



“আসমান থেকে খাঞ্চা আসা বন্ধ হল,

কৃষিকার্য, কোদাল-কাস্তে ইত্যাদির কষ্ট ঘাড়ে পড়ল।”



“আবার যখন হজরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সুপারিশ করলেন,

আল্লাহ্‌ তা’আলা খাঞ্চা প্রেরণ করলেন এবং একেবারে মুফত প্রেরণ করলেন।”



“যখন হজরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম বললেনঃ আমাদের উপর খাঞ্চা নাজিল করুন,

তখন আসমান থেকে তা নাযিল হতে থাকল।”



“আবার বে-আদবের দল আদব ত্যাগ করল,

ভিখারিদের ন্যায় উদ্ধৃত খাদ্য উঠিয়ে রাখল।”



“হজরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম নম্রভাবে তাদেরকে বোঝালেন যে এই খাবার সর্বদা আসতে থাকবে,

এবং জমিন থেকেও খাবার কম হবে না, কাজেই খাবার জমা করে রাখবে না।”



“হজরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম আরও বললেন

আল্লাহ্‌’ র খাঞ্চা সম্বন্ধে খারাপ ধারণা ও লোভ করা কুফরি।”



“অবশেষে সেই ভিক্ষুক প্রকৃতির লোকদের কারণে যারা লোভের বশে অন্ধ ছিল,

উক্ত রহমতের দরজা (আসমানি খাঞ্চা অবতরণ) গোটা কওমের উপর বন্ধ হয়ে গেল।”



“আসমানি খাঞ্চা অবতরণ বন্ধ হয়ে গেল,

এরপর আর কেউ সেই খাঞ্চা দ্বারা কখনও উপকৃত হয় নি।”



“যাকাত বন্ধ করলে বৃষ্টি বর্ষে না,

আর জেনার কুফলে চতুর্দিকে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।”



“যেই চিন্তার অন্ধকার তোমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে,

তা তোমারই নির্ভীক আচরণ ও বে-আদবির কারণে ঘটে।”



“যে কেহ দোস্তের (আল্লাহ’ র) পথে নির্ভীক আচরণ করে,

সে সর্বসাধারণের পক্ষে ডাকাত এবং নিজে না –মর্দ।”



“যে ব্যক্তি তরিকতের পথে বে-আদবি করে,

পরিতাপের উপত্যকায় সে ডুবে মরে।”



“আদবের কারণেই এই আসমান আলোকে আলোকিত হয়েছে,

আর আদবের কারণেই ফেরেশতাকুল নিস্পাপ ও পবিত্র হয়েছে।”



“মানুষের বে-আদবির দরুন সূর্য গ্রহণ হয়েছে,

শয়তান বে-আদবির কারণে আল্লাহ’র দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছে।”



“এখন বাদশাহ ও মেহমানের অবশিষ্ট সংবাদ ব্যক্ত কর,

কেননা আদবের বর্ণনার কোন শেষ নেই।”



*** মেহমানের সাথে বাদশাহ’ র সাক্ষাৎকার ***



“বাদশাহ যখন মেহমানের নিকট গেলেন,

সম্পূর্ণ ফকির বেশে গেলেন।”



“তাঁকে বার বার আলিঙ্গন করলেন,

প্রেমের মত তাঁকে মন ও প্রাণের মধ্যে স্থান দিলেন।”



“তাঁর হাতে চুম্বন করলেন,

বাড়ী ও পথের অবস্থা জিজ্ঞাস করলেন।”



“তাঁকে খাস-মহলে নিয়ে গেলেন,

বললেনঃ অনেক ছবরের দ্বারা আপনার মত একটি রত্নভাণ্ডার পেয়েছি।”



“ছবর করা কার্যত খুবই কঠিন,

কিন্তু তা পরিণামে বড়ই সুস্বাদু ও উপাদেয় ফল দান করে।”



“বললেনঃ হে আল্লাহ’ র দান! হে সংকট মোচনকারী!

আপনি “ছবর সচ্ছলতা লাভের কুঞ্জি” এই হাদিস শরিফটির বাস্তব রুপ।”



“আপনি এমন বুজুর্গ যার সাক্ষাৎলাভ সর্বপ্রকার প্রশ্নের জওয়াব,

কথাবার্তা বলা ও শোনা ব্যতীত আপনার দ্বারা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।”



“হে মহামানব! আপনি আমাদের অন্তরের সমস্যাবলী ব্যক্তকারী,

যার পা কাদায় আটকে গেছে তাকে উদ্ধারকারী।”



“আপানকে স্বাগতম জানাই হে মনোনীত মেহমান!

আপনার অবর্তমানে আমার মৃত্যু, আমার জগত সঙ্কীর্ণ।”



“আপনি মানুষের সাহায্যকারী ও হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু!

যে আপনার প্রতি নিরুৎসাহী তার ধ্বংস অনিবার্য।”



*** রোগিণীর শিয়রে মেহমান চিকিৎসক ***



“যখন মজলিস শেষ হল

তখন বাদশাহ মেহমানকে অন্দর-মহলে নিয়ে গেলেন।”



“বাদশাহ বাতেনি চিকিৎসককে রোগিণীর যাবতীয় অবস্থা বর্ণনা করলেন

এবং তাকে দেখার জন্য রোগিণীর নিকট বসালেন।”



“চিকিৎসক রোগিণীর চেহারা, শিরা ও প্রস্রাব দেখলেন,

তার রোগের লক্ষণ ও কারণসমূহ শুনলেন।”



“বললেনঃ পূর্ব চিকিৎসকগণ যে সমস্থ ওষুধ প্রয়োগ করেছেন

তা সুস্থতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করে নি বরং তা বিনাশ করেছে।”



“পূর্ব চিকিৎসকগণ রোগীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিলেন,

তারা যে ভুল করেছেন আমি তা থেকে আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”



“তিনি রোগ পর্যবেক্ষণ করলেন এবং রোগের রহস্য তার কাছে স্পষ্ট হল,

কিন্তু বাদশাহ’র নিকট রোগের কারণ গোপন রাখলেন।”



“রোগিণীর রোগ অম্ল বা পিত্ত থেকে উৎপন্ন হয় নি,

প্রত্যেক জ্বালানী কাঠের ঘ্রাণ তার ধুঁয়া থেকে বোঝা যায়।”



“চিকিৎসক রোগিণীর কান্নাকাটি দেখে অনুমান করলেন যে

সে অন্তর-রোগে আক্রান্ত, তার দেহ সুস্থ ও নীরোগ।”



“হৃদয়ের কান্না ও হাহুতাশ আসেক হবার পরিচয়,

প্রেমরোগ এর ন্যায় কোন রোগ নাই।”



“প্রেমরোগ অন্যান্য রোগ থেকে ভিন্ন,

এসকে এলাহি আল্লাহ্‌’র রহস্যসমূহ অনুধাবনের যন্ত্র।”



“প্রেম তা যেমনই হোক

তা আমাদের আল্লাহ্‌ তা’আলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।”



“প্রেমের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা যতই করি না কেন,

নিজে যখন প্রেমের অবস্থা উপলব্ধি করি তখন লজ্জিত হই।”



“রসনার ব্যাখ্যা যদিও অধিকাংশ বস্তুর তথ্য খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে,

কিন্তু রসনাহীন প্রেম নিজেই ফুটে উঠে।”



“লেখনী লেখার মধ্যে দ্রুত চলছিল,

যখন প্রেমের বর্ণনা আসল, লেখনী বিদীর্ণ হয়ে গেল।”



“বাক্য যখন প্রেমের কাহিনী বর্ণনার কাছে উপস্থিত হল,

তখন কলম ভেঙ্গে গেল ও কাগজ ফাটিয়া গেল।”



“প্রেমের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জ্ঞান ও বিবেক যেন গাধার মত কাদায় বসে পরল,

প্রেমের ব্যাখ্যা একমাত্র প্রেমই করতে পারে।”



“সূর্য নিজেই তার অস্তিত্বের প্রমাণ,

তুমি যদি সূর্যের প্রমাণ চাও তবে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”



“আসমানের সূর্য যেমন ছায়া দান করে,

তেমনি প্রকৃত সূর্য (আল্লাহ্‌ তা’আলা) আরেফের অন্তরে নূর দান করতে থাকেন।”



“আসমানের সূর্যের ছায়া তো কেচ্ছা কাহিনীর মত নিদ্রা আনে,

কিন্তু প্রকৃত সূর্য (আল্লাহ্‌ তা’আলা) আরেফের অন্তরে উদিত হবার পর সমস্ত অন্ধকার বিলীন হয়ে যায়।”



“আসমানি সূর্যের মত কোন মুসাফির দুনিয়াতে নাই,

কিন্তু আল্লাহ্‌ পাক সর্বস্থায়ী, তিনি কখনও অস্তমিত হন না।”



“আসমানে সূর্য যদিও একটি দেখা যায়,

কিন্তু তার মত বহু সূর্য কল্পনা করা যায়।”



“কিন্তু সমস্ত আসমান যে সূর্যের (আল্লাহ্‌ তা’আলা) অনুগত,

কল্পনায় ও বাস্তবে তার কোন তার কোন নজীর নাই।”



“আল্লাহ্‌ তা’আলার সত্তাকেই তো আমরা কল্পনা করতে পারি না,

আবার আল্লাহ্‌ তা’আলার নজীর কোথা থেকে আমাদের কল্পনায় আসবে!”



“অবশ্য সামস তাবরিজি রহমতুল্লাহ আলাইহি যিনি কামেল নূর,

তিনি একটি সূর্য এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার নূর।”



*** সামস তাবরিজি রহমতুল্লাহ আলাইহি মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহ আলাইহি’র পীর সাহেব ছিলেন। ***



“ঘটনাক্রমে আলোচনা যখন সামসুদ্দিন তাবরিজি রহমতুল্লাহ আলাইহি পর্যন্ত আসল,

তখন চতুর্থ আসমানের সূর্য লজ্জায় মুখ লুকাল।”



“তাঁর নাম যখন আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হয়েই পড়ল,

তখন তাঁর এহসানের যৎকিঞ্চিত বর্ণনা করা উচিত।”



“এক্ষণে আমার রূহ আমার জামার কোণ মজবুত করে ধরেছে,

কেননা সে ইউসুফের (আলাইহিস সাল্লাম) জামার গন্ধ পেয়েছে।”



“আমার রূহ আমাকে বলছে, বহুদিনের সাহচর্যের হক আদায়ের জন্য

ঐ মোবারক হাল (অবস্থা) সমূহ কিছু বর্ণনা কর।”



“তাহলে জমিন ও আসমান জ্যোতির্ময় হবে,

আকল, রূহ, জ্ঞান-চক্ষু শতগুণ প্রদীপ্ত হবে।”



“আমি রূহকে বললামঃ হে রূহ! যে রোগী চিকিৎসক থেকে দূরে অবস্থিত,

তার মত তুমিও তো বন্ধু থেকে দূরে আছ।”



“তাই আমাকে বন্ধুর আলোচনা করতে বাধ্য করোনা কেননা আমি স্বীয় সত্তাকে মিটিয়ে দিয়েছি,

জ্ঞান- বিবেক নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে, কাজেই আমি প্রশংসা করতে সক্ষম হব না।”



“চেতনা হীন ব্যক্তি যা কিছু বলে, মনের উপর জোর দিয়ে বলুক,

বা অবাস্তবই বলুক, কিছুই ঠিক হবে না।”



“চেতনা হীন ব্যক্তি যা কিছু বলে, সময়োপযোগী না হবার জন্য

তা বানানো কথার মত অসমীচীন মনে হবে।”



“যেই বন্ধুর কোন শরীক নেই তাঁর বর্ণনা কিভাবে করব!

আমার একটি শিরারও তো চেতনা নেই।”



“এই বিচ্ছেদ ও কলিজার রক্তের বর্ণনা এখন পরিত্যাগ কর,

এটা অন্য সময় বলা যাবে।”



“রূহ বললঃ আমাকে খাইতে দাও, আমি ক্ষুধার্ত,

তাড়াতাড়ি কর, কেননা সময় তীক্ষ্ণ তলোয়ার।”



“হে বন্ধু! সূফীগন তো এবনুল ওয়াক্ত (যখনকার কাজ তখন করা),

‘কাল করিব’ বলা তরীকতের পন্থা নয়।”



“সূফী লোকদেরকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ এবনুল হাল বলা হয়,

যদিও সূফী ও ওয়াক্ত উভয়ের মাস ও বৎসরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”



“রূহ বলছেঃ মনে হয় তুমি সূফী মানুষ না!

তুমি কি জান না বাকীতে নগদের ক্ষতি!”



“আমি রূহকে বললামঃ বন্ধুর গোপন কথা গোপন রাখাই ভাল,

যদি একান্ত শুনতে চাও তবে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শুনে নাও।”



“বন্ধুদের গোপন কথা

অন্য লোকের কাহিনীর মাধ্যমে শুনিয়ে দেয়াই ভাল।”



“রূহ বললঃ হে অনর্থক বাক্যালাপকারী! আমাকে কষ্ট দিও না,

পরিস্কারভাবে কোন কিছু গোপন না করে হুবুহু বল।”



“নবীগনের রহস্যাবলী ও ইশারা- ইঙ্গিত বর্ণনা কর,

দ্বীনের কথা স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করাই ভাল, গোপন রাখা উচিত না।”



“পর্দা উন্মোচন কর, পরিস্কার বল,

কেননা আমি জামা পরিধান করে প্রিয়ার সাথে শয়ন করব না।”



“আমি বললামঃ বিশ্বে যদি তা প্রকাশিত হয়ে পরে,

তাহলে তুমিও থাকবে না, তোমার কোলও থাকবে না, তোমার কটিদেশও থাকবে না।”



“তুমি তোমার কাম্য বস্তু চেয়ে নাও কিন্তু নিজের পরিমান মত চাও,

ঘাসের একটি পাতা কি পাহাড়ের ভার সহ্য করতে পারবে!”



“হে রূহ! তুমি এখন মুখ বন্ধ রাখ ও চোখ সিলাই করে ফেল,

যেন বিশ্বজগত ধংসপ্রাপ্ত না হয়।”



“দেখ এই সূর্য যা দ্বারা বিশ্ব ভুবন আলোকিত,

যদি সামনের দিকে একটু অগ্রসর হয় তাহলে সব জ্বলে পুড়ে ছারখার হবে।”



“ফেৎনা- ফ্যাসাদ ও রক্তারক্তির পিছনে পড়িও না,

সামস তাবরিজি রহমতুল্লাহ আলাইহির সমীপে এর অধিক আর কিছু বলিও না।”



“এই আলোচনার তো কোন শেষ নেই,

চল, ঐ কাহিনীর অবশিষ্টাংশটুকু আবার শুনাও।”



*** বাঁদির রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের নির্জনতা কামনা ***



“যখন চিকিৎসক রোগের রহস্য বুঝতে পারলেন

এবং নিজের অন্তর থেকে বাদশাহ’র গোপন তথ্য বুঝতে পারলেন”



“তখন বললেনঃ ‘হে বাদশাহ! ঘরটি খালি করে দিন,

আপন-পর সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিন।”



“দরজায় কেউ যেন কান পেতে না থাকে,

আমি বাঁদিকে কিছু প্রশ্ন করব।”



“কামরা খালি করে বাদশাহ নিজেও বের হয়ে গেলেন,

যেন বাঁদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কোন অসুবিধা না হয়।”



“কামরা খালি করা হল,

চিকিৎসক ও রোগিণী ছারা সেখানে কেউ থাকল না।”



“চিকিৎসক অতি কোমল স্বরে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার দেশ কোথায়?

কেননা প্রত্যেক দেশের অধিবাসীর চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।”



“জিজ্ঞাসা করলেনঃ দেশে আপনার আত্মীয়- স্বজন কে কে আছে?

কোন কোন ব্যক্তির সাথে আপনার আত্মীয়তা ও সম্পর্ক আছে?”



“শিরার উপর হাত রেখে আসমানি বালা মুসিবত সম্পর্কে

এক এক করে জিজ্ঞাসা করতে থাকলেন।”



“যখন কাহারও পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হয়,

তখন সে নিজের পা হাঁটুর উপর রাখে।”



“সূচের অগ্রভাগ দ্বারা কাঁটার মাথা খোঁজে,

খুঁজে না পেলে ঠোঁট দ্বারা তা ভিজায়।”



“পায়ের কাঁটা খুঁজে পাওয়াই যখন এত কষ্টসাধ্য,

তখন মনের কাঁটা খুঁজে বের করা কি ধরনের হবে তা ভেবে দেখ।”



“মনের কাঁটা যদি সকলেই দেখতে পেত,

তাহলে দুঃখ- কষ্ট মানুষের কিছুই করতে পারত না।”



“কোন দুষ্ট লোক যদি গাধার লেজের নিচে কাঁটা বেঁধে দেয়,

গাধা তো কাঁটা খুলতে জানে না, সে লাফ দেয়।”



“গাধা লাফালাফি করে আর ঐ কাঁটা আরও শক্ত ভাবে বিঁধে যায়,

ঐ কাঁটা খোলার জন্য কোন বুদ্ধিমান লোকের প্রয়োজন।”



“ব্যথা ও কষ্টের কারণে গাধা কাঁটা দূর করার জন্য লাফালাফি করতে থাকে,

ফলে শত শত স্থানে জখম করে ফেলে।”



“লাথি মারলে কি কাঁটা দূর হবে?

বিজ্ঞ লোকের দরকার যেন কাঁটা বিদ্ধ হবার স্থান সন্ধান করে কাঁটা খোলে।”



“ঐ গায়েবী চিকিৎসক এ বিষয়ে বিচক্ষণ উস্তাদ ছিলেন,

রোগিণীকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করছিলেন।”



“চিকিৎসক বাঁদিকে সরল মনে

বিগত জীবনের অবস্থা বলী জিজ্ঞাসা করছিলেন।”



“বাঁদিও চিকিৎসক কে নিজ দেশের, মনিবদের ও শহরবাসীদের অবস্থা

সাফ সাফ প্রকাশ করছিলেন।”



“চিকিৎসক তার কাহিনী বর্ণনার প্রতি কান রেখেছিলেন,

আর শিরা স্পন্দনের প্রতি খেয়াল রেখেছিলেন।”



“যেন বুঝতে পারেন যে কার নামের সাথে সাথে তার শিরার গতি চঞ্চল হয়ে উঠে,

কেননা দুনিয়ার মধ্যে একমাত্র সেই ব্যক্তিই তার প্রাণ- প্রিয়তম কাম্য ব্যক্তি হবে।”



“বাঁদি প্রথমে নিজ শহরের বন্ধু বান্ধবদের নাম বলল,

তারপর অন্যান্য শহরের নাম বলল।”



“চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি যখন নিজ শহর থেকে বের হলে

তখন কোন শহরে বেশীদিন অবস্থান করেছ?”



“বাঁদি কোন একটা শহরের নাম বলে তার হাল- অবস্থা শোনালো,

কিন্তু তার চেহারার বর্ণ ও শিরার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হল না।”



“নিজ মনিবদের ও শহরের বর্ণনা একের পর এক করতে থাকল,

নিজ বাসস্থান, রুটি, নমক ইত্যাদি খাদ্যবস্তুর বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করল।”



“প্রত্যেকটি শহর ও প্রত্যেকটি বাড়ীর কাহিনী বর্ণনা করল,

কিন্তু তার শিরার কোন প্রকার আলোড়নের সৃষ্টি হল না ও চেহারাও বিবর্ণ হল না।”



“এতক্ষণ পর্যন্ত বাঁদির শিরা কোন পরিবর্তন ছারা স্বাভাবিক অবস্থায় চলছিল,

অবশেষে চিকিৎসক বাঁদিকে মিষ্ট নগর সমরকন্দের অবস্থা জিজ্ঞাসা করলেন।”



“বাঁদির শিরার স্পন্দন বেড়ে গেল, টকটকে লাল চেহারা হলদে হয়ে গেল,

এই কারণে যে, বাঁদি সমরকন্দ নিবাসী স্বর্ণকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।”



“সমরকন্দ শহরের আলোচনা আসামাত্র ঐ চাঁদ মুখী বাঁদি শীতল নিশ্বাস ফেলল,

তার চক্ষুদ্বয় থেকে নদীর স্রোতের মত অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল।”



“বাঁদি বললঃ এক সওদাগর আমাকে ঐ স্থানে এনেছিল,

সেই শহরের এক স্বর্ণকার আমাকে খরিদ করেছিল।”



“সে তিন মাস আমাকে তার কাছে রেখে বিক্রি করে ফেলল,

একথা বলার সাথে সে মনকষ্টের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে থাকল।”



“যখন বিজ্ঞ চিকিৎসক রোগিণী থেকে এই তথ্য অবগত হলেন,

তখন তিনি রোগিণীর রোগের মূল কারণ উপলব্ধি করতে পারলেন।”



“চিকিৎসক বাঁদিকে স্বর্ণকারের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেন,

বাঁদি চিকিৎসককে তা বলে দিলেন।”



“তখন সেই বিজ্ঞ চিকিৎসক বাঁদিকে বললেনঃ তুমি আর চিন্তা করোনা,

মনে কর তুমি রোগ যাতনা থেকে মুক্তি পেয়েছ।”



“চিকিৎসক বললেনঃ তোমার রোগ যখন আমি নির্ণয় করতে পেরেছি,

তখন জাদুর মত তোমার চিকিৎসা করব।”



“হে বাঁদি! তুমি প্রফুল্ল, নিশ্চিত ও মুক্ত মনে থাক,

কেননা বৃষ্টি বাগানের সাথে যেমন ব্যবহার করে আমিও তোমার সাথে তেমন ব্যবহার করব।”



“তোমার চিন্তা আমিই করছি, তুমি চিন্তা করোনা,

কেননা আমি তোমার প্রতি শত পিতার চেয়েও বেশি স্নেহশীল।”



“সাবধান! এই গোপন রহস্য কারও কাছে প্রকাশ কর না,

এমন কি বাদশাহও যদি তোমাকে খুব বেশি পীড়াপীড়ি করেন তবুও বলনা।”



“যথাসম্ভব এই গোপন কথা কাওকে বলনা,

খবরদার! কাহারও সম্মুখে এই দ্বার কখনও খুলো না।”



“যদি তোমার গোপন রহস্য তোমার মনের মধ্যে রক্ষিত থাকে,

তবে তোমার সেই উদ্দেশ্য অতি তাড়াতাড়ি সফল হবে।”



“পয়গাম্বর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের গোপন কথা লুকায়িত রাখে,

তার উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি সফল হয়।”



“দেখ, বীজ যখন জমিনের অভ্যন্তরে গুপ্ত হয়ে যায়,

তার এই গুপ্ত হওয়া বাগান শস্য- শ্যামল হবার কারণ হয়।”



“সোনা- রুপা যদি মাটির নিচে গুপ্ত না থাকত,

তবে খনির মধ্যে কিভাবে তা প্রতিপালন হত!”



“সেই চিকিৎসকের ওয়াদা ও স্নেহমাখা মধুর বানী

ঐ রোগিণীকে ব্যর্থতার আশংকা থেকে নির্ভয় করে দিল।”



“সত্যিকারের প্রতিশ্রুতিকে অন্তর গ্রহণ করে,

আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে।”



“বুজুর্গ ও মর্যাদাশালী লোকদের ওয়াদা বহমান ধনভাণ্ডার,

আর অযোগ্য লোকের ওয়াদা হৃদয়- বেদনাদায়ক।”



“সকল ওয়াদা পূর্ণ করা আবশ্যক,

নতুবা তুমি অলস ও অপক্ক ব্যক্তি বলে প্রমাণিত হবে।”



“মনেপ্রাণে ওয়াদা পালন করা উচিত,

তাহলে তুমি কেয়ামতের দিন এই ওয়াদা পুরা করার সুফল দেখতে পাবে।”



*** বাঁদির রোগ নির্ণয়ান্তে বাদশাহ’র নিকট প্রকাশন ***



“ঐ মেহেরবান চিকিৎসক যখন এই গোপন রহস্যের কথা অবগত হলেন,

তখন বাঁদির রোগের কারণ সম্যক বুঝতে পারলেন।”



“অতঃপর চিকিৎসক তথা থেকে উঠলেন এবং

বাদশাহ’র নিকট গিয়ে বাদশাহ’কে তার কিছু আভাস দিলেন।”



“বাদশাহ বললেনঃ এখন বলুন কি চিকিৎসা করা যায়,

কারণ এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় বিলম্ব করা উচিত নয়।”



“চিকিৎসক বললেনঃ এর ব্যবস্থা এই যে, এই রোগের সুচিকিৎসার জন্য,

ঐ স্বর্ণকারকে এখানে হাযির করতে হবে।”



“স্বর্ণকারকে সেই দূর দেশ থেকে ডেকে আনুন,

টাকা- পয়সা, পোশাক- পরিচ্ছদ দ্বারা তাকে প্রলুব্ধ করুন।”



“এক দূত প্রেরণ করুন, সে যেন গিয়ে তাকে সংবাদ প্রদান করে এবং

তাকে আপনার পুরস্কার ও দানের প্রার্থী হিসাবে প্রলুব্ধ করে তোলে।”



“স্বর্ণকারের কল্যাণে আপনার প্রিয়তমা বাঁদির মন তুষ্ট হবে,

যাবতীয় মুশকিল তার অছিলায় সহজ হবে।”



“দরিদ্র বেচারা যখন যখন এই সোনা রুপার চাকচিক্য দেখবে,

অর্থের লোভে বাড়ী- ঘর ছাড়তে রাযী হবে।”



“টাকা- পয়সা জ্ঞান- বুদ্ধিকেও আসক্ত করে তোলে,

বিশেষ করে দরিদ্র লোকদেরকে একেবারেই অপদস্থ করে ফেলে।”



“ধন- সম্পদে যদিও বুদ্ধি বাড়ে কিন্তু সকলের নয়,

খুব বুদ্ধিমান হওয়া চাই।”



“বাদশাহ যখন চিকিৎসকের এই কথা শুনলেন,

তখন সর্বান্তকরণে এই নছীহত গ্রহণ করলেন।”



“বাদশাহ বললেনঃ আপনার নির্দেশ অনুযায়ী আমি কাজ করব,

আপনি যা কিছু করতে বলবেন আমি তা করব।”



*** স্বর্ণকারের জন্য সমরকন্দে লোক প্রেরণ ***

“চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী যারা জ্ঞানবান, বিচক্ষণ ও নির্ভরযোগ্য,

এমন দুইজন দূত সমরকন্দে পাঠালেন।”



“প্রেরিত দূত সমরকন্দে গিয়ে উপনীত হলেন এবং

বাদশাহ’র পক্ষ থেকে সুসংবাদ দাতা হিসাবে স্বর্ণকারের নিকট হাযির হলেন।”



“ওহে নিপুণ কারিগর, বিজ্ঞ উস্তাদ, কর্মে সুদক্ষ!

তোমার প্রশংসা সমস্ত দেশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।”



“এখন বাদশাহ তোমাকে শাহী পরিবারের অলংকার নির্মাণের জন্য পছন্দ করেছেন,

কেননা বর্তমান যুগে স্বর্ণ শিল্পে তুমি সমধিক শ্রেষ্ঠ।”



“এখন বাদশাহ প্রদত্ত এই পোশাক ও সোনা- রুপা গ্রহণ কর,

যখন বাদশাহ’র দরবারে যাবে তখন তার বিশিষ্ট মোসাহেব ও সহচর হবে।”



“স্বর্ণকার প্রচুর ধন- সম্পদ ও পোশাক- পরিচ্ছদ দেখে ভুলে গেল এবং

স্বদেশ ও সন্তান- সন্তুতির সম্পর্ক ছিন্ন করল।”



“স্বর্ণকার হাসি মুখে প্রফুল্ল মনে প্রেরিত দূতের সাথে যাত্রা করল,

বাদশাহ যে তার প্রাণনাশের সংকল্প করেছেন সেটার কিছুই বুঝতে পারল না।”



“উত্তম শ্রেণীর দ্রুতগামী ঘোড়ায় চরে প্রফুল্ল চিত্তে দৌড়ে চলল,

সে তার প্রাণের বিনিময়কে রাজ উপঢৌকন মনে করল।”



“ওহে শ্রোতা! শোন, স্বর্ণকার স্বয়ং পরমানন্দে

অপমৃত্যুর দিকে স্বেচ্ছায় অগ্রসর হচ্ছিল।”



“তার কল্পনার মধ্যে ছিল রাজ্য, সন্মান ও নেতৃত্ব,

আজরাইল আলাইহিস সাল্লাম বিদ্রুপের সাথে বললেনঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ যাও, তুমি তোমার কল্পিত সব কিছুই লাভ করতে পারবে।”



“যখন মুসাফির স্বর্ণকার পথ অতিক্রম করে রাজধানীতে উপস্থিত হল,

চিকিৎসক ঐ স্বর্ণকারকে বাদশাহ’র সম্মুখে হাযির করলেন।”



“চিকিৎসক ঐ স্বর্ণকারকে বাদশাহ’র কাছে সানন্দে ও সসন্মানে

শাম (প্রিয়তমা বাঁদি) এর সম্মুখে তাকে জ্বলিবার উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেন।”



“বাদশাহ স্বর্ণকারকে দেখে খুব তাযীম করলেন,

স্বর্ণের ভাণ্ডার তার হাতে সোপর্দ করে দিলেন।”



“অতঃপর তাকে স্বর্ণ দ্বারা হাতের কাঁকন, কণ্ঠ- হার,

পায়ের মল ও কোমরবন্ধ প্রস্তুত করতে আদেশ করলেন।”



“আরও কতিপয় অগণিত পাত্র নির্মাণের জন্যও আদেশ করলেন,

যা শাহী মজলিসের শোভা বর্ধনের উপযোগী।”



“স্বর্ণ নিয়ে স্বর্ণকার কর্মরত হল,

কিন্তু সে এই দুরভিসন্ধিমূলক কাজের অবস্থা সম্বন্ধে কিছুই অবগত ছিল না।”



“অতঃপর চিকিৎসক বাদশাহকে বললেনঃ হে আলিজাহ বাদশাহ!

ঐ বাঁদিকে এই স্বর্ণকারের হাতে সঁপিয়া দিন।”



“তাতে বাঁদি স্বর্ণকারের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দিত হবে,

তার মিলনবারি ঐ অগ্নিকে নির্বাপিত করবে।”



“বাদশাহ ঐ চাঁদমুখী বাঁদি সেই স্বর্ণকারকে প্রদান করলেন,

মিলনকামী প্রেমিকযুগলকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন।”



“ছয় মাস পর্যন্ত তারা মিলন- সুখ উপভোগ করতে থাকল,

এমনকি ঐ মেয়েটি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে গেল।”



“অতঃপর সেই চিকিৎসক স্বর্ণকারের জন্য এক প্রকার বিষাক্ত শরবত প্রস্তুত করলেন,

সে উক্ত শরবত পান করে দিন দিন তিলে তিলে সেই মেয়ের সম্মুখে ক্ষীণ ও শীর্ণ হয়ে যেতে লাগল।”



“রোগের কারণে যখন স্বর্ণকারের রুপ-লাবণ্য অবশিষ্ট থাকল না,

তখন ঐ মেয়ের প্রাণ স্বর্ণকারের প্রেম-পিঞ্জরে আর আবদ্ধ থাকল না।”



“যেহেতু স্বর্ণকার কুৎসিত, অপছন্দনীয় ও ফেকাসে চেহারাবিশিষ্ট হয়ে গেল,

তাই মেয়েটির অন্তরে স্বর্ণকারের প্রেমের তাপ ক্রমে ক্রমে শীতল হয়ে গেল।”



“যে সমস্ত প্রেম শুধু রং ও রূপের জন্য হয়ে থাকে তা সত্যিকারের প্রেম নয়,

বরং পরিণামে তা লজ্জাজনক ও কলঙ্কের ডালি হয়ে থাকে।”



“আহা! ঐ লজ্জাজনক রূপক প্রেমও যদি স্থায়ী হত!

তাহলে ঐ স্বর্ণকারের উপর বে-ইনসাফী হত না।”



“স্বর্ণকারের চক্ষু থেকে রক্তাস্রু প্রবাহিত হতে থাকল,

তার সুদর্শন চেহারা তার প্রাণের শত্রু হয়ে দাঁড়ালো।”



“ময়ূরের শত্রু স্বয়ং তার পালক,

আর বহু সময় দেখা গেছে যে বহু বাদশাহকে তার প্রতাপ-প্রতিপত্তিই নিহত করেছে।”



“রোগে ভুগে স্বর্ণকারের অবস্থা অতিশয় শোচনীয় হয়ে গেল,

তার দেহ ক্ষীণ ও কৃশ হয়ে কলমের নিবের মত সরু হয়ে পড়ল।”



“স্বর্ণকার বলতে লাগলঃ আমি ঐ হরিণ,

এই শিকারি আমার নাভি থেকে পরিস্কার রক্ত প্রবাহিত করেছে।”



“আমি মাঠের ঐ শৃগালের মত যে,

আমার চামড়া নেবার জন্য শিকারির দল গুহা থেকে উঠে আমার মাথা কেটে ফেলল।”



“ওহে শ্রোতা শোন! আমি ঐ হাতী যে,

মাহুতগণ আমার হাড় সংগ্রহ করার জন্য আঘাত করে আমার রক্ত প্রবাহিত করল।”



“যে ব্যক্তি আমাকে আমার চেয়ে কম মর্যাদাশীল লোকের জন্য খুন করেছে,

সে কি জানে না যে আমার রক্ত শায়িত থাকবে না।”



“যদি আজ আমার উপর বিপদ এসে থাকে, তবে আগামীকাল তার উপর আসবে,

আমার ন্যায় ব্যক্তির খুন কি করে এমনি বিফলে যাবে!”



“সূর্যোদয়ের সময় যদিও প্রাচীরের ছায়া দূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়,

কিন্তু সূর্য উপরে উঠার সাথে সাথে ঐ ছায়া সঙ্কুচিত হয়ে প্রাচীরের কাছে এসে পৌঁছে।”



“এই দুনিয়া যেন পাহাড়, আমাদের প্রত্যেক কাজ ধ্বনি স্বরূপ,

আমাদের ধ্বনি পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে আমাদের দিকে ফিরে আসে।”



“এতটুকু বলে স্বর্ণকার প্রাণ ত্যাগ করল এবং মাটির দেহ মাটিতে চলে গেল,

সঙ্গে সঙ্গে সেই বাঁদিও ব্যথা- বেদনা থেকে মুক্তি পেল।”



“একমাত্র মাহবুবের (চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আল্লাহ্‌ তা’আলার) প্রেমই প্রতি মুহূর্তে অন্তরে ও চক্ষে সদ্য প্রস্ফুটিত পুস্পের চেয়েও অধিক তাজা থাকে।”



“হে প্রেম প্রার্থী! সেই চিরঞ্জীবের প্রেম অবলম্বন কর,

যিনি চিরস্থায়ী ও পরমানন্দ প্রদানকারী মহব্বতের শরাব পান করাবেন।”



“সেই পবিত্র সত্তার প্রেম অবলম্বন কর যাঁহার প্রেমের অসিলায়

সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম সন্মানিত ও মনোনীত হয়েছেন।”



“তুমি একথা বল না যে সেই প্রকৃত বাদশাহ পর্যন্ত পৌঁছার উপায় আমাদের নেই,

তিনি অতিশয় দয়ালু ও মেহেরবান! আর মেহেরবান সত্তার নিকট কোন কাজই কঠিন নয়।”



*** আল্লাহ্‌ তা’আলার ইঙ্গিতে স্বর্ণকারকে বিষ প্রয়োগ ***



“চিকিৎসকের হাতে স্বর্ণকারের মৃত্যু

কোন লোভ বা ভয়ের কারণে ছিল না।”



“সেই গায়েবী চিকিৎসক আল্লাহ্‌’র তরফ থেকে কোন নির্দেশ

ও ইলহাম না পাওয়া পর্যন্ত স্বর্ণকারকে বাদশাহ’র স্বার্থের খাতিরে হত্যা করেন নি।”



“হযরত খেজের আলাইহিস সাল্লাম যেই বালকটিকে কতল করেছিলেন,

সাধারণ মানুষ উহার রহস্য বুঝতে পারে না।”



“যে ব্যক্তি খোদার তরফ থেকে ওহী ও খেতাব প্রাপ্ত হন,

তিনি যা কিছু বলেন তা নির্ভুল ও সঠিক হয়ে থাকে।”



“যিনি জীবন দান করেছেন তিনি যদি মারেন তবে তা সঠিক ও জায়েজ হবে,

যিনি আল্লাহ্‌ তা’আলার নায়েব তাঁর কাজ আল্লাহ্‌’রই কাজ।”



“ইসমাইল আলাইহিস সাল্লাম এর মত আল্লাহ্‌’র প্রতিনিধির (হক্কানি পীর) সামনে মাথা রাখ এবং হাসি- খুশীর সাথে তাঁর তলোয়ারের নীচে জান সোপর্দ কর।”



“নফসের চিকিৎসার জন্য সাধনা করলে চিরদিন তোমার প্রান প্রফুল্ল থাকবে,

যেরূপ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ করেছেন।”



“প্রেমিক ঐ সময় সন্তুষ্ট হন,

যখন তার প্রেমাস্পদ নিজ হাতে তাকে কতল করেন।”



“বাদশাহ নফসানি খাহেশের বশবর্তী হয়ে স্বর্ণকারকে খুন করেননি,

তুমি খারাব ধারণা, বিবাদ-বিসম্বাদ পরিত্যাগ কর।”



“তুমি ধারণা করছ যে, বাদশাহ এই কাজের দ্বারা নিজের আমলে পাপের কলঙ্ক লাগিয়েছেন!,

বল তো, নির্মল অন্তরের পরিচ্ছন্নতা নিজের মধ্যে পাপের কলঙ্ক কেমন করে অবশিষ্ট রাখতে পারে!”



“সাধনা ও কষ্ট- ক্লেশ এই জন্যই তো করা হয় যেন

পরিশ্রম নফস থেকে কু-স্বভাবের ময়লা দূর করে ফেলে।”



“হে কু- ধারণা পোষণকারী! কু- ধারণা ত্যাগ কর,

এই আয়াত শরিফটি পাঠ করঃ ‘কোন কোন ধারণা পাপজনক’।”



“ভাল মন্দ স্বর্ণের পরীক্ষাও তো এই জন্য হয় যেন

স্বর্ণ আগুনে গলে নিজের ভিতরকার ময়লা উপরে ভেসে তুলবে।”





(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬

জেনো বলেছেন: খুব ভাল লাগল।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১১

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: গত বছর আমি তুরস্ক গিয়ে তাঁর কবর জেয়ারাত করেছিলাম।

লিঙ্ক ঃ View this link


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.