![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সধারন তবে অসাধারণ কিছু করার চেষ্টায় সদা নিয়োজিত। মানুষের সাহায্য করতে পছন্দ করি, হুটহাট করে সাহায্য করেও ফেলি। আনন্দ পাই, অন্যের হাসি দেখে। অন্যকে হাসানোর মধ্যেই খুঁজে নেই আত্মতৃপ্তি।
ছলিমুল্লাহ সাহেব আজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । খুব সকালে উঠে নামাজ পড়ে সবকিছু গোছানার জন্য খুভ তাড়াঁহুড়া করছে। বারবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। গত ১৩টি বছর যাদের সাথে হাসি, কান্না, অভিমান আর আক্ষেপের মুহুর্তগুলো পাড় করেছে, আজ তাদের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে। তাঁর প্রিয় বন্ধুদের তালিকা অনেক ছোট। এখানে আসার আগে তার দুনিয়া অনেক বড় হলেও, এখানে তার বন্ধু বলতে ইসমাইল সাহেব আর শুভ নামের একটা পিয়ন। পৃথিবীর সবাই ছলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে প্রতারনা করলেও একটিবারের জন্যও শুভ তার মনে কষ্ট দেয় নি। যখন, যেভাবে যা চেয়েছে , সে অতিধ্রুততার সাথেই পেয়েছে। খাবার রেডি করে দেওয়া থেকে গোসলে সাহায্য করা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই শুভ তার পাশে আছে। আজ হঠাৎ শুভকে জড়িয়ে ধরে সে হাউ-মাউ করে কাঁদছে। শুভ কিছু বুঝে না উঠতে পারার আগেই কান্নায় সূর মিলিয়ে যাচ্ছে। ১৩ বছর আগে কোন এক ফাল্গুন মাসে তার আদরের ছেলেরা তাকে রেখে গিয়েছিলো এখানে। সেদিন ছলিমুল্লাহ একরকম বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো । ছেলেদের কিভাবে বিদায় দিবে তা সে ভুলেই গিয়েছিলো। বারবার শুধু তার পাওয়ারফুল চশমাটা খুলে মুছে পরষ্কার করছিলো। যারা চশমা ব্যবহার করে, তাদের মন খারাপ সবার আগে চশমাই বুঝতে পারে। আজ ছলিমুল্লাহ সাহেব ১৩ বছর পূর্বে ফিরে যাচ্ছেন বারবার। যখন তাকে দামি গাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিয়ে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পর সে শুধু একটা বাক্যই উচ্চারন করেছিলো। " তোদের জীবনে এই দিনটা আসার আগেই যেন আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই।" গত ১৩ টি বছর কেটেছে অতীত আর ভবিষৎ কল্পনা করেই। সে প্রকৃতি নিয়ে ভাবে, স্বপ্ন দেখে জগৎ জুড়িয়া শুধু সুখী পরিবারের ছড়াছড়ি। পাষণ্ড পৃথিবীর সকল কুটিলতাকে তিনি শুধু অপছন্দই নয় চরম ঘ্রিনা করে। যেই সমাজ আধুনিকতার নামে পরিবার পরিজনদের দূরে ঠেলে দেয়, তার প্রতি ছলিমুল্লাহ সাহেব ধিক্কার জানায় ক্ষণে -লগ্নে।
ছলিমুল্লাহ সাহেব পেশায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। অবসরে যাবার সময় অবশ্য পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক-ই ছিলেন। অজস্র ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিলেও, দিতে পারেনি তার নিজের সন্তানদের। যদি পারতেন তবে তার আজ এখানে-এভাবে থাকতে হয়? যাইহোক, আজ তিনি চলে যাচ্ছেন আরো অনেক দূরে যেখান থেকে তাকে আর সন্তানদের দেখার আগ্রহ হবে না। আজ তিনি চলে যাচ্ছেন আমেরিকায়। তার একজন ছাত্র তাকে সম্মান প্রদান পূর্বক নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু নিয়ে যাচ্ছে বললে নিছেক ভুল-ই হবে, একটা আন্তর্জাতিক মানসম্মত কলেজের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি হিসেবে, পিতৃ-স্থানে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঘড়িতে ঠিক ১০ বাঁজতেই গাড়ির হর্ণ বাজলো। ছলিমুল্লাহ সাহেব নতুন পাঞ্জাবী পড়ে বন্ধুদের বিদায় জানালো। শুভ আসতেই বুকে টেনে নিলো। তিনি জানতে পারলেন, আজ দুপুরেই তারা উড়ে যাচ্ছে হাজার মাইল দূরে। যাবার বেলা পেছনে ফিরে একটা ছোট্ট বাক্য উচ্চারণ করোলো, বিদায় বৃদ্ধাশ্রম।
©somewhere in net ltd.