নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
অক্টোবর-১৪, ১৯৫৪সাল৷
চুনিলাল নামের এক চা বিক্রেতা তাঁর দোকানের সামনে ট্রামের ধাক্কায় একজন পথচারীকে আহত দেখতে পান৷ প্রথমবার নিজেকে সামলাতে পারলেও দ্বিতীয় ধাক্কাটায় তিনি ট্রাম লাইনে পড়ে যান! তাঁর হাতে ধরা ছিল সবুজ ডাব, জীবনের প্রতীক৷ যা তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধুলো আর কিছুটা রক্ত মাখা৷ ঘটনাটা এতটাই অভাবনীয় যে চুনিলাল প্রথমে হকচকিয়ে যান৷ নিজেকে সামলে তিনি ছুটে আসেন৷ সাহায্য করার জন্য দৌড়ে আসেন আশেপাশের পথচারী৷ তাঁদের সহযোগিতায় আহত মানুষটিকে ধরাধরি করে "শম্ভুনাথ পন্ডিত" হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে দেখেন তার শরীরে নিউমোনিয়া। এক সপ্তাহ পরেই তিনি মারা যান৷
খুব দ্রুত সবাই জানতে পারেন তিনি 'জীবনানন্দ দাস'! বাংলাদেশের প্রকৃতি ও নির্জনতার প্রতি একনিষ্ঠ একজন কবি ৷ চলে যান মানুষের নির্মম আচরণকে সঙ্গে নিয়ে৷তাঁর হাত ধরেই প্রকৃতি প্রেমিকের পরিচয় প্রকৃতির সাথে৷ কবিতা লিখে বুঝিয়েছেন শব্দ দিয়ে কী ভাবে ভালোবাসা যায় ধানসিড়ি-রূপসার ঘোলাজল-সোনালি ডানার চিল-নুইয়ে পড়া চালতার ডাল...আরো কত কিছুকে!
১৮৯৯ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম "মিলু"! বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, আর মা কুসুম কুমারী লিখতেন কবিতা, গল্প..৷ জীবনানন্দ ছিলেন তাঁদের জ্যেষ্ঠ সন্তান৷ ভাই অশোকানন্দ এবং বোন সুচরিতা ৷ বাড়িতে মায়ের কাছেই তাঁদের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত।
কবির স্কুল জীবন শুরু হয় বরিশাল শহরের ব্রজমোহন স্কুলে৷ তিনি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। দু’বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন প্রথম বিভাগে। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই কবিতা লেখা শুরু৷
বরিশাল শহরের প্রকৃতি ছিল তাঁর সমস্ত শিরায় জড়িয়ে৷ সেখানকার পথ চলতেন আর একের পর এক শব্দমালায় লিখতেন কবিতা৷ জীবনের আনন্দ খূঁজতে চেয়ে যিনি বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন বারবার!
ভোরেরকাক-শঙ্খচিল-শালিক-কিশোরীর হাঁস যে কোনো রূপ ধরে! অন্ধকারেও কাঁঠাল পাতার নিচে ভোরের দয়েল দেখতেন৷ হাজার বছর পথ চলার আনন্দে বাংলার রূপকে ছূঁয়ে দেখতেন। সেই রূপ, যা প্রথম দেখেছিলেন বরিশালের প্রকৃতিতে! লাজুক নীরবতার আড়ালে বেদনায় ধানসিড়ি নদীকে ছাড়তে চাননি কোনোদিনও৷ আবার নির্জনে মগ্ন থাকায় ভ্রুক্ষেপ ছিলনা যশ খ্যাতির প্রতি৷
তিনিই মনে হয় অসংখ্য কবির মাঝে একমাত্র, মৃত্যুর পরে যাঁর খ্যাতি এনে দিয়েছিল৷ আঠারো লাইনের একটি কবিতা "বনলতা সেন"—যা আজ পর্যন্ত পাঠকপ্রিয় এবং অন্যতম শ্রেষ্ট কবিতা হিসাবে পঠিত হবার জায়গা নিয়ে আছে!
চুনিলাল হাসপাতালে দিয়ে আসার পর সাথে ছিল কয়েকজন নবীন কবি৷ তারাই কাঁধে করে নিয়ে যায় শ্মশানে- শবানুগমনে ছিলনা হৈ হট্টগোল! বিদ্যুৎচুল্লি নয়, নিখাত চিতার আগুনে পঞ্চভূতে মিলিয়ে যায় দেহ, আবার আসার আশায়৷ বাংলার নদী মাঠ বা কিশোরীর লাল ঘুঙূর পায়ের হাঁস কেঁদেছিল কিনা-কে জানে?
তাঁরা কেঁদেছিলেন! সেই নবীন কবিদল, চিৎকার করে আবৃত্তিও করেছিলেন কবির কবিতা একটার পরে একটা! যেনো কে কতগুলো মুখস্থ করেছে,তারই প্রতিযোগিতা৷
সেই সব কবিতা, যেখানে ছড়িয়ে থাকতো বরিশালের প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসার কথা৷ বরিশালই তাঁকে এক জনপ্রিয় কবির মর্যাদা দিয়েছিল৷ মৃত্যুর পরেও তিনি আসতে চেয়েছিলেন সেখানেই।
কবির কবিতার এখন সর্বত্র যাতায়াত৷ সেই ২২শে অক্টোবর মৃত্যুর পরেই জোয়ারের জলের মতন—চরাচর ভেসে যাওয়া চাঁদের আলোর মতই জীবনানন্দ দাশের কবিতারা বাংলা ভাষা, বাঙালি জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়! যে কবিতা তাঁকে আজও ছেড়ে যায়নি৷ অতিক্রম করতে পারেননি পরবর্তী কবি প্রজন্ম৷ বরিশালের কুসুম কুমারী দাশ আর মিলুর বাড়িটি আজ আর নেই৷ ভাগকরা দেশের উৎপীড়ণে বদলে গেছে কত কিছু!
আছেও অনেক কিছু৷ সারা বাংলায় এপার থেকে ওপার ছড়িয়ে৷ ব্রজমোহন কলেজে পড়েছেন- পড়িয়েছেনও৷ কলেজ ক্যাম্পাসে আছে 'জীবনানন্দ ক্যাফে’-নামের ক্যান্টিন৷ আছে জীবনানন্দ দাশ পাঠাগার'৷
'ধানসিড়ি' এখন ঝালকাঠি জেলায়৷ বনলতার নাটোর৷
কোলকাতায় আছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল। কোলকাতা বাংলা আকাদেমির মধ্যে ‘জীবনানন্দ সভাঘর’৷ রাস্তায় আবক্ষ মূর্তি৷
স্ত্রী লাবণ্যের সাথে স্মৃতিময় ঢাকার ইডেন কলেজ -বিবাহ বাসর ব্রাক্ষ্ম মন্দির আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে৷
সব থেকে দাগ কেটে আছেন মানুষের মনে৷ একজন শিল্পীর শিল্পকর্মে(রিক্সার অলংকরণ)৷ পাঠক তাঁর কবিতা সব থেকে বেশি পাঠ করেন৷ একমাত্র তিনিই এমন কবি-যাঁর স্মৃতি সব থেকে বেশি সংরক্ষিত দুই বাংলাতেই৷
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া৷
মানুষ জীবনানন্দ৷
আনন্দবাজার পত্রিকা৷
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৩০
গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে— ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’লো তার সাধ;
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৩০
গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: আমার প্রিয় কবি...............
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমারও।
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কবি হিসাবে ভালই ছিল।কিন্তু মুসলমান না হওয়াতে বেহেস্তে যাওয়া হলো না।অপঘাতে যারা মারা যায় তারা বেহেস্ত বাসি কিন্তু মুসলমান হতে হবে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ফাউল টক!
৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৪
শাহ আজিজ বলেছেন: ভুমেন গুহ , দাস পরিবারের একান্ত সহচর তখন তরুন বয়স। আমরা তাকে পেয়েছিলাম বেঙ্গলের আড্ডায় । আড়াই ঘণ্টার আড্ডায় অনেক অজানা তথ্য জেনেছিলাম । দাস হাসপাতালে পৌঁছেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন , হাসপাতাল এমারজেন্সি থেকে শোনা । রাতে খোজা খুঁজি কিন্তু দাসকে কোথাও পাওয়া গেলনা । খুব সকালে ভুমেন থানায় হাজির । পুলিশ সব শুনে বলল হাসপাতাল খুজুন । হাসপাতালের মর্গে দাসকে পাওয়া গেল । পরিবারের সবাই , বন্ধুরা মিলে তাকে সন্ধ্যা নাগাদ শ্মশানে নিলেন , দাহ হল । ভুমেন বাসায় ফিরে একটি ছবি খুজে পেতে দৌড়ে প্লেট কারিগরের কাছে দৌড়ালেন । রাত ১ টায় প্লেট নিয়ে কাগজের অফিসে । দাসের জন্য জায়গা খালি ছিল আরেক সহচরের সাহায্যে । পরদিন ভুমেন মোড়ে কাগজে ভেতরের পাতায় পেলেন 'পূর্ব বঙ্গের কবি জীবনান্দ দাস ট্রামের ধাক্কায় নিহত' । ব্যাস এই গল্প অন্য অনেকেই নানাভাবে বয়ান করেছেন । ভুমেন বেচে নেই কিন্তু তার বয়ানের ভিডিও টি বেঙ্গলে পাওয়া যাবে ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৬
জুল ভার্ন বলেছেন: তথ্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৫০
শায়মা বলেছেন: বাহ অনেক কিছু জানা হলো ভাইয়া।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমার ইচ্ছা আছে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে একটা বই লিখব। দোয়াপ্রার্থী।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৭
জুল ভার্ন বলেছেন: শুভ কামনা।
৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫৩
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
জীবনানন্দের মত প্রকৃতি এত ভালো হয়ত কেউ কখনো বুঝেনি।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০৫
জুল ভার্ন বলেছেন: একমত।
৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ....।'
জীবনানন্দ দাসের মা কুসুম কুমারী দাশের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা।
অনেকে বলে থাকেন যে জীবনানন্দ দাশ আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে এই ধারনা সম্ভবত ভুল। ওনার পিতৃপুরুষের আদি নিবাস সম্ভবত বিক্রমপুরে।
ধানসিঁড়ি নদী এখন মৃতপ্রায়।
আমাদের একজন শিক্ষক বলতেন যে 'বনলতা সেন' কবিতাটা নাকি মুলত দেশাত্মবোধক কবিতা।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০২
জুল ভার্ন বলেছেন: জীবননানন্দ দাশ আত্মহত্যা করেননি-তার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে।
কয়েকদিন হলো বরিশাল এসেছি। ধানসিঁড়ি নদীর ক্ষীণ অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে বরিশাল শহরে তাঁর বাড়ি ধানসিঁঁড়ির নাম ফলকটাও ঢেকে গিয়েছে অন্যান্য স্থাপনায়।
বনলতা সেন কবিতা সম্পর্কে আমে আগে কখনো শুনিনি-সেটা দেশাত্মবোধক কবিতা।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
১০| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০৮
জ্যাকেল বলেছেন:
হিন্দু মুসলিম বিভাজন রেখা বিলীন হয়ে যায় জীবনান্দ দাশ'র কথা আসলে। এইসব উশৃংখলতা তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে চলেছে একদল শুয়োর। মাঝ থেকে নাই হয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের একসাথে বেঁচে থাকার ইতিহাস। দেশ ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। কবি কুসুম কুমারী দাশ, জীবনানন্দ'র মত রত্ন তৈরি হবার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুব দুঃখজনক।
ব্যক্তিগতভাবে আমি জীবনানন্দ দাশকে খুব বেশি শ্রদ্ধা করি তার প্রকৃতিবোধ অনুভব করতে পারার কারণে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের উচিত জীবনের বড় একটি অংশ প্রকৃতিকে ধারণ করে চোখ বন্ধ করে সেটা উপভোগ করা। তাহলেই অসৎ, খারাপ ভাবনার বদলে ক্রিয়েটিভ চিন্তা আসবার পথ সুগম হবে, জীবনে দুঃখবোধ কমে আসবে, সুখ/শান্তি এমনিতেই জায়গা দখল করবে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:১৭
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব গভীর উপলব্দধির প্রকাশ-ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২৪
পুকু বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।