নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
ভাল মানুষের ভাত নাই.........
এটা এখন জ্যামিতিক স্বতঃসিদ্ধের মত সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে- "ভাল মানুষের ভাত নাই"। মানুষ এখন দেখিয়া শুনিয়া খেপিয়া গিয়াছে ছুটিয়া গিয়াছে সকল বাঁধ। বিনা দ্বিধায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ঃ ভাল মানুষগুলো ভাল নাই। লোকমুখে যত্রতত্র বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে পথেঘাটে আলাপচারিতায় ফুটে উঠছে নির্মম সত্য- ভাল মানুষগুলো আজ বড় অসহায়। সমাজের এই 'ইনফরমাল' উচ্চারণ অতি কষ্টের। অতি দুঃখের। এই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সমাজের একটি সার্বিক উপলব্ধি প্রকাশিত হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যে সমাজ আমরা পেয়েছি তার অগ্রগতির হিসেব-নিকেশ যদি আমরা নেই তাহলে আমরা দেখবো জাগতিক উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের নৈতিক উন্নয়ন সেভাবে ঘটেনি। যাযাবরের কথাটাকে একটু ওলোট-পালট করে বলা যায় ঃ "স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ"। যে জনগোষ্ঠীর মানবিকতার কথা, সততার কথা, মমত্বের কথা লেখা আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়, তাদের আজ একি অবস্থা! সত্য বটে দেশ, সমাজ, পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিকায়ন এবং "তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব" বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু সমাজের অন্তর্নিহিত ফল্গুধারা কি বদলে যায়? চিরায়ত বাংলার সহজ সরল ভাল মানুষেরা কি বদলে গেছে? আমার ধারণা চিরায়ত বাংলা হারিয়ে যায়নি। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা খারাপ হয়ে যায়নি। গ্রাম বাংলার কোটি মানুষেরা আজও তেমনি আছে যেমন তারা ছিল। সামাজিক পরিবর্তন প্রবাহের একটি নেতিবাচক ফল তাদের জিম্মি করেছে মাত্র। কাম্য জাতি গঠনে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, পাশ্চাত্যের ভোগবাদী সমাজের প্রভাব এবং ডিশ সংস্কৃতি প্রতিপত্তি ভাল লোকগুলোকে ভাল সামাজিক অবস্থান থেকে কোনঠাসা করে ফেলেছে।
দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি 'রাজনীতি' থেকে ভাল মানুষেরা নির্বাসিত হয়েছে। রাজনীতি 'সেবার' পরিবর্তে 'সম্পদের কর্তৃত্বপূর্ণ বন্টনে' পরিণত হয়েছে। এই সম্পদের জন্য কর্তৃত্বের প্রতিযোগিতায় আদর্শ, নীতিবোধ, ভালত্ব পরাজিত হচ্ছে। উদ্দেশ্যের এই পরিবর্তনের সাথে বিধেয় এর অনিবার্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নব্য রাজনৈতিক এলিটরা ভাল করেই জানেন যে, "অবাধ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ" নির্বাচন হলে তারা ভাল মানুষদের সমর্থন পাবে না। সুতরাং নির্বাচনের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। ব্যালটের স্থান দখল করেছে "বুলেট"। মানুষের স্থান দখল করেছে "মাস্তান"। অন্তরভরা আকুতির স্থান দখল করেছে "অর্থ"। এর সাথে রয়েছে প্রচারণার পরিবর্তে "প্রতারণা"। এইসব গুণাবলীর কোনটির সাথেই ভালত্বের সংযোগ নাই। ভাল মানুষের যোগাযোগ নাই। সব ধরনের জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রথা এখন বিস্মৃত ইতিহাস! সুতরাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য পর্যন্ত সর্বত্রই ঐ সব গুণাবলীর ছড়াছড়ি। রাজনৈতিক দলগুলো দলের জন্য প্রার্থীর ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিবর্তে অর্থ এবং অনর্থ (পেশীশক্তির) এর সমীক্ষা নেন। এ ভাবেই ঘটে চলেছে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন। অর্থনীতি সমাজের রক্ত প্রবাহের মত। অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমনঃ শিল্প-কারখানা স্থাপনে যেভাবে দুর্নীতি, দুর্বৃত্ত মোকাবেলা, দীর্ঘসূত্রিতার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তাতে ভাল মানুষেরা কোনক্রমেই শিল্পকারখানা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় না। ঠিকাদারী, লাইসেন্স, পারমিট এবং আমদানী-রফতানী, বাণিজ্যে- দলীয়করণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং জালিয়াতি যেভাবে হয় তাতে কোন ভদ্রঘরের ভাল মানুষের পক্ষে ব্যবসা চালানো কঠিন। বনেদী ব্যবসায়ীরা ঐ প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে না পেরে "নব প্রজন্ম" খুঁজছেন। ভাল মানুষেরা রক্ষণশীল, সেকেলে অপদার্থ এর গালি শুনছেন।
"ভাল মানুষের জন্য আর চাকরি-বাকরি নয়"- একথা খুব জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও গুটি কয়েক ক্ষেত্র- পুলিশ, কাষ্টমস, ট্যাক্সেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঘুষ এর কথা শোনা যেত। এখন ব্যাংক বীমাসহ এমন কোন সরকারী-বেসরকারী খাত নাই যেখানে ঘুষের কথা শোনা যায় না। চাকরি পেতে হলে ঘুষ, চাকরি বাঁচাতে ঘুষ, প্রমোশনে ঘুষ এবং ভাল পোষ্টিং-এ ঘুষ। গ্রামে স্কুল-কলেজের চাকরিও এখন "ওপেন টেন্ডারে" নেয়া হচ্ছে। একজন চালাক চতুর মানুষ সবকিছু ম্যানেজ করে চলতে পারে। ভাল মানুষ পারে না। আমার জানাশোনা একজন সৎ "মুনসেফ" ঘুষ নেন না, অন্যায় কাজও করেন না- এই অপরাধে উকিল সমিতির রোষানলে পড়েছেন। আমলাতন্ত্রে ঐ একই অবস্থা। যাদের লিঙ্কেজ বা কানেকশন আছে অর্থ ও অহংকার আছে- তারা অতি সহজেই সবকিছু পাচ্ছে। এমন কিছু ভাল লোককেও আমি জানি যারা তাদের "নিশ্চল নিশ্চুপ নিরপেক্ষ" ভূমিকার কারণে বঞ্চিত হয়েছেন।
অতি চালাকেরা, সুবিধাবাদীরা অনৈতিক লোকেরা এখন "স্মার্ট" অভিধায় অভিষিক্ত হচ্ছে। বিমানবন্দরে বা সচিবালয়ে ভদ্র পোশাকে মাথা নীচু করে হাঁটছেন- ধরে বসবে। কিন্তু মাস্তান শরীর এবং রংবাজ পোশাক জিজ্ঞাসিত হচ্ছে না। ট্যাক্সেশন বা কাষ্টমস এ সব সত্য কথা লিখেছেন ওরা আপনাকে "বোকা" "ফুলিশ" বা বুদ্ধিহীন বলবে। রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করতে না পারার কারণে অর্থাৎ সহজ সরলতার কারণে অনেকেই পিএসসি'র চাকরি পাননি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী কোন চিত্র নাই। ভাল শিক্ষকরা কোনঠাঁসা। ভাল ছাত্র অথচ "স্যারদের" আনুকূল্য পাওয়ার চালাকী রপ্ত নেই, তারা কখনও কখনও কাঙিক্ষত দল করছে না। ভাল কর্মী অথচ মাস্তানী চাঁদাবাজি করতে পারে না। তার ভাত নাই। গুরুত্ব নাই। গুরুত্ব পাচ্ছে অস্ত্রধারী। হাস্যকর হলেও সত্যঃ-স্থানীয় এক নেতা কর্মীকে জিজ্ঞাসা করছেন বিগত মারামারির সময় ক'জন মেরেছে? কর্মী যখন উত্তর দিল একজনও মারে নাই- তখন নেতা বলেনঃ -"এমন কর্মীর দরকার নাই"।
সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যারা আদর্শবান, নৈতিক, প্রচার বিমুখ তারা ভাত পাচ্ছে না। ভাত পায় নকলবাজ, চাঁপাবাজ এবং তেলবাজ লোকেরা। যৌন সুরসুরির লেখা জনপ্রিয় হয়। অশ্লীল লেখক আলোচিত হয়। খ্যাতি লাভের জন্য ধর্ম আঘাতকারী লেখক গুরুত্ব পায়। অনুষ্ঠান সেমিনার সিম্পোজিয়াম জানাশোনা প্রাজ্ঞজন "ভাল মানুষ" নিজের পান্ডিত্য ফলাও করেন না। "অর্ধশিক্ষিত"; স্বঘোষিত পন্ডিত সহজেই সবাইকেই জয় করছেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষ "আসল" লোকদের খুঁজে বেড়ায়। নকল লোকেরা "বিজ্ঞাপন" দিয়ে পীরগীরি (পীরত্ব) জাহির করে। ক্লাব, সেবা সমিতি, স্থানীয় বা জাতীয় স্বেচ্ছামূলক সংগঠনেও "ভাল মানুষ"দের পরিবর্তে অর্থবিত্ত এবং গুরুত্বের খোঁজ পড়ে। সৎ আইনজীবী ভাত পায় না। ভাত পায় ঐ আইনজীবী যার সাথে "চেয়ারের" যোগাযোগ আছে। ভাল বিনিয়োগকারী সৎ শিল্প উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ পায় না। ব্যাংক ঋণ পায় রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক প্রভাব বিনিয়োগকারী। ট্রেড ইউনিয়নের টাউট'রা ঘুরে বেড়ায়। খেঁটে মরে নীরিহ গোবেচারা ভাল মানুষেরা।
এরপরও ভাল মানুষ আছে। ভালোই আছে। ভালত্বের গুণে বিভাষিত হচ্ছে। পেশাগত ক্ষেত্রে সমাজের অন্যত্র তারা সম্মানিত হচ্ছে না সন্দেহ নাই। কিন্তু তা কেবল ব্যতিক্রম মাত্র। সমাজের সার্বিক প্রবাহমান প্রবণতাই বিবেচ্য বিষয়। তারপরও মনে হয় শাশ্বত বাংলার প্রবাহমান ইতিহাস ঐতিহ্য শিক্ষা সংস্কৃতির এই দেশে ঐ সব নেতিবাচক প্রবণতা যেন "সব ঝুট হ্যায়" সবই অলীক, সবাই মিথ্যা। একটি অসাড় ভঙ্গুর ক্ষণস্থায়ী এবং কৃত্রিম প্রবণতা যেন আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে অক্টোপাশের মত ঘিরে ধরেছে। অথচ ভালত্বের প্রতি সকলের সহজাত মমত্বই শাশ্বত সত্য।
সমাজের সর্বস্তরে ভালত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি নৈতিকতা নির্ভর সমাজ বিপ্লব প্রয়োজন। রাজনীতির মূল চাবিকাঠির যথার্থ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঙিক্ষত তরুণ তুর্কদের স্বাগত জানাই। একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য আলোর দিশারী বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব প্রার্থনা করি। এ দেশের খেটে খাওয়া গরীব দুঃখী সাধারণ "ভাল মানুষ"দের অভুত্থান চাই। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, অর্থনীতির বাণিজ্যিকীকরণ, সামাজিক অনাচারীকরণ, নৈতিক দেউলিয়াত্ব এবং সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদমুক্ত বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ চাই।
০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০২
জুল ভার্ন বলেছেন: সেটাই এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য।
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট দিয়েছেন। ভালো কথা লিখেছেন।
আপনার পোষ্টের জলজ্যান্ত উদাহরন আমি।
০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০০
জুল ভার্ন বলেছেন: সমবেদনা জানাই একজন সহযাত্রীর জন্য।
৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো বেশীর ভাগ মানুষ টিকে আছে বলেই সমাজ সুন্দর আছে এখনো
০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১১
জুল ভার্ন বলেছেন: আশার কথা, সমাজের নষ্টরা এখন সবকিছু গ্রাস করতে পারেনি।
৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই দেশের ১০% মানুষ খুব খারাপ, ১০% মানুষ খুব ভালো। আর বাকি ৮০% মানুষ মাঝামাঝি, এরা হাওয়া বুঝে চলে। নিজের গায়ের উপর বিপদ না আসা পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদি হই না।
০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: এখানে আপনার সাথে আমার ভিন্নমত। আমার ধারনা ৯০% মানুষই খারাপ। অন্যদিকে ভূক্তভোগী আমজনতার প্রতিবাদ গুমরে মরে- প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে গিয়েছে সরকারী দলের মাস্তান, দলীয় পুলিশের হামলা মামলা, গুম নির্যাতনে।
৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৮
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ভাল মানুষের ভাত ছিলটা কবে।এটাতো অনেক পুরনো প্রবাদ।
০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: বর্তমানের মতো এমন দুঃসহ অবস্থা নিশ্চয়ই ছিলনা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ভালো মানুষ মানে দূর্বল মানুষ, এটাই সকলের ধারনা।