নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শীতের এই ঢাকা ফুলহীন শহর..........

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৬

শীতের এই ঢাকা ফুলহীন শহর..........

আমাদের নাতনী সারাহর বয়স ৫ বছর ৮ মাস চলছে। সারাহ ছবির বই পড়তে পছন্দ করে। আমি ওর জন্য অনেকগুলো ছবির বই কিনে দিয়েছি। সারাহ বইয়ে পড়ছে রবি ঠাকুরের কবিতা-
"বাগানের নিমন্ত্রণে এসেছে ডালিয়া,
এসেছে ফুলিয়া;
এসেছে ম্যারিগোল্ড"।

এ লাইন তিনটি পড়তেই ওর ছোট্ট মনে প্রশ্ন, ম্যারিগোল্ড (গাঁদা) কি না? স্কয়ারফিটের শহুরে এ বদ্ধ জীবনে সারাহদের কাছে সত্যিই এটা একটা বিরাট প্রশ্ন! কাব্যিক ভাষায় ওর দাদুয়া বললেন, 'শিশিরসিক্ত দূর্বায় গাঁদা ফুলের নির্ঝরেই তো শীতের আগমনী পথের আল্পনা আঁকা হয়। আমরা আশৈশব এভাবেই শীতকে চিনেছি'।

ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতার চলমান এ জীবনে এ প্রজন্ম জানে না শীতের ফুলের নাম। পায় না এদের মধুগন্ধ। আর তাই এদের উদ্দেশ্যে কবি শহীদ কাদরীর ভাষায় বলা যায়-
"আমি করাত কলের শব্দ শুনে মানুষ
আমি জুতোর ভিতর মুজোর ভিতর সেধিয়ে যাওয়া মানুষ
এবার আমি গ্রামে গিয়ে, যদি ট্রাক ভর্তি গাঁদা নিয়ে ফিরি
হে শহরের মানুষ, তোমরা আমায় চিনতে পারবে তো"?

আসলে শীতের ডালিয়া, জিনিয়া, গাঁদা, কসমস, চন্দ্রমল্লিকা, পপি, ডায়ন্থাস, ফক্স, ক্যালেন্ডুলা প্রভৃতি ফুল এখন আর এ শহরে দেখা যায় না। আমাদের রুচি ও মনন থেকে আজ এ ফুলগুলো অপসৃয়মাণ। যান্ত্রিক রুচির প্রাবল্য আমাদের জীবনযাত্রার বহু ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কৃত্রিমের প্রতিই আমাদের আকর্ষণ আজ অধিক। সেইসাথে চিন্তার বাণিজ্যকরণ আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে লোপ পাইয়ে দিচ্ছে ক্রমেই।

শীতকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য ফুলের নাম গাঁদা। ফুলটি শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সর্বত্রই আদরণীয়। সাধারণত এ ফুলের রং উজ্জ্বল হলুদ ও কমলা। হালকা মিষ্টি গন্ধ রয়েছে এ ফুলে। বিয়ের এ মওসুমে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এখন ফুলটির চাহিদা খুব বেশি। ডালিয়ার কদর অনেক বেশী-হয়তবা অনেক বেশী সহজপ্রাপ্য তাই। ডালিয়া বেশ বড় আকৃতির ও বিভিন্ন রং-এর মনমাতানো ফুল। ডালিয়া হলুদ, লাল ও বেগুনী ধরনের রং ধারণ করে। গন্ধহীন ফুল এটি। গাছটির উচ্চতা ১৫-২৩ সেঃ মিঃ।

জিনিয়া শীতকালীন মৌসুমী ফুল হলেও সারাবছরই চাষ করা যায়। ফুলের রং লাল, গোলাপি, বেগুনি ও হলুদ। এর বীজ সরাসরি টবে বোনা যায়। গাছটি ৬০-৭৫ সেঃ মিঃ বড় হয়। লাল রং এর বাহারি রূপ ও সুন্দর গঠনের জন্য একে শীতরাণী বলা হয়। এর কদর যথেষ্ট। উচ্চতা প্রায় ১ মিটার। এর চাষ টবে ভালই হয়।

কসমস পরিচিত ও জনপ্রিয় ফুল। ফুল গোলাপি, সাদা ও লাল রং -এর হয়। ফেয়ারি সাজাতে এর জুড়ি নেই। তবে টবে চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা প্রায় ৬০ সেঃ মিঃ থেকে ২ মিটার।

গাঢ় লাল রঙের পপি ফুল বেশি সুন্দর, তবে সাদা ও পিংক জাতেরও পপি ফুল দেখা যায়। গাছ ৬০-৯০ সেঃ মিঃ লম্বা হয়। শীতের জনপ্রিয় ফুল। ফুলে হালকা মিষ্টি গন্ধ আছে। ফক্সের সাদা ফিকে হলদে, গোলাপি ও ভায়োলেন্ট রঙের থোকা থোকা ফুল সারা গাছকে আবৃত করে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে। ফক্স ফুলের গাছ উচ্চতায় ২০-৩০ সেঃ মিঃ হয়। তবে লতিয়ে চলে।

ক্যালেন্ডুলা হলদে ও কমলা রঙের সুদৃশ্য শীতকালীন ফুল। ক্যালেন্ডুলা গাছের উচ্চতা প্রায় ৩০-৪৫ সেঃ মিঃ।

শীতের এ সুন্দর ফুলগুলো প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নিসর্গপ্রেমী ও লেখক দ্বিজেন শর্মা লিখেছিলেন,- "প্রকৃতির এ সময়ের অনুষঙ্গ শীতের ফুলগুলো ইট-পাথরের এ শহরে তেমনভাবে দেখা যায় না। শীতকালে এ গাছগুলো দেখা ও তার সুন্দর ফুলের ঘ্রাণ নেবার উপযোগী পরিবেশ হয়তো আমাদের এ শহুরে জীবনে আর অবশিষ্ট নেই"।
আমি শ্রদ্দেয় দ্বিজেন শর্মার সাথে একমত। কিন্তু আমাদের সীমিত অঙ্গনে এবং নাগরিক উদ্যানে এর আংশিক চর্চা করাটা এখনও সম্ভব বলেই মনে করি। পাশাপাশি প্রয়োজনে কাব্য, সাহিত্যে, গল্পে, ছবিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গাছ সম্পর্কিত অধুনা বিস্মৃত প্রতীকসমূহের পুনঃস্মরণ।

প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও নিসর্গ বিশেষজ্ঞ ডঃ নওয়াজেশ আহমেদ তাঁর একটা লেখায় লিখেছিলেন,-" ইট-পাথরের এ শহরে শীতের ফুলগাছগুলো এখন তেমনভাবে দেখা যায় না। এর প্রধান কারণ নগরায়ণ। এর সমাধানকল্পে প্রয়োজন দেশজ ফুলের গাছকে অগ্রাধিকার দিয়ে বসতবাড়ী ও খালি জায়গায় এর চাষ করা"। ডঃ নওয়াজেশ আহমেদ'র বক্তব্য সমর্থন করে আমি যোগ করতে চাই- সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচিত দেশি-ফুল গাছ লাগাতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি উদ্যোগী হওয়া। ফুল ও ফলজ বৃক্ষের ছবিসহ পরিচিতি ছাপানোর ব্যবস্থা করে ফুল ও গাছকে সকলের কাছে সহজ চিনহিত করার ব্যাবস্থা নেয়া। মিডিয়া এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

একটা সময় ছিল যখন ওয়ারি, আজিমপুর, ধানমন্ডি, ক্যানটন্মেন্ট আর পুরান ঢাকায় ব্যাপক ফুলের গাছ ছিল। সেটা এখন বিলীন হয়ে গিয়েছে। হাইরাইজ ব্লিল্ডিংসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে ওঠার সাথে এগুলোও হারিয়ে গেছে ক্রমবর্ধমান এ শহর থেকে। গত ২০/২৫ বছরে এ শহর থেকে নিঃশেষ হয়েছে সৌন্দর্যমন্ডিত বাগানগুলো। শীতের ফুলগুলো সে কারণেই বিরল এখন এ শহরে। তবে এগুলো এখনও গ্রামে পাওয়া যায়। গ্রামে গেলে এ সময় দেখা যায় বাড়ীর উঠান ভর্তি থোকা থোকা গাঁদা ফুল ফুটে রয়েছে। আসলে সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে আমাদের সামাজিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক রুচিবোধ; যান্ত্রিকতা গ্রাস করছে জীবনকে। স্ব উদ্যোগে নিজগৃহে এসব ফুল গাছ লাগিয়ে এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি আমরা। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনসহ সরকারী-বেসরকারি অন্যান্য সংস্থা খালি জায়গাগুলোতে গাছ লাগিয়ে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বৃক্ষের প্রতি আমাদের ভাললাগা আর ভালোবাসা জেগে উঠকু। নবপ্রজন্মের বৃক্ষপ্রেমবোধের উদয় হোক চেতনার গভীর থেকে। কবিগুরুর ভাষায় সেদিন আমরাও উচ্চারণ করব-
"তরু এ ধরাতলে রহিব না যবে
সেদিন বসন্তে নব পল্লবে পল্লবে
তোমার মর্মরধ্বনি পথিকেরে ক'বে
ভালবেসেছিল কবি বেঁচেছিল যবে"।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: জুল ভার্ন,





আমাদের রূচি আর মনন থেকে সব সুন্দরতাই, সব গন্ধই আজ পলাতক! ফুলেরা এখন বাগানে নয়, পথের পাশেও নয়, থাকে বইয়ের পাতায়!
নগরায়ণ হলেই যে ফুলের বাগান থাকবেনা, ডঃ নওয়াজেশের এমন ধারনাটা মানা গেলোনা। আমাদের নগরবিদরা নগরায়ণ বলতেই ইট পাথরের সমাহার বোঝেন। প্রকৃতির জায়গা, সবুজের ঠাঁই নেই সেখানে।
বাইরের বিশ্বে প্রকৃতিকে ঘিরেই, পার্ক-বাগানের কথা মাথায় রেখেই কিন্তু নগর পরিকল্পনা করা হয়। সেটা যখন নেই তখন বুঝতে হবে আমাদের নগরবিদরা প্রশ্নফাঁস জেনারেশানের! B:-) B-)

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৪

জুল ভার্ন বলেছেন: ভাইজান, আপনার বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে বলছি-নগরায়নের ফলে পার্ক বাগানে সমস্যা নয়,সমস্যা হয় অপরিকল্পিত নগরায়ণ শিল্পায়নের ফলে। তবে আমাদের দেশের ঘনবসতি এবং যায়গা সল্পতায় পরিকল্পিত নগরায়ন সম্ভব নয়।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, গাধা ফুল এখন সারা বছরই হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স এবং রমনা পার্কে গেলে নিজ চোখেই দেখতে পাবেন।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: ফুল হয়না তা বলিনি, তবে অপর্যাপ্ত হয়- এমনকি রমনা পার্কেও এক দশমাংশ ফুলিয়ে চাষ কমে গেছে।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:০৪

প্রামানিক বলেছেন: আগে ছেলে মেয়েদের বাড়ি বড়ি ফুলগাছ লাগানোর রেওয়াজ ছিল এখন সেই চর্চা দেখি না।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: একমত।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:০৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: শহরায়নের ফলে পরিবেশ দূষণ, নদীনালার অবলুপ্তি, দালানকোঠা, রাস্তা ঘাটের বিস্তৃতির সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ের পরিবেশ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: ঠিক ঠিক বলেছেন।

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার বাবা মার কাছ থেকে শুনেছি যে ৫০ এবং ৬০ এর দশকে ঢাকা শহর অনেক সবুজ এবং সুন্দর ছিল। ধানমণ্ডিতে সত্যি সত্যিই ধান হতো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ধানমণ্ডিতে সত্যিই ধান ক্ষেত ছিলো পঞ্চাশের দশকেও। ১৯৫৫ সনে ডি আই টি যখন ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা নির্ধারণ করে তখন আমাদের পাঁচ বিঘা + ধানি জমির বদলে আমরা এক বিঘার প্লট পেয়েছি ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায়।

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৩

শেরজা তপন বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা!
অনেক বাড়ির ছাদেই ইদানিং তবে ফুল গাছ লাগানো ফ্যাশন হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এর বেশীরভাগই বাইরে থেকে দেখা যায় না।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৫

জুল ভার্ন বলেছেন: ছাদ বাগানের সৌন্দর্য একটা ভবন কেন্দ্রীক। আর আংগীনা বাগান এবং উন্মুক্ত বাগান স্বার্বজনীন। কাজেই সীমাবদ্ধতা থাকবেই।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পোস্টে +
সবুজ ফিরে আসুক একথা বললেও শহরগুলিতে শুধু ছাদ ছাড়া গাছ লাগানোর যায়গা আর থাকবে না।
আমাদের সবুজ করতে হবে গ্রামগুলিকে, পরিকল্পিত ভাবে।

১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৪

জুল ভার্ন বলেছেন: গ্রামের সবুজ এখন ধূসর!
শহরের ছাদ বাগান নিয়েও হ্যাপা অনেক। ফ্ল্যাট বাড়িতে কেউ কেউ ছাদ বাগানে বাঁধা দেয়। কাজেই একক বাড়ির মালিকই ছাদ বাগান করতে পারেন স্বাচ্ছন্দে।

প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.