নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
'জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?'
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে অকাতরে মানুষ আক্রান্ত ও মারা গিয়েছে এখনো মানুষ মারা যাচ্ছেন। সুস্থ হয়ে ফিরে আসছেন অনেকে। জীবন ও মৃত্যুর এই চরম সন্ধিক্ষণে মানুষ গভীরভাবে উপলব্ধি করছে নিজেকে ও নিজের পারিপার্শ্বিকতাকে। খুব কাছে থেকে অনুভব করছেন জীবন আর মৃত্যুকে।
চলমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর মিছিলে অজস্র অচেনাদের মতো চেনাজানা অনেকেই আছেন। করোনাকালে অনেকেই আবার অন্যবিধ কারণেও স্বাভাবিক নিয়মে মারা যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে পাড়াপড়শি, সহকর্মী, ছোটবড়, চেনাজানা বহুজনেই রয়েছেন।
কর্ম ও পেশাজীবনে সবাই কম-বেশি সফল ছিলেন। জীবনকে টেনে টেনে একটি কাঙ্ক্ষিত পরিণতি পর্যন্ত নিতে পেরেছেন। কিছু সম্পত্তি ও সন্তান তাদের জীবনের প্রলম্বিত পরিধিকে উজ্জ্বল করেছে ৫০, ৬০, ৭০, ৮০ ইত্যাদি বয়সের আয়ুতে।
স্বাভাবিক সময়ে পরিচিতদের যেসব মৃত্য স্বাভাবিক মনে হতো, তা এই সামাজিক দূরত্ব ও সঙ্গরোধের নিথর পরিস্থিতিতে তীব্রভাবে নাড়া দেন। মনে হয় চোখের সামনে দিয়ে যেন দেখতে দেখতে একেকটি জীবনের যবনিকাপাত ঘটছে। কিছু শোক ও স্মরণ মিশিয়ে সেইসব চিরবিদায়কে পারিবারিক ও সামাজিকগণ আলোচনা করেন এবং তারপর সব শেষ, সব বিস্মৃতির অতলে।
মানুষ, ঘটনা, প্রপঞ্চ এভাবেই হারিয়ে যায়। হিমালয় থেকে গলিত বরফের মতো নদীস্রোতে মিশে মিশে সাগরে হারিয়ে যাওয়াই যেন জীবনের চূড়ান্ত উপসংহার। আর তখনই মনে পড়ে তারাশঙ্করের 'কবি' উপন্যাসে কথা এবং চোর-ডাকাত থেকে কবি হয়ে মূল চরিত্র ধারণকারী নিতাইয়ের বিখ্যাত উক্তি, 'জীবন এত ছোট কেনে?'
বহুল উচ্চারিত ও উদ্ধৃত কথাটি যেন মৃত্যুর মুখোমুখি করোনাকালে নবরূপে ফিরে এসেছে প্রতিটি স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পটভূমিতে:
''নিতাইয়ের সঙ্গে আসনের কাপড়ের খুঁট বাঁধা ছিল। এই গিঁট অটুট মনে করেছিল দুজন। মনে করেছিল, কেবল মরণই পারে তাদের ভিন্ন করতে। আর তা-ই হয়েছিল। বসনকে ভালোবেসে নিতাই জীবনের অনিত্যতা ও ক্ষুদ্রতার তাপে ও আঁচে গেয়েছিল, 'জীবন এত ছোট কেনে'। বসনের জন্য তার গান হয়ে উঠল-
"এই খেদ মোর মনে,
ভালোবেসে মিটল না আশ কুলাল না এ জীবনে।
হায়! জীবন এত ছোট কেনে,
এ ভুবনে?''
কবি নিয়ে বা কবিকে প্রধান চরিত্র বা উপজীব্য করে রচিত গল্প, উপন্যাস সম্পর্কে তথ্য-পরিসংখ্যান কেউ কখনো পেশ করেননি। বাংলা সাহিত্যের গবেষকরা সে নিরীক্ষার কাজটি নিশ্চয় করবেন। কিন্তু আমাদের সামনে তিনটি 'কবি' জ্বাজ্জল্যমান। তারাশঙ্করের 'কবি', হুমায়ূন আহমেদের 'কবি' এবং হুমায়ূন আজাদের 'কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ'।
প্রতিটি লেখকের রচিত 'কবি' নানা দিক থেকে বিশিষ্ট হলেও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধায়ের 'কবি' জীবনদর্শনের রসে জারিত। কারণ, সাহিত্যজীবনে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থ, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী তিনি রচনা করেছেন বাস্তব অভিজ্ঞতার রূপায়নের নিরিখে। ফলে জীবনঘনিষ্ঠ আখ্যানের মাধ্যমে তিনি যে দার্শনিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা প্রতিটি হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় এবং আত্মজিজ্ঞাসায় তাড়িত করে। আমরা নিজেদের জীবন ও স্বজন-পরিচিতদের চলে যাওয়া জীবনের দিকে তাকাই। তারপর অস্ফুটে বলি: 'জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?'
ঠিক, জীবন আসলেই ছোট, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়। তবু, জীবন এতো ছোট হওয়া সত্ত্বেও তাতেই অনেক বড় বড় কাজ সম্পন্ন করেছেন বহুজন। বিশ্বের সৃষ্টি, নির্মাণ, বিজয়, অর্জন, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের গৌবরময় ইতিহাসে মিশে আসে সেইসব বড় আর মহৎ কীর্তি, যা ছোট বা স্বাভাবিক জীবনের পরিসরেই সম্পন্ন করেছেন বড় মাপের মানুষেরা।
জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ ও সর্বাঙ্গে সফল করতে সঙ্কুল-সঙ্কটেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যময় মানুষ। এমনকি ন্যায়ের জন্য যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়েছেন তারা। যাদের মধ্যে মননশীল কবি আর সৃষ্টিশীল লেখকের সংখ্যাও কম নয়। জীবন বড় না ছোট, সফল না ব্যর্থ, এই দিকে না তাকিয়ে 'কর্মই ধর্ম' মন্ত্রে তারা অবিরাম কাজ করেছেন। ফলাফলের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেননি তারা। বরং ফলাফল তাদের পিছুপিছু এসে যথাসময়ে হাজির হয়েছে।
‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-র লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইটালিতে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছিলেন। ‘লরেন্স অফ অ্যারেবিয়া’-র লেখকও যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। উইলফ্রেড আওয়েন অমর হয়ে আছেন যুদ্ধ নিয়ে লেখা তাঁর ‘স্প্রিং অফেনসিভ’ কবিতায়।
এমনকী, কোয়েসলার থেকে অরওয়েল বা আর্থার সি ক্লার্ক, সকলকেই কোনও না-কোনও ভূমিকায় যুদ্ধক্ষেত্রে পাওয়া যায়। যদিও সে হিসেবে আমাদের দেশে সরাসরি অভিজ্ঞতায় যুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্য নেই বললেই চলে। কবি-সাহিত্যিকরা যুদ্ধকে দেখেছেন দূর থেকে।
ব্যতিক্রম কেবল কাজী নজরুল ইসলাম। চে গুয়েভারা যেমন গেরিলা যুদ্ধের অবসরে গ্যেটে পড়তেন, বাংলাদেশের জাতীয় কবি তেমনই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সুদূর দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার রণাঙ্গণের রক্ত, মৃত্যু, বুলেট ছুঁয়ে অনেক রণসঙ্গীত ও দামামার পাশাপাশি কিউবান টিউনে সৃষ্টি করেছিলেন ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ শীর্ষক মনমোহিনী গান।
করোনাকালে অধিকাংশ লেখকই রণ থেকে সরে গিয়ে দূরের নিরাপদ দ্বীপ ভালোবেসেছেন। সাধারণ মানুষ গৃহবন্দী হয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব ও সঙ্গরোধের নিঃসঙ্গ-আতঙ্কিত প্রহরে করোনার আঘাতে ছোট্ট জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে মর্মে বিলাপ করছেন।
আর যারা ছোট্ট জীবনকে বড় করতে চান, তারা প্রলাপে-বিলাপে নয়, কাজ করে চলেছেন একনিষ্ঠতায়, নিমগ্নতায় ও নিরবতায়। করোনার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীরা, বিদ্যমান পরিস্থিতি ও পরিবর্তনের বহুমাত্রিক দিকগুলো চিত্রিতকরণে ব্যস্ত লেখক, গবেষকরা এবং স্ব স্ব ক্ষেত্র আরো অনেক মানুষ ছোট জীবনের পরিসরে বড় বড় কাজ করে চলেছেন এই ঘোরতর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কবলিত পরিস্থিতিতেও।
সত্যিই, অন্য সবার মতো বা হতাশা ব্যক্তকারীদের মতো, তাদের জীবনও ছোট, যারা কাজ করেন। তবে পার্থক্য হলো, যারা কাজ করেন, ছোট জীবন নিয়েও তাদের আফসোস নেই। আছে বড় ও মহত্তম কাজ করার অপরিসীম তৃপ্তি এবং পরিশেষে সাফল্যের হাসিতে উদ্ভাসিত মুখচ্ছবি, ইতিহাস যা ধারণ করে রাখে নিজের বুকে।
(এক বছর আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম, ফেসবুক মেমোরি ফিরিয়ে দিয়েছে)
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব ভালো উপলব্ধি।
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: কবি খুবই সুন্দর একটা উপন্যাস। ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি চমৎকার বই। দুটাই আমি পড়েছি।
মানুষের জীবন আসলেই অনেক ছোট। আমার কথাই বলি- দেখতে দেখতে আমি বড় হয়ে গেলাম। বিয়ে করে ফেললাম। সংসারে নতুন শিশু এলো। এঁর মধ্যে একদিন দেখি ৩৫ বছর কবেই পার করে ফেলেছি।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: তুমি অনেক অনেক বই পড়েছো এবং এখনো পড়ছো-যা আমাকে মুগ্ধ করছে। আসলে জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ার বিকল্প নাই। আর জ্ঞানের পাঠাবলী দিতে সোস্যাল মিডিয়ার জুড়ি নাই।
আমি তোমার থেকে প্রায় ত্রিশ বছরের বড়ো!
আমাদের বড়ো ছেলের বয়সও পয়ত্রিশ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:২২
সোবুজ বলেছেন: ছোট বলেই আকর্ষণীয়,বড়হলে একঘেয়ে লাগতো।এর মাঝেই কর্ম দিয়ে যতটুকু পারা যায় বড় করতে হবে।যার যতটুকু সাধ্য।