নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
হায় শহীদ মিনার!
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি"-অবিস্মরণীয় এই গান গাইতে গাইতে একুশের ভোরে নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়নি এমন বাঙ্গালি খুঁজে পাওয়া ভার। একুশে ভোরের এই অনুভূতিটাই ভিন্ন। একাধারে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সীমাহীন গর্ব, অন্যদিকে ভাই হারানোর গভীর বেদনা। বাঙ্গালী মনের এই অনুভূতি আর ভাষা আন্দোলন তাৎপর্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার। প্রতি ফেব্রুয়ারিতে মানুষের ঢল নামে এখানে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গোটা চত্বর কিন্তু সারাবছর কেমন থাকে এই মিনার?
শহীদ মিনারের বর্তমান অবস্থা নিজের চোখে দেখার পরও বিশ্বাস হতে চায় না। তবু এক অপ্রিয় সত্যকে বিশ্বাস করতে হয়। ভাষা আন্দোলনের গৌরব গাঁথার প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবসে ভাষাবীরদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে ফুলের মালা হাতে আসেন দেশের দিন মজুর থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত-সব ধরনের মানুষ। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কী ভুলিতে পারি গাইতে গাইতে প্রভাত ফেরীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় শিশু থেকে বৃদ্ধ। দেখলে গর্বে বুক ভরে যায়। শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন বিদেশী কূটনীতিকরাও। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গোটা আঙিনা। ভাই হারানোর গভীর বেদনায় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সীমাহীন গর্বে প্রতিবছর দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিটি বাঙ্গালী।
একুশের চেতনাকে ঘিরে বিকশিত হয়েছে দেশের শিল্প সাহিত্য। বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি এবং তার আগে প্রস্তুতির দু'দিন ও পরের দু'দিন এই পাঁচদিন বাদ দিলে বছরের অবশিষ্ট ৩৬০ দিন কেমন থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার! ঝরাপাতা, চীনাবাদামের খোসা, পোড়া বিড়ি সিগারেট, পলিথিনের ছেঁড়া ব্যাগ, চানাচুর-চিপ্সের খালি প্যাকেট, ছেঁড়া ঠোঙ্গা, কাকের পায়খানা, ব্যবরুত কন্ডম, ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয় মিনার চত্বর। পরিচর্যাহীন বিবর্ণ পোলিও রোগীর মত শহীদ মিনার।
দেখা গেল, শহীদ মিনারের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করে জুতা পায়ে মিনারের মূল বেদীতে উঠে এক ভদ্র লোক(!) তার ছেলেকে সাইকেল চালনা শেখাচ্ছে। বেদীর উপর এখানে ওখানে ঘুমিয়ে আছে বেশ কয়েকজন ছিন্নমুল মানুষ। মূলবেদীর দেয়ালে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছে কেউ কেউ। মুড়ি ছিটিয়ে কাক জড়ো করছে এক সুবেশী মেয়ে আর তার ছেলে বন্ধু। একদিকে আপত্তিকর ভঙ্গিতে বসা প্রেমিক যুগল। একজন পাহাড়াদার ছাড়া শহীদ মিনার পরিচ্ছন্ন রাখা ও পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের কোন একদিনও খুঁজে পাওয়া যায়না। শহীদ মিনার সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে হযরত তেলশাহর মাজার। আগে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মাজার থেকে শহীদ মিনারে আসার পথ বিচ্ছিন্ন ছিল।
কাঁটাতারের বেড়া কবে যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। অভিযোগ পাওয়া যায়, নৈশ প্রহরী ও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতের শহীদ মিনার চত্বর আরো নোংরা, আরো কদর্য এমনকি ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠে।
তেলশাহ মাজারের সাথে পথ উন্মুক্ত থাকায় শহীদ মিনার চত্বরে রাতের আঁধারে গাঁজার আসর বসে, হেরোইন ও ফেনসিডিল সেবীদের আড্ডা জমে, ভাসমান পতিতারা খদ্দের নিয়ে মূল বেদীতে উঠে আসে, আশপাশের ফুটপাথের বাসিন্দারা এবং নিশাচর মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করে। একজন ঝালমুড়ি ওয়ালা জানান, দিনের চাইতে সন্ধ্যার পর বেচা-কেনা ভাল হয়। তবে রাতে এখানে যে সব কু-কাণ্ড ঘটে তা বলতে রুচিতে বাধে। মাঝে মাঝে টহল পুলিশ এসে বখরা নিয়ে চলে যায়।
একুশে ফেব্রুয়ারির একটি দিনকে কেন্দ্র করে পাঁচটি দিন পরিবেশ ভাল থাকলেও বছরের বাকি ৩৬০ দিন শহীদ মিনার চত্বরের পবিত্রতা বলতে কিছু থাকে না।
আমাদের উপস্থিতিতেই পুজো উপলক্ষে দুদিন আগে ঢাকায় আসা একটি ভারতীয় পরিবার এই শহীদ মিনার দেখতে এসেছিলেন। নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঘুমন্ত মানুষ, দুরন্ত প্রেমিক প্রেমিকার নিলাজ চিত্র দেখে ভারতীয় পরিবারটি নীরবে দ্রুত শহীদ মিনার চত্বর ত্যাগ করে চলে যান।
অযত্ন-অবহেলার শিকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে যা দেখা গেছে, পীড়াদায়ক অনেক কথা বলা যায় না, লেখা যায় না। তবুও কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত কবিতার ভাষায় বলতে চাইঃ
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার।
এ-কোন মৃত্যু ? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
শিয়রে যাহার ওঠেনা কান্না, ঝরেনা অশ্রু?
হিমালয় থেকে সাগর অবধি সহসা বরং
সকল বেদনা হয়ে ওঠে এক পতাকার রং
এ-কোন মৃত্যু? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
বিরহে যেখানে নেই হাহাকার? কেবল সেতার
হয় প্রপাতের মোহনীয় ধারা, অনেক কথার
পদাতিক ঋতু কলমেরে দেয় কবিতার কাল?
ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক। একটি মিনার গড়েছি আমরা
চারকোটি কারিগর
বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়।
পলাশের আর
রামধনুকের গভীর চোখের তারায় তারায়
দ্বীপ হয়ে ভাসে যাদের জীবন, যুগে যুগে সেই
শহীদের নাম
এঁকেছি প্রেমের ফেনিল শিলায়, তোমাদের নাম।
তাই আমাদের
হাজার মুঠির বজ্র শিখরে সূর্যের মতো জ্বলে শুধু এক
শপথের ভাস্কর।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: একুশ এখন ফ্যাশন আর ক্ষমতাসীন দলের কোনো ফেউ মারা গেলে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধার নামে লাশ দেখানোর মঞ্চ!
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫১
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: জি দাদা খুব সুন্দর আবেগময় আগাম একুশের শুভেচ্ছা রইল
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অনেক অনেক দিন আগে গিয়েছিলাম । তখনো আপনি যে সমস্যাগুলির কথা বলেছেন তা ছিল । বছরের পর বছর এ সমস্যাগুলো চলে আসছে আমাদের সবার চোখের সামনে। প্রশাসন চাইলেই যে কোন সময় শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারে - এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই ।
তবে ভাই আরেক টা ব্যাপার - ঢাকা শহরে খোলামেলা জায়গা নেই বললেই চলে যেখানে প্রেমিক- প্রেমিকারা একটু নিরিবিলি বসতে পারে বা ছিন্নমূল মানুষ একটু বিশ্রাম নিতে পারে । এক্ষেত্রে শহীদ মিনার তাদের জন্য এক ভরসার জায়গা।
আর এমন একটি লেখার আপনার প্রতি রইলো ২১ শের মাসে ২১ টি গোলাপের শুভেচছা।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: শহীদ মিনার এখন ফ্যাশন!
ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৭
সাগর শরীফ বলেছেন: একুশ শতকে এসে একুশে ফেব্রুয়ারী এখন শুধুই তারিখ একুশে ফেব্রুয়ারী।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: শহীদ মিনার এখন ক্ষমতাসীন দলের কোনো ফেউ মারা গেলে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধার নামে লাশ দেখানোর মঞ্চ!
৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পোস্টের মর্মকথার সাথে সহমত ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।
এসব জায়গার পবিত্র রক্ষা করা অবশ্যই দরকার এবং সংশ্লিষ্ট কাউনসিলরদেরই উচিত এটা নিশ্চিত করা। প্রেমিক যুগল ছাড়াও বখাটে, নেশগ্রস্তদের দখলেও চলে যায় কিনা এসব জায়গা, সেটাও কড়া নজরে রাখা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
২১ আমাদের অহঙ্কার ও আবেগের জায়গা। একে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।
সুন্দর পোস্ট।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৮
জুল ভার্ন বলেছেন: একুশ, শহীদ মিনার এখন আর আবেগের যায়গা নয় বরং লৌকিকতার মঞ্চ!
৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমাদের চেতনা নির্দিষ্ট সময়ে চেগায়া উঠে।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: সিজনাল চেতনা.....
৭| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একটা ঐতিহাসিক স্থান; এতো স্মৃতি বিজড়িত, হাজার হাজার শহীদের রক্তের স্মৃতিস্মারক, স্মৃতিস্তম্ভ স্মৃতিসৌধ তাকে সারা বছরই পবিত্রতা রক্ষা করার দায় শুধু আঞ্চলিক স্বশাসিত বোর্ড সহ রাষ্ট্র সহ সাধারণ নাগরিক কেউই অস্বীকার করতে পারে না। দেরিতে হলেও বিবেকের জাগরণ ঘটুক। শহীদ মিনার গোটা বছরব্যাপী সসম্মানে ভাস্বর হয়ে থাকুক....
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: এখন দিন বদলে গেছে। একুশে ফেব্রুয়ারীর ৪/৫ দিন আগে চেতনা জাগ্রত হবে- যা একুশে ফেব্রুয়ারী দলিত মথিত করে ফটো শেসন করা হবে।
৮| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতাটা মারাত্মক সুন্দর++
শুভেচ্ছা আপনাকে।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: সত্যিই অসাধারন কবিতা!
৯| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪৯
জটিল ভাই বলেছেন:
তিরিশ বছর পরেও আমি.........
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে আরও তিনশো বছর ভোগান্তির বিকল্প নাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫
রিফাত হোসেন বলেছেন: একুশ একুশ করে লাভ নাই সাহেব। বাংলা ভাষার ১২টা ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে। ফুল দিলেও বা স্মরণ করলেও সেটা হবে লোক দেখানো। ব্লগেই এমন উচ্চশিক্ষিত দাবীদার ও পথভ্রষ্ট বাংগালীর অভাব নেই। যারা ভাষার বিকৃতি সাধনে এমন সচেষ্ট থাকে যে, কিছু বললেই ফোস্কা পরে। ভদ্র ব্যবহারটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।