নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
হারিয়ে গেছে নৈতিকতা
স্বাধীনতার সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে "সন্ত্রাস" একটি বড় ধরনের হুমকি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি পেতে জনগণের আকুল মিনতি। সে অনুভূতির প্রতি সম্মান রেখেই সরকার সন্ত্রাস নির্মূলে গঠন করেছেন র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন( র্যাব)। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর ও আনসার সমন্বয়ে র্যাব গঠিত হয়েছে। র্যাবের কার্য্যক্রমে সন্ত্রাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। ক্রসফায়ারে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত হবার বিষয়টিও কেউ গায়ে মাখেনি। কারণ একজন কুসন্তান চলে গেলে যদি কয়েক শ' নিরপরাধ মানুষ প্রাণে বেঁচে যায় তবে সেই ভালো। কিন্তু দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতি সম্মান হারিয়ে র্যাবের কোনো কোনো সদস্য অতি লোভী হয়ে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাস, ডাকাতি ও ছিনতাই-এ। কিন্তু তাদের তো এমন হবার কথা নয়। অপরাধ দমনে তাদের দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তেমনি তারা যাতে অপরাধী হতে বাধ্য না হয়, সে লক্ষ্যে তাদের বেতনসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও কেন তাদের এ নৈতিক অধঃপতন?
আসলে কাক যেমন ময়ূরের পেখম পরলেই ময়ূর হয়ে যায় না, তেমনি কিছু অসাধু মানুষকে যত ভালো অবস্থায় রাখা যাক না কেন পশুশক্তি তাদের পিছু নেবেই। বিমানবাহিনীর এক সার্জেন্ট সমস্ত র্যাববাহিনীর কষ্টার্জিত সাফল্যকে ধূলিসাৎ করে মিরপুরে ডাকাতি করতে গিয়ে জনরোষে পড়েছিল আরো চার সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের এক লোক ছুটি কাটাতে এসে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে হোটেল মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করে। দর কষাকষির এক পর্যায়ে সে আবাসিক হোটেল পলাশী থেকে নগদ দু' হাজার টাকা হোটেল মালিকের কাছ থেকে গ্রহণ করার সময় ডিবি পুলিশ তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলে। নিজেকে সে র্যাব-১ সদস্য বলে সগৌরবে পরিচয় দেয়। কত বড় দুঃসাহস! বিভিন্ন সময়ে র্যাববাহিনীর গৌরবপূর্ণ সাফল্যের হিসাবের খাতায় কলঙ্কের কালি ছিটিয়ে দেয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তিও কিছু কম নয়। যত কিছুই বলা হোক না কেন, এক মণ দুধে এক ফোঁটা চনাই যথেষ্ট। যা হোক, কিছুদিন আগে ঘোষিত হয়েছে র্যাব সদস্যদের অপকর্মের বিচারের নীতিমালা। এখন থেকে অপরাধী র্যাব সদস্যদের সামরিক কোর্ট অথবা স্পেশাল কোর্টে বিচার করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত করা হবে। নিরপরাধ মানুষকে নাজেহাল বা অত্যাচার করলে সাত বছরের এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহারে শিথিলতা দেখালে ১০ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মতো এই কোর্ট পরিচালনা করবেন র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সত্যিকার অর্থে আমাদের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় অব্যাহত। বর্তমানে পরিস্থিতি চরম ভয়ংকর অবস্থা ধারন করেছে। রাতারাতি ধনী হওয়ার বাসনা, জীবনযাত্রার মান রক্ষায় ব্যয়বহুল পরিস্থিতি, কুশিক্ষার প্রভাব, কঠোর শাস্তির সঠিক বাস্তবায়নের অপ্রতুলতা, অপরাধ ঢেকে রাখবার বিভিন্ন সুযোগ, আইনের শিথিলতা এ ধরনের অপরাধীকে উৎসাহিত করছে বলে সাধারণের অভিমত। তাই দেশ ও জনগণের জানমালের হেফাজতকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগে আরো সঠিক ও নিপুণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। চরিত্র স্খলন হলে তার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট শাস্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের ব্যবস্থা দ্রুত ট্যাইবুনালে করতে হবে। আইনের স্বচ্ছতা ও সর্বক্ষেত্রে তাদের গতিবিধির মনিটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মানুষ তৈরি হয় পরিবারে, বিকশিত হয় সমাজে, প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রে। পরিবার থেকেই একটি শিশুসন্তানকে সৎ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেউই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পরিবেশ পরিস্থিতি একজন মানুষকে অপরাধী করে তোলে। প্রত্যেক মানুষ গড়ার কারখানার মালিকদের এমন উদ্দেশ্য থাকতে হবে, তারা যেন একজন আদর্শবান নিঃস্বার্থ পরোপকারী সুশিক্ষিত ব্যক্তি সমাজের জন্য উপহার দিতে পারেন এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব সে মানব সন্তানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তার সৎ রুজির ব্যবস্থা করা। অনিশ্চয়তায় না ভুগলে অপরাধ করার স্পৃহা কমে আসবে স্বাভাবিক নিয়মে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই কেবল পারবে সমাজকে ঘুণে ধরা পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে।
©somewhere in net ltd.