নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
নগরে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন কঠিন নয়
ইহা একটি অত্যন্ত অকার্যকর পোস্ট হবে জেনেও লিখছি! একটি কার্যকর নিষ্কাশন ব্যবস্থা তথা স্টর্ম স্যুয়ার ও দূষণমুক্ত নদী নগরজীবনের অপরিহার্য উপাদান। এর উপর নির্ভর করে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন অনুষঙ্গ যথা বিশুদ্ধ বাতাস, পানি, মাটি, নাগরিক সুস্থতা ইত্যাদি। মানব ইতিহাসে নগর বিপ্লবের সূচনালগ্ন হতে মনুষ্য সৃষ্ট দূষিত উপাদানকে (মলমূত্র আবর্জনা) একটি সিস্টেমে আনয়ন করে পরিবেশকে স্বাস্থ্যসম্মত করার পদ্ধতির প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ মহেঞ্জোদারো ও হরপপার উন্নত পয়ঃপ্রণালী ও ড্রেনেজ সিস্টেমের কথা বলা যায়। তাই রিচুয়্যাল ও ধর্মের সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে। এখনও উপজাতীয়দের বাড়ীঘর, প্রাকৃতিক ধর্মে বিশ্বাসীদের ধর্মীয় পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কড়াকড়ি তারই জীবন্ত প্রতীক হয়ে রয়েছে।
অথচ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আমাদের দেশ আধুনিক নগরায়ণে পদার্পণ করলেও কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত হয়নি- যা আছে তা কার্যকর নয়। তাই আমাদের কাছে সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে বর্ষায় বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা, অন্যটি হচ্ছে নদীদূষণ। এই দুটি কঠিন বাস্তবতার পেছনে পেছনে আমাদের একশ্রেণীর পেশাজীবীর অর্থলোলুপতা। যার সহিত জড়িত একশ্রেণীর প্রকৌশলী, ঠিকাদার শ্রেণী তথা সামগ্রিক সিস্টেমে দুর্নীতি এক হয়ে আমাদের করছে অসহায় ও জিম্মি। বস্তুত প্রকৃতি থেকে মানুষ যে আদিম সহজ সরল টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছিল, আধুনিককালে ব্যবসায়িক ক্যাপিট্যাল এই সহজ সরল বিষয়কে বিভিন্ন যান্ত্রিক খাতে প্রবাহিত করে এই সকল প্রযুক্তিগুলোকে অত্যন্ত দামী ও অনেক সময় হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে; কিন্তু ঐ সহজ-সরল নিয়মকে কাজে লাগিয়েও আমরা আমাদের অনেক সমস্যা দূর করতে পারি।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের শহরের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের তথা প্রাকৃতিক নিয়মকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা নিতে পারি নদী বা ঝরনার চলার পথ হতে অর্থাৎ প্রকৃতি হতে। নদী উচ্চ পর্বত হতে নিম্ন ভূমিতে পতিত হবার সময় পর্বত গাত্র বেয়ে খাঁড়া পানি পড়ে বিশাল গর্তসহ হ্রদ সৃষ্টি হয় এবং এরপর বিভিন্ন স্থানে পাঁক বা ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি করে মাটি ও ময়লা পরিষ্কার করে বৃহৎ জলাশয়ের দিকে ধাবিত হয়।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে অত্যন্ত মারাত্মক ভুল পীট ও পাইপের কানেকশন রয়েছে। এই ধরনের পীটগুলোর কানেকশন পাইপ ও পীটের নিম্নতলের উপরিভাগ একই সমান্তরালে অবস্থিত বিধায় পাইপ ও পীটে স্রোত সৃষ্টি হয় না- সৃষ্টি হয় না কোন ঘূর্ণনের। তাই ময়লা পরিষ্কার না হতে পারায় এগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
আমাদের নগরায়নে ড্রেনেজ সিস্টেম তথা স্টর্ম স্যুয়ারের এই বিপর্যয় ও জলাবদ্ধতা যে কতো মারাত্মক ও মানবিক আর্থিক বিপর্যয় নাগরিক জীবনে এনে দিয়েছে তার প্রমাণ হচ্ছে বহুতল ভবনের গ্রাউন্ড ফোর উঁচু করার এক নিরন্তর প্রচেষ্টা। একইসঙ্গে ঢাকা শহরের সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা উঁচু করার প্রতিযোগিতা। ফলে একটি বহুতল ভবন মাত্র ২০/২৫ বছরের মধ্যে প্রথম তলার অর্ধেক পরিমাণ মাটির নীচে প্রোথিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এটি ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কি ভয়ংকর নাগরিক বিপর্যয়। পৃথিবীর দু/চারটি বৃহৎ নগরী দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কোথাও এ ধরনের বিপর্যয় আমার নজরে পড়ে নাই। এমন হলে হয়তো ঐতিহাসিক ইমারত ও নগরী বলে পৃথিবীতে কিছু থাকতো না। এ বিষয়টি চিন্তা করারও যেন কেউ নেই। অথচ সামান্য প্রচেষ্টায় আমরা শহরের বহুতল ভবনের গ্রাউন্ড ফোরের লেভেল ঠিক করে দিতে পারি।
উঁচু-নীচু, টিলা, জলাশয় প্রত্যেক স্থানে কোর্ডিনেট বা স্থানাংক নির্দিষ্ট করে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে উহার উচ্চতা, নদী বা পাশের নিম্নভূমি হতে উহার উচ্চতা, বন্যার সময় বিপজ্জনক রেখা, এমনকি '৮৮-এর বন্যার রেখা আমরা বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত করতে পারি। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক পিলারকে ব্যবহার করা যায়। এভাবে আমরা নগর উন্নয়নকে সুসম ও গতিশীল করতে পারি।
নদীকে আমাদের অবশ্যই বাঁচাতে হবে। সমস্ত শহরের বিশাল আবর্জনা নদী বহন করতে অক্ষম। তাই নদী বা খাল কিংবা নীচু ভূমিতে স্টর্ম স্যুয়ারের পানি প্রবাহিত করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে অত্যাধুনিক বহুমুখী পানি শোধনাগার করা প্রয়োজন। তবে এর পাশপাশি বিপুল অর্থ ইনভেস্ট না করে সহজ-সরল পানি ফিলট্রেশন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেখানে স্টর্ম স্যুয়ার শেষ হয়েছে সেখানে চার বা পাঁচটি চৌবাচ্চা (বৃহৎ আকারের) নির্মাণ করতে হবে। পানি প্রবাহ অনুসারে এর আকৃতি নির্ণয় করা হবে। অতঃপর ঝামা ইট, তারপর বড় নুড়ি পাথর, তারপর কয়লা এবং শেষটিতে পরিষ্কার পানি পাওয়া যাবে। ময়লা অপরিষ্কার পানিকে থিতিয়ে পড়তে দিয়েও পরিষ্কার করা সম্ভব। কয়েকটি বড় চৌবাচ্চা পাশাপাশি স্থাপন করে গভীরতা বেশী করে পানিকে আস্তে আস্তে প্রবাহিত করলে ময়লা তলানি হিসেবে পড়ে স্বচ্ছ পানি সামনে অগ্রসর হয়। এই স্বচ্ছ পানিকে চুন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। এভাবে নদীর ধারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারায় পতিত দূষিত পানিসমূহকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রবাহিত করে একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ ও পানি পাওয়া যাবে। শিল্পাঞ্চলের পানি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।
বর্ষাকালে শহরাঞ্চলের অধিবাসিগণ জলাবদ্ধতা ও রাস্তায় পানি জমে থাকা নিয়ে যে ভোগান্তির শিকার হয় তার মূল কারণ হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনের পাইপ ও পীট ময়লা জমে আটকে যাওয়া। বস্তুত এর জন্য দায়ী হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনগুলোর পীটগুলো সঠিকভাবে নির্মাণ না করা। ইঞ্জিনিয়ার বা কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রফেশনাল লোকজন যে এগুলো জানেন না তা ঠিক নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি যে, পীটগুলো ভালভাবে নেটফিনিশিং পর্যন্ত করা হয় না। পীট ও পানির পাইপগুলো যথার্থভাবে নির্মাণ করার পূর্বেই এতে পানি প্রবাহ ও ময়লা ছেড়ে দেয়া হয় যাতে নির্মাণ কাজের ত্রুটিগুলো লুকিয়ে ফেলা যায়। প্রকৃতপক্ষে প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও এসব কাজের সহিত জড়িত প্রশাসনিক লোকদের দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে আমাদের স্যুয়ারেজ লাইন ব্যবস্থাপনার উন্নতি অসম্ভব।
আমার মতে, কোন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য স্থানীয় জনগণকে পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসমূহে অংশগ্রহণ করানো জরুরী। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে আমাদেরকে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় সুশীল সমাজকে শুধু পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পেই নয় সকল ছোটবড় বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করা উচিত। টেন্ডারে কি বলা হয়েছে নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে কিনা কি পরিমাণ ও কোন্ মানের দ্রব্য ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে তা যদি স্থানীয় জনগণের নিকট পরিষ্কার থাকে তাহলে প্রকৌশলগত ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
©somewhere in net ltd.